বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ফুলকপি একটি অতিপরিচিত শীতকালীন সব্জি। মজাদার সব্জি হিসেবে প্রত্যেকের কাছে খুবই প্রিয় হলেও অনেকে জানেন না শরীর গঠনে এর বহুমুখি গুণের কথা। ক্যান্সার, হৃৎরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি জটিল রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও গর্ভবতী মহিলা ও ভ্রুণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফুলকপি বেশ উপকারী। ফুলকপি ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত ব্রাসিকা অলেরাসিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এটিই এর বৈজ্ঞানিক নাম। ফুলকটি একটি মৌসুমী ফসল, বীজের মাধ্যমে এর চাষ হয়। মূলত শীতকালের প্রধান সব্জি হলেও বর্তমানে গ্রীষ্ম মৌসুমেও ফুলকপির চাষ হচ্ছে।
নামকরণ : নামকরণ সম্বন্ধে ধারণা করা হয় যে, ফুলকপির মূল সাদা অংশ, যেটি সবুজ পাতা দিয়ে ঘেরা থাকে, দেখতে ফুলের মত, তাই এর নাম ফুলকপি। ফুলকপির বিভিন্ন প্রজাতি আছে। আমাদের দেশেও প্রায় পঞ্চাশ প্রকার জাতের ফুলকপির চাষ হয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সাদা, হলুদ, বেগুনি, সবুজ, কমলা বিভিন্ন রঙের ফুলকপিও জান্মায় সারা বিশ্বে।
কী খাওয়া যায় : ফুলকপির কোন অংশই ফেলনা নয়। সাধারণত পাতা-আবৃত এর সাদা অংশই খাওয়া হয় বেশি। ফুলকপির পুরো সবুজ পাতা, ডাঁটা ইত্যাদি মজাদার তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়।
কীভাবে খাওয়া যায় : তরকারি, ভাজি, সালাদ, বিভিন্ন ধরণের স্যুপ তৈরি করে, কারি-বড়া হিসেবে ফুলকপি রান্না, সেদ্ধ, আধা সেদ্ধ, এমনকি কাঁচাও খাওয়া যায়। তবে পুরো সিদ্ধ না করে আধাসেদ্ধ করে খাওয়াই উত্তম। এতে ফুলকপির যথাযথ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। ফুলকপি দিয়ে মজারদার আচার তৈরি করা হয়।
পুষ্টিগুণ : ফুলকপি একটি বহুমুখি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সব্জি। বিভিন্নভাবে পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একটি মাঝারি সাইজের ফুলকপিতে রয়েছে- কার্বোহাইড্রেট- ৪.৯৭গ্রাম, শক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি, প্রোটিন-১.৯২ গ্রাম, ফ্যাট-০.২৮ গ্রাম, আঁশ-২গ্রাম, ফোলেট ০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন- ০.৫০ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন- ০.০৫ গ্রাম, প্যাথানিক এসিড- ০.৬৬৭ মাইক্রোগ্রাম।
প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম, খনিজ লবণ ১. গ্রাম। অর্থাৎ ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাসিয়াম, ফসফরাস ও খনিজ উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন প্রকার প্রচুর ভিটামিন- ভিটামিন- এ, ভিটামিন- বি, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- কে, ভিটামিন- বি৬, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফাইটকেমিকেলসহ নানা পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর ফুলকপি। এতে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, প্রোটিন, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি।
ফুলকপিতে পানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ৮৫%। কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট ও প্রোটিনের পরিমাণ স্বল্প। ক্যালোরির পরিামাণ খুবই কম, প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৩১কিলোক্যালরি। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ উপকারী।
হৃৎপিণ্ড : হৃৎপিণ্ড ভালো ও সতেজ রাখার মতো যতেষ্ট উপাদান আছে ফুলকপিতে। এতে রয়েছে সালফারের যৌগ সালফোরাফেন যা বহ্মাড প্রেসার বা রক্তচাপ কমায়, ধমনির ভেতরে প্রদাহ রোধ করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপি : ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ শরীরে রোগ প্রতিরোধ মতা কমে যাওয়া। ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া ফুলকপিতে আছে সালফোরাফেন নামক এক প্রকার উপাদান যা ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করে এবং টিউমার বৃদ্ধি প্রতিহত করে। ফুলকপি মূত্রথলি, পাকস্থলি, প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাষয় ক্যন্সার প্রতিরোধ করে। হলুদ যোগ করে ফুলকপি আহার করলে প্রেস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ও রিস্ক কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ফুলকপি খেলে মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৪০% ভাগ কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের রসওয়েল পার্ক ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা সপ্তাহে অন্তত ৩ বার ফুলকপি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গবেষকরা ফুলকপির পাতায় আইসো থায়োসায়াননেটস নামক একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন। যা ক্যান্সারে রূপ নেয়ার আশংকা আছে এরকম টিউমার আরোগ্য করে এবং মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষকরা সপ্তাহে দু পাউন্ড ফুলকপি বা এজাতীয় সব্জি খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। ফুলকপির কচি পাতা সপ্তাহে এক আউন্স বা তার কিছু বেশি খেলে দেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। বাল্টিমোর জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা এই গবেষণা চালিয়েছেন। এছাড়াও ফুলকপিতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিয়েন্টস যা শরীরের জ্বালাপোড়া বা দহন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটাও একপ্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধক।
মস্তিষ্কের সুরক্ষায় : ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদান কোলাইন মস্তিষ্ক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোলাইন মস্তিষ্কের কগনিটিভ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, দ্রুত কোন কিছু শিখতে পারে, বয়স বাড়ার কারণে মানুষের যে স্মৃতি বিভ্রাট দেখা দেয়, তা কমায়। ফুলকপিতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গর্ভবতী মহিলা : গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি ভাল সব্জি ফুলকপি। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ফুলকপি খেলে ভ্রুণের কোষবৃদ্ধি, ভ্রুণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ভ্রুণের মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে।
হজমশক্তি : ফুলকপিতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় দারুণ কার্যকর। এছাড়াও আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফোরাফেন জাতীয় উপাদান যেগুলি পাকস্থলির প্রাচীরের সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকেটরিয়া জন্মাতে দেয় না, ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এর ফলে পাকস্থলির আলসার এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক : ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন সি, বিটাক্যারোটিন, সিনামিক এসিড প্রভৃতি উপাদান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুকে নানাভাবে সুরক্ষা দিয়ে থাকে, ফলে অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ সহজ হয়।
চর্বি কমায় : ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন সি ফ্যাট বার্ন করতে কার্যকর। উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় কোলেস্ট্রল কমায় এবং কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওজন কমায় : ফুলকপিতে শর্করার পরিমাণ খুবই কম। এছাড়া ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন সি ও ফলিক এসিড শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে দারুণ কার্যকর।
ক্ষত নিরাময় : জিংক থাকার কারণে ফুলকপি দেহে নতুন কোষ তৈরি করে। এর ফলে ক্ষত নিরাময় সহজ হয়।
দাঁত ও হাঁড়ের গঠন : ফুলকপিতে থাকা ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ফ্লুরাইড দাঁত ও হাঁড়ের গঠনে সহয়তা করে, দাঁত ও হাঁড় শক্ত ও মজবুত করে। দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়।
ক্ষত : দেহের কোথাও কেটে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে ফুলকপির পাতার রস লাগালে ত শুকিয়ে যায়।
চর্মপীড়া : শীতের ঠাণ্ডায় যদি ত্বক লালচে বর্ণ ধারণ করে, চুলকায় ও ফুয়ে যায় ফুলকপির পাতা বেটে ত্বকে লাগালে চুলকানি কমে যায়, ত্বক ভাল হয়ে যায়।
আথ্রাইটিস : ফুলকপিতে থাকা গ্লোকোরাফানিন আথ্রাইটিস প্রতিরোধ করে।কোষ্ঠকাঠিন্য : ফুলকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
জিহ্বায় ঘা : ফুলকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- বি ও ভিটামিন- সি। জিহ্বার ঘা, তালুর উপর-নিচের চামড়া ছিঁড়ে যাওয়া, উঠে যাওয়া ইত্যাদি প্রতিরোধে ফুলকপি একটি কার্যকর সব্জি।
চোখ ও ত্বক : ফুলকপিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন- এ থাকে। যা চোখ, ত্বক ও মাথার চুলের জন্য বিশেষ উপকারী।
শীতকালীন নানা উপসর্গ যেমন ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি, হাঁচি, জ্বর ও জ্বর জ্বরভাব, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক-কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, শরীরে ব্যথা ইত্যাদি নিরাময়ে ফুলকপি সহায়ক। কারণ ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন- বি, ভিটামিন- সি এবং ভিটামিন- কে।
ভিটামিন- কে : রক্ত জমাটবাঁধার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন- কে, যা ফুলকপিতে পাওয়া যায়।
সোডিয়াম : ফুলকপিতে থাকা সোডিয়াম রক্তের ঘনত্ব ঠিক রাখতে সাহায্য করে
আয়রন : ফুলকফিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায়, দেহে রক্ত তৈরিতে যা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে, বাড়ন্ত শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য ফুলকপি বেশ প্রয়োজন।
উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের রোগী আনায়াসে ফুলকপি খেতে পারেন এবং ফুলকপি তাঁদের জন্য খুবই ভাল কাজ করবে।
বাচ্চারা সাধারণভাবে রান্না করা বা ভাজি করা সব্জি একটু কম পছন্দ করে। তাদেরকে অভ্যাস বিভিন্নভাবে অভ্যাস করানো যায়। যেমন স্কুলের টিফিনের সাথে ফুলকপির কারি বড়া তৈরি করে দেয়া যায়।
সতর্কতা : কিডনি রোগী এবং থায়রয়েড সমস্যায় যারা ভোগেন, ফুলকপি আহারে তাদের একটু সতর্ক হতে হবে। ফুলকপিতে থাকা পটাশিয়াম, আমিষ, প্রোটিন কিডনি রোগীর জন্য কিছুটা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
নইম কাদের
চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮, ০১৯৯১ ৯৪ ৮৫ ৯১
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮, ০১৯৯১ ৯৪ ৮৫ ৯১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন