আগে আমরা প্রতি শুক্রবারে আব্বুর সাথে দেখা করতে যেতাম। আমার শুক্রুবারে একটা ক্লাস আছে। এ কারনে আমার শুক্রবারের ক্লাসটা মিস দিতে হত। আমি অনেক গুলো ক্লাস মিস করেছি। কলেজের সবাই জানে আমি শুক্রবারের ক্লাস টা করিনা। কেঊ জিজ্ঞেস করত যদি, শুক্রবারের ক্লাস্টা আমি কেন মিস দেই, আমি বলতাম একটা ফ্যমালি প্রবলেম থাকে শুক্রবারে তাই আসতে পারি না।
আব্বুর রায় হবার পর, আমাদের এখন শুধু মাসে একদিন দেখা করতে দেওয়া হয়। তার আগে বলে নেই, আমি আমার মা বা মেয়েরা কেউ এখনো আব্বুর সাথে দেখা করতে পারিনি। যাই হোক শুক্রবারে এখন আর কোন কাজ নেই, কোন তাড়া নেই। নেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার ঝামেলা, নেই আব্বুর যা যা জিনিসপত্র নিতে হত, তা গুছানোর তাগিদ। রোজ শুক্রবার সকালের আম্মুর অযথা টেনশন, রাস্তায় জ্যাম হবে নাকি, দেরি হলেই আব্বু টেনশন শুরু করবে আরো কত কী! এখন শুধু শুধু সময় আর সময়! শুক্রবার আসলে...
এতএব আমি শুক্রবারের ক্লাস এ যাওয়া শুরু করলাম। আমার এক ফ্রেন্ড আমাকে দেখে অবাক হয়ে বললঃ 'তুমি শুক্রবারে ক্লাসে, কিভাবে'?
আমি বললামঃ 'এইতো আসলাম'
ও আবার জিজ্ঞেস করলঃ 'তোমার শুক্রবারের প্রবলেমটা সলভ হয়ে গেছে?'
আমি যেন চমকে উঠলামঃ কী বলব ওকে?
একটু থেমে অনেক কষ্টে উত্তর দিলামঃ 'হ্যা, সলভ হয়ে গেছে!'
আমি বললামঃ 'এইতো আসলাম'
ও আবার জিজ্ঞেস করলঃ 'তোমার শুক্রবারের প্রবলেমটা সলভ হয়ে গেছে?'
আমি যেন চমকে উঠলামঃ কী বলব ওকে?
একটু থেমে অনেক কষ্টে উত্তর দিলামঃ 'হ্যা, সলভ হয়ে গেছে!'
মিথ্যা একটা উত্তর দিয়ে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। একরাশ কষ্ট এসে ভর করল বুকে! বার বার মনে হচ্ছিল, চিৎকার করে বলি...
'আমার যে ক্লাস মিস করেই ভাল লাগত। আমি আরও ক্লাস মিস দিতে চাই.... আরো ক্লাস মিস দিতে চাই.....আমি যে আব্বুর কাছে যেতে চাই, হাত দিয়ে ধরতে চাই তাকে... জড়িয়ে ধরতে চাই তাকে আবারো, বারবার... পেতে চাই তার শরীরের সেই চিরচেনা গন্ধ!'
'আমি যে ক্লাস করতে চাই না............................................................।'
-তাহেরা তাসনিম (মীর কাসেম আলির ছোট কন্যা)
ফাঁসীর সাঁজা প্রাপ্ত হওয়ার পর মীর কাসেম আলীর ডিভিশন বাতিল হয়ে যায়, এবং পরিবার এর সাথে আর একসাথে বসে দেখা করার সুযোগ ও বাতিল হয়ে যায়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন