বাংলাদেশ বার্তাঃ ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। নতুন জামা কাপড় পরে এ দিনে সবাই থাকে হাসি খুশি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সবাই। ছোট বড় সবাই সাত সকালে গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান করে। মনের মত করে সেজে গুজে আতর গোলাব মেখে ঈদের মাঠে যায়। আনন্দ, হাসি, গান, তকবীর ধ্বনী ওদের সবার মনে ধরা দেয়। এই যেমন এক মাস রোজা রাখার পর আসে মুসলিম জাতির সবচেয়ে আনন্দের দিন “ঈদ উল ফিতর“।
২০১৭ সালের এই দিনটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে একই রকম আনন্দ বয়ে আনলেও মুসলিম দুনিয়ার সব দেশে, সব ঘরে দিনটি একই ভাবে উদযাপিত হবে না। যেমন- বার্মা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, চীন এবং আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশ। এইতো মাত্র কয়েক দিন আগে সারা দেশে কয়েক হাজার মানুষকে সাড়াসি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। আল্লাহ ভালো জানেন কতজনের ভাগ্যে মুক্ত বাতাসে ঈদ উদ্যাপন করা সম্ভব হবে।
আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যে তাকওয়া ভিত্তিক চরিত্র গঠনের অনুশীলন করে থাকি, তার সমাপনী উৎসব ঈদুল ফিতর নামে অভিহিত। অতএব এর আনন্দ প্রকাশ করা কতটুকু সম্ভব হবে আল্লাহ ভালো জানেন? দেশের অস্থির এ পরিবেশ বলতে পারছে না দেশের কতভাগ মানুষ সঠিকভাবে এ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে? দেশের মানুষ আজ স্বাধীনভাবে চলতে পারছে না, রাতে ঠিকমত সেহরী খাওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না? এমবস্থায় আমরা আশা করবো এ অবস্থার উন্নতি ঘঠুক, দেশের মানুষ যেন শান্তিতে ঈদের সঠিক আনন্দ উপভোগ করতে পারে এই পরিবেশটা বিরাজ করুক।
বর্তমান সরকার জণগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে নানা ভাবে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। জামায়াত রাজনৈতিক ময়দানে পরীক্ষিত একটি ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী সংগঠন। কাজেই জামায়াতের ব্যাপারে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী একটি শান্তিকামী ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। নিয়মাতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন, পরিচালনা বা সরকার পরিবর্তনের নীতিতে বিশ্বাসী। জামায়াতে ইসলামী কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। শক্তি বলে কোন আদর্শ চাপিয়ে দেয়া জামায়াত বিশ্বাস করে না। জামায়াত মনে করে জণগনের ইচ্ছা ও আকাংখা অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে। জামায়াতে ইসলামী কোন ধরনের গোপন তৎপরতায় বিশ্বাসী নয় এবং গোপন কর্মকান্ডে অভ্যস্থ নয়। জামায়াত বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধিত ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। জামায়াত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে সরকারের বিভিন্ন উস্কানীমূলক আচরণে অত্যন্ত ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক ভাবে জামায়াতকে ধ্বংস এবং নেতাদের সরকার পরিকল্পিতভাবে তথাকথিত মানবতানিরোধী অপরাধে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে এবং মিথ্যা ও হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করছে। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন করে ইসলামী আন্দোলনকে থামানো যাবে না। ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী হওয়ার কারণে আমাকেও বার বার কারাবারণ করতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি যত বাঁধা আসবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আরো বেশী উজ্জীবিত হবে।
১ম দফা কারাবরণ :-
১২.১২.১২ ঈসায়ী তারিখটি। লাকি বারো, বারো, বারো। সহস্র বছরে মেলে এমন একটি দিন। ধর্মীয় দিক থেকে আমার কাছে এ দিবসের মুল্যে না থাকলেও জীবন ডায়রীতে তা ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে দিবসটি। ১৯৮২ সাল থেকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। ছাত্র আন্দোলন থেকে বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে ৯০ দশকে ৪ ঘন্টার জন্য বন্ধি ছিলাম বিশ্বনাথ থানা হাজতে। অবশ্য পরে সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়া পেয়েছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জেলে যাবার সুযোগ না হলেও কোন এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রোষানলে পড়ে এবং তারই নিদের্শনার আলোকে এ তারিখে প্রথমদফা গ্রেফতার হয়ে জেলে যেত হল। তাই এ দিবসটি অন্যদের মতো আমার জীবন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। বিশ্বের আনাচে-কানাচে সব শ্রেনীর মানুষের কাছেই এই নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উদযাপনের কমতি ছিল না। এক কথায় নানা আয়োজনে ও উদযাপনের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল যেন এই দিনটি নিয়ে। পড়বেই না কেন? আবার যে শত বছর পরে বিশ্ববাসী দেখবে এই দিনটি পাবে এই বিশেষ দিবসটি উদাযপনের উপলক্ষ। তখন আমরা থাকব না। থাকবে না আমাদের প্রজন্ম। এদিক থেকে আমি ও আমার প্রজন্মটি অত্যন্ত ভাগ্যবান বলা চলে। এরপর কত কত প্রজন্ম আসবে যাবে। তারা পাবে না এই বিশেষ দিবসটির দেখা। মোটামুটি কয়েকটি প্রজন্মের পরের কোন এক ভাগ্যবান প্রজন্ম আবার দেখা পাবে এই বিরল দিবসটির। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান জীবিত প্রজন্মটি নিঃসন্দেহে লাকি। আর লাকি বলেই তো বিশ্বব্যাপী মানুষের এত উদ্দিপনা, এত আয়োজন। এই দিনটিতে একটি মানুষের জীবনে যা ঘটেছে, যা যা করছে মানুষটি তাই থাকবে তার স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত।
২য় দফা কারাবরণ :-
বিশ্বনাথের মাটি ও মানুষের হৃদ্রয়ের স্পন্দন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাবার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে বিএনপির পাঁচটি মামলা খেতে হয়েছে। বিএনপির দলীয় কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহিত হয়ে বিএনপির ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীসহ আমরা হত্যা মামলার আসামী হয়ে জেল কাটতে হয়েছে। ০৯-০৩-১৪ তারিখ আদালতে আত্নসমর্পণ করে জামিন না পেয়ে ২য় দফায় জেলে যেতে হলো। ১১ দিন পর আদালতের মাধ্যমে জামিনে ছাড়া পেলাম।
৩য় দফা কারাবরণ :-
২৭শে জানুয়ারী’১৫ ঈসায়ী তারিখ সকাল সাড়ে নয় টার দিকে আমার গ্রামের মসজিদে তাফসির মাহফিলের আয়োজন করা কালিন সময়ে মসজিদ বসে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত, এমন সময় বিশ্বনাথ থেকে এসে ধরে নিয়ে গেল আমার খুবই বন্ধুজন তৎকালিন ওসি সাহেবের পুলিশ বাহিনী। একটি মিথ্যে গাড়ী জ্বালানো মামলায় তিনদিন কম ছয় মাস পরে হাইকোর্টের মাধ্যমে জামিন নিয়ে বেরুতে হলো। অবশ্যই দুইবার থানা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে থানা নিয়ে গেলেও আমার সাথে অশোভন কোন আচরণ না করাতে বিশ্বনাথ থানা কর্তৃপক্ষে সাধুবাদ জানাই।
জেল জীবন :-
বিশ্বনাথ থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর এক করুণ অভিঞ্জতা শুরু হলো আমার জীবনে। মনোকষ্ট ও দৈহিক কষ্ট সাথে সাথে রাজনৈকিত অস্থিরতা ও স্নেহবান্ধব পরিবার-পরিজনকে ফেলে আসার মানসিক কষ্ট সব মিলিয়ে আমার জীবন হয়ে ওঠে দূর্বিসহ। বাড়ীতে, ব্যবস্যা প্রতিষ্টানে, রাস্তায় ও চলা ফেরায় পুলিশের হামলা। নিরাপদ আশ্রয় কোথাও নেই। অতএব জেলখানাকেই আপাতত: নিরাপদ ও জীবন সাথী করে নিয়ে এবং নিজেকে আল্লাহ’র আশ্রয়ে সমর্পণ করে হাজতি ও কয়েদি সাথীদের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াতে মনোনিবেশ করলাম। একে একে ছয়টি মাস চলে গেল অনুভব করতে পারি নি। আমি যে ওর্য়াডে (নিউ জেল-৩) থাকতাম তা ছিল সারা জেলের মধ্যে মর্যাদাশালী একটি ওর্য়াড। তার কারণ হলো এ ওয়ার্ডে আমার পরিবারভুক্ত সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সিলেটে যিনি ক্লীন ইমেজদারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে সর্বমহলে পরিচিত, এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ২০দলীয় জোটের সদস্য সচিব হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, নগর জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ, সিলেট (দক্ষিন) জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী, সাবেক দক্ষিন সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান, সিলেট (দক্ষিন) জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা লোকমান আহমদ, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী শাহজাহান আলী, শাহ জালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা সিলেট এর শিক্ষক মুফতি মাওলানা আলী হায়দার, মাওলানা মুশাহিদ আলী, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন দক্ষিন সুরমা উপজেলা সভাপতি সোহেল রানা, বিশ্বনাথ উপজেলা সভাপতি জাহেদুর রহমান, মহানগর শিবিরনেতা হাফিজ আব্দুল আজিজ, সাদিকুর রহমান সুমন, শামসুর রহমান জাবাল, আব্দুস সামাদ রনি, মাহবুব, জাবেদ মোল্লা, হাফিজ সুফিয়ানসহ প্রায় অর্ধশত জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। কুরআন তেলাওয়াত, ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়ণ, হাজতি ও কয়েদি সাথীদের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে চলতে লাগলো দিনগুলি।
মুক্তি হয়েও হচ্ছে না!
জামিন হয়ে যাবে, হয়ে যাচ্ছে এই অবস্থায় চলে আসলো রমযান মাস। ঈদের প্রায় সপ্তাহ খানেক পূর্বে দেখা করার জন্য জেল গেটে (স্ত্রী, তিন মেয়ে একমাত্র ছেলে ও ভাতিজাসহ পুরো পরিবার। কি এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ ও মান অভিমানের দৃশ্য। আমি কৌশলাদি জেনে সবাইকে স্বাভাবিক রাখার জন্য ঈদের মার্কেটিং করে যাবার জন্য সবাইকে উদ্যেশ্যে করে বলার পর এক পর্যায়ে ২য় মেয়ের (তাসনিমা ইসলাম খান আনিসা) অভিমানী প্রশ্ন ওহ আব্বা! ঈদের আগে আপনি বের হয়ে আসবেন না? আমি সংযত হয়ে খুশির ভান করে বললাম আমার উকিল চেষ্টা করছেন ঢাকায় ছাড়ার জন্য বিচারকতো ছাড়ছে না। পাল্টা জবাব আমরার এমপিদাদাও (জাতীয় জনতা পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট নুরুল ইসলাম খান তিনি আমার চাচা এজন্য এমপিদাদা) তো উকিল, তিনিকে কি বলবো আপনাকে ছাড়ানোর জন্য? আমি অসহায়ের মতো জবাব দিলাম তিনি চেষ্টা করেও পারছেন না। তখন হৃদয়নিংড়ানো আবেগ উজাড় করে আমার মেয়েটি বললো আপনি ঈদের আগে আসবেন না? তাহলে আমরা মার্কেটেও যাবো না? ঈদের কাপড়ও কিনবো না? এবার ঈদও করবো না। এ দৃশ্য দেখে মাওলানা লোকমান আহমদসহ অনেক পুলিশও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি! আমিতো এর আগে দুইবারে ২৯+১১ দিন এবং এবার সাড়ে পাঁচ মাস জেলে কাটালাম এতো কষ্ট পাইনি। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন আমার মেয়ের আবেগ ও অনুভুতির কথাটা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারতাম না, আর শুধু একটি চিন্তা বার বার ঘুরপাক খেত আমার কলিজার টুকরাগণ জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ জাতীয় ও স্থানীয় হাজারো হাজার নেতা-কর্মী এবং হাজারো হাজারো মানুষের পরিবারের এ কান্না আল্লাহর আরশে আযীম পর্যন্ত কাঁপতেছে নিশ্চয়ই? কিভাবে সারা দেশের নিরিহ-নিরপরাধ মানুষগুলোর পরিবার সহ্য করবে এ যুলুম-নির্যাতন? এর কি কোন শেষ নেই? আল্লাহ তায়া’লা কি মজলুমদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাবেন না?
পৃথিবীর বিজ্ঞান ভূখন্ডের বিভিন্ন পরিবেশে ইসলামী উম্মাহর অধিবাস হওয়ার ফলে স্বভাবতই তাদেরকে অনুকুল-প্রতিকুল বিভিন্ন সমস্যা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। কখনো তাদের জীবনে গতি সজীবতা ও প্রাণচাঞ্চল্য। কখনো আবার নেমে আসে সীমাহীন নির্র্জীবতা অবসাদ ও হীনস্মন্যতা। কখনো শিকার হয় সংঘাত সংঘর্ষের এবং নিপীড়ন-নির্যাতনেরা। কখনো বা মুকাবিলা করে তাহজীব-তমদ্দুন ও সভ্যতা-সংস্কৃতির মতো গুরুতর সমস্যার কিংবা বৈষয়িক ও রাজনৈতিক প্ররোচনা প্রলোভনের। জীবন কখনও হয় সম্পদ প্রাচুর্যে পরিপুর্ণ: আবার কখনো চরম দৈন্য ও দারিদ্র-পীড়িত। কখনো তাদের উপর চেপে বসে কোন স্বৈরাচারী ও জালিম শাসক। কখনো বা তাদের ভাগ্য নিয়ে পৈশাচিক খেলায় মেতে ওঠে রাজনীতির পাকা খেলোয়াড় দল। এমনি ধরনের আরো অসংখ্য সমস্যা জটিলতাও প্রতিকুলতা আছে তাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে। এ সকল সমস্যা. জটিলতা ও প্রতিকুলতার সকল মুকাবিলার জন্যই প্রয়োজন শক্ত ঈমানের। উহার প্রতিটি সদস্য ও শ্রেণীকে ত্যাগ ও কুরবানী এবং আনুগত্য ও সম্পর্নের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করা। মানুষ বুদ্ধি সর্বস্ব কোন জীব নয়, নয় প্রাণহীন কোন যন্ত্র। বরং বুদ্ধি ও হৃদয় বিশ্বাস ও অনুভূতি এবং আনুগত্য ও প্রেমের সমন্বয়েই মানুষের পূর্ণতা।
রোযা শুরু হলেই ঈদের আনন্দ আমাদেরকে পেয়ে বসে। সব সময় মনে হয় আর কয়টি দিন পরেই তো ঈদ। পুরো রোযার মাস নিয়ে চলে ঈদের ভাবনা। একটি হলো আনন্দের সাথে রোযা পূর্ণ করা। আর রোযা যে সাফল্যের সাথে আমরা পালন করছি তার স্বীকৃতিস্বরুপ এই ঈদুল ফিতর পালন করা। নতুন জামা-কাপড়, জুতা-মোজা কেনার পরিকল্পনা। ঈদের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে সে কি আনন্দ। জেল কর্তৃপক্ষ ঈদকে সামনে রেখে হাজতী ও কয়েদিদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য আনন্দ দেয়ার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা করেছে। গোটা জেলকে ঢেলে সাজাচ্ছে এবং আলোক সজ্জা করছে। জামায়াত-শিবির বেশী থাকায় জেলের সব কয়টি ওর্য়াডে নিয়িমিত জামায়াতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা হতো এবং সবকটি নামাযের জামায়াতের ইমাম জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা ছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষ একটু পরিবর্তন করে ঈদের জামায়াতের জন্য ইমাম নিয়োগ দিলেন সভা করে। আমাদের ভাগ্যে (নিউ জেল-৩ এ) ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেলেন ব্যক্তিগত একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিগত কানাইঘাট উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জমিয়তনেতা মাওলানা আলীম উদ্দিন। এর আগে তার সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা ছিল না। জানতাম জমিয়তের একজন কর্মী তিনি এতোটুক। সকাল ৯টায় এক সাথে সবকটি ওর্য়াডে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমরা যারা জেলের চার দেয়ালে বন্ধি আমাদের আবার কিসের ঈদ? তারপরও মযলুম হিসেবে বাধ্য হৃদয়ের গভীরে শত কষ্ট ভুলার চেষ্ঠার প্রস্তুতি নিয়ে দাড়ালাম ঈদের জামায়াত পড়তে। জামায়াতের পর এমন দৃশ্য প্রত্যাশা কেউই করেনি! ইমাম সাহেব যখন দোয়ার জন্য হাত তুললেন সর্বপ্রথম তিনিই বর্তমান সরকারের যুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে উচ্ছ কন্ঠে কান্না করে ফরিয়াদ করলেন। তখন প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি ছিলেন সবাই উচ্ছ স্বরে কান্না করে বলছে- ওহ আল্লাহ! আমরা নিরাপধ, রাজনৈতিক কারণে আজ আমাদের স্ত্রী, সন্তানাদি, পরিবার-পরিজন, আত্নীয়-স্বজন ছেড়ে চার দেয়ালের ভিতর ঈদ করছি, এ ঈদ আনন্দের নয়, এ ঈদে আমাদের কলিজায় আগুন জ্বলছে, আমরা এ কষ্ট সহ্য করতে পারছি না! আমাদেরকে মুক্ত করো, আমরা জালিমের এ যুলুমের অবসান চাই। বুঝ হওয়ার পর থেকে জীবনে যতটি ঈদ করেছি জামায়াত পরেই ঈদগাহে আনন্দের কোলাকোলি করেছি। কিন্তু এবার সেই জামায়াতের পর ঈদে কোলাকোলি করেছি এমন বুক ফাটা কান্নার মধ্য দিয়ে চোখের পানিয়ে ভিজে গেল সবার ঈদের আনন্দ। এমন এক হৃদয়বিদায়ক পরিবেশে উদ্যাপন করলাম জেলের ভিতর ২০১৫ সালের ঈদুল ফিতর।
লেখক:-
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মাসিক বিশ্বনাথ ডাইজেস্ট এবং সভাপতি, বিশ্বনাথ কেন্দ্রীয় সাহিত্য সংসদ ও বিশ্বনাথ সংস্কৃতি কেন্দ্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন