ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়া ১২ বছর বয়সের মেয়ের প্রশ্নে হুঁশ ফিরে এসেছে এক ঘুষখোর বাবার। তিনি এখন এ পথ থেকে সরে এসেছেন বলেও জানিয়েছেন।
জানা গেছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাবা সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কাছে একটি চিঠি লিখে তাতে তার ১২ বছরের মেয়ের করা একটি প্রশ্ন তুলে ধরেন। চিঠিতে ওই বাবা লেখেন, ‘আমার ১২ বছরের মেয়ে তনিমা একটি নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আমার সঙ্গে কথা বলতে খুব পছন্দ করে সে।
তার নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ফলে আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি ওকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। সে আমার নয়নের মনি। ওকে নিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে বেড়াতে যাই। নামকরা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া করি।
একবার তার মা এবং তাকে নিয়ে বিদেশেও ঘুরে আসি। একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে হঠাৎ তনিমা প্রশ্ন করে বসে, বাবা তুমি কি ঘুষ খাও?’
নিজের মেয়ের কাছে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম। কত পরীক্ষা দিয়েছি, কত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি, এমন প্রশ্ন আমার সামনে আসেনি। আমার পরীক্ষার প্রশ্নের তুলনায় আমার মেয়ের প্রশ্নটি সহজ হলেও এর উত্তর অনেক কঠিন।
এ প্রশ্নের উত্তর কি দেব ভাবছি। বললাম, তুমি ছোট মানুষ। এ প্রশ্ন করছ কেন? ঘুষের তুমি কি বোঝ? এরই মধ্যে আমার স্ত্রী এসে হাজির।
তনিমাকে বললাম, তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবে তোমার মা। তনিমা বলছে, মা কেন উত্তর দেবে। আমি বললাম, ঘুষ খাব কেন, এটা কি খাওয়ার জিনিস মেয়ে বলল, উত্তর হল না বাবা। তুমি ঘুষ খাও কি না সেটা জানতে চেয়েছি। সোজা প্রশ্ন।
এবার তনিমা প্রশ্ন করে বসে, তোমার বেতন কত বাবা? এই যে তুমি গাড়ি কিনছ, ফ্ল্যাট কিনছ, টাকা কোথায় পেলে? মায়ের এত গহনা কোথায় পেলে? লোকজন বাসায় মিষ্টি আনে, ফলমূল আনে, কি সব প্যাকেট আনে কেন এসব আনে বাবা?
চিঠিতে ওই বাবা বলেন, মেয়ের এক প্রশ্নে আমি আজ জেগে উঠেছি। আমার মধ্যে অজানা আশঙ্কা ভর করেছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন। যার জন্য এতকিছু করছি, সেই আজ প্রশ্ন তুলছে। বলছে চোর।
সত্যিই আজ আমার নিজেকে চোর মনে হয়। যে পথে গিয়েছিলাম, সে পথ থেকে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করলাম। তনিমা আমার চোখ খুলে দিল। এখন আমি অফিস শেষ করে মেয়েটার হাত ধরে বিকালে হাঁটি। নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করছি। দুদকের গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে জানান, একজন ঘুষখোর বাবা দুদক চেয়ারম্যানের কাছে নাম ছাড়া চিঠিটি দিয়েছেন। তবে তাতে একটি টেলিফোন নম্বর দিয়েছেন। আমরা ওই ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করব। তবে তাকে নিয়ে আমরা কোনো ধরনের অনুসন্ধানে যাব না। কারণ, ওই বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন।
https://goo.gl/ydxLwm
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন