Bangladesh Barta: তাবৎ সৃষ্টির মাঝে সবচাইতে বিষ্ময়কর ও সুন্দরতম সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। সর্বাধিক আকর্ষণীয় ও সুন্দর এই মানব দেহ অজস্র মেকানিজমে ভরপুর। পবিত্র কুরআনে মানব দেহের সৃষ্টি কৌশল বর্ণনা দিয়ে স্বয়ং আল্লাহ পাক বলেছেন ‘আমি মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে তৈরি করেছি।’
সর্বাধিক কলাকৌশলে ভরপুর ও সুন্দরতম দেহাকৃতি এটা মানুষের জন্য আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সৃষ্টিকূলের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের নানাবিধ কারণের মধ্যে দেহাবয়ব অন্যতম। আল্লাহ পাক মানুষকে সুন্দর একটি দেহ দান করেছেন কিন্তু এই নেয়ামত রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের নিজের।
মানব দেহ গঠন ও এর সুষ্ঠু কার্যক্রম নির্ভর করে সঠিক পরিচর্যার উপর। এবং এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা বা নিয়ম মেনে চলা। মনে রাখতে হবে যেখানে অনিয়ম সেখানেই বিশৃংখলা। মানব দেহ বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়, বিভিন্ন রোগের নামও আমাদের জানা। এই যে রোগ-ব্যাধি এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষা। এটাকে ভিন্নভাবে বলা যায় ‘বিশৃংখলা’। মানব দেহের বিভিন্ন বিশৃংখলাই বিভিন্ন রোগ নামে পরিচিত। সুতরাং রোগ থেকে মুক্তি বা নিরোগ স্বাস্থ্য গঠনে প্রধান করণীয় হচ্ছে নিয়মানুবর্তিতা বা শৃংখলা মেনে চলা।
আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর এবাদতের জন্য। ইসলামী জীবন যাপন পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার এবাদত পালন করতে হয়। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়াও প্রতিটি এবাদতে হাজারো বৈষয়িক ফায়দা আছে।
আল্লাহ পাক কর্তৃক নির্ধারিত একটি ফরজ এবাদত হচ্ছে মাহে রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা বা রোজাব্রত পালন করা। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রোজা নিয়ে হাজারো গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। সকল প্রকার গবেষণায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, রমজানের নিয়মানুবর্তিতা স্বাস্থ্য সম্মত এবং সুষ্ঠু স্বাস্থ্য গঠনে এর বিকল্প নেই। ভোর রাত্রে সেহেরি রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেহেরি শেষ করতে হবে। সেহেরির পরপরই মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেছে যে, ভোরে শয্যা ত্যাগ এবং ভোরের মুক্ত আবহাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
পানাহারের মাধ্যমে রোজ ভঙ্গ করার নাম ইফতার। এবং এটা সূর্যাস্তের সাথে সাথেই করতে হয়। ইফতারে বিলম্ব শরিয়ত সম্মত নয়। পানি পান এবং খেজুর খেয়ে ইফতার করার ফজিলতের বিভিন্ন বর্ণনা হাদিস শরীফে এসেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মানব শরীর গঠনে পানির কোন বিকল্প অদ্যবদি খুঁজে পায়নি। একইভাবে খেজুরের খাদ্য মানও অপরাপর অনেক খাদ্যের তুলনায় বেশি।
রোজার যাবতীয় কার্যক্রমে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সময় গুণে গুণে সেহেরি খেতে হয়, ইফতার করতে হয় ঘড়ির কাঁটায় সেকেন্ড মিনিট হিসেব করে বা উন্মুক্ত স্থানে বসে সূর্যাস্ত দেখে। একইভাবে পানাহারে চরম কৃচ্ছ্রতা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সুতরাং পানাহারের ক্ষেত্রে রোজাদারকে চরম কৃচ্ছতা সাধন করতে হয়। দিনের বেলায় কিছু না খেয়ে ইফতারে বা ইফতারের পরে ভিন্ন স্বাদের নানা রকম খাদ্যে ভুরিভোজন রমাজনের শিক্ষার পরিপন্থী। সারা দিন খেতে না পারাটা ইফতারে পুষিয়ে নেয়া সিয়াম সাধনা নয়।
সারাটা দিন গোসলের সময়, অজুর সময় একজন রোজাদারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয় ভুলে মুখ থেকে যেন পানি ঢুকে না পড়ে। একইভাবে কথা বলার সময় সর্বক্ষণ সতর্ক থাকতে হয় অশ্লীল কোন একটি শব্দও যেন মুখ দিয়ে বেরিয়ে না আসে। রোজা রেখে অশ্লীল কার্যক্রম দূরে থাকা মুখ দিয়ে অশ্লীল শব্দ উচ্চারণও নিষিদ্ধ। এভাবে রোজা মানুষকে সুনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার এই যুগে রোজার উপবাসকে সাধারণ উপবাস হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। এর বিপরীত এটা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানব স্বাস্থ গঠন ও আত্মার উৎকর্ষ সাধনে রোজার অনুশীলন অপরিহার্য। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, ডায়াবেটিস আছে এমনকি গর্ভবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রেও রোজা ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়নি। এর বিপরীত বিভিন্নভাবে রোজা কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। দুর্ঘটনা, অপারেশন, অতিবৃদ্ধ, শিশু এ সব ভিন্ন বিষয়। এই জন্য মুসাফির এবং রুগ্ন ব্যক্তিদের জন্য পরবর্তীতে রোজা পালনের অপশন রাখা হয়েছে।
রোজার মৌলিক শিক্ষা নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলাবোধ এবং সংযম। মানব দেহের গঠন এবং সুস্থতা নির্ভর করে এসবের উপরই। মাসব্যাপী সম্মিলিতভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দেহ, মন-আত্মা গঠনের যে প্রশিক্ষণ, পরবর্তী এগার মাস সে হিসেবে জীবন যাপন করলে নিরোগ জীবন যাপন সম্ভব।
রমজান মাস সংযমের মাস। পানাহারসহ জীবনের সংযমী হতে পারলে রোগের ভয় থাকার কথা নয়। হোক তা দেহের কিংবা মনের এবং এটাই রমজানের মৌলিক শিক্ষা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন