১ম অংশ:
দিনটি ছিল ২০১০ সাল। ওইদিন ছিল দৈনিক নয়াদিগন্তের বার্ষিক মফস্বল সাংবাদিক/প্রতিনিধি সম্মেলন।
এক.
দুই.
তিন.
চার.
পাঁচ.
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ নামক বিচার না কি প্রহসণ! কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক!! এসব বিতর্কে আমি যাবো না। কারণ একের পর এক ‘ফাঁসি কার্যকর’ শেষে ‘নৃত্য আর মৃত্যুকে ঘিরে উল্লাস’; এসব নিয়েও নানা কথা বলতে লজ্জা লাগে। যদিও স্বাধীনতার আগে ও পরে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের পর লাশ নিয়ে তামাশা হয়েছিল। নিজের চোখে লগি-বৈঠার তান্ডবে লাশের ওপর নৃত্য এসবও দেখতে হয়েছে। আমাদের মত অভাগা ( চেতনার তেলে উজ্জীবিত) জাতিকে আরো কত কি দেখতে হবে! কে জানে। এসব চিন্তা করলে ঘুম আসে না। অব্যাহত ভাবে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মধ্যে ইসলামিক চিন্তা শক্তির প্রয়োগের বিপরীতে চলছে ইসলামকে অবজ্ঞা করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসবের সাথে (একবিংশ শতাব্দিতে) যুক্ত হয়েছে একেকটি বিচারের রায় আর দন্ড কার্যকর। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শত শত নিউজ আওয়ার ব্যয় আর লাখো কোটি পত্রিকার পাতা খরচ। দ্যটস ইট। এছাড়া, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায় আপিল/রিভিউ বহাল এবং ট্রাইব্যুনালের স্বাক্ষি ও নথিপত্রের নানা জটিলতা তথ্যে গড়মিল নিয়ে প্রধান বিচারপতির তিরস্কার! এত কিছুর পরও চাই লাশ!! আসামী পক্ষের অভিযোগ এসব হচ্ছে বিচারিক হত্যাকান্ড। আমাদের কি বলা আছে?
কাদের মোল্লা/কামারুজ্জামান/ নিজামী’র ফাঁসি আর অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুর পর জামায়াতের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচিত মীর কাসেম আলী। যিনি ইসলামি ব্যাংক/ইবনে সিনা/রাবেতা’সহ অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর। একই সাথে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মিডিয়া করপোরেশনের কারিগরও ছিলেন। সেসব আলোচনায় নাই বা গেলাম। লিখে শেষ করা যাবে না। যেহেতু আমি মিডিয়া কর্মী। বলতে পারি একটি আলোচনার অন্যতম শ্রোতা/প্রশ্নের উত্তরদাতা হিসেবে আমার দেখা ও শোনার সেই দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
তার আগে চলে যাচ্ছি মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর ইস্যুতে পরিবারের অনুভূতি প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত সাড়ে ১০টার পর যখন মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। একটু পরে দেখলাম, মীর কাসেম আলীর মেয়ে’র একটা স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালে রূপ নিয়েছে।
খবরের মাধ্যমে জানতে পারি; শনিবার দন্ড কার্যকরের একদিন আগে তথা শুক্রবার কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সাথে সবশেষ দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা। বাবার সাথে শেষ দেখা করে তাঁর দুই মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।
মীর কাসেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া লিখেছেন- “আমার আব্বু নরম মনের মানুষ। প্রতিবার বক্তব্য দিতে উঠলে কেঁদে ফেলতেন। এটা সবাই জানেন। এর আগে যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন আব্বুর চেহারায় বিন্দুমাত্র বিচলতা দেখিনি, বরং সবার সাথে হাসি খুশি ছিলেন। তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আব্বু’ আমাদের ভাইবোনের জন্য আল্লাহর কাছে জান্নাতের সুপারিশ করবানা?” সুমাইয়া রাবেয়া লিখেন, “আব্বু একগাল হেসে বললেন, শুধু তোমরা না, আমার নাতি-নাতনী, বউমা, জামাই সবার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করব। আমরা সবাই হেসে দিয়েছিলাম।” আবেগ জড়িত লিখনীতে সুমাইয় লেখেন, “আজকে (২সেপ্টেম্বর-শুক্রবার) আবার আব্বুকে দেখতে যাচ্ছি। শেষবারের মত। কাল আব্বু থাকবেনা এ নিয়ে আমরা দুঃখিত নই। শাহাদাতের মর্যাদা কজনের ভাগ্যে জোটে?
এ মৃত্যুর জন্যই তো সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আল্লাহ আমার আব্বুকে কবুল করে নিন।”
আর মীর কাসেম আলীর অপর মেয়ে তাহেরা তাসনিম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন-“সবাই আমার বাবা মীর কাসেম আলীর জন্য দোয়া করবেন। যেন তিনি জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হতে পারেন!] আমি মীর কাসেম আলীর মেয়ে ‘সুমাইয়া রাবেয়া’র সাথে একমত। এই অর্থে যে, ফাঁসির দন্ড পাওয়া মীর কাসেম আলী ছিলেন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ।
আমি কোন বড় মাপের ও ‘তথাকথিত জাতির বিবেক’ ! (সাংবাদিক) নই!! বলতে পারি অনেক ক্ষুদ্র একজন মিডিয়া কর্মী। সাংবাদিকতা পেশায় এসেছি ভালোবেসে এবং প্রেরণা থেকে। সেই ১৯৯৬ সাল থেকে লেখালেখিতে হাতেখড়ি। অনেক ভালো চাকুরিও করার সুযোগ হয়েছে/করেছি। কিন্তু একধরণের নেশা আমাকে এই পেশায় আজো আবদ্ধ করে রেখেছে। ৯৬ থেকে ৯৮ পর্যন্ত টানা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করতাম। নিজ গ্রামের বাড়ি/এলাকায় ৯৬’র নির্বাচনপূর্বে ক্লাব গঠন/সভা-সেমিনার/ আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছি। যার স্বাক্ষি, আমার সহপাঠি/ছোট ভাই যাদের ছাত্রলীগ/যুবলীগ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছি। আর যাদের অনুপ্রেরণায় ৯৫ থেকে একটু আধটু ছাত্র রাজনীতি করার অভিপ্রায় পায়েছিলাম; তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, মরহুম কামাল ভূঁইয়া/মরহুম শাহজাহান চৌধুরী (শাহজাহান মামা)। আর সবচেয়ে বেশী অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন যুবলীগের কাজল ভাই। জানিনা তিনি কেমন আছেন।
আমি ‘১০ নং রায়পুর ইউনিয়ন’র ছেলে। কোন দল করেছি সেটা নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। ২ বছরের বেশী আর সক্রিয় দল করা হয়নি। শিক্ষা/ পারিবারিক অবস্থান এবং সর্বপোরি গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার নেশা। দলীয় বাণিজ্য-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি কখনোই আমাদের দিয়ে হবে না। ফলে তথাকথিত রাজনীতি আমি ছেড়ে দিই। পরিবারের ৫ ভোটারের মধ্যে তবুও ২০০৮ সালের সবশেষ নির্বাচনে মা-ছোট ভাই কে নৌকা ভোট দিতে উদ্ভুদ্ধ করি। কিন্তু প্রয়াত/মরহুম বাবাকে পারিনি। কারণ তিনি ছিলেন জাতীয় পার্টি ‘এরশাদ’র একনিষ্ঠ সমর্থক।
যাই হোক এবার আসি মূল কথায়। ১৯৯৮’র পর ঢাকায় চলে আসি। যায়যায়দিনের পর বিভিন্ন গণমাধ্যম খ্যাত-অখ্যাত দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা/ম্যাগাজিনের পর ২০০৯ সালে বিটিভিতে অথিতি প্রযোজক বার্তা ( গেস্ট প্রডিউচার) হিসেবে যোগদানের পর ওই বছরই দিগন্ত টিভিতে যোগ দেই।
এর আগে প্রথম ১৬৭/২-ই, ইনার সার্কুলার রোড, ইডেন কমপ্লেক্স, মতিঝিলে অবস্থিত নয়াদিগন্ত পত্রিকা অফিসে যাই। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের ইন্টারভিউ বোর্ডকে মোকাবেলা করতে। সারিসারি লাইন। যতদুর মনে পড়ে সেই দিনের ইন্টারভিউতে আমি আর একজন নারী সাংবাদিক প্রার্থী দু’জনের টিভিতে কাজ করার কিছুটা অভিজ্ঞতা ছিল। আর বেশীরভাগই ছিলেন একেবারেই নবিন। লিখিত পরীক্ষার পর প্রতিযোগির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এরপর আবারো ডাক পাই ‘ভাইভা’র/মৌখিক পরীক্ষার। একই কার্যালয়ে। আমরা শুনেছি ইন্টারভিউ বোর্ডে মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ‘মীর কাসেম আলী’র থাকার কথা। তবে উনার নাম শুনেছিলাম; কিন্তু তখনো তাঁকে চিনতাম না/দেখা হয়নি কখনো। যাই হোক একে একে ইন্টারভিউ দিয়ে বের হয়ে আসছেন সহপাঠিরা। প্রশ্ন করি কী জিজ্ঞেস করেছে ভাই/আপা? অনেকে উত্তরও দিয়েছেন যে যার মতো। পরবর্তীতে আমারা যে ৪জন মূলত চাকুরি পাই। তাদের মধ্যে ৩ জনের ইন্টারভিউ আগে হয়েছে। রুহুল আমিন তুহিন, হুসাইন মোহাম্মদ নাহিয়ান এরপর নাহিদ শিউলী তারপর আমার। তাদের আর বাকী পরিচয় দেবার কিছুই নেই।
পূর্বের ইন্টারভিউর পরও ২জন আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। একদিনের আলাপচারিতায় ঘনিষ্ঠ হয়ে যাই। তাদের প্রশ্নের ধরণ যেনে আমি ভেতরে প্রবেশ করি। যাই হোক সালাম বিনিময় করে বসি। তখনো চিনতাম না বোর্ডর কাউকে। কারণ আমার কোন রেফারেন্সও ছিলো না। আমি ছিল ভিন্ন লাইনের লোক। সেই দিনের ইন্টারভিউ বোর্ডে (প্রথম দফায়) ছিলেন তৎকালিন ‘ডিটিভি’র হেড অব নিউজ আজম মীর শহীদুল আহসান, সিএনই রাশিদুল ইসলাম, নয়াদিগন্ত পত্রিকার নির্বাহি সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর, ডিটিভি’র একজন উপদেষ্টা। আর দ্বিতীয় দফার ইন্টারভিউতে ছিলেন মিডিয়া করপোরেশনের পরিচালক সিব্বির মাহমুদ ও ডিটিভি’র নির্বাহী পরিচালক (সাবেক বিটিভি কর্মকর্তা) মোহাম্মদ হানিফ।
যাক ইন্টারভিউতে আমাকে প্রশ্ন করলেন, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি কি না? আবার একজন জিজ্ঞেস করলেন আপনি কেন দিগন্ত টিভিতে কাজ করতে চান? জানালেন অনেকে তো এটাকে ‘জামায়াতের টিভি চ্যানেল’ বলে থাকে। আপনি কি শিবির করতেন? জবাবে আমি বললাম। প্রথমত আমার ৫ ওয়াক্ত নিয়মিত নামাজ পড়া হয় না। তবে, বেশীর ভাগই পড়ি। দ্বিতীয়ত আমি শিবির করি নাই, তাদের নিয়মও জানি না। উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিই- শিবির করাটা কি সাংবাদিকতায় জরুরি? জবাবে বোর্ডের কর্তারা বললেন অফকোর্স না; তা কেন হবে? তবে, আপনি সত্য বলছেন এটা ভালো। কারণ অনেকে জামায়াতের চ্যানেল বলে চাকুরির জন্য শিবির দাবি করেন। কিন্তু শিবিরের আদর্শিক কোন প্রশ্ন জানেন না। এমন ও দেখেছি, তাই প্রশ্ন করা। তারা জানান, আমরা চাই পেশাদার সাংবাদ কর্মী। আমি বললাম ও আচ্ছা।
এরপর অপরজন বললেন, আমাদের এখানে সংবাদ বিভাগে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কোন মূল্য নেই। তবে, মুসলমান হিসেবে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া উচিত তাই না? এরপর বললাম আমি জি অবশ্যই। তারপর বললাম, আসলে একটি পরিচ্ছন্ন ধারার গণমাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমার মনে হয়েছে আপনাদের চ্যানেলটি সেরকম। আমার ভয়েস টেস্ট নেয়া হলো। একটি প্রতিবেদন পড়তে বলা হলো। পড়লাম। বের হয়ে দেখি আমার সহপাঠি দু’জন এখনো অপক্ষেমান। জিজ্ঞেস করা হলো কি কি প্রশ্ন ছিল? আমি সব বললাম। একজন প্রতি উত্তরে বললেন, আপনার মনে হয় চাকুরি হবে না। আমি বললাম কেন? তিনি বললেন এমনিতেই। আমি বললাম ভাই কোন মিথ্যে তথ্য দিই নাই। হলে হবে, না হলে নাই।
এ বিষয়ে যার কথা না বললেই নয়। নয়াদিগন্তের হেড অব মার্কেটিং সাইফুল হক সিদ্দিকী। তাঁর সাথে আমার পূর্ব পরিচয়। অত্যন্ত স্নেহ করতেন আমাকে। একটি ম্যাগাজিনের মিডিয়া সাইট আমি দেখতাম। সেই হিসেবে তার সাথে পরিচয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্মার্ট ও একজন দক্ষ মানুষ। আমি উনাকে বললাম। বড় ভাই অনেক কম বেতন বলে। জয়েন্ট করবো কি না? জবাবে তিনি বললেন, অবশ্যই কায়েস। তিন মাস পর। যোগদানের সুযোগ পেলাম। এর মধ্যে ‘চ্যানেল ওয়ান/বৈশাখী/বিটিভি’সহ অন্যান্য পত্রিকার বেশ কয়েকজন যারা ছিলেন, ঘোরতর জামায়াত বিরোধী ও পূর্ব পরিচত। তবে, সবাই ছিলেন অত্যন্ত পেশাদার, নির্লোভ এবং নির্দলীয় সাংবাদিক। চ্যানেলটিতে যোগদান করে ভালো একটা ‘সংবাদ টিমের’ সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কয়েকজন যে দলীয় ছিলেন না, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশীরভাগই ছিলেন নিরপেক্ষ এবং দক্ষ সংবাদকর্মী। এরই মাঝে দু’একটা তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার যে হইনি; তা কিন্তু নয়! সেটা সব হাউজেই থাকে। তবে দিগন্ত টিভি ছিল অন্যান্য মিডিয়া হাউজ আলাদা। সবাই ছিলেন নিষ্ঠাবান এবং কর্মনিষ্ঠ।
আমাদের আগে এবং পরের যত নিয়োগ হয়েছে প্রায় সবক’টি নিয়োগের চূড়ান্ত পর্যায়ে চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন মীর কাসেম আলী। কিন্তু আমাদের সময়ে বিদেশ থাকায় তিনি উপস্থিত হতে পারেন নি। পরে একদিন উনাকে দেখি। দীর্ঘদেহী একজন মানুষ। বার্তাকক্ষে প্রবেশ করলেন; নিমিষেই পুরো সাড়ে চারশ’ কর্মকর্তা-কর্মচারিতে ভরপুর চ্যানেলটিতে সুনসান নীরবতা ও কাজে মনোযোগি ভাব লক্ষ্য করলাম। মনে হয়তো এই কেমন চেয়ারম্যান? সবাই এত ভয় পায় কেন তাঁকে? আমার কর্মক্ষেত্রে ‘এমসি-চেয়ারম্যান’ হিসেবে মীর কাসেম আলীর সাথে ৩ বার দেখা হয়েছে। প্রথমবার সাংবাদিকদের সাথে নিউজ সংশ্লিষ্ট বোর্ড মিটিংয়ে। আর দ্বিতীয়টির কথা মনে নেই। তবে, তৃতীয় ও সবশেষ দেখা হয়েছে নয়াদিগন্ত কার্যালয়ে।
দিনটি ছিল ২০১০ সাল। ওইদিন ছিল দৈনিক নয়াদিগন্তের বার্ষিক মফস্বল সাংবাদিক/প্রতিনিধি সম্মেলন।
এক.
আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট ডেস্ক থেকে বলা হলো আগামীকাল (সময় এবং তারিখ মনে নেই) নয়াদিগন্তের চেয়ারম্যান স্যারের একটি সভা আছে। আপনি কাভার করবেন। সম্ভবত সাঈদুল ইসলাম আর তাবিবুর রহমান তালুকদার ছিলেন অ্যাসাইনমেন্ট ডেস্কে। তাদেও একজন রেডিও টু’ডে আর অন্যজন রেডিও তেহরান/প্রেস টিভি থেকে আসা। যাই হোক। আমি জিজ্ঞেস করলাম ক্যামেরাম্যান কে? জানতে পারলাম। আমার অ্যাসাইনমেন্টের সহপাঠি ছিলেন (প্রোগ্রাম থেকে নিউজে আসা) শাহিদুর রহমান। সে সময়ে উনার সাথে তেমন হৃদ্যতা গড়ে উঠেনি।
দুই.
যথারীতি সকাল দশ’টায় অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হলাম। নয়াদিগন্তের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের অনেকেই রিপোর্ট করার কারণে চেনার ছলে কথা ও কুশল বিনিময় হলো। এরই মধ্যে থেমে থেমে চললো প্রতিনিধিদের অভিযোগ আর প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ক্ষোভ ও অভিমানের বক্তব্য। অবশ্য তা ছিল বার্তা বিভাগের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের সামনে। মাসুমুর রহমান খলিলী। তিনি উপস্থিত প্রতিনিধিদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব/সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে বললেন, সব কিছু ‘চেয়ারম্যান-এমসি’ স্যারের সামনে উত্থাপন করবেন। আমি তো নিশ্চুপ এ কোনে বসে।
তিন.
বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিনিধি সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হলেন দিগন্ত মিডিয়ার করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলী। মুহুর্তে তুষের আগুনের মতো ধাউ ধাউ করে চলতে থাকা উত্তপ্ত বাক্য-বিনিয়ময় প্রশমিত হয়ে গেলো মোমের আগুনের মতো। পুরো মিলনায়তন তখন থমথমে অবস্থা আর সুনসান নীরবতা। সবার মুখে ভদ্রতার ছাপ ফুটে উঠলো। আগত প্রতিনিধিদের শান্তভাব দেখে মনে হলো অভিযোগ সব কর্তাব্যক্তিদের উপর; চেয়ারম্যানের উপর নয়। আমি অবাক হলাম। এটা কি করে সম্ভব? এই ব্যক্তিটি ‘যাদুকর’ না কি?
চার.
তাকিয়ে দেখলাম। এর আগে কয়েকজনের অভিযোগ ক্যামেরাম্যানকে শাহিদুরকে রেকর্ড করতে বললাম। চেয়ারম্যান এক হলেও পত্রিকা আর টিভি ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। শুরুতেই সবাইকে সালাম বিনিময় শেষে বিসমিল্লাহ বলে কোর’আনের একটি আয়াত পাঠ করলেন মীল কাসেম আলী। তাও আবার ব্যবসা রিলেটেড। এরপর একে একে প্রায় ২৫ থেকে ৩০জন প্রতিনিধির নাম ধরে সম্বোধন করে বললেন, তোমার এবারের রিপোর্ট ভালো হয়েছে। অন্যজনকে বললেন তুমি এবার খারাপ করলে কেন?
গত বছর অমুক ভালো করেছে/তমুক কেন পিছিয়ে গেলো? ইত্যাদি। আবার যারা সংবাদ/সোর্স প্রতিযোগিতা ব্যর্থ ছিলেন, তাদের ভরসাও দিলেন। যারা ভালো করেছেন, তাদের অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করলেন। কারো কোন অভিযোগ দেখলাম না। উল্টো সবাই হাসিখুশি মনেই জবাব দিচ্ছিলেন। ভাবলাম; একটা ব্যক্তির উপস্থিতির আগে এবং পরের পরিস্থিতি আকাশ-পাতাল ব্যবধান! এটা কি কওে সম্ভব? পুরো চিত্রটি আমি নীরবেই পরখ কওে গেলাম। তাই এই লেখাটিও কেবল লিখেই যাচ্ছি। জানিনা না শেষ হবে কি না? তবে মুল বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
পাঁচ.
এরপর বক্তব্যের পালা। মীর কাসেম আলী যখন বক্তব্য দিচ্ছেন। একেকটি কোর’আনের আয়াত পাঠ করছেন। আর তার স্বপ্নের কথাগুলো খুব সুন্দর করে তুলে ধরছেন। আগেই বলেছি। তাঁর মেয়ের কথা। যিনি বলেছিলেন আমার বাবা আবেগপ্রবণ মানুষ। একেবাওে সত্যি কথা। সেদিন আমি দেখেছি। তিনি তাঁর দীর্ঘ প্রায় ১ ঘন্টার বক্তব্যে কেঁদেছেন/হাসিয়েছেন আবার অনুপ্রেরণাও যুগিয়েছেন। তুল ধরেছেন, বাংলাদেশর অপসংস্কৃতি ও আগামী প্রজন্মের মাঝে সুষ্ঠু, সত্য ও সুন্দরের একটি লক্ষ্য নিয়ে গণমাধ্যম/মিডিয়া করপোরেশন গড়ার কারণ। তুলে ধরেছেন দেশ নিয়ে তাঁর আগামীর স্বপ্নের কথা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন