বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক ১ আগষ্ট ২০১৬ঃ কি কি কারণে ক্যান্সার হচ্ছে বা হতে পারে তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। অদ্যাবধি ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ চিহ্ণিত করা সম্ভব হয়নি। তবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যান্সারের কারণ খুঁজে পেতে ব্যাপক গবেষণা চলছে। গবেষণায় ক্যান্সারের কিছু কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন অন্যাতম।
ধূমপান : ধূমপায়ীদের জন্য এটা অবশ্যই দুঃসংবাদ যে, ক্যান্সার বিষয়ক যত গবেষণা হয়েছে, সব গবেষণায় ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ধূমপানের মাধ্যম ফুসফুস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এ পর্যন্ত যারা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের অধিকাংশ হয় নিয়মিত স্মোকার অথবা জীবনের কোন না কোন সময় ধূমপান করতেন। ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ভাগ ধূমপায়ী ও তামাক সেবী।
মাদবদ্রব্য সেবন : মদ ও মাদকদ্রব্য সেবন ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সকল প্রকার মাদকদ্রব্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মুখগহ্বর, ফুসফুস, লিভার, কণ্ঠনালী প্রভৃতি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ মাদবদ্রব্য সেবনের মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
পান : কিছু মানুষকে দেখা যায়, সারাক্ষণ পান চাবান। তাদের ঠোঁট, দাঁত ও জিহ্বাসহ পুরো মুখমণ্ডল বিশ্রি এক বর্ণ ধারণ করে। অতিরিক্ত পান খাওয়া মানে ক্যান্সারের ঝুঁকি। আর যারা পানের সাথে চুন, সুপারি, খয়ের, নানারকম মসল্লা, বিভিন্ন নামের জর্দা, সাদাপাতা ইত্যাদি খান, তাদের মুখ গহ্বর, জিহ্বা, ঠোঁট, মাড়ি ইত্যাদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। পানের সাথে চুন, সুপারি ও জর্দা ইত্যাদির মিশ্রণে মুখগহ্বরের বিভিন্ন অংশে এক প্রকার ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষত যে কোন সময়ে ক্যান্সারে রূপ লাভ করতে পারে। পানের সাথে খাওয়া খয়ের এর প্রধান উপাদান ট্যানিন থেকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত। একইভাবে মিষ্টি সুপারিতে থাকে ছত্রাক। অ্যাকালট্রপিন ছত্রাকে আক্রান্ত সুপারি লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
চিনি ও লবণ : গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত চিনি ও লবণ ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব চিনি ও লবণ কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
অলস জীবন : চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা গবেষণায় এ কথা বারবার প্রমাণ হয়েছে যে, মানব দেহের সুস্থতা নির্ভর করে ভারসাম্যপূর্ণ পরিশ্রমের উপর। অলস জীবন যাপন মানে ঝুঁকিপূর্ণ জীবন। ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, যারা পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের তুলনায় যারা পরিশ্রমী নন, অলস জীবন যাপনে অভ্যস্থ, তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
বংশগত ইতিহাস : ক্যান্সার কি বংশগত রোগ? পিতা-মাতা কারো ক্যান্সার হলে সন্তানদের জীবন কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ক্যান্সার বংশগত রোগ নয়। তবে, পিতা-মাতা বা বংশে নিকটতম কেউ ক্যান্সার হলে জিনগত কারণে সন্তানের ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।
পেশাগত কারণ : কিছু কিছু পেশা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যাদেরকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকতে হয়, ব্যবহার করতে হয়, তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। যারা বিভিন্ন রঙের কারখানায়, জাহাজতৈরি শিল্পকারখানায়, গ্যাস ও রাবার কারখানায় কাজ করেন, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। এ জাতীয় পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মূত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে।
বয়স : বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যে কোন বয়সের নারী-পুরুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশুদের তুলনায় বৃদ্ধ বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। এ ক্ষেত্রে ষাটোর্ধ বয়স অধিক ঝুকিপূর্ণ। ক্যান্সার আক্রান্তদের উপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৭০ভাগের বয়স ৬০ এর বেশি।
সূর্যের তাপ : জীবন ধারণের জন্য সূর্যের তাপ অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত সূর্যের তাপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যারা তীব্র রোদে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, বা যাদেরকে প্রায়ই রোদে কাজ করতে হয়, তাদের ত্বক ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আছে।
বুকের দুধ : মায়ের বুকের দুধ সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার। অনেকে মা কর্মব্যস্ততা ইত্যাদি অজুহাতে সন্তানকে পর্যাপ্ত দুধ পান করান না। এটি স্তন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।
যে কোন সময়, যে কোন বয়সে ক্যান্সার হতে পারে। তবে উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো ক্যান্সার বিষয়ক নানা গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলক কমে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন