আমাদের সিলেট ডটকমঃ সিলেট- মৌলভীবাজার-শমশেরনগর ট্রানজিট সড়ক ব্যবহার করে চাতলাপুর চেকপোষ্ট দিয়ে কঠোর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করল ভারতীয় জ্বালানি তেলের ট্যাংকার। বাংলাদেশে আসা ভারতীয় জ্বালানী তেলের ১০টি লরি শনিবার রাত সোয়া ১১টায় মৌলভীবাজারের চাতলাপুর ও ত্রিপুরার মনু চেকপোষ্টে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী। এ সময় ত্রিপুরার উনকোটি জেলার সরকারী উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। রাত ১১টায় জ্বালানী তেলের লরি চাতলাপুর চেকপোষ্টে গিয়ে পৌছার পর ইমিগ্রেশন ও শুলক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চেক পয়েন্টে ফুল দিয়ে বরণ করে বরণ করে নেয়া হয় জ্বালানী তেলের ১০ জন চালক, সহকারী চালক ও সফরসঙ্গী ভারতের ওয়েল কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের।
এর আগে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ভারতের মেঘালয় থেকে সিলেটের গোয়ানইঘাট উপজেলার তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ৯ টি তেলবাহী ও একটি গ্যাসবাহী লরি বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতের জ্বালানি তেল ও গ্যাসবাহী লরির প্রথম চালান। এরপর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল সোয়া ৪টায় জ্বালানী পরিবহনের এই গাড়িগুলো সিলেটের সড়কপথ দিয়ে মৌলভীবাজারের চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ভারত ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাস আরেক রাজ্য ত্রিপুরায় প্রবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পণ্য পারাপার শুরু হয়েছে।
প্রতিদিন (দিনের বেলা) সর্বোচ্চ ৮০টি লরিতে জ্বালানি পরিবহন করতে পারবে ভারত। এ পণ্যের জন্য প্রতিটনে ১ টাকা ২ পয়সা করে মাসুল নেবে বাংলাদেশ। এজন্য গত ১৮ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সঙ্গে ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটিডের (আইওসিএল) মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত (এমওইউ) হয়েছে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় ট্যাংকারগুলো উত্তর আসামের বঙ্গাইগাঁও থেকে যাত্রা করে মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে সিলেটের তামাবিল-মৌলভীবাজারের-শমশেরনগর-চাতলাপুর হয়ে প্রায় ৫ ঘণ্টায় ১৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরে প্রবেশ করে। ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পর খালি যানবাহনগুলো বাংলাদেশের চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে।
তামাবিল শুল্ক স্টেশনের ইমিগ্রেশন অফিসের ইনচার্জ এসআই রুনু মিয়া জানান, তেলবাহী লরির প্রতিটিতে ৯ টন তেল গ্যাসবাহী লরিতে ৭ টন গ্যাস রয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় ভারতের আভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় বাংলাদেশের সড়ক পথ ব্যবহার করা হচ্ছে। শনিবার মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে ১০ টি লরি ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঈদের পর আরো জ্বালানী পরিবহন করা হবে বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজার থেকে চাতলাপুর চেকপোষ্ট পর্যন্ত ৩৪ কি:মি; সড়ক জনপথের সড়কটির বেশীর ভাগ অংশই সরু ও দুর্বল। ভারতীয় জ্বালানি তেলের বহরের কারণে এ অংশে ট্রাফিক জ্যামসহ সড়কের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
আসাম ও মেঘালয়ের গতানুগতিক বন্ধুর পথ এড়িয়ে গত মাসে কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে দুই হাজার ৩৫০ টন চালের নতুন একটি চালান ত্রিপুরায় পাঠিয়েছে ভারতের খাদ্য করপোরেশন (এফসিআই)। এর আগে ত্রিপুরায় ৭২৬ মেগাওয়াট ‘পালটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম পরিবহনে ভারতের অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেডকে (ওএনজিসি) বাংলাদেশের পথ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা এ পেট্রোপণ্য যাবে আসাম থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায়। বাংলাদেশের সড়ক পথ ব্যবহার করে এটি হবে পেট্রোপণ্যের প্রথম চালান। ভারতের আইওসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ট্যাংকার দিয়ে এ পেট্রোপণ্য পারাপার করবে। সিলেট ডাউকী স্থলবন্দর দিয়ে এ পণ্য প্রবেশের পর মৌলভীবাজার বাইপাস হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর-চাতলাপুর স্থলবন্দর অতিক্রম করে ত্রিপুরার কৈলাশহর মনু স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন