২০১১ সাল থেকে দৃশ্যমান রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। যদিও এই ছয় বছর ধরে ঝটিকা বিক্ষোভ, ভোরবেলার মিছিল বাদে প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারেনি দলটি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত শুধু রমজান উপলক্ষ্যে দুই একটি ইফতার মাহফিল করলেও গতবছর সেটিও সম্ভব হয়নি। আর এ কারণে জোট ও ভোটসঙ্গী বিএনপি-র ইফতার মাহফিলই হয়ে উঠেছে প্রকাশ্যে জামায়াতের ‘একমাত্র’মিলনস্থল। গতবছরের মতো এবারও দলটির নেতারা অংশ নেন খালেদা জিয়ার ডাকা ইফতারে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা, ঢাকা মহানগরী কমিটির দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর সোমবারই প্রকাশ্যে একত্রিত হলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।
জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
সোমবার রাজধানীর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির (বসুন্ধরা) নবরাত্রি হলরুমে রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে খালেদা জিয়ার ডাকা ইফতার মাহফিলে অংশ নেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রভাবশালী তিন নেতা। তারা হলেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা শামসুল ইসলাম ও মিয়া গোলাম পরওয়ার। এছাড়া জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মুঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইনসহ জামায়াতের প্রচার, তথ্য, গবেষণাসহ কয়েকটি বিভাগের দায়িত্বশীলরা। এছাড়া শিবিরের কয়েকজন নেতাকেও দেখা গেছে ইফতার মাহফিলে। প্রায় ২০-২৫ জন জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন বিএনপি প্রধানের ইফতারে। এছাড়া একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সন্তান শামীম সাঈদীও ছিলেন ইফতারে।
জামায়াতের নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম
ইফতার মাহফিল শুরুর আগে থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছে জামায়াতের অগ্রগামী একটি দল। তারা নবরাত্রি হলের ভেতরেই দোতলায় আদায় করেন আসরের নামাজ।
ইফতারের আধাঘন্টা আগে হলরুমে আসেন জামায়াতের নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম। তার টেবিলের কাছে সাক্ষাৎ করে জামায়াত ও শিবিরের কয়েকজন নেতা। নিজেদের সাংগঠনিক পরিচয় দিয়ে সালাম বিনিময় করেন প্রত্যেকেই। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির দুই নেতা এসে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তারা জানান, তারা দুজনেই ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্য ছিলেন। বর্তমানে লেবার পার্টির দায়িত্বশীল পদে আছেন।
এরপর আসেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি টেবিলে-টেবিলে ঘুরে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, অনেকদিন পর কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ইফতারে এসেছেন।
নায়েবে আমির শামসুল ইসলামের সঙ্গে মোলাকাত করছেন জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান
নায়েবে আমির শামসুল ইসলাম নিজের চেয়ার থেকে উঠে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এই তিন নেতার বাড়িই চট্টগ্রামে। এর আগে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেহানা প্রধান এবং দলটির সাবেক সভাপতি সদস্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জামায়াত নেতা শামসুল ইসলামের সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন। তিনি এ সময় প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়েকে সহযোগিতা করার কথা বলেন। এ সময় লেবার পার্টি ও জাগপা-র কয়েকজন নেতা পরিচয় দিয়ে শামসুল ইসলামের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
কর্ণেল অব. অলি আহমদ (মাঝে) বামে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুর রকিব ও শামসুল ইসলাম
জামায়াত নেতাদের মধ্যে সবার পরে নবরাত্রি হলে প্রবেশ করেন সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঞ্চে তিনিই জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন। মঞ্চে উঠার আগে তিনি জামায়াতের জন্য বরাদ্দ টেবিলে বসা নায়েবে আমির শামসুল ইসলামসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে মোলাকাত ও কোলাকুলি করেন। মঞ্চে উঠে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। নেতাদের প্রত্যেকের চেয়ারের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। যদিও গত বছর ইফতারের আগে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গিয়ে নেতাদের কপালে চুমু খেয়ে আলোচনা তৈরি করেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
হেফাজত ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমীর সঙ্গে মোলাকাত করছেন জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান
প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ার কারণ হিসেবে জামায়াত নেতারা সরকারকেই দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বাভাবিকভাবে জামায়াতের কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেয় না। এ কারণে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই রক্ষা করে চলতে হয়। নায়েবে আমির মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ঠ। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
জামায়াতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই রমজানেই আরও বড় মিলনমেলা দেখা যেতে পারে। আগামী ১২ জুন রাজধানীর একটি মিলনায়তনে জামায়াতের ইফতার মাহফিল ঠিক করা হয়েছে। ওই ইফতারে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বলে বিএনপির একটি সূত্র জানায়। গতবছর কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করতে বাধা পাওয়ায় এ বছরও ইফতারে বাধা আসার শঙ্কা দেখছেন জামায়াতের কয়েকজন নেতা। এ কারণে তারা দ্রুতই স্থান প্রকাশ করতে চান না।
Khaledul Anower
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন