জঙ্গি শব্দটি অতিপরিচিত। জঙ্গ শব্দটি ফার্সি শব্দ। উর্দু ও ফার্সিতে শব্দটি লড়াই বা যুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়। জঙ্গ মানে যুদ্ধ আর জঙ্গি মানে যোদ্ধা,লড়াকু। ইংরেজীতে “মিলিটেন্ট”। ফার্সি ও উর্দুতে এটি পজেটিভ শব্দ। নিজেদের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় বা যারা অবিচার অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে । তবে গোটা দুনিয়াতে এরা নিজেদেরকে মুক্তিকামী দাবী করলেও সরকারী ভাবে তাদেরকে জঙ্গি হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়। যেমন কাস্মিরের জনগন স্বাধীন ভূখন্ড অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে, যদিওবা তারা ভারত সরকারে চোখে ‘আতঙ্কবাদী’। আবার বাংলাদেশী জনগণ পাকিস্তানী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছিল পাকিস্তান স্বৈরশাসকের দৃষ্টিতে দেশদ্রোহী। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। মায়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে এরা জঙ্গি। এ ধরণের একটি পজেটিভ শব্দ আমাদের দেশে নেগেটিভ সেন্সে ব্যবহৃত হয়। এখানে জঙ্গি মানে যারা আকস্মিক ভাবে কারো উপর হামলে পড়ে। জনজীবনকে বিষিয়ে তোল, উগ্রতার মাধ্যমে এক ভয়াল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। যাদেরকে সবাই বিপদজনক বলে মনে করে। এদের মধ্যে কোন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে লড়াই করে আবার কোন গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালের কোন দেশী-বিদেশী অপশক্তির হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহৃরিত হয়ে থাকে। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের দেশে হয়েছেও তাই।
সম্প্রতি জঙ্গি বা মিলিটেন্ট শব্দটির অপব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে । সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের পিছনে এই শব্দটি জুড়ে দিয়ে ইসলাম ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদেরকে সংঘটিত সকল অঘটনের মূল হিসাবে চিত্রায়িত করা এবং দাড়ি,টুপি,পাগড়ী ও হিজাব ধারীদেরকে আতঙ্ক হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জঙ্গি বা আত্মঘাতি দলের সদস্য বলে অবহিত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট জেহাদী বা উস্কানী মূলক বই পাওয়ার দাবী করা হচ্ছে। এটি মুসলমানদের নামে জঙ্গি তকমা লাগানোর ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ বলে মনে হয়। কারণ আমাদের দেশে সরকারী ভাবে যে জঙ্গি পরিচয়ের ধারণা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা যদি সত্যিই হয়েও থাকে তাহলে এর সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম কারো উপর জবরদস্থি মূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার জিনিস নয়। যেটি রাসুল( সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তিনি করেননি। ইসলাম হল শাস্বত জীবন বিধানের নাম। কুরআনের ভাষায় “ইন্নাদ দ্বীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম” নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলাম মানুষের প্রকৃতজাত ধর্ম। অসি নয় মসিতেই ইসলামের বিজয় হয়েছে। রাসুল (সঃ) কখনো কোন যুদ্ধে নিজে থেকে শত্রু পক্ষকে আক্রমণ করেননি, যতক্ষণ না নিজে আক্রান্ত হননি। মানুষকে ইসলামাইজ করেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে। ফিতনা (অর্থ : প্রলোভন, দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধ, শিরক, ধর্মীয় নির্যাতন ইত্যাদি) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’’ [সূরা বাকারা : ১৯১] । অকারণে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা। আমাদের দেশে যারা প্রতিনিয়ত সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করে যাচ্ছে তাদেরকে প্রচলিত দেশীয় অর্থে প্রকৃত ফেতনাবাজ বা জঙ্গি বল্লে অত্ত্যুক্তি হবেনা। এরা রাষ্ট্রীয় মদদে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। হত্যাকারীর স্থান হবে জাহান্নামে উল্লেখ করে কুরআনে বলা হয়েছে, “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু’মিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে।’’ [সূরা নিসা : ৯৩] বিনা কারণে মানুষ হত্যার কোন সুযোগ নেই ‘‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’’ [সূরা মায়িদা : ৩২] অশান্তি সৃষ্টি করতে নিষেধ করে আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন ‘‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না।’’ [সূরা আরাফ : ৫৬] যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে লা’নত এবং মন্দ আবাসের হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে। [সূরা রা’দ : ২৫] রাসুল (সঃ) রক্তপাত সম্পর্কে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।” [বুখারি : ৬৩৫৭]।
একদল জঙ্গি,উগ্রপন্থী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তখন তৈরী হয় যখন রাষ্ট্র বা কোন বিশেষ শক্তি স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে তাদের নেপথ্যে শক্তি হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রীয় মদদে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তারা সরকার পক্ষের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই সুবাদে তাদের অবৈধ কর্মকান্ডকেও রাষ্ট্র বৈধ হিসেবে স্মীকৃতি দেয়। তখন রাষ্ট্রের অবস্থা এত খানি ভঙ্গুর হয় যে,তাদের সংঘটিত অপরাধ কোন আইন আদালতের কাছেও অবৈধ বলে বিবেচিত হয় না। যাদের জন্য সাত খুন মাফ। যেহেতু তারা সরকারী লোক। গণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক উভয় রাষ্ট্রে উগ্রবাদের জন্ম হয়। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকরা যখন তাদের মত স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করতে পারেনা, সুশাসন থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়। যখন অহেতুক সাধারণ মানুষের উপর দমন-পীড়ন চলে তখন দেশের স্বাধীনচেতা মানুষদের একটি অংশও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে, নানা উগ্র-কৃত্তি কান্ডের মাধ্যমেও তাদের মত প্রকাশ করতে চেষ্টা করতে পারে।
ক’বছর ধরে দেশে জঙ্গি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণত আলেম-ওলামা ও যুবসমাজের একাংশ এমন কাজে জড়িত বলে খবরে প্রকাশ হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে কারা জঙ্গি? সরকারের তরফ থেকে তাদের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য জাতির সামনে খোলাসা করছেনা। কারণ জঙ্গি হিসাবে যাদের চিহিৃত করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিকে হত্যা করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য মতে কথিত জঙ্গিরা অত্যন্ত বিপদ জনক, তাদের সাথে গোলা বারুদ ও আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র থাকার কারণে তাদের জীবিত গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা। বিষয়টি যদি সত্যিও হয়ে থাকে তা হবে দেশের জন্য মারাত্মক হুমকী। তবে প্রশ্ন উঠেছে সারা বছর জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের কথা সরকার প্রধানসহ সরকারের তরফ থেকে বলা হলেও ঠিক প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে জঙ্গি দমনের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠার হেতু কি ? আর কেনইবা একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলছে? দেশের গোয়েন্দা বাহিনী কি এসব বিষয়ে একেবারেই বেখবর? নাকি এই ইসূুটি বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য ট্রাম্পকার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে? এসব কারণে জঙ্গি ইস্যুটি নিয়ে সমগ্র দেশবাসী ধুয়াশার মধ্যে রয়ে গেছে। আমার মতে, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রধান দেশ। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি অটুট রয়েছে। দেশটিতে অদূর ভবিষ্যতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই সমূহ সম্ভবনাকে ধূলিসাৎ করতেই পরিবেশ ঘোলাটে করে চলমান জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের আমদানী করতে কোন মহলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়াও সরকারী দলের একটি গোষ্ঠী সাংঘাতিক জঙ্গিপনা ও মানবতা বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত। যাদের অপতৎপরতায় জন জীবন বিষিয়ে উঠেছে। প্রতিপক্ষকে হত্যা, গুম ও আক্রমণের পাশাপাশি নিজের দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম ও আক্রমণ করে মারাত্মক ভাবে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন আইন প্রয়োগ হতে লক্ষ্য করা যায়না, এদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও জামাই আদরে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। সরকার সমর্থক এই গোষ্ঠী টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, ব্যাংক ডাকাতি, গুম করে মুক্তিপণ আদায়, শিক্ষক লাঞ্চনা, ছাত্র নির্যাতন, ছাত্রী নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রকৃত পক্ষে এরাই জঙ্গি, এরাই উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রই যেখানে অপরাধীদের পৃষ্টপোষক সেখানে এদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করবে কে?
দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে মিডিয়ার একটি অংশ প্রতিনিয়ত আজগুবি চটকদার সংবাদ পরিবেশন করছে। তাদের ভাষ্য মতে দেশে এত বেশী জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটেছে যে, দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান হতে চলছে। আরেকটি অংশ সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে প্রকৃত সত্য পরিবেশন করছেনা, নেহায়াত সরকারের তরফ থেকে যা প্রচার করতে নির্দেশ দেয়া হয় স্রেফ তাই তারা প্রচার করছে। এরা দোষীকে সাধু বানায় আর নিরহকে বানায় জঙ্গি, বোমারু! ডাহা মিথ্যাকে সত্যের প্রলেপ দিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অবারিত চেষ্টা করছে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে দেশে কোন আই এস আই নেই। সরকার বলছে এসব অঘটন বিএনপি জামায়াতের ছত্র-ছায়ায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ,হুজি ও জেএমবি ঘটাচ্ছে। অথচ ঢাকার গুলশানে,কল্যাণপুরে, চট্রগ্রামের সিতাকুন্ডে এবং সিলেটের জালালাবাদের ঘটনার দায় আই ,এস,আই তাদের মুখপাত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাদ দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম সংস্থা সাইড ইন্টিলিজেন্স এ স্বীকার করেছে!
ধর্মকে বা ধর্মের সাথে রিলেটেড বিষয় গুলো নিয়ে বিষেদগারের করা নাস্তিকদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এমন স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়েই অনেক সাধারণ মুসলমান অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইনে উস্কানী মূলক লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমেও সহজ সরল ঈমানদারদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলছে কথিত নাস্তিক শ্রেণী। এসবকেও জঙ্গিবাদের উত্থান বলে চালিয়ে দেয়া হয়। আর এসব ঘটনাকে তাল-গোল পাকিয়ে মুসলমানদেরকে জঙ্গি তকমা লাগানোর ঘৃণ্য চেষ্টা চলছে। যারা স্বাধীনচেতা মনোভাবের নামে আরেকজনের বিশ্বাসের উপর কুঠারঘাত করছে তাদের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ অনেকটা বক্তব্য সর্বস্ব।
এহেন জটিল পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের কারো জন্য সুখকর নয়। কোথাও বোমা মেরে বা কিছু লোককে হত্যা করে কোন উগ্রপন্থী বা জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামের নামে রাষ্ট্রে প্রতিষ্টা করে ফেলবে এটি নেহায়াত আজগুবি কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ কোন গোষ্ঠী এধরণের জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনা। তাই এমন কোন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের সুশীলদেরকে এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত যারা তারা অনির্বাচিত আর যারা সুশীল হিসেবে বুলি আওড়ায় তারা কুশীল হিসেবেই ভূমিকা রাখতে পটু। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ দমনে রাষ্ট্র,সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে-
প্রথমতঃ আগামী প্রজন্মকে জাগতিক জ্ঞানের পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আমাদের চলমান শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ দুনিয়াবী কর্মমূখী শিক্ষার পাশাপাশি পরকালীন জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে। ভাল-মন্দের ফারাক বুঝতে সক্ষম হয়। কেবল মাত্র ধর্মীয় শিক্ষার্জনের মাধ্যমেই সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎ সাহস অর্জন করে। অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সৎ সহস অর্জন করে।
দ্বিতীয়তঃ ধর্ম চর্চার সুষ্ট পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যে যার যার ধর্ম পালন করবে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা কোন গোষ্ঠী যেন কোন ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এক ধর্মের জনগোষ্ঠীরা যেন আরেক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর এমন কোন বিরুপ মন্তব্য বা আক্রমণাত্বক ভূমিকা প্রদর্শন করতে না পারে, যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি নষ্ট হয়। কেউ ধর্ম পালন করুক না করুক সেটা তার অধিকার বলে কেউ দাবী করতে পারে,তবে ধর্মের বিরুদ্ধে এমন ভূমিকা রাখতে দেয়া ঠিক নয়, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।
তৃতীয়তঃ রাজনৈতিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা বিপত্তি দেয়া চলবেনা। স্বাধীন মত প্রকাশ, সভা সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে। বাঁধা বিপত্তি হীতে বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ মানুষ যখন মত প্রকাশের অধিকার পায়না তখন মত প্রকাশের ভিন্ন উপায় খুঁজে নেয়। তাই রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করা উচিৎ। এ ছাড়াও সুষ্টুভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগও থাকতে হবে।
চতুর্থতঃ জঙ্গিপনা বা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারের কোন সদস্য উগ্রবাদে লিপ্ত হচ্ছে কিনা? কারা তাদের সঙ্গ দিচ্ছে? তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ খবর রাখতে হবে। আমার ধারণা, ভূল ভাল বুঝিয়েও যা ইসলাম নয় তা ইসলাম হিসেবে মস্তিস্ক ধোলাইয়ের অপচেষ্টা করছে কোন স্বার্থান্বেষী মহল।
পঞ্চমতঃ যারা ইসলামের পক্ষ শক্তি হিসেবে দাবী করে অথচ ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ বিনা কারণে ইসলামের দোহায় দিয়ে কিছু লোককে হত্যা করলে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে ভাবা নেহায়াত বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম এমন কোন ঠুনকো জিনিস নয় যে অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে!
ষষ্ঠতঃ ইসলামী দল, সংগঠন, সংস্থাকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর ভয়াবহতা ও অনিষ্টকর দিকগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে বুঝাতে হবে। ইসলামের জিহাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এক নয়, একথা বিশেষ করে মুসলিম যুবকদের মাঝে কাউন্সিলিং করতে হবে। জঙ্গিবাদের সাথে সত্যিকার ইসলামপন্থীরা জড়িত নয়। তাই সরকারকে জঙ্গিবাদ দমনের জন্য প্রকৃত ইসলামী শক্তি, ইসলামী দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে এবং তাদের সাথে নিয়েই কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। ইসলামী শক্তি ও দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যে ইসলামী আদর্শ, ইসলামী শিক্ষালয় সমূহকে ঢালাওভাবে জঙ্গি আখড়া, জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র, মৌলবাদী অভয়ারণ্য বলার মত উস্কানিমূলক বক্তব্য সরকারকে বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সরকারী দলের মাথায় ঢুকেছে যে, ইসলামী দল মানে রাষ্ট্র বিরোধী । তাদেরকে সভা-সমাবেশ সহ বৈধ কোন কর্মকান্ড করতে দেয়া যাবেনা।তাদের ধারণা সুষ্টু রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ দিলে ইসলামী দলসমূহ ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার আশঙ্কা আছে,তাদের এহেন স্বৈরাচারী মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে।
সপ্তমতঃ সরকারের উচিৎ কোন প্রকার টালবাহনা না করে বা কোন পক্ষ বিপক্ষ না নিয়ে দেশ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জঙ্গি,সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের তৎপরতা জাতির সামনে পরিস্কার করতে হবে এবং প্রকৃত দোষীদের যথা যথ শাস্তির বিধান করতে হবে।
নাইন ইলিভেন সংঘটনের পেছনের শক্তি কারা? কারা আই,এস,আই এর প্রতিষ্ঠাতা শক্তি? কারা আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ আমদানী করেছে? ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বিবেকবান মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। ধীর ধীরে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে। মুলত ইহুদী, খৃষ্টান ও জয়নবাদীদের যৌথ প্রযোজনায়, সমগ্র দুনিয়াব্যাপী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের ইসলামের প্রতি আগ্রহকে ভীতিতে পরিণত করছে এবং মুসলিম বিশ্বব্যাপী গোলযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থনৈতিক পরিমন্ডলকে এরা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব অপশক্তি মুসলমানদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ফায়দা লুঠছে। এখুনি মুসলিম মিল্লাতের সজাগ হবার সময়, যে যার অবস্থান থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার।