মানুষ অনেক সময় নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কয়েক দিন আগে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ পড়ে আমিও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম। ইজ্জতটা আমার যায় যায় অবস্থা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলস অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া গোল্ডেন ডুডল প্রজাতির বিউরিগার্ড টায়ারবাইটার নামক একটি কুকুরকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিয়েছে। কুকুরটির বয়স দু’বছর। অধ্যাপক কুকুরটি ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট হেলথ সেন্টারের সেকেন্ড ফ্লোরে বসবাস করে। তার কাজ হচ্ছে পরিশ্রান্ত, রুগ্ণ ছাত্রদের আদর-সোহাগ ও মনোরঞ্জন করা। তার নিজস্ব অফিস আছে, ইউনিফরম ও বিজনেস কার্ডও আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি তিন বছর ছাত্র ছিলাম এবং সেখান থেকেই আমি ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েছিলাম। আতঙ্কিত হলাম এ কারণে যে, যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা কুকুরকে অধ্যাপক নিয়োগ করতে পারে সে বিশ্ববিদ্যালয় সভ্য মানুষের শিক্ষায়তন হতে পারে না। সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি যদি আমার বিশ্ববিদ্যালয় হয় তাহলে আমার ডিগ্রী আর ইজ্জত দু’টোই চলে যায়। খবরটি পড়ে উত্তেজনায় বিবিকে বললাম তাৎক্ষণিক আলমারি থেকে আমার সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্টগুলো বের করতে, নাম মিলানোর জন্য। তিনি একটু দেরি করে আনলেন এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। না, আমার বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ক্যালিফোর্নিয়া সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। অল্পের জন্য ইজ্জত রক্ষা পেলো বলে মনে হলো। যদিও আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কয়েক বছর আগে একজন বিদগ্ধ ব্যক্তি একটি কার্টুন এঁকেছিলেন। এতে তিনি দেখিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গেট দিয়ে পড়ালেখার জন্য মানুষের বাচ্চা ঢুকছিল আর পড়ালেখা শেষে আরেক গেট দিয়ে পশুর বাচ্চা হয়ে বের হচ্ছিল। কুকুরকে অধ্যাপক নিয়োগ আর পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের বাচ্চাকে পশুর বাচ্চায় পরিণত করা এই দু’টোর মধ্যে কোনটি বেশি নিকৃষ্ট ও অপমানকর, জ্ঞানী-গুণীরা তা মূল্যায়ন করতে পারেন।
গ্র্যাজুয়েশন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ও সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমার মেয়াদ মিলিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার প্রায় ৫ বছরের সম্পর্ক। এর ক্যাম্পাস ও হলে ছিল আমার নিত্য পদচারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলোকে আমি ভুলতে পারি না। কিন্তু আমি এখন এই ক্যাম্পাসে যেতে পারি না, যেতে মন চায় না। লজ্জা হয়। সকাল-বিকেল, দুপুর, রাত, যখনই আপনি যাবেন দেখবেন জোড়ায় জোড়ায় কপোত-কপোতী হয় আপত্তিকর ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে কিংবা কেউ কারো কোলে বা বুকে মাথা রেখে প্রেমালাপে মত্ত। ঝোপ-ঝাড়, খোলা জায়গা, পাঠাগারের আশপাশ যেদিকে তাকাবেন প্রায় সর্বত্রই এই দৃশ্য দেখতে পাবেন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কেন, স্কুল-কলেজেও এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। পার্ক, রেস্তোরাঁর তো কথাই নেই। হাতিরঝিলে রাস্তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো উচ্ছৃঙ্খলতা ও বেলেল্লাপনার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অথচ এর কোনটিই আমাদের কালচার বা জীবনব্যবস্থার অংশ নয়। এর সাথে জড়িত ছেলে এবং মেয়েরা বেশির ভাগই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধর, দেশের ভাবী কাণ্ডারী। আর কিছু অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবক-যুবতী আছে শিক্ষিতদের কাজ-কর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয় এবং এভাবে তারা অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে পারদর্শিতা লাভ করছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের নৈতিক কোনও জ্ঞান দিতে পারছে না।
এমতাবস্থায় গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দু’টি পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্র দু’টি দেশের সকল পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নতুন কোনও সংস্থা নয়, বিগত ৩৮ বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রীদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি আদর্শ মা হবার শিক্ষাও দিচ্ছে। যে দায়িত্ব ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ হিসেবে সরকারের পালন করার কথা ছিল। সে দায়িত্বের বোঝা তারা নিজেদের কাঁধে নিয়ে মা- বোনদের কুরআন-হাদিস ও ইসলামী জ্ঞানসমৃদ্ধ করার পাশাপাশি শিষ্টাচারে উদ্বুদ্ধ করছে এবং অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যারা শিক্ষাঙ্গনে এই সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ করেছেন তারা শিক্ষার সংজ্ঞাও জানেন না।
শিক্ষার একটি সার্বজনীন সংজ্ঞা আছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী শিক্ষা হচ্ছে- জীবনের সর্বস্তরের সার্থক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিক মূল্যবোধ ও ধীশক্তি অর্জনের লক্ষ্যে যে কর্মকা- পরিচালিত হয় তার সমষ্টির নাম, শুধু একটা নির্দিষ্ট কাজ বা কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নয়। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে- যুবক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া যাতে তারা যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজের উপর প্রভাব বিস্তারকারী ঐতিহ্য ও ধ্যান-ধারণাগুলোকে বুঝতে পারে এবং সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষার এই কার্যক্রমের মধ্যে তাদের নিজস্ব ধর্ম-সভ্যতা-সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক আইন অধ্যয়ন প্রভৃতি যেমন অন্তর্ভুক্ত আছে, তেমনি শিক্ষার মৌলিক বিষয়াবলি তথা ভাষার ব্যুৎপত্তি, ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সৃজনশীলতা এবং ব্যক্তিগত ও পত্র যোগাযোগে দক্ষতা অর্জনও রয়েছে। বৃটিশ Manpower services commission-এর ভাষায়- ‘Education is defined as activities which aim at developing the knowledge, skills, moral values and understanding required in all aspects of life rather than a knowledge and skill relating to only a limited field of activity. The Purpose of education is to provide the conditions essential to young people and adults to develop an understanding of the traditions and ideas influencing the society in which they live and to enable them to make a contribution to it.
It involves study of their own religion and culture and of the laws of nature as well as the acquisition of linguistic and other skills which are basic to learning, personal developement, creativity and communication.
ইসলামী ছাত্রীসংস্থার বিরুদ্ধে সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিযোগগুলো আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। তারা তাদের পরিপত্রে যা বলেছেন তার সারাংশ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ছাত্রীদের ইসলামের নামে বিভ্রান্ত করে তাদের জেহাদী চেতনা ছড়াচ্ছে এবং বাংলাদেশের সংবিধানের চেতনাবিরোধী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা এই দেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপপ্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
আমি আগেই বলেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা ছাত্রীসংস্থার কাজকর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণার পরিপত্র জারি করেছেন তারা শিক্ষার সংজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন বলে মনে হয় না। ছাত্রীসংস্থা যে কাজগুলো করছে তা শিক্ষার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত অপরিহার্য কাজ। শিক্ষার সংজ্ঞা ও আওতা অনুযায়ী প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় যদি এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতো এবং মূল্যবোধ সৃষ্টি ও চরিত্র গঠনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে ছাত্রীদের সংঘবদ্ধ হয়ে এ কাজগুলো করতে হতো না। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগুলো করছে, সমাজে সুকৃতির প্রতিষ্ঠা ও দুষ্কৃতি বিলোপের চেষ্টা করছে। এ জন্য তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা না করে তাদের তিরস্কৃত করলেন। এটি একটি পরিহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমি এখন দেখছি ছাত্রীসংস্থা সম্পর্কেও তাদের ধারণা নেই। জনবিচ্ছিন্ন উচ্ছিষ্টভোগী লেজ নাড়া কিছু প্রাণী চরিত্রের কিছু লোক গোপন রিপোর্ট দিল আর আমরা তা বিশ্বাস করে নিজের পায়ে কুঠার মারলাম- ঘটনাটি আমার কাছে এ রকমই মনে হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার একটি সংবিধান আছে। এই সংবিধানের ২নং ধারায় বর্ণিত তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে :
“বাংলাদেশের ছাত্রী সমাজকে আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী গঠন করে তাদেরকে আদর্শ মুসলিম নারী হিসেবে গড়ে তোলা এবং দ্বীন ইসলামের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা যাতে দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তি হাসিল করা যায়।”
ধারা-৩ এ সংস্থাটির কর্মসূচির বর্ণনা আছে এবং তা হচ্ছে :
১। ছাত্রীদের মধ্যে দ্বীন ইসলামের সঠিক ধারণার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার।
২। ইসলামপ্রিয় ছাত্রীদেরকে সুসংগঠিত করে উন্নত নৈতিক জীবন যাপনের প্রশিক্ষণ দান।
৩। ছাত্রী সমাজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্নমুখী সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ।
উপরোক্ত দায়িত্বগুলো তারা পালন করছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা কখনো উচ্ছৃঙ্খলতা, অনৈতিকতা বা অশ্লীলতার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এ ধরনের নজির গত ৩৮ বছরে অর্থাৎ সংস্থাটির জন্মলগ্ন থেকে পাওয়া যায়নি। সারা দেশের হাজার হাজার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, প্রকৌশল ও মেডিকেল কলেজ, সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৩ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৯ জন ছাত্রী এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত আছে এবং তারা নিজেদের চরিত্র গঠন ও শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আদর্শ মা ও শিক্ষিকা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি সমাজের আকর্ষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিয়ের বাজারে উচ্ছৃঙ্খল আলট্রা মডার্ন মেয়েদের তুলনায় চরিত্রবতী হিজাবধারী ধর্মপরায়ণ এই মেয়েদের চাহিদা কয়েকশ’ গুণ বেশি। যে অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকাণ্ড বেআইনী করার ঘোষণা দিয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তাদের এই ঘোষণা সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা আসলে কী চান? তারা কি চান এ দেশ থেকে কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য চর্চা ও তার অনুশীলন বন্ধ হয়ে যাক? তারা কি ধর্ম ও নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষার ফলাফল দেখতে চান? পাশ্চাত্যের সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চান? সেখানে পরিবার প্রথা ভেঙ্গে পড়েছে। কার বউ, কার মেয়ে কখন কার কণ্ঠলগ্ন হয় তা বলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। লিভ টুগেদার পদ্ধতি লাখ লাখ জারজ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে যার একটু কসরত আমাদের দেশের অভিনেতা বৈরাগীরা কয়েক দিন আগে দেখিয়েছেন। শুধু বৈরাগী নয়, বাংলাদেশে এখন চরিত্রহীন হাজার হাজার যুবক-যুবতি লিভ টুগেদার করে। এর প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন একজন মহিলা কবির মেয়ে সিলেটে একটি এনজিতে কাজ করার সময়। কিছুদিন আগে একটি জরিপ রিপোর্ট বেরিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ ভাগ নারী তাদের স্বামীর তুলনায় কুকুরকে বেশি বিশ্বাস করে। আবার ৫৪ ভাগ পুরুষ স্ত্রীর তুলনায় কুকুরকে বেশি প্রাধান্য দেয়। অনেকে বিয়ে শাদি না করে কুকুরকেই সঙ্গী করে নিয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই এ ধরনের সমাজ চাই না।
২০১০ সালের ঘটনা অনেকেরই মনে থাকতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের মহিলা শাখার কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ড সারা জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ ও আনন্দ মোহন কলেজের সাধারণ ছাত্রীদের উপর তাদের নিপীড়ন পত্রপত্রিকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখন জুনিয়র মেয়েদের উপর সিনিয়র মেয়েদের অবৈধ ও অনৈতিক নির্দেশের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং হোস্টেলে সিট প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে অনৈতিক কাজ করতে তাদের বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছিল। ইডেনের মেয়েরা সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিল যে, ছাত্রলীগের মহিলা নেত্রীরা তাদের সিনিয়র নেতা, রাজনীতিক, শিল্পপতি ও বিদেশীদের মনোরঞ্জন এবং তাদের সাথে রাত্রি যাপনের জন্য তাদের বাধ্য করতো এবং নির্দেশ পালন না করলে নৃশংসভাবে তাদের উপর নির্যাতন চালাতো। ছাত্রলীগের পুরুষ এবং নারী শাখার নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, নিজেদের মধ্যে আধিপত্য ও অর্থ সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ, গোলাগুলী ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনাবলী কি আমাদের মন্ত্রী, এমপি ও গোয়েন্দারা জানেন না। যদি জানেন তাহলে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেআইনী না করে যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অনৈতিকতার কিংবা অশ্লীলতার কোন অভিযোগ নেই অথবা প্রমাণ নেই তাদের তৎপরতা কেন বেআইনী করা হলো? আমি জানি সরকারের কাছে এর কোন জবাব নেই। সরকার জনবিচ্ছিন্ন, জনপ্রিয়তা তার শূন্যের কোঠায়। এ অবস্থায় অন্যের সৎকর্ম, নৈতিক উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা তাদের সন্ত্রস্ত করাটাই স্বাভাবিক এবং পার্টি তৎপরতা, তার ছাত্র-ছাত্রীদের হোক অথবা তাদের বাপদের হোক, বেআইনী করা ছাড়া সরকারের অথবা সরকারের অভ্যন্তরের মুর্খ ব্যক্তিদের সামনে দ্বিতীয় কোন পথ থাকতে পারে না। জাতির জন্য এটি একটি অশুভ সংকেতই নয় বরং তার ধ্বংসের একটি আলামতও। এই অবস্থায় এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ প্রত্যাহার এবং ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রমের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।