ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে আমীরে জামায়াতের বিবৃতিঃ গুম হওয়া সকলকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বানঃ


বাংলাদেশ বার্তাঃ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫জন নেতা-কর্মীসহ সারা বাংলাদেশে গুম হওয়া সকলকে তাদের পরিবার-পরিজনদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বানঃ

৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ উপলক্ষ্যে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫জন নেতা-কর্মীসহ
সারা বাংলাদেশে গুম হওয়া সকলকে তাদের পরিবার-পরিজনদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেনঃ-
“আজ ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের হিসেব মতে বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী-ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মোট ৪ শত ৩২ জন মানুষকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা অপহরণ করে গুম করেছে। তাদের মধ্যে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ২শত ৫০ জনের। অজ্ঞাতবাস থেকে যারা ফিরে এসেছেন তারা কেউই অপহরণকারীদের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। যারা গুম হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পুত্র সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান
আযমী, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীর পুত্র সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার আরমান আহমদ বিন কাসেম, হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস, মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ এবং বিএনপি’র নেতা জনাব ইলিয়াস আলী ও সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমসহ আরো অনেক নেতা-কর্মী।  যারা গুম হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজন অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন যাপন করছেন। অনেকেরই পিতা-মাতা এবং স্ত্রীসহ আপনজন শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট আবেদন-নিবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
সরকারের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার গুম হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিক সম্মেলন করে আপনজনকে পরিবারের নিকট ফেরত দেওয়ার জন্য বক্তব্য দেওয়া সত্ত্বেও সরকার কোন সাড়া দিচ্ছেন না।
গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবার-পরিজনদের আর কষ্ট না দিয়ে তাদের পরিবারের নিকট অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ উপলক্ষ্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

জামায়াত কি রাজনীতির ‘ডি-ফ্যাক্টো’ হয়ে উঠছে?



বাংলাদেশ বার্তাঃ আকৃতি, কাঠামো বা জনসমর্থনের দিক  থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মুলধারার বড় দল হলেও সর্ববৃহৎ দল নয়। কিন্তু এরপরও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিগত ১০ বছর সরকারের চাপে এক রকমের কোনঠাসায় পড়ে থাকা জামায়াত যেন আবার আলোচনায় ফিরে আসছে। ইতোমধ্যেই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সূচী ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। সঙ্গে সঙ্গেই রাজনীতির ময়দানে শুরু হয়ে গেছেনানা হিসেব-নিকেশ। জোট গড়া আর ভাঙ্গার নতুন সমীকরণ।
২০০০ সালে যে চারদলীয় জোট গঠিত  হয়েছিল জামায়াত ছিল তার অন্যতম নিয়ামক। সেই জোটের প্রয়োজনীয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা পরবর্তীতে উপলব্ধি করা যায় যখন ২০০১ সালের নির্বাচনে এই জোট দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী আসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। সেই সরকারে বা জোটে জামায়াত কখনোই সমানুপাতিক হারে মুল্যায়ন পায়নি। জামায়াতকে দেয়া হয়েছিল মাত্র দুইটা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের অন্যন্য প্রতিষ্ঠানেও জামায়াতের কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারপরও জামায়াত জোটে ছিল। জোটের সব অর্জন ও ব্যর্থতার দায় নিয়েই তাকে থাকতে হয়েছে।
আজ সেই চারদলীয় জোট ২০ দলীয় জোটে পরিনত হয়েছে। যদিও বাকি দলগুলোর বেশীরভাগই নাম সর্বস্ব। এখন আবার জোটকে নানা ফরম্যাটে বড় করার প্রক্রিয়া চলছে। এক সময় যেই বি চৌধুরী বিএনপির দয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনেও বসেছিলেন, সেই বি চৌধুরীর বিকল্পধারাও এখন জোটে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে শর্ত দিচ্ছেন। সমানুপাতিক হারে আসন চাইছেন। আমি অবাক হয়ে ভাবি, বিকল্পধারার মত গুটিকয়েক ব্যক্তি যদি জোটে যাওয়ার জন্য এই শর্ত দেয়, তাহলে জামায়াত কি শর্ত দিতে পারে? কয়টা আসন চাইতে পারে? কয়টা মন্ত্রীত্ব? এভাবে কি কোন জোট আদৌ গঠন হতে পারে?
বিকল্পধারা আবার এক ডিগ্রী আগ বাড়িয়ে বলছে জামায়াতকে যদি বিএনপি যে কোন ফরম্যাটেই বন্ধু হিসেবে রাখে তাহলে তারা বিএনপির সাথে জোট করবে না। ড. কামালের গনফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ বা নাগরিক ঐক্যও একই সুরে কথা বলছে। আসলে বিএনপি বড় দল হওয়ায় তার সাথে দর কষাকষিতে পারবেনা- এটা বুঝেই জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতের পিছনে তারা লেগেছে। কেননা তারা জানে, জোটে জামায়াত যত শক্তিশালী থাকবে, তাদের অবস্থা তত খারাপ হবে।
এসব দলের আকাশ কুসুম গল্পের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি কি বলেছে জানিনা, কিন্তু মনে হচ্ছে বিএনপির কাছ থেকে কাঙ্খিত সাড়া না পেয়েই বিকল্পধারা ড. কামালের গনফোরামের সাথে জোট করেছে। আগামী মাসে ঢাকায় সমাবেশ করারও ঘোষনা দিয়েছে।
এই দলগুলোর বাইরে আরো বেশ কিছু এক ব্যক্তি নির্ভর দলের সাথেও বিএনপি জোট করতে চেয়েছে। বলাই বাহুল্য, তারাও ক্ষমতার অংশীদারিত্বে বড় শেয়ার চেয়েছে। আর সঙ্গে আছে জামায়াতকে ছাড়ার শর্ত। এভাবে বিগত মাস খানেক ধরে জামায়াতকে রাখা না রাখা নিয়ে বিএনপিকে বেশ চাপে রেখেছে চুনোপুটি সাইজের এই দলগুলো। হাতি কাদায় পড়লে চামচিকায় লাথি মারে। এখন বিএনপির হয়েছে সেই দশা। নেত্রী জেলে। দলের নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে চরম আস্থার সংকট। সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ছোট ছোট দলগুলো এখন বিএনপিকে ব্ল্যাকমেইল করছে। জামায়াত এখনো পর্যন্ত এই টানাপোড়েনের ইস্যুতে চুপচাপ। তবে দলটি আবার রাজনীতির বাজারে ফের আলোচনায় এসেছে- এটা বলাই বাহুল্য। জামায়াত কিছু না করলেও তাকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে, এটা জামায়াতের একটা বড় অর্জন। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত কতটা সফল, তারা কত ভোট পাবে, কয়টা আসন জিতবে- সেই অংক নিয়ে বির্তক আছে। তবে রাজনীতির আলোচনায় জামায়াত যে বরাবরই এগিয়ে সেটাও নিশ্চিত করেই বলা যায়। এমনকি সরকারও জামায়াতের ব্যপারে বরাবরই সরব। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এমনকি পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলের কর্তাব্যক্তিরাও দেশের সকল ঘটনা ও দুর্ঘটনার জন্য যেভাবে জামায়াতকে দায়ী করে বক্তব্য দেন, তাতে জামায়াত আলোচনায় থাকতে বাধ্য হচ্ছে বরাবরই। রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নির্মুল করার জন্য জামায়াতের প্রতিপক্ষরা এতসব কান্ড ঘটালেও কার্যত তাদের কারনে জামায়াত আরও বেশী করে রাজনীতির ডি-ফ্যাক্টো হয়ে উঠছে কিনা, সেটাও এখন ভেবে দেখার বিষয়।
জামায়াত জোটে থাকবে নাকি থাকবেনা-এটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। কারন জামায়াত ইস্যুর চেয়ে এখন অনেক বড় ইস্যু হলো জনগনের মুক্তি। যেই ছোট দলগুলো জনগনকে মুক্তি দেয়ার ভাবনাকে বাদ দিয়ে, জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারা ও কর্মসূচীর দিকে না এগিয়ে বরং নিজেদের স্বার্থে আসন ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে; কিংবা জনগনের মৌলিক সংকটকে দূর করার পরিবর্তে একটি দলকে জোট থেকে বের করে দেয়াকে বেশী গুরুত্ব দেয়, সেই সব দলগুলো দিয়ে জনগনের কোন কল্যাণ কখনোই হতে পারেনা।
তাই জনগণ ও দেশের স্বার্থে আমাদের দায়িত্ব হলো, এই ছোট দলগুলোকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করা, যারা বড় দলগুলোর ঘাড়ে চড়ে মাখন খাওয়ার মানসিকতা নিয়ে ক্ষমতার রাজনীতি করছে। আমরা চাই গণমুখী রাজনীতি, গণমুখী নেতৃত ।

ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না কোথাও

বাংলাদেশ বার্তাঃ দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ঘুষ না দিলে কোনো সেবা খাতেই সেবা মেলে না। এ ছাড়া হয়রানি বা জটিলতা এড়াতে কিংবা নির্ধারিত সময়ে সেবা পেতে সেবাগ্রহীতারা ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হন।
দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) খানা জরিপ-২০১৭ তে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জরিপটি প্রকাশ করে টিআইবি। আজ বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে এ জরিপ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার তথ্য এবং ঘুষ ছাড়া সেবা না পাওয়ার তথ্যে বোঝা যায়, ঘুষ আদায় অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে।
টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে বসসবাস করার সংস্কৃতি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এটা জাতিগতভাবে অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর।
জরিপে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে ২০১৫ সালে টিআইবি সর্বশেষ খানা জরিপ করে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৭ তে ঘুষের পরিমাণ ২১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ...

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১৪টি উপায় গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল


বাংলাদেশ বার্তাঃ মানসিক চাপ জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু নি:সন্দেহে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা দেহ, মন-মানসিকতা, জীবনযাত্রা সব দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই তা কন্ট্রোল করা জরুরি।
নিম্নে মানসিক চাপ কন্ট্রোল করার কতিপয় নির্দেশিকা প্রদান করা হল:
১) মানুষের ব্যাপারে খরবদারী করবেন না। কে কী করছে সে বিষয়ে মাথা ঘামানো নিজের মানসিক চাপ বৃদ্ধির একটি কারণ। আরেকটি সমস্যা হবে, অন্যের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালে নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার মনোভাব সৃষ্টি হবে। টাকা-পয়সা, সামাজিক অবস্থান, পদমর্যাদা, গাড়ি, বাড়ি, অলংকার, পোশাক, সৌন্দর্য ইত্যাদি দিক থেকে তখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন। তাই আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে খুশি থাকুন আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। তাহলে হৃদয়ে পরম প্রশান্তি অনুভব করবেন ইন শা আল্লাহ।
২) আপনার যতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্য ততটুকু পরম আন্তরিকতার সাথে পালন করুন। আপনার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলতে যাবেন না। অনুরোধে ঢেঁকি গিলবেন না। অন্যথায় আপনাকে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকতে হবে। 
৩) মানুষের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। তাই আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী, কলিগ, ক্লাসমেট ইত্যাদির সাথে সীমিত সম্পর্ক রাখুন। সম্পর্ক যত ব্যাপক হবে ততই আপনি নানা বাধ্যবাধকতার জালে আটকে যাবেন। 
৪) অতিলোভ করবেন না। অতিলোভী ব্যক্তি অর্থ-কড়ি, ধন-দৌলত, পদমর্যাদা ইত্যাদি বৃদ্ধির চিন্তায় বিভোর থাকে। যদি সামান্য টাকা-পয়সা হাতছাড়া হয় বা চাকুরীর প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার হাহুতাশ দেখে কে? সুতরাং অল্পে তুষ্টি মানসিক শান্তির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাকওয়ারও পরিচায়ক।
৫) সাধ্যের বাইরে নিজের অর্থ-সম্পদ, আরাম-আয়েশ উজাড় করে দিবেন না। যারা কৃত্রিমভাবে নিজের সব কিছুকে উৎসর্গ করে দেয় তারা তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে মানুষের ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু যদি তা না পায় তখন তার মানসিক অস্থিরতা ও টেনশন বেড়ে যায়।
৬) আজকের দিনটিকে ভালভাবে উপভোগ করুন। আগামী কাল কী হবে সেটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি আল্লাহর দেয়া নেয়ামত স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করুন। দুনিয়াবী বিষয়ে আগামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করবেন না।
৭) প্রতিদিন একান্ত নির্জনে কিছু সময় কাটান। এ সময় দুনিয়ার কারও সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। বিশেষ করে ইন্টারনেট তথা হোয়াটসএ্যাপ, ফেসবুক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। এ সময় আত্মসমালোচনা করুন আর আল্লাহর নিকট দুয়া করুন। তাহলে দেখবেন, মহান আল্লাহ আপনার মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দান করবেন ইন শা আল্লাহ।
৮) জ্ঞানীদের জীবনী পড়ুন, তাদের উপদেশ ও মূল্যবান বাণীগুলো পড়ুন তাহলে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ দুনিয়ার জীবনে আপনার চলার পথকে সহজ করে দিবে ইন শা আল্লাহ।
৯) জীবনে যত বিপদ ও সমস্যাই আসুক না কেন-যেমন, আর্থিক ক্ষতি, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি এগুলো নিয়ে খুব বেশী দু:শ্চিন্তা করবেন না। বরং সহজভাবে মেনে নিন। মনে রাখুন, মহান আল্লাহর লিখিত তাকদিরের বাইরে কিছুই ঘটে না। বিপদাপদেই হয়ত কল্যাণ রয়েছে যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু নিশ্চয় আল্লাহ হেকমত ছাড়া কিছুই করেন না।
১০) সব কিছুই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন না। মানুষের প্রতিটি কথা বা কাজ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ঠিক নয়। সব কিছু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা ঠিক নয়। বরং মনে আনন্দ বজায় রাখুন, মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাতে হাসতে শিখুন। আপনার কথা ও আচরণে যেন ফুলের সুঘ্রাণ বের হয়। তাহলে ইনশাআল্লাহ মন ফ্রেশ থাকবে আর মানসিক চাপ কমে যাবে ইন শা আল্লাহ।
১১) শরীরকে তার হক দিন। প্রয়োজনীয় খাবার, ঘুম, বিশ্রাম গ্রহণ করা জরুরি।
১২) দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের লিস্ট তৈরি করে আগেরটা আগে পরেরটা পরে করুন। তবে তা করতে গিয়ে নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিবেন না। মনে রাখবেন, অগোছালো কার্যক্রম মানসিক অস্থিরতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ তৈরি করে।
১৩) ‘প্রতিটি কাজ ১০০ পার্সেন্ট নির্ভুল করতে হবে’ এই চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হবে। কেননা, পূর্ণাঙ্গতার গুণ কেবল মাত্র আল্লাহর। যারা সব কাজ নির্ভুল করার চিন্তায় থাকে তাদেরকে চতুর্দিক থেকে দু:শ্চিন্তা, টেনশন,অস্থিরতা ঘিরে ধরে। ফলে তাদের মানসিক চাপ চরম আকার ধারণ করে।
১৪) নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে দুনিয়া ও আখিরাতের সব কাজ তত সহজ হবে। আল্লাহ ভীতি, নামায, সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও যিকির, নেকীর কাজ, মানুষের কল্যাণে কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মনে অফুরন্ত প্রশান্তি বর্ষণ করেন, সমস্যা দূরভিত করেন আর তখন জীবন হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত, স্বচ্ছন্দয় ও আল্লাহর ভালবাসায় সুরভিত। 
আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন !
Collected by, বুনিয়ানুম মারসুস।

বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৮

হামিদা সুলতানার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা উত্তর জেলা শাখার রূপসা পশ্চিম উপজেলার টি.এস. বাহিরদিয়া ইউনিয়নের রুকন (সদস্যা) ও ঐ ইউনিয়নের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারী হামিদা সুলতানা ৪০ বছর বয়সে আজ ২৭ আগস্ট বেলা ১০:১৫ টায় ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্বামী, ২ পুত্র ও ২ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গিয়েছেন। আজ ২৭ আগস্ট বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।
শোকবাণী
হামিদা সুলতানার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ২৭ আগস্ট ২০১৮ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, হামিদা সুলতানা (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাকে নিরাপত্তা দান করুন। তাকে সম্মানিত মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তার গুণাহখাতাগুলোকে নেকিতে পরিণত করুন। তার জীবনের নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন।
তিনি শোকবাণীতে তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে এ শোকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮

আমার আদরের সামিয়া


বাংলাদেশ বার্তাঃ ওকে নিয়ে যে আমাকে লিখতে হবে তা আমার ভাবনায় ছিল না । ২৪তারিখ শুক্রবার রাত ১০-৩০মিনিটে ঈদ উপলক্ষে ফেসবুক লাইভ করছিলাম। প্রায় দুই দশকের রেডিও টিভি সংবাদপাঠ উপস্থাপনায় যা হয়নি তাই ঘটলো এখানে। টেলিভিশন, রেডিও , শিল্পকলা, নিমকোতে শব্দচয়ন, বাচনভঙ্গি, উচ্চারন, উপস্থাপনা বিষয়ে জীবনে যতো প্রশিক্ষণ নিয়েছি আর চর্চা করেছি তার সব গ্রামার ভেঙে লাইভ  প্রোগ্রামের শেষের দিকে বাঁধ ভাঙ্গা চোখের পানি তার উপর মোবাইল ফোন অন রাখা সত্যিই ব্যতিক্রম ঘটনা। একটি কল প্রগ্রামের ভিতরই চলে আসলো, আমি কেটে দিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের পারিবারিক গ্রুপে বড় ভাবী লিখলেন “ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন, সামিয়া-সামিয়া”। আমার বড় মেয়ে লাইভ শেষে এসে বললো,আব্বু কল দাওতো। বড় ভাইকে ফোন দিলে শান্তভাবেই বললেন সড়ক দুর্ঘটনার কথা,জানালেন সামিয়ার মৃত্যুর খবর। আমার ছেলে মেয়ে চারিদিকে ঘিরে বসা। অনেকক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে সামলিয়ে জীবন মৃত্যু নিয়ে একটা ভুমিকা দিয়ে খবরটা বলতেই,তাদের চোখের পানি আর বুক ফাটা কান্নায় আমি নিজেকে ওদের থেকে আড়াল করে নিলাম। সামিয়ার সাথে ওদের হৃদয়ের বন্ধন আরেকবার কাছ থেকে দেখলাম। আমার বড় মেয়ে সারা রাত ঘুমালো না।আমার বড় ছেলে থেকে সামিয়া এক বছর বড়।আমার বিয়ের সময় ও ২০ দিনের বেবি।দুধের মতো সাদা রং। জন্মের পর যেখানে বাচ্চারা কেঁদে ওঠে ও সেখানে পিক করে হেসে উঠেছিলো। আমরা তিনবোন দুই ভাই। বোনরা বড়।তার মাঝে মেঝো বোন আগেই মারা গেছে ক্যান্সারে। তার জন্যই আমার বোনের গান গাওয়া। সামিয়ার আম্মা বোনদের মাঝে ছোট। আমার থেকে প্রায় ৪ বছর বড়। আম্মা গল্প করতেন,ছোট সময় পুকুরে নামলে আমার আর খেয়াল থাকতো না, আম্মা ছোট আপাকে পাঠাতেন আমাকে নিয়ে আসতে। বাসা থেকে তা ছিল অনেক দুরে। আমার এই বোনটি আমাকে এতই আদর করতো যে ছোট ভাইর কষ্ট হবে ভেবে বাকিয়ে বাকিয়ে কষ্ট করে পুরোটা পথ রোদের মাঝে কোলে করেই আনতো।এই বোনের তিন ছেলেমেয়ে তাদের মায়ের মতোই হলো। প্রত্যেকেই গায়ে গায়ে মাখিয়েই আদর নিতো। তার মাঝে সামিয়া আরেকধাপ এগিয়ে। এমনিতেই ও ছোট আর আমিও ছোট মামা। আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে “মামা ছোট” ডাক দিয়ে গলাটা জড়িয়ে আমার বুকে কতক্ষণ মাথাটা লাগিয়ে রাখতো। স্পন্দন থেকে বের হওয়া টুনটুনি আসরের ভিডিও গানগুলোতে ও থাকতো । এগুলো সবই আজ স্মৃতি। সামিয়া অসম্ভব মেধাবী ও বইপাগল ছিলো।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এ থেকে বিবিএ শেষ করেছিলো। ছোট সময় যে সরলতা দেখেছি বড় হয়েও তার এতটুকু ছেদ হয়নি । জীবনের জটিল বিষয়গুলো ছিলো ওর বুঝার বাইরে। অসম্ভব পরোপকারী, অন্যের জন্য প্রান উজাড় করা একটি মেয়ে সামিয়া। আমার ছেলে মেয়েগুলো গত ঈদে ওদের বাসায় গেলে নিজের রুমটা ভাইবোনদের জন্য ছেড়ে দিয়ে পুরো রাতটাই পড়ার কথা বলে ড্রয়িং রুমে কাটিয়ে দিলো। আমার ভগ্নিপতিকেও দেখেছি, তিন ছেলে মেয়ের মাঝে ওকেই বেশী মহব্বত করতে। ঘন্টার পর ঘন্টা বাপ মেয়ের কথা চলতো । প্রায় সময় বেড়াতে যেতেন তার আদরের সামিয়াকে নিয়ে। আমার ছোট আপা বলতো " ও কিভাবে যে সংসার করবে, সংসার জীবনের কোন কিছুইতো ও বুঝে না।'‘ আমি কিছু সময় পর নিজেকে সামলিয়ে ছোট আপাকে ফোন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আর ভাবছি বোনটার কি আমার সাথে কথা বলার মতো অবস্থায় আছে। কিভাবে আমি তাকে শান্তনা দিবো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কল দিলাম। আমি আশ্চর্য হলাম অপর প্রান্তর থেকে অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে বললো “ওতো কয়েকদিন পর অন্যের সংসারেই চলে যেতো, সেই যাওয়াটা না হয় আমার আল্লাহ কাছেই হলো।”(চলবে)
#SaifullahMansur

দৃষ্টিতে ও সৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আবদুল হামিদ মানিক: সাঈদ চৌধুরী

বাংলাদেশ বার্তাঃ ‘স্মৃতি ও ঐতিহ্যে বহমান বাংলা’র জনপ্রিয় লেখক আবদুল হামিদ মানিকের ’চলতে চলতে দেখা’ বইটি ২০০৩ সালে বেরিয়েছে। ২০০১ সালে বের হয় তার ‘সিলেটে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি’।২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছে রবার্ট লিন্ডসের বইয়ের অনুবাদ ‘সিলেটে আমার বারো বছর’।
আবদুল হামিদ মানিক অন্তর্ভেদী সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক। সুবক্তা হিসেবেও তার সুনাম সাংবাদিকতার সমান্তরালেই বহমান। তার বক্তব্য পরিশীলিত ও আধুনিক রুচিঋদ্ধ।উচ্চারণও চমৎকার। তার লেখা ও কথায় আকর্ষণ অফুরন্ত। প্রাণ সঞ্চারক। সূর্যালোকের মতো ঔজ্জ্বল্য ছড়ায়। তার মনি-মুক্তার ভান্ডার থেকে যতই আহরণ করা হোক না কেন তা অপরিমেয়ই থেকে যাবে।
বিশ শতকের ৭ম দশক আবদুল হামিদ মানিকের উত্থানের যুগ। প্রফেসর কবি আফজাল চৌধুরীর অসাধারণ প্রতিভা ব্যাপ্তি স্মরণে রেখেও আবদুল হামিদ মানিকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করতে পারি। দৈনিক জালালাবাদে তার সাথে কাজ করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে বিস্মিত হতাম। তিনি সম্পাদকীয় লিখতেন তাৎক্ষণিকভাবে।চলমান ঘটনাবলির সাথে ইতিহাসের অনেক তথ্য উপাত্ত স্মৃতি থেকে লিখতেন।বইপত্র ঘাটিয়েও তাতে কোন ভুল আবিষ্কার করা যায়নি। তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা।
সত্তর দশকে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিলেটি লেখকদের মধ্যে গণমানুষের কবি দিলওয়ার, প্রফেসর কবি আফজাল চৌধুরী ও কবি মোফাজ্জল করিম ছিলেন ধ্রুব তারার মতো। আশির দশকে আমরা যখন নতুন লেখিয়ে, তখন রাগিব হোসেন চৌধুরী, আব্দুল হামিদ মানিক, কালাম আজাদ, শাকুর মজিদ, পীর হাবিব, সোলায়মান আহসান, মুকুল চৌধুরী, তমিজ উদ্দিন লোদী, নিজাম উদ্দিন সালেহ, কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার সহ সিলেটের বেশ কিছু কবি-সাহিত্যিক জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত ও সমাদৃত।
আমি তখন একেবারেই তরুণ। শুরুতেই সংলাপের সাথে সম্পৃক্ত হই। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের কারণে অগ্রজের সাথে কাজ করতে হয়। প্রবীণেরা আমাকে অধিক ভালোবাসতেন। শিক্ষাবিদ মুসলিম চৌধুরী, ভাষা সৈনিক শাহাদত খান, সাংবাদিক-কলামিস্ট বোরহান উদ্দিন খান, গবেষক-অধ্যাপক আসাদ্দর আলী সহ অনেক প্রবীণের একান্ত সাহচর্য পেয়েছি এবং তাদের স্মৃতি ও ইতিহাসের অংশ হয়েছি।
নব্বই দশকে সিলেটের ঐতিহ্য সৃষ্টিকারী সাহিত্য সংগঠন সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর কবি আফজাল চৌধুরী এবং আমি ছিলাম সেক্রেটারি জেনারেল। তখন প্রতি বছর নিয়মিত মাসিক সাহিত্য আসর ছাড়াও বছরে অন্তত দুটি বড় অনুষ্ঠান আমরা করেছি। আমাদের সাহিত্য আসরে অনেক নামীদামী লেখক অতিথি হয়ে আসতেন। কিন্তু আফজাল চৌধুরী ও আবদুল হামিদ মানিকের বক্তব্যই ছিল মূল আকর্ষণ।
১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে সংলাপের শরৎকালীন কবিতা পাঠের আসরে দেশের বরেণ্য লেখক-সাহিত্যিক অংশ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানের অতিথি খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কাজী রফিকুল হক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর আলোচনায় আবদুল হামিদ মানিকের বক্তব্যের প্রশংসাই প্রধান ছিল।
সেদিন তার বক্তব্যের উপজীব্য বিষয় ছিল, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ঘরে বাইরে শত্রু পরিবেষ্টিত। অনিকেত বৃত্তির বিরুদ্ধে যুব সমাজ আড়ষ্ট ও ম্রিয়মান। আজ এখানে কিছু সাহসী লেখক হিম্মৎ ও আশার বানী শোনালেন। অস্তিত্ব রক্ষা নয়, শির উঁচু করে দাঁড়াবার প্রেরণা জোগালেন। এদের প্রজ্ঞার কাছে স্লোগান সর্বস্ব তথাকথিত লেখক -সাংবাদিকেরা দাঁড়াতে পারবেনা। তখন সাম্য-মৈত্রী ও স্বাধীনতার নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংলাপের মতো ঐতিহ্যবাদী লেখক গোষ্ঠি এগিয়ে যাবে সামনের দিকে।
সে দিন তিনি আরো বলেছিলেন, আমাদের এই ভূখন্ড উপমহাদেশের সাথে বৃটিশদের অধীনস্থ ছিল এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের এই দেশের তরুণ যুব সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল, আমাদের ধর্ম আমাদের জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির এক বড় উৎস্য ও প্রেরণা ছিল- এ সত্য গভীরভাবে উপলব্ধি করে আমাদেরকে ঔপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কলম সৈনিক হতে হবে।
আবদুল হামিদ মানিক দৃষ্টিতে ও সৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সমকালিন লেখক-সাংবাদিকদের মধ্যে তার এই পার্থক্য বিপুল, বিশাল। মানসে ও মনোভূমিতে এমনকি উচ্চারণে ও উপস্থাপনায়। এদেশের ভাষা, সাহিত্য ও কালচারের ক্ষেত্রে ইতিহাস চেতনার প্রয়োজনীয়তা তার লেখায় ও বক্তব্যে বার বার বিধৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি অনন্য সাধারণ ও আপষহীন।
সংলাপের সাহিত্য আসরে চেয়ারম্যান আফজাল চৌধুরী এবং প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হামিদ মানিকের মত দুই গুরুর প্রতি একসাথে আনুগত্য প্রকাশে আমরা হিমশিম খেতাম। তবে এক সময় প্রাজ্ঞ জহুরির মতো আফজাল চৌধুরী বুঝতে পেরেছিলেন, তার বিপুল সাহিত্য প্রতিভার বাইরে নতুন প্রতিভার উদয় হয়েছে এবং তিনি তার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেনই। আমাদের কাছে আফজাল চৌধুরীর এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।
আবদুল হামিদ মানিক কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ সময় সংসদের নতুন ভবন সহ ব্যাপক আধুনিকায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তার সম্পদনায় সাহিত্য সংসদের মুখপত্র মাসিক আল ইসলাহ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আবদুল হামিদ মানিক আমাদের চৈতন্যের রূপকার, সামনে চলার প্রেরণা। যার অবিনাশী প্রতিবেদন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় অনাচার-অত্যাচার, জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে আহ্বান জানায়। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সুপ্ত চেতনার বিকাশ সাধনে তার অভিভাষণ সমূহ বর্তমান প্রজন্মের জন্য শিক্ষাপ্রদ ও উৎসাহব্যঞ্জক ।
সিলেটে সংবাদপত্র, সম্পাদক ও সাংবাদিকের সংখ্যা কম নয়। কিন্ত সম্পাদকীয় লেখার মতো লোকের অভাব সব সময় ছিল।এক সময় যুগভেরীতে সিনিয়র সাংবাদিক অজয় পাল ও মাহবুবুর রহমান নিজস্ব সম্পাদকীয় লিখতেন। চৌধুরী মমতাজ শ্যামল সিলেটে এবং আহমদ নূর সিলেট প্রতিদিনে সম্পাদকীয়তে নিজস্বতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। আবদুল হামিদ মানিক গত চার দশকে সাপ্তাহিক সিলেট কন্ঠ, সাপ্তাহিক সিলেট সমাচার, দৈনিক জালালাবাদী ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছেন। বর্তমানে দৈনিক সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগণ তথা দারিদ্র্যপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষ তার লেখায় বিচিত্ররূপে বিধৃত হয়ে আছে। এ দেশবাসির আত্মপরিচয়, মানসচেতনা, জনজীবন, জাতীয় আশা-আকাঙ্কা ও সংগ্রাম সাধনার কথা অনবদ্যরূপে ও অনুপ্রেরণা সঞ্চারীরূপে প্রতিভাত হয়ে আছে।

মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮

ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে দেশবাসী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা


বাংলাদেশ বার্তাঃ ঈদুল আযহা মানুষকে ত্যাগ ও কুরবাণীর আদর্শে উজ্জীবিত করে একটি শোষণমুক্ত ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকারে অনুপ্রেরণা দেয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ পবিত্র ঈদুল আয্হা উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ ১৮ আগস্ট নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-
“কুরবাণীর মহান আদর্শ নিয়ে পবিত্র ঈদুল আয্হা আমাদের দ্বারে সমাগত। এ ঈদ আমাদের সার্বিক ত্যাগের শিক্ষা দেয়। মুসলমানদের নিকট ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আয্হা- এ দু’টি ঈদই আনন্দের দিন। এ দু’ঈদে মানুষ সকল ভেদাভেদ, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের নিকটবর্তী হয় এবং ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করে। দু’টি ঈদ আমাদেরকে শুধু আনন্দই দেয় না, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ও অনৈক্য ভুলে গিয়ে পরস্পরকে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যরে বন্ধনে আবদ্ধ করে সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। ঈদ আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয়ভাবে ঐক্যের বন্ধন শক্তিশালী করে। 
ঈদুল আযহা মানুষকে ত্যাগ ও কুরবাণীর আদর্শে উজ্জীবিত করে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শোষণ দূর করে একটি শোষণমুক্ত ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকারে অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যদি ত্যাগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলেই বাস্তবজীবনে ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করে সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করতে পারি তাহলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরা ত্যাগের যে মহান আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন সেইভাবে আমরাও যদি আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজেদের প্রিয়বস্তু, ধন-সম্পদ কুরবাণী করার জন্য প্রস্তুত হতে পারি তাহলেই আমাদের কুরবাণী স্বার্থক হবে।
জাতি এমন এক সময় পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে যখন গোটা দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট চলছে। সারা দেশে সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, হত্যা, গুম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বর্তমানে দেশে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা বিরাজ করছে।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার বহু নেতাকর্মীকে সরকার অন্যায়ভাবে বন্দী করে রেখে কষ্ট দিচ্ছে। সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
পরিশেষে ঈদুল আয্হা উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি তিনি আমাদের সবাইকে সুন্দর পরিবেশে ঈদুল আয্হা উদ্যাপন করার ও এ ঈদের শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ করার তাওফিক দান করুন। সেই সাথে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সকল নেতা-কর্মী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীকে আসন্ন ঈদের পূর্বেই মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

কোরআন হাদিসের চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণেই সর্বত্র অবক্ষয় অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে-শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, প্রতিদিনই নানা রকম লোমহর্ষক ঘটনার স্বাক্ষী হতে হচ্ছে মানুষকে। অরাজকতার শিকার হচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। একটি মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ার পরও শহর থেকে গ্রাম কোথাও মানুষ স্বস্তিতে নেই। মূলত কোরআন হাদিসের চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণেই সর্বত্র অবক্ষয় অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য ও সাথীদের আয়াত হাদিস প্রতিযোগীতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগরী সভাপতি শাফিউল আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাছুম তারিকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগরী বায়তুলমাল সম্পাদক আহমদ হুসাইন, অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ নোমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শফিউল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মোস্তফা হুসাইন প্রমুখ।
শিবির সভাপতি বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্য পরায়নতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, দেশপ্রেম, পারস্পরিক মমতাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। পারিবারিক কলহ, মাদক, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ পশুসুলভ আচরণ সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে অবক্ষয়ের দ্ধারপ্রান্তে। সোস্যাল মিডিয়া , ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরের বিশাল অংশই থাকে অবক্ষয়ের খবর। ভাইয়ের হাতে ভাই, ছেলের হাতে মা-বাবা, স্ত্রীর হাতে স্বামী আবার স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হচ্ছে। এমনকি অনৈতিক সম্পর্কের প্রভাবে গর্ভধারিণী মা তার সন্তানকে খুন করছে। দুই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন খুন, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র ও অশ্লীলতার অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। একটি মুসলিম প্রধান দেশে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় শক্তি ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষাকে পাঠ্যপুস্তক সহ সকল ক্ষেত্রে সংকোচিত করেছে। কোরআন হাদিসের বই পুস্তককে রাষ্ট্রীয় ভাবে জিহাদী বই আখ্যা দিয়ে ইসলামী সাহিত্য সম্পর্কে জনগণের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকার একদিকে কথিত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে অন্যদিকে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান থেকে ছাত্র ও যুবসমাজকে দূরে রাখছে। কোরআন হাদিস নিয়ে সরকারের বিভ্রান্তি ছড়ানো, উদাসীনতা এবং অবক্ষয়ে মদদ দেয়ার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর রাষ্ট্রীয় শক্তিও কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে ভ্রান্ত মতবাদ ও অনৈতিক পন্থায় দেশ পরিচালনা করছে। ফলে অনৈতিকতা ও অবক্ষয়ের মহামারি চলছে দেশে।
তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে কোরআন হাদিসের চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণেই। সুতরাং এ অবস্থার পরিবর্তনও করতে হবে কোরআন হাদিসের চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমেই। সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চায় তাহলে ইসলামী সাহিত্যের প্রচার, প্রসার ও চর্চা বাড়াতে হবে। ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুনকে লালন করে তা যুব ও ছাত্র সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই যুব সমাজ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পাবে ও জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস থেকে মুক্ত থাকবে। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ কাজটি করে যাচ্ছে। শুধু পড়া নয় ছাত্রশিবির কোরআন হাদিসের চর্চা ও জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল অরাজকতা ও অশান্তি দূর করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। কোন কথার ফুলঝুড়ি বা স্লোগান নয় বরং ছাত্রশিবির তার সর্বস্তরের জনশক্তিকে কোরআন হাদিসের আলোকে গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা যে ছাত্রের সাথে কোরআন হাদিসের সম্পর্ক থাকবে তার দ্বারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হবে না বরং সে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। আজকের এই আয়োজন ছাত্রশিবিরের সেই প্রচেষ্টারই অংশ। আমরা মনে করি, কোরআন হাদিসের আলোকে নৈতিকতা সম্পন্ন যোগ্য নাগরিক ছাড়া সমৃদ্ধ দেশ ও জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই আমরা আমাদের লক্ষ বাস্তবায়নে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কোরআন হাদিসের চর্চা অব্যাহত রাখছি এবং তা যে কোন মূল্যে অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮

জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ বাংলাদেশি নিহত

বাংলাদেশ বার্তাঃ সৌদি আরবে জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি এক পরিবারের ৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও দুইজন। নিহতদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।খবর আরটিভির।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সূত্রে জানা গেছে, তারা জেদ্দা থেকে তায়েফ যাচ্ছিলেন। মক্কা চেকপোস্ট এর আগে নন মুসলিম রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- প্রবাসী মশিউর রহমান (৪৭), তার তিন কন্যা - সায়মা সেলিম (১৬), সিনথিয়া সেলিম (১৪) ও সাবিহা সেলিম (১০)। মশিউর রহমানের স্ত্রী ও ছেলে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার, সন্দ্বীপে থানার সাঈদ বান্দা গ্রামে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮

তুরস্কের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াল কাতার

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক | ১৬ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার 
তুরস্কে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে কাতার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বিবাদে তুরস্কের অর্থনীতির যখন অস্থির হয়ে উঠেছে তখন দেশটির পাশে দাঁড়াল কাতার। তুরস্কের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতেই কাতার এ বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এ সময় তিনি তুরস্কের মানুষদের ভাই বলে অভিহিত করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।

খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বিবাদ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধান তুরস্ক সফর করলেন। বর্তমানে তুরস্কের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। ডলারের বিপরীতে লিরার মান রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। দেশটি নানাভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেসময় কাতারের আমির ঘোষণা দিলেন, আমরা আমাদের তুর্কি ভাইদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে বৈঠকের সময় সেখানে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা করেছি। এটি তুরস্ককে এই অর্থনৈতিক সংকট উৎরাতে সাহায্য করবে।
এ বৈঠকে দেশ দুটির নেতারা নিজেদের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা করেছেন। বুধবার প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কাতারের আমিরের এ সফরকে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ন মনে করছে। এরকম কঠিন সময়ে তার সফর প্রমাণ করে কাতার তুরস্কের পাশে রয়েছে। তুরস্কে কাতারের রাষ্ট্রদূত সালিম বিন মুবারক আল শাফি বলেছেন, তার দেশ তুরস্ককে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে। তুরস্কের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কাতারের মানুষ কোটি কোটি তুর্কি লিরা কিনছে যাতে ডলারের বিপরীতে লিরার দাম আবারও বৃদ্ধি পায়। ২০১৬ সালের ব্যর্থ সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানের সময় কাতার যেভাবে তুরস্কের পাশে ছিল, সবসময়ই দেশটিকে সেভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে। মানবজমিন 

সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮

বাঙালি নয়, বাংলাদেশি মুসলিমদের ‘তাড়াবে’ বিজেপি

বাংলাদেশ বার্তাঃ আমরা বাংলাদেশি মুসলিমদেরকে তাড়াব, বাঙালিদের নয়’- পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির একটি প্রচারপত্র ঝুলছে কলকাতায়। দলটির সভাপতি অমিত শাহের কলকাতা সফরের আগে আগে এই প্রচার চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শহরটিতে।

আসামের নাগরিকত্বের তালিকার খসড়া থেকে ৪০ লাখ বাঙালির নাম বাদ যাওয়ার পর বিজেপিকে ‘বাঙালিবিরোধী সংগঠন’ আখ্যা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। আর এর প্রতিক্রিয়ায় এই প্রচার শুরু করে তারা।

তবে বিজেপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘আমরা বাঙালিদের বিরুদ্ধে নই, তবে অবৈধ অভিবাসনের বিরোধী। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া হিন্দুদের আশ্রয় দেব। তবে এই দেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী কোনো মুসলমানকে আশ্রয় দিতে পারি না। কিন্তু বাংলায় ভুল বার্তা ছড়িয়েছে যে আমরা বুঝি বাঙালিদেরকে বের করে দিচ্ছি। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আমরা কেবল বাঙালি মুসলিমদেরকে বিতাড়িত করব।’

বিজেপির সূত্র বলছে, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও তারা নাগরিকত্বের এই নতুন তালিকা প্রকাশ করতে চায়। তবে যেহেতু এই অঞ্চলের মানুষরা এ বিষয়ে অনেকটাই সংবেদনশীল, তাই বিজেটি এ ক্ষেত্রে নমনীয় ভূমিকা নেবে। তারা আগে এই রাজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়।

বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা গত মঙ্গলবার রাজ্যের মুসলমানদেরকে এনআরসির পক্ষ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘আমি বাংলার মুসলিমদেরকে বলব, আপনারা এগিয়ে এসে এই রাজ্যেও এনআরসি বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিন। পশ্চিমবঙ্গ অপুপ্রবেশের একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। তারা আমাদের চাকরি, খাদ্য আর কর্মসংস্থান-সবই নিয়ে নিচ্ছে।’

ঢাকাটাইমস

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

খন্দকার পাড়ার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১জনের মৃত্যু ও ৪০টি ঘর ভস্মীভূত হওয়ায় চান্দগাঁও জামায়াত নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ বার্তাঃ আগষ্ট ১২, ২০১৮ চান্দগাঁও থানার খন্দকার পাড়ায় এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রবিউল নামের একজনের মৃত্যু ও ৪০টি ঘর ভষ্মীভূত হওয়ায়  চান্দগাঁও থানা জমায়াত শোক প্রকাশ করে একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন।

চান্দগাঁও থানা জমায়াতের থানা আমীর ও সেক্রেটারী যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমূহের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং মরহুম রবিউলের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমূহের সাহায্যে বিত্তবানসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

চান্দগাঁও খন্দকার পাড়ায় অগ্নিকান্ডে ১জনের মৃত্যু ও ৪০টি ঘর ভষ্মীভূত

বাংলাদেশ বার্তাঃ আগষ্ট ১২, ২০১৮ তারিখ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার খন্দকার পাড়ায় আজ দুপুরের এক বয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। জানা যায় ইলেকট্রিক সর্টসার্কিটের কারণে উক্ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। 
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪০টি ভস্মিভূত হয়েছে । রবিউল (২২) নামে একজনের মৃত্যুবরণ করেছে। অগ্নিদগ্ধ রবিউলকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত  চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে চান্দগাঁও আবাসিক সংলগ্ন খন্দকারপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শণ

চান্দগাঁও এলাকার খন্দকার পাড়ায় আজ দুপুরের এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪০টি ভস্মিভূত হয়েছে । বিকেলে চান্দগাঁও আবাসিক কল্যাণ সমিতি ও কাসেম-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে  একটি টিম  খন্দকার পাড়ার অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। এই সময় জনাব এহসানুল করীম (চেয়ারম্যান, এনএফএল), জনাব আবদুল আহাদ (ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী, আবাসিক কল্যাণ সমিতি), জনাব নুরুল আমীন (সভাপতি, চান্দগাঁও আবাসিক জামে মসজিদ), জনাব ওসমান গনি(নিরাপত্তা সম্পাদক), জনাব জাকির হোসাইন (সেক্রেটারী, চান্দগাঁও আবাসিক জামে মসজিদ), সর্বজনাব হাসনাত, আবদুল মান্নান, তওফিক, জমির উদ্দিন প্রমূখ উক্ত পরিদর্শন টিমের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শণ কালে নেতৃবৃন্দ চান্দগাঁও আবাসিক কল্যাণ সমিতি ও কাসেম-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসমূকে ১০ হাজার টাকা করে সাহয্য প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেন। 

শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

কবি মতিউর রহমান মল্লিক ৮তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ


বাংলাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির পুরোধা প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক ২০১০সালের অাজকের দিনে অামাদের ছেড়ে প্রভূর সান্নিধ্যে সাড়া দেন।

বিশিষ্ট কবি, গীতিকার এবং ইসলামী সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কবি মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫৬ সালের ১ মার্চ বাগেরহাট জেলার রায়পাড়া উপজেলার বড়ইগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।

রঙিন মেঘের পালকি', ‘আবর্তিত স্বর্ণলতা' ও ‘অনবরত বৃক্ষের গান' তার কবিতার বই। তার গানের বই হচ্ছে ‘ঝংকার', ‘যত গান গেয়েছি'। ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ' নামে তার একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ রয়েছে।

অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন কবি মতিউর রহমান মল্লিক। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ মিতালী সংঘ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণ পদক, কলম সেনা সাহিত্য পদক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সাহিত্য পুরস্কার (ফ্রান্স), বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ পুরস্কার, কিশোরকন্ঠ সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার ইত্যাদি।

ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ কবি ও গীতিকার মতিউর রহমান মল্লিক মারাত্মক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে সজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন দীর্ঘদিন। ১১ জুলাই ডায়ালাইসিস শেষে বাসায় ফেরার পরপরই তার কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হয়। প্রায় ২৫ মিনিট শ্বাস বন্ধ-মৃত প্রায় অবস্থায় হলে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়ে কয়েক ঘণ্টা তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে রাখা হয়। পরে নেয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। ২১ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে কবি মতিউর রহমান মল্লিকের জন্য ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

উল্লেখ্য, কবি মতিউর রহমান মল্লিককে ব্যাংকক থেকে হার্টে ৫টি রিং সংযোজন করে দেশে নিয়ে আসার পর বাসায় রেখে সপ্তাহে ৩দিন তাকে ইবনে সিনায় রেখে ডায়ালাইসিস করানো হতো। এভাবে ১ বছর পর পুনরায় ব্যাংককে নিয়ে কিডনী সংযোজনের কথা ছিল। হঠাৎ করেই কাডির্য়াক এ্যারেস্টের ঘটনা ঘটনায় কবি মল্লিক ডীপ কোমায় চলে যান। অবশেষে ১১ আগস্ট ২০১০ দিবাগত রাত ১২:৩০টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তিকাল করেন।

মহান রব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।।

মানবের ভয়ঙ্কর অমানবিক রূপ মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

বাংলাদেশ বার্তাঃ চারপাশের দৃশ্যপট কেমন যেন নির্মম অমানবিক মনে হয়। প্রেম-প্রীতি, মায়া-মমতা, দরদ-ভালোবাসা দিন দিন কেন যেন মানবের মাঝ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। অমানবিকতার দাপটে মানবিক আচরণ যেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। একজন মা সন্তানের প্রতি যে জাতীয় ভালোবাসা স্নেহ-মমতা লালন করেন আর কারো ক্ষেত্রে এমনটি লক্ষ্য করা যায় না। শুধু মানুষ নয়, সন্তানের প্রতি এমন ভালোবাসা পশু-পাখি ও প্রাণিকুলের মাঝেও দেখা যায়। তার অর্থ এই যে সন্তানের প্রতি মায়ের গভীর ভালোবাসা সকল প্রাণীর মাঝেই সর্বজনবিদিত একটি চিরায়ত বিষয়। কিন্তু যখন দেখি সেই মা-ই তার নিজের সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করছে তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না মানুষের মানবিকতা কতটা নিচে নেমে এসেছে। মানবিকতার সঙ্কট আজ মহাপ্রলয়ের রূপ ধারণ করেছে, মা খুন করছে সন্তানকে, সন্তান খুন করছে পিতা-মাতাকে। ভাই খুন করছে তার নিজের ভাইকে। দিন যত যাচ্ছে সমাজে অমানবিকতার রূপ ততই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
গত ২২ জুলাই কুষ্টিয়ার আদালতে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নির্ভীক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে যে নৃশংস হামলা চালিয়েছে তা ছিল অমানবিকতার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি সেদিন মিথ্যা ও বানোয়াট মানহানির মামলায় জামিন নিতে কুষ্টিয়ার আদালতে হাজির হয়েছিলেন। আদালত তাকে জামিন দেন। কিন্তু ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা মাহমুদুর রহমানকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিরাপত্তা বিধানে ডেকে পাঠালেও পুলিশ কর্তা তাতে ভ্রƒক্ষেপ করেননি। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই মাহমুদুর রহমানের গাড়িতে হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত হয় মাহমুদুর রহমানের পুরো শরীর । দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন আদালত চত্বরেও ছাত্রলীগের নির্মম অমানবিক হামলা থেকে রক্ষা পাননি।
শুধু মাহমুদুর রহমানই নয়, ছাত্র-শিক্ষক এমনকি সাধারণ মানুষও ছাত্রলীগের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম, ভয়াবহ এবং নৃশংস কায়দায় চালানো হামলাগুলো অমানবিকতার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ। এসব হামলার দৃশ্য যারা সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেখেছেন নিশ্চয়ই তারা উপলব্ধি করেছেন মানবের অমানবিক রূপ কত ভয়ঙ্কর! নির্মম লাঠিপেটা, হাতুড়িপেটার দৃশ্য বিবেকবান যারা দেখেছেন তাদের চোখ দিয়ে অবলীলায় পানি গড়িয়ে পড়েছে। উফ! কতটা নির্মম কতটা অমানবিক ছিল সেই দৃশ্যগুলো!
কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে ২ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা হাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেকের ওপর হাতুড়ি নিয়ে হামলার দৃশ্য যতবার দেখেছি ততবার ব্যথিত হয়েছি। সোস্যাল মিডিয়াতে এ দৃশ্য যারা দেখেছে সকলেই আঁতকে উঠেছে। ডাক্তারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তরিকুলের পায়ের এক্সরের ছবি দেখে হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। মনের অজান্তে পানিও চলে এসেছে চোখে। হাতুড়ি দিয়ে পেটার নির্মম দৃশ্য দেখে ভেবেছিলাম তার ওপর হামলাকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক হাতুড়ি মামুন তখন নিশ্চয়ই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ছিলো, সে সময় নিশ্চয়ই তার জ্ঞান, বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছিল। কিন্তু মাছরাঙা টেলিভিশনের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার আমার সে ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। কারণ হাতুড়ি মামুন খুব দম্ভ করে বলেছে, তরিকুলকে হাতুড়ি পেটা করে সে বরং বীর পুরুষের মতোই কাজ করেছে। এর জন্য তার কোনো অনুশোচনা নেই। সে স্বাভাবিকই আছে। এর কয়দিন আগে ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক নুরের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের যে নৃশংস হামলা হয়েছে তা ছিল আরো হৃদয়বিদারক। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে একটি পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন ছিল। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের প্রায় আধা ঘণ্টা আগেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় আন্দোলনকারী নেতাদের ওপর। হামলার ধরনে দেখা যায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেটই ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। বিশেষ করে নুর হোসেন নুরু। তারা নুরুর ওপর এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। মাটিতে ফেলে পেটাতে থাকে। বুটজুতা দিয়ে একের পর এক লাথি মেরে শরীর রক্তাক্ত করে দেয়।
হামলার ধরন এতই ভয়াবহ ও নির্মম ছিল যে মুমূর্ষু নুর উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের দু’পায়ের মাঝখানে ঢুকে পা ধরে রেখে বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার করছিল। শিক্ষক মানবিক হয়ে আরো কয়েকজনের সহায়তায় নুরকে গ্রন্থাগারের ভেতরে নিতে চাইলে তিনিও লাঞ্ছনার শিকার হন। পা ধরে থাকা শিক্ষকের সামনেই তার ছাত্রকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে লাঠিপেটা, লাথি, কিল-ঘুষি দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থার দিকে ঠেলে প্রাণনাশের চেষ্টা করে। এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আপনাদের সকলেরই জানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি ক্যাম্পাসে পরবর্তীতে ছাত্রলীগ আরো বেপরোয়া হয়েছে। দফায় দফায় হামলা করছে ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর। ছাত্রলীগের এই নির্মম নৃশংস অমানবিক আচরণের ঘটনা যতবার দেখেছি ততবার ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন মোড়ে লগি-বৈঠার তা-ব চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা মনে পড়ছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। অমানবিক নির্মম দৃশ্যগুলো দেখে চোখের কোণ বারবার অশ্রুসিক্ত হয়েছে। অশ্রুভেজা চোখের পাতা মুছে ভেবেছি, ছাত্রলীগের এমন অমানবিকতা, এমন নৃশংসতা তো নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে তারা এভাবেই পেশিশক্তি ব্যবহার করে পৈশাচিক কায়দায় ভিন্ন মত-পথের মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। প্রিয় পাঠকের জানা থাকার কথা, ১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্টের কথা। যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ছাত্র শহীদ আবদুল মালেক শাহাদাতবরণ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে ফেরার পথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হামলার শিকার হন তিনি। আহত শহীদ মালেক পরে ১৫ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। সেদিনের হামলার ধরন আর ২৮ অক্টোবরের হামলার ধরন একই। রাবিতে হাতুড়িপেটার ধরন আর সর্বশেষ ২২ জুলাই কুষ্টিয়ায় আদালত চত্বরে নির্ভীক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ধরনও সামঞ্জস্যতাপূর্ণ। ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে যারা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ হত্যার পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিল, তাদের আদর্শ বহনকারীরাই কিন্তু বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করেছিল। ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর নাটোরের বরাইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নুর বাবুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছিল তারাতো একই চেতনার অনুসারী। প্রতিটি ঘটনারই হামলাকারীরা একই চিন্তা-চেতনার অধিকারী, তাদের রাজনৈতিক প্লাটফর্মও একই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তাদের হামলার ধরন ও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু একই। পূর্বে এ ধরনের নির্মম হামলায় যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদেরই উত্তরসূরি ছাত্রলীগ আজ নির্মম হামলা চালিয়ে অমানবিকতার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।
আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে যারা পেশিশক্তিকে হাতিয়ার বানায় তারা যদি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব পায় তাহলে অমানবিকতার প্রলয় রূপ ধারণ করবে এটাইতো স্বাভাবিক। তা-না-হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ওপর এমন নির্মম হামলার পরও প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে একবারের জন্যও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেননি। হামলাকারীদের বিচার করা হবে বলে কোনো বক্তব্য না দিয়ে উল্টো যারা আহত কিংবা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই তার পরিবারের সদস্যদের হারানোর স্মৃতিচারণ করে কাঁদেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য তুলে ধরেন, নিশ্চয়ই তখন তার চাইতে বেশি ব্যথা আর কেউ অনুভব করেন না। প্রধানমন্ত্রী একজন মা, মা হয়ে তিনি তার সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা পোষণ করেন এমন ভালোবাসা রাশেদের মা কিংবা নুরুর বাবাও পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী কি নুরুর বাবা আর রাশেদের মায়ের কান্না শুনতে পান না? নিহত নাস্তিক ব্লগার রাজিবের বাসায় দ্রুত ছুটে গিয়ে শেখ হাসিনা রাজিবের পরিবারকে সান্ত¡না দিয়ে এলেন। নুরু বা রাশেদের পরিবারের পাশে না দাঁড়ান অন্তত মানবিক হয়ে তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারতেন, হামলাকারীদের বিচার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতিতো দিতে পারতেন। অবশ্য প্রতিশ্রুতি তিনি কিভাবে দিবেন। আজ পর্যন্ত তিনি কোন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন? ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন বলেছিলেন এ ওয়াদা পূরণ করেননি, ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন বলেছিলেন, চাকরির বদলে ঘরে ঘরে লাশ উপহার দিয়েছেন। বিরোধী দলে গেলে কখনো হরতাল করবেন না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও ২০০১-২০০৬ সালে কত শত হরতাল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা ভঙ্গের সর্বশেষ নজির কোটা বাতিলের ঘোষণা! মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা থাকবে না বলে বক্তব্য দিলেও ঠিক তার দুই মাস পর তা সম্ভব না বলে ওয়াদা খেলাপ করেছেন।
স্বার্থের দ্বন্দ্বে আজ আমরা কেমন যেন অমানবিক এবং নৃশংস আচরণ করছি। মানবিকতা আজ আমাদের থেকে যোজন যোজন দূরে। মাঝেমধ্যে দেখি মানবিকতার পরিবর্তে পাশবিকতারই যেন দখলদারিত্ব চলছে। অথচ মানবের প্রতি আমাদের মানবিকই হওয়ার কথা ছিল।
২ জুলাই শহীদ মিনারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় একটি কুকুরের মাঝে মানবের প্রতি দরদ দেখে একদিকে যেমন বিস্মিত হয়েছি, অন্যদিকে ভীষণ লজ্জিতও হয়েছি। মানবের ওপর মানব যখন নির্মমভাবে আঘাত হানছে তখন এগিয়ে এসে ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ করেছে একটি রাস্তার কুকুর। কুকুরের মাঝে মানবের ব্যথা অনুভব করার যে বোধ বা স্নায়ুবিক জ্ঞান ছিল তার সামান্যতমও ছিল না ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের মাঝে। কোটা সংস্কারের পক্ষে একটি মানববন্ধনে অংশগ্রহণের দায়ে, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমানকে যে রকম নির্মমভাবে আঘাত করেছে আর তাকে উদ্ধার করতে আসা ছাত্রী মরিয়ম, নিলাদের ওপর যেভাবে হামলে পড়েছে তা ছিল নজিরবিহীন। সেই পরিস্থিতিতে একটি কুকুর যেভাবে এগিয়ে এসে প্রতিবাদ জানিয়েছে তা মানবরূপী মনুষ্যত্বহীন মানবের জন্য সত্যিই অপমানজনক ও লজ্জাকর। শহীদ মিনারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের দিকে ধেয়ে আসা প্রতিবাদী কুকুরের ফুটেজ দেখে আফসোস করে ভাবি, কুকুর নামক একটি প্রাণী মানবের প্রতি মানবিক হলো অথচ মানব হয়েও আমরা স্বজাতির প্রতি মানবিক হতে পারলাম না!
লেখক : এমফিল গবেষক

মরো মুসলমানদের ঐতিহাসিক অর্জন

বাংলাদেশ বার্তাঃ সাত হাজার ১০০ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপ দেশ ফিলিপাইন। সমুদ্রবেষ্ঠিত এই দেশটির আয়তন দুই লাখ ৯৯ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী ম্যানিলা। জনসংখ্যা ১০ কোটি ৯৮ লাখ। জনসংখ্যার প্রায় ৮১ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক। মুসলিম জনসংখ্যা মাত্র ১১ শতাংশ হলেও ইসলাম দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ফিলিপাইনের একটি সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর নাম ‘মরো’। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপ মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে এদের বাস। ‘মরো’ শব্দটি স্পেনীয়দের উদ্ভাবন। অতীতে মুসলিম স্পেন ও পর্তুগালের মুসলমানদের ‘মুর’ বলা হতো। পরে মিন্দানওয়ের মুসলমানরা ‘মরো’ নামে সারা বিশে^ পরিচিতি লাভ করে। মিন্দানাও দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ এবং এর আয়তন ৯৭ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এর রাজধানীর নাম সুলু। জনসংখ্যা দুই কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার (২০১৮)। জনসংখ্যার ৯৮ ভাগই মুসলমান।
অবশেষে ফিলিপাইনের মুসলিম জনপদ মিন্দানাও দ্বীপে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হলো। সব কিছু ঠিক থাকলে ফিলিপাইনের মরো মুসলিম এলাকায় দীর্ঘ ৫০ বছরের সশস্ত্র লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে। অবসান হবে নিরন্তর রক্তপাত ও হানাহানির। সম্প্রতি মরো মুসলমানদের আইনগত ও ভৌগলিক স্বায়ত্তশাসন দিয়ে আইন পাস করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। ইতোমধ্যে ‘বাংসোমোরো অর্গানিক আইন’ অনুমোদনের যাবতীয় কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। দুতার্তে এই আইনে স্বাক্ষর করায় মিন্দানাও দ্বীপে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৫০ বছর মিন্দানাওয়ে সঙ্ঘাতের ফলে এক লাখ ৫০ হাজার মুসলমান নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। মাল-সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। ‘বাংসোমোরো অর্গানিক আইন’-এর বাস্তবায়ন সম্ভব হলে প্রকৃত অর্থে সেখানকার মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের বিজয় সাধিত হবে।

কী আছে ‘বাংসামোরো আইনে’

‘বাংসোমোরো’ ফিলিপাইনি শব্দ। এর অর্থ ‘নেশন অব দ্য মরো’ বা ‘মরো জাতির দেশ।’ মিন্দানাওয়ের মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল খ্রিষ্টান ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষের সাথে। সরকার এতদিন ধরে মিন্দানাওকে নামমাত্র স্বায়ত্তশাসন দিয়ে রেখেছিল। দ্বীপ শাসন করত কেন্দ্র থেকে। মুসলমানরা তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। বর্তমান যে আইন তৈরি হয়েছে, তার শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। এর সূত্র ধরে বর্তমান প্রয়াসটি আইনের অবয়ব ধারণ করেছে। এই আইনের ফলে শান্তিচুক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শর্ত বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন স্বায়ত্তশাসন আইন বাস্তবায়িত হলে ‘বাংসোমোরো’ সরকার নিজেরাই একটি সংসদ বা পার্লামেন্ট চালাতে পারবে। সরকার তার স্থানীয় রাজস্ব থেকে বড় অংশ তার এলাকার উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে। তবে রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়মিত প্রদান করতে হবে। তা ছাড়া মিন্দানাও অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ তার নিজস্ব কর্তৃত্বে থাকবে। ‘বাংসোমোরো’ সরকার এই অঞ্চলের বিচারব্যবস্থায় ইসলামি আইনের প্রয়োগও করার ক্ষমতা লাভ করবে। তবে শর্ত হচ্ছেÑ স্বায়ত্তশাসনের বদলে ‘বাংসোমোরো’ সরকারকে মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের হাজার হাজার যোদ্ধার বাহিনীকে ভেঙে দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হলোÑ ‘বাংসোমোরো’ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দেশে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এটি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠানের আশা করা হচ্ছে। আর গণভোটে জয়লাভের পরই আইনটি কার্যকর করা হবে। ফলে গণভোট পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।

ফিলিপাইনে ইসলাম ও মুসলমান

ফিলিপাইনে মুসলমানরা ধর্মীয় বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে ইসলামের প্রথম আগমন ১৩১০ সালে। আরবের ব্যবসায়ী এবং সুফি সাধকের মাধ্যমে ফিলিপাইনের সুলু ও জুলু দ্বীপে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটে। এ ক্ষেত্রে ‘তুয়ান মাশায়েখের’ নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সুলু দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এখানকার গোত্রপ্রধানের কন্যাকে বিয়ে করেন। ফলে সমাজে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছেলেমেয়েদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। তারা মিলে ইসলামের কাজে আত্মনিয়োগ করায় ধীরে ধীরে সুলুতে ইসলামের প্রসার ঘটে। ক্রমে জুলুসহ অন্যান্য দ্বীপেও ইসলামের বিস্তার ঘটে। ১৩৪০ সালে মালয় থেকে ‘করিমুল মাখদুম’ নামের এক দরবেশ সুলু দ্বীপে আগমন করেন। তার উদ্যোগে মিন্দানওয়ের সুলুতে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। এটি ফিলিপাইনের ও প্রথম মসজিদ। চতুর্দশ শতাব্দীতে সুমাত্রা দ্বীপ থেকে রাজা রাগুইন্দারের নেতৃত্বে একটি নৌবহর জুলু দ্বীপে আগমন করে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তিনি অল্প দিনের মধ্যেই নিজেকে সুলুর মুসলমানদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। 
ক্রমেই সুলুতে ইসলামের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং সেখানে সুলু সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে মিন্দানাও দ্বীপেও ইসলামের প্রসার ঘটে। পরবর্তীকালে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত ও পারস্য থেকে মুসলমানরা ফিলিপাইনে গমন করেন। এভাবে ফিলিপাইনে ইসলাম একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুসলমানদের দ্রুত উত্থান দুশমনদের কাছে অসহ্য বলে মনে হলো। ফলে ১৫৭৮ সালে স্পেন ফিলিপাইনের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫৯৬ সালে মিন্দানাওয়ের স্পেনীয় শাসক মুসলমানদের হাতে নিহত হয়। পরবর্তীকালে ডাচ ও স্পেনীয় শাসকরা যৌথভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে ১৬৩৭ সালে মিন্দানাও এবং ১৬৩৮ সালে সুলুর পতন ঘটে। তারপর ফিলিপাইনে কায়েম হয় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব। ১৯৪৯ সালে ফিলিপাইন স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পরপরই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি ওঠে। ফলে ম্যানিলা সরকারের সাথে মুসলমানদের সঙ্ঘাত শুরু হয় এবং পরবর্তীকালে তা সশস্ত্র আন্দোলনের রূপ নেয়।

মরো মুক্তি আন্দোলন : পেছন ফিরে দেখা

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের গোড়ার দিকে মরো মুসলমানরা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৭২ সালে উচ্চশিক্ষিত নেতা নূর মিশৌরির নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘মরো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট’। এরপর মরো মুসলিম আন্দোলন ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সরকারও মুসলমানদের দমন করার জন্য চালায় অত্যাচারের স্টিমরোলার। ফলে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মুসলমানের মৃত্যু ঘটে। সরকার স্বাধীনতাকামীদের দমন করার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করে। সরকারের ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির কারণে স্বাধীনতাকামীরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৮১ সালে হাশিম সালামাতের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট।’ ১৯৯৬ সালে নূর মিশৌরি ম্যানিলা সরকারের সাথে এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। ফলে মিন্দানওয়ের চারটি অঞ্চলে মুসলমানদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। নূর মিশৌরি সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মরো মুসলমানদের দ্বিতীয় সশস্ত্র গ্রুপ ‘মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট’ নূর মিশৌরির সাথে একমত না হয়ে সশস্ত্র লড়াই অব্যাহত রাখে। এমআইএলএফের সৈন্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ হাজার। মিন্দানাওয়ের এই স্বায়ত্তশাসন প্রক্রিয়ায় ‘মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট’-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

বাংসোমোরো আইন নিয়ে প্রতিক্রিয়া 

মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসন আইনে দুতার্তে স্বাক্ষর করায় মরো মুক্তি আন্দোলনের নেতারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমআইএলএফের সেকেন্ড-ইন কমান্ড গাজালি জাফর বলেন, ‘এই আইন হয়তো সর্বোৎকৃষ্ট আইন নয়, কিন্তু সূচনা হিসেবে এটা ভালো। আল্লাহ চাইলে আমরা এই সরকারের সাথে আছি এবং আমাদের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে আমরা কাজ করব।’ মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মুরাদ বলেন, ‘আমি আশা করি, বর্তমান আইনের ফলে আমাদের আন্দোলনরত সব দল স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে এবং এই এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’ জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংসামোরো আইনকে স্বাগত জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি মাইলফলক। এতে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো।’ মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে উচ্ছ্বাস। তারা এটাকে দেখছেন শান্তির পক্ষে একটি বড় বিজয় বলে। মরো আন্দোলনের ৬১ বছর বয়স্ক এক যোদ্ধা নাসের সালমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘এটি একটি স্বপ্ন। আমি মনে করি, আমরা যদি যুদ্ধ বন্ধ করতে পারি, তা হলে আমরা শান্তিতে থাকতে পারব।’ 
মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসন আইন নিঃসন্দেহে ফিলিপাইন সরকার ও মিন্দানাওয়ের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মিন্দানাওয়ে ফিরে আসবে শান্তি। ৫০ বছর ধরে এই এলাকার মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অনাচার ও রক্তপাতের দুঃসহ যন্ত্রণা চলছিল তার অবসান হবে। ফলে মিন্দানাওয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।
Daily Nayadiganta
দেশ মহাদেশ
ইকবাল কবীর মোহন

১৫ আগষ্ট ইসলামী শিক্ষা দিবস

বাংলাদেশ বার্তাঃ শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের সেরা ছাত্র। ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের হাতে গুরুতর আহত হওয়ার ৩দিন পর ১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি শহীদী মৃত্যুর অমিয়সুধা পান করেন। এরপর থেকে এ দিন টিকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপটঃ পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় ১৯৬৯ সালে । এতে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে, তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয় । এর অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট টি.এস.সি তে আয়োজন করা হয় একটি আলোচনা সভার । এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামুলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান । অসাধারন মেধাবী বাগ্মী আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায় । উপস্থিত শ্রোতারা আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে । আব্দুল মালেকের তাত্ত্বিক ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য স্তব্ধ করে দেয় ইতিপূর্বে বক্তব্য রাখা ইসলাম বিরোধী বক্তাদের । এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যুক্তি ও বান্তবতার লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত


হয়ে তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন গংদের নেতৃত্বে আক্রমন চালায় ছাত্রদের ওপর। সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে যাবার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পিশাচ বাহিনী ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম সন্ত্রাসীরা । রক্তাক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আব্দুল মালেক । তিন দিন পর ১৫
আগষ্টে শাহাদাত বরন করেন ইসলামের এই মহান বক্তা । 

জন্মঃ ******* 

আব্দুল মালেকের জন্ম ১৯৪৭ সালের মে মাসে। জন্ম স্থান বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার খোকসাবাড়ী গ্রামে।

শিক্ষাজীবনঃ ************* 

অসাধারণ মেধাবী আব্দুল মালেকের আলোকোজ্জ্বল শিক্ষাজীবন ছিল এ রকম: -তিনি জুনিয়র স্কলারশীপ লাভ করেন। -এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে মেধা তালিকায় একাদশ স্থান অর্জন করেন। -এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪র্থস্থান নিয়ে পাস করেন। -এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। -শাহাদাত বরণ কালে তিনি ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। -তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ১২২ নং রুমে থাকতেন। শহীদ আব্দুল মালেকের মধ্যে বিস্ময়করভাবে অনুকরণীয় সব গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী, নিরহংকারী, বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সঠিক নেতৃত্বদানের দূর্লভ যোগ্যতার অধিকারী, ভালোবাসা, ত্যাগ ও কুরবানীর উজ্জ্বল ও অনুপম দৃষ্টান্ত। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে প্রথম শহীদ ,শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীর মনে চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবেন প্রেরনার এক সু-উজ্জ্বল বাতিঘর হয়ে ।

দেশে জঙ্গিবাদ ও বাস্তবতাঃ আমাদের করণীয় -মুহাম্মদ আবদুল জব্বার


বাংলাদেশ বার্তাঃ জঙ্গি ইস্যুটি এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি। কেউ কেউ বলছেন দেশে মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আই,এস,আই বীজ বুনেছে। যে কারণে একের পর এক অঘটন ঘটছে। আবার সরকার পক্ষ বলছে দেশে আই,এস আই নেই; তবে তার আদলে নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ জঙ্গি ইস্যুটি সরকারের সৃষ্টি বলেও মন্তব্য করছেন। আমজনতার মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক আগ মূহুর্তে, জঙ্গি বিরোধী অভিযান আইওয়াস মাত্র। কারণ আওয়ামী সরকার এই অভিযানের মাধ্যমে জনগনের সামনে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে চেয়েছে। গত মার্চ মাসের শেষার্ধে সপ্তাহব্যাপী জঙ্গি বিরোধী অভিযানে বহুসংখ্যক হতা-হতের ঘটনায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। কারণ যারা জঙ্গি বলে পরিচিত তারা কেউ জীবিত গ্রেপ্তার হচ্ছেনা। নেহায়াত গ্রেপ্তার হলেও তাদের সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে তেমন কোন তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করছেনা। জঙ্গি বলে যারা নিহত হচ্ছে, তাদের পরিচয় পত্র-পত্রিকায় যতটুকু বিবরণ পাওয়া যায় তাতে তাদের অতীত বলেনা যে, তারা এমন সাঙ্ঘাতিক কিছুর সাথে জড়িত ছিল। অনেকের স্বজনরা দাবি করেছেন যে, তাদের প্রিয়জনদেরকে কে বা কারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডিও করা হয়েছে! তাছাড়া আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে গুম খুনের ঘটনা প্রতিদিন খবরের শিরোনাম হচ্ছে। তবে কারা এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাচ্ছে এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোন সদুত্তর মিলছেনা। রাষ্ট্রের শাসক দলের ছত্রছায়ায় সরকার দলীয় সমর্থক সংগঠন বিরোধী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হত্যা এবং সরকার দলীয় অন্তঃকোন্দলে হতা-হতের ঘটনা ঘটছে হরদম। অনেকে এহেন কার্মকান্ডকেও জঙ্গিপনা বলে অবিহিত করছেন। এ ধরণের ঘটনা সংঘটনের পর প্রকৃত দোষীদের অনুসন্ধান না করে সরকার বিরোধী দল সমূহের উপর হর-হামেশা দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। এমন দোষা-দোষীর কারণে আসল সত্যটি ধামাচাপা রয়েই যাচ্ছে। তাই প্রকৃত সত্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে নিজের উপলব্দি থেকে আজকের দু’কলম লিখা।

জঙ্গি শব্দটি অতিপরিচিত। জঙ্গ শব্দটি ফার্সি শব্দ। উর্দু ও ফার্সিতে শব্দটি লড়াই বা যুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়। জঙ্গ মানে যুদ্ধ আর জঙ্গি মানে যোদ্ধা,লড়াকু। ইংরেজীতে “মিলিটেন্ট”। ফার্সি ও উর্দুতে এটি পজেটিভ শব্দ। নিজেদের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় বা যারা অবিচার অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে । তবে গোটা দুনিয়াতে এরা নিজেদেরকে মুক্তিকামী দাবী করলেও সরকারী ভাবে তাদেরকে জঙ্গি হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়। যেমন কাস্মিরের জনগন স্বাধীন ভূখন্ড অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছে, যদিওবা তারা ভারত সরকারে চোখে ‘আতঙ্কবাদী’। আবার বাংলাদেশী জনগণ পাকিস্তানী বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছিল পাকিস্তান স্বৈরশাসকের দৃষ্টিতে দেশদ্রোহী। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানরা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। মায়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে এরা জঙ্গি। এ ধরণের একটি পজেটিভ শব্দ আমাদের দেশে নেগেটিভ সেন্সে ব্যবহৃত হয়। এখানে জঙ্গি মানে যারা আকস্মিক ভাবে কারো উপর হামলে পড়ে। জনজীবনকে বিষিয়ে তোল, উগ্রতার মাধ্যমে এক ভয়াল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। যাদেরকে সবাই বিপদজনক বলে মনে করে। এদের মধ্যে কোন গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নিমিত্তে লড়াই করে আবার কোন গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালের কোন দেশী-বিদেশী অপশক্তির হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহৃরিত হয়ে থাকে। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের দেশে হয়েছেও তাই।

সম্প্রতি জঙ্গি বা মিলিটেন্ট শব্দটির অপব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে । সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের পিছনে এই শব্দটি জুড়ে দিয়ে ইসলাম ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানদেরকে সংঘটিত সকল অঘটনের মূল হিসাবে চিত্রায়িত করা এবং দাড়ি,টুপি,পাগড়ী ও হিজাব ধারীদেরকে আতঙ্ক হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জঙ্গি বা আত্মঘাতি দলের সদস্য বলে অবহিত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট জেহাদী বা উস্কানী মূলক বই পাওয়ার দাবী করা হচ্ছে। এটি মুসলমানদের নামে জঙ্গি তকমা লাগানোর ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ বলে মনে হয়। কারণ আমাদের দেশে সরকারী ভাবে যে জঙ্গি পরিচয়ের ধারণা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা যদি সত্যিই হয়েও থাকে তাহলে এর সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম কারো উপর জবরদস্থি মূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার জিনিস নয়। যেটি রাসুল( সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তিনি করেননি। ইসলাম হল শাস্বত জীবন বিধানের নাম। কুরআনের ভাষায় “ইন্নাদ দ্বীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম” নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলাম মানুষের প্রকৃতজাত ধর্ম। অসি নয় মসিতেই ইসলামের বিজয় হয়েছে। রাসুল (সঃ) কখনো কোন যুদ্ধে নিজে থেকে শত্রু পক্ষকে আক্রমণ করেননি, যতক্ষণ না নিজে আক্রান্ত হননি। মানুষকে ইসলামাইজ করেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে। ফিতনা (অর্থ : প্রলোভন, দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা, যুদ্ধ, শিরক, ধর্মীয় নির্যাতন ইত্যাদি) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।’’ [সূরা বাকারা : ১৯১] । অকারণে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হওয়া ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা। আমাদের দেশে যারা প্রতিনিয়ত সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করে যাচ্ছে তাদেরকে প্রচলিত দেশীয় অর্থে প্রকৃত ফেতনাবাজ বা জঙ্গি বল্লে অত্ত্যুক্তি হবেনা। এরা রাষ্ট্রীয় মদদে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। হত্যাকারীর স্থান হবে জাহান্নামে উল্লেখ করে কুরআনে বলা হয়েছে, “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু’মিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে।’’ [সূরা নিসা : ৯৩] বিনা কারণে মানুষ হত্যার কোন সুযোগ নেই ‘‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করা ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’’ [সূরা মায়িদা : ৩২] অশান্তি সৃষ্টি করতে নিষেধ করে আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন ‘‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি কর না।’’ [সূরা আরাফ : ৫৬] যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে লা’নত এবং মন্দ আবাসের হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে। [সূরা রা’দ : ২৫] রাসুল (সঃ) রক্তপাত সম্পর্কে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।” [বুখারি : ৬৩৫৭]।

একদল জঙ্গি,উগ্রপন্থী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তখন তৈরী হয় যখন রাষ্ট্র বা কোন বিশেষ শক্তি স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে তাদের নেপথ্যে শক্তি হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রীয় মদদে যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তারা সরকার পক্ষের উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্য লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই সুবাদে তাদের অবৈধ কর্মকান্ডকেও রাষ্ট্র বৈধ হিসেবে স্মীকৃতি দেয়। তখন রাষ্ট্রের অবস্থা এত খানি ভঙ্গুর হয় যে,তাদের সংঘটিত অপরাধ কোন আইন আদালতের কাছেও অবৈধ বলে বিবেচিত হয় না। যাদের জন্য সাত খুন মাফ। যেহেতু তারা সরকারী লোক। গণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক উভয় রাষ্ট্রে উগ্রবাদের জন্ম হয়। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকরা যখন তাদের মত স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করতে পারেনা, সুশাসন থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়। যখন অহেতুক সাধারণ মানুষের উপর দমন-পীড়ন চলে তখন দেশের স্বাধীনচেতা মানুষদের একটি অংশও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে, নানা উগ্র-কৃত্তি কান্ডের মাধ্যমেও তাদের মত প্রকাশ করতে চেষ্টা করতে পারে।

ক’বছর ধরে দেশে জঙ্গি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণত আলেম-ওলামা ও যুবসমাজের একাংশ এমন কাজে জড়িত বলে খবরে প্রকাশ হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে কারা জঙ্গি? সরকারের তরফ থেকে তাদের ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য জাতির সামনে খোলাসা করছেনা। কারণ জঙ্গি হিসাবে যাদের চিহিৃত করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিকে হত্যা করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য মতে কথিত জঙ্গিরা অত্যন্ত বিপদ জনক, তাদের সাথে গোলা বারুদ ও আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র থাকার কারণে তাদের জীবিত গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা। বিষয়টি যদি সত্যিও হয়ে থাকে তা হবে দেশের জন্য মারাত্মক হুমকী। তবে প্রশ্ন উঠেছে সারা বছর জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের কথা সরকার প্রধানসহ সরকারের তরফ থেকে বলা হলেও ঠিক প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে জঙ্গি দমনের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠার হেতু কি ? আর কেনইবা একের পর এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলছে? দেশের গোয়েন্দা বাহিনী কি এসব বিষয়ে একেবারেই বেখবর? নাকি এই ইসূুটি বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য ট্রাম্পকার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে? এসব কারণে জঙ্গি ইস্যুটি নিয়ে সমগ্র দেশবাসী ধুয়াশার মধ্যে রয়ে গেছে। আমার মতে, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রধান দেশ। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি অটুট রয়েছে। দেশটিতে অদূর ভবিষ্যতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই সমূহ সম্ভবনাকে ধূলিসাৎ করতেই পরিবেশ ঘোলাটে করে চলমান জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের আমদানী করতে কোন মহলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।

এছাড়াও সরকারী দলের একটি গোষ্ঠী সাংঘাতিক জঙ্গিপনা ও মানবতা বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত। যাদের অপতৎপরতায় জন জীবন বিষিয়ে উঠেছে। প্রতিপক্ষকে হত্যা, গুম ও আক্রমণের পাশাপাশি নিজের দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম ও আক্রমণ করে মারাত্মক ভাবে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। এদের বিরুদ্ধে তেমন কোন আইন প্রয়োগ হতে লক্ষ্য করা যায়না, এদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও জামাই আদরে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। সরকার সমর্থক এই গোষ্ঠী টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, ব্যাংক ডাকাতি, গুম করে মুক্তিপণ আদায়, শিক্ষক লাঞ্চনা, ছাত্র নির্যাতন, ছাত্রী নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। প্রকৃত পক্ষে এরাই জঙ্গি, এরাই উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী। রাষ্ট্রই যেখানে অপরাধীদের পৃষ্টপোষক সেখানে এদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করবে কে?

দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে মিডিয়ার একটি অংশ প্রতিনিয়ত আজগুবি চটকদার সংবাদ পরিবেশন করছে। তাদের ভাষ্য মতে দেশে এত বেশী জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটেছে যে, দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান হতে চলছে। আরেকটি অংশ সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে প্রকৃত সত্য পরিবেশন করছেনা, নেহায়াত সরকারের তরফ থেকে যা প্রচার করতে নির্দেশ দেয়া হয় স্রেফ তাই তারা প্রচার করছে। এরা দোষীকে সাধু বানায় আর নিরহকে বানায় জঙ্গি, বোমারু! ডাহা মিথ্যাকে সত্যের প্রলেপ দিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অবারিত চেষ্টা করছে।

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে দেশে কোন আই এস আই নেই। সরকার বলছে এসব অঘটন বিএনপি জামায়াতের ছত্র-ছায়ায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ,হুজি ও জেএমবি ঘটাচ্ছে। অথচ ঢাকার গুলশানে,কল্যাণপুরে, চট্রগ্রামের সিতাকুন্ডে এবং সিলেটের জালালাবাদের ঘটনার দায় আই ,এস,আই তাদের মুখপাত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাদ দিয়ে জঙ্গি কার্যক্রম সংস্থা সাইড ইন্টিলিজেন্স এ স্বীকার করেছে!

ধর্মকে বা ধর্মের সাথে রিলেটেড বিষয় গুলো নিয়ে বিষেদগারের করা নাস্তিকদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এমন স্পর্শ কাতর বিষয় নিয়েই অনেক সাধারণ মুসলমান অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইনে উস্কানী মূলক লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমেও সহজ সরল ঈমানদারদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলছে কথিত নাস্তিক শ্রেণী। এসবকেও জঙ্গিবাদের উত্থান বলে চালিয়ে দেয়া হয়। আর এসব ঘটনাকে তাল-গোল পাকিয়ে মুসলমানদেরকে জঙ্গি তকমা লাগানোর ঘৃণ্য চেষ্টা চলছে। যারা স্বাধীনচেতা মনোভাবের নামে আরেকজনের বিশ্বাসের উপর কুঠারঘাত করছে তাদের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ অনেকটা বক্তব্য সর্বস্ব।

এহেন জটিল পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের কারো জন্য সুখকর নয়। কোথাও বোমা মেরে বা কিছু লোককে হত্যা করে কোন উগ্রপন্থী বা জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামের নামে রাষ্ট্রে প্রতিষ্টা করে ফেলবে এটি নেহায়াত আজগুবি কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ কোন গোষ্ঠী এধরণের জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনা। তাই এমন কোন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য রাষ্ট্রকে এবং রাষ্ট্রের সুশীলদেরকে এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়োজিত যারা তারা অনির্বাচিত আর যারা সুশীল হিসেবে বুলি আওড়ায় তারা কুশীল হিসেবেই ভূমিকা রাখতে পটু। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ দমনে রাষ্ট্র,সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে-

প্রথমতঃ আগামী প্রজন্মকে জাগতিক জ্ঞানের পাশাপাশি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আমাদের চলমান শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ দুনিয়াবী কর্মমূখী শিক্ষার পাশাপাশি পরকালীন জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই একজন মানুষ নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে। ভাল-মন্দের ফারাক বুঝতে সক্ষম হয়। কেবল মাত্র ধর্মীয় শিক্ষার্জনের মাধ্যমেই সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎ সাহস অর্জন করে। অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সৎ সহস অর্জন করে।

দ্বিতীয়তঃ ধর্ম চর্চার সুষ্ট পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যে যার যার ধর্ম পালন করবে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা কোন গোষ্ঠী যেন কোন ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এক ধর্মের জনগোষ্ঠীরা যেন আরেক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর উপর এমন কোন বিরুপ মন্তব্য বা আক্রমণাত্বক ভূমিকা প্রদর্শন করতে না পারে, যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি নষ্ট হয়। কেউ ধর্ম পালন করুক না করুক সেটা তার অধিকার বলে কেউ দাবী করতে পারে,তবে ধর্মের বিরুদ্ধে এমন ভূমিকা রাখতে দেয়া ঠিক নয়, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।

তৃতীয়তঃ রাজনৈতিক অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে কোন বাঁধা বিপত্তি দেয়া চলবেনা। স্বাধীন মত প্রকাশ, সভা সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে। বাঁধা বিপত্তি হীতে বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ মানুষ যখন মত প্রকাশের অধিকার পায়না তখন মত প্রকাশের ভিন্ন উপায় খুঁজে নেয়। তাই রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি পরিত্যাগ করা উচিৎ। এ ছাড়াও সুষ্টুভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগও থাকতে হবে।

চতুর্থতঃ জঙ্গিপনা বা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারের কোন সদস্য উগ্রবাদে লিপ্ত হচ্ছে কিনা? কারা তাদের সঙ্গ দিচ্ছে? তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ খবর রাখতে হবে। আমার ধারণা, ভূল ভাল বুঝিয়েও যা ইসলাম নয় তা ইসলাম হিসেবে মস্তিস্ক ধোলাইয়ের অপচেষ্টা করছে কোন স্বার্থান্বেষী মহল।

পঞ্চমতঃ যারা ইসলামের পক্ষ শক্তি হিসেবে দাবী করে অথচ ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ বিনা কারণে ইসলামের দোহায় দিয়ে কিছু লোককে হত্যা করলে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে ভাবা নেহায়াত বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলাম এমন কোন ঠুনকো জিনিস নয় যে অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করতে হবে!

ষষ্ঠতঃ ইসলামী দল, সংগঠন, সংস্থাকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর ভয়াবহতা ও অনিষ্টকর দিকগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে বুঝাতে হবে। ইসলামের জিহাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এক নয়, একথা বিশেষ করে মুসলিম যুবকদের মাঝে কাউন্সিলিং করতে হবে। জঙ্গিবাদের সাথে সত্যিকার ইসলামপন্থীরা জড়িত নয়। তাই সরকারকে জঙ্গিবাদ দমনের জন্য প্রকৃত ইসলামী শক্তি, ইসলামী দলগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে এবং তাদের সাথে নিয়েই কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। ইসলামী শক্তি ও দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যে ইসলামী আদর্শ, ইসলামী শিক্ষালয় সমূহকে ঢালাওভাবে জঙ্গি আখড়া, জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র, মৌলবাদী অভয়ারণ্য বলার মত উস্কানিমূলক বক্তব্য সরকারকে বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সরকারী দলের মাথায় ঢুকেছে যে, ইসলামী দল মানে রাষ্ট্র বিরোধী । তাদেরকে সভা-সমাবেশ সহ বৈধ কোন কর্মকান্ড করতে দেয়া যাবেনা।তাদের ধারণা সুষ্টু রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ দিলে ইসলামী দলসমূহ ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার আশঙ্কা আছে,তাদের এহেন স্বৈরাচারী মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে।

সপ্তমতঃ সরকারের উচিৎ কোন প্রকার টালবাহনা না করে বা কোন পক্ষ বিপক্ষ না নিয়ে দেশ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জঙ্গি,সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের তৎপরতা জাতির সামনে পরিস্কার করতে হবে এবং প্রকৃত দোষীদের যথা যথ শাস্তির বিধান করতে হবে।

নাইন ইলিভেন সংঘটনের পেছনের শক্তি কারা? কারা আই,এস,আই এর প্রতিষ্ঠাতা শক্তি? কারা আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ আমদানী করেছে? ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বিবেকবান মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। ধীর ধীরে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে। মুলত ইহুদী, খৃষ্টান ও জয়নবাদীদের যৌথ প্রযোজনায়, সমগ্র দুনিয়াব্যাপী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের ইসলামের প্রতি আগ্রহকে ভীতিতে পরিণত করছে এবং মুসলিম বিশ্বব্যাপী গোলযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থনৈতিক পরিমন্ডলকে এরা দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব অপশক্তি মুসলমানদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ফায়দা লুঠছে। এখুনি মুসলিম মিল্লাতের সজাগ হবার সময়, যে যার অবস্থান থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার।