বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, প্রতিদিনই নানা রকম লোমহর্ষক ঘটনার স্বাক্ষী হতে হচ্ছে মানুষকে। অরাজকতার শিকার হচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। একটি মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ার পরও শহর থেকে গ্রাম কোথাও মানুষ স্বস্তিতে নেই। মূলত কোরআন হাদিসের চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণেই সর্বত্র অবক্ষয় অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য ও সাথীদের আয়াত হাদিস প্রতিযোগীতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগরী সভাপতি শাফিউল আলমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাছুম তারিকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগরী বায়তুলমাল সম্পাদক আহমদ হুসাইন, অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ নোমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক শফিউল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মোস্তফা হুসাইন প্রমুখ।
শিবির সভাপতি বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্য পরায়নতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, দেশপ্রেম, পারস্পরিক মমতাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। পারিবারিক কলহ, মাদক, অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা, কুরুচিপূর্ণ পশুসুলভ আচরণ সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে অবক্ষয়ের দ্ধারপ্রান্তে। সোস্যাল মিডিয়া , ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার খবরের বিশাল অংশই থাকে অবক্ষয়ের খবর। ভাইয়ের হাতে ভাই, ছেলের হাতে মা-বাবা, স্ত্রীর হাতে স্বামী আবার স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হচ্ছে। এমনকি অনৈতিক সম্পর্কের প্রভাবে গর্ভধারিণী মা তার সন্তানকে খুন করছে। দুই বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন খুন, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র ও অশ্লীলতার অবাধ বিচরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। একটি মুসলিম প্রধান দেশে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় শক্তি ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষাকে পাঠ্যপুস্তক সহ সকল ক্ষেত্রে সংকোচিত করেছে। কোরআন হাদিসের বই পুস্তককে রাষ্ট্রীয় ভাবে জিহাদী বই আখ্যা দিয়ে ইসলামী সাহিত্য সম্পর্কে জনগণের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকার একদিকে কথিত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে অন্যদিকে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান থেকে ছাত্র ও যুবসমাজকে দূরে রাখছে। কোরআন হাদিস নিয়ে সরকারের বিভ্রান্তি ছড়ানো, উদাসীনতা এবং অবক্ষয়ে মদদ দেয়ার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আর রাষ্ট্রীয় শক্তিও কোরআন হাদিস বাদ দিয়ে ভ্রান্ত মতবাদ ও অনৈতিক পন্থায় দেশ পরিচালনা করছে। ফলে অনৈতিকতা ও অবক্ষয়ের মহামারি চলছে দেশে।
তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে কোরআন হাদিসের চর্চা থেকে দূরে থাকার কারণেই। সুতরাং এ অবস্থার পরিবর্তনও করতে হবে কোরআন হাদিসের চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমেই। সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চায় তাহলে ইসলামী সাহিত্যের প্রচার, প্রসার ও চর্চা বাড়াতে হবে। ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুনকে লালন করে তা যুব ও ছাত্র সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই যুব সমাজ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পাবে ও জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস থেকে মুক্ত থাকবে। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ কাজটি করে যাচ্ছে। শুধু পড়া নয় ছাত্রশিবির কোরআন হাদিসের চর্চা ও জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল অরাজকতা ও অশান্তি দূর করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। কোন কথার ফুলঝুড়ি বা স্লোগান নয় বরং ছাত্রশিবির তার সর্বস্তরের জনশক্তিকে কোরআন হাদিসের আলোকে গড়ে তোলার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা যে ছাত্রের সাথে কোরআন হাদিসের সম্পর্ক থাকবে তার দ্বারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হবে না বরং সে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে। আজকের এই আয়োজন ছাত্রশিবিরের সেই প্রচেষ্টারই অংশ। আমরা মনে করি, কোরআন হাদিসের আলোকে নৈতিকতা সম্পন্ন যোগ্য নাগরিক ছাড়া সমৃদ্ধ দেশ ও জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই আমরা আমাদের লক্ষ বাস্তবায়নে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কোরআন হাদিসের চর্চা অব্যাহত রাখছি এবং তা যে কোন মূল্যে অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন