বাংলাদেশ বার্তাঃ "বাংলাদেশে একজন মানুষ অনেক অনেক টাকার মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও ওয়ালটন মোবাইলে টেলিটক সিম ব্যবহার করেন। কারণ এগুলো বাংলাদেশি।
লোকটি একটি হাসপাতালের মালিক। দেশ সেরা ডাক্তারদের পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বিখ্যাত ডাক্তারও তার হাসপাতালে কাজ করেন। তার কিডনীতে সমস্যা। টাকার অভাব নেই। চাইলেই বিদেশ গিয়ে কিডনী পরিবর্তন করতে পারেন। নিজের হাসপাতালেও করতে পারেন। কিন্তু এদেশের আইনে যেহেতু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিধান নেই। তাই তিনি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করালেও কিডনী প্রতিস্থাপন করাচ্ছেন না। অথচ, এদেশে অনেক হাসপাতাল কিডনী প্রতিস্থাপনের কাজটি করে যাচ্ছে।
লোকটির হাসপাতালে নার্স, ক্লিনার, ডাক্তার এমনকি হাসপাতালের ব্যবস্থাপকও একই খাবার খাবেন, কিন্তু বিল আসবে বেতন ও স্টাটাস অনুযায়ী আলাদা আলাদা।
লোকটির একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নির্বাচিত ছাত্র-সংসদ রয়েছে। যেখানে বাংলা ভাষা ও বাংলা মাস অনুযায়ী সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকেই ১ম থেকে ৩য় সেমিস্টার পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, জেন্ডার ইস্যু, নীতিবিদ্যা ও সমাজ, পরিবেশবিদ্যা, ইংরেজি এবং বাংলা অবশ্যই পড়তে হয়। দরিদ্র এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রয়েছে।
এই লোকটির হাসপাতালে মাত্র ৫০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করানো হয়। যেখান থেকে তিনি নিজেই নিয়মিত ডায়ালাইসিস করান।
এ লোকটি তখন লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়ছেন। মাত্রই তার চুড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করেই লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা শুরু করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভুতপুর্ব সেবা পদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।
লোকটি এখনো দেশের আনাচে-কানাচে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার জন্য সর্বেোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার কারণেই, হঁ্যা একমাত্র তার কারণেই বাংলাদেশে এখনো অনেক ঔষধ স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশে ঔষধ শিল্পে উন্নতি এবং তুলনামূলক সস্তায় ঔষধ পাওয়ার কৃতিত্ব অনেকটা এই ব্যক্তিটিরই।
লোকটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসমারিক পদক ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রাপ্ত ব্যাক্তিত্ব। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের প্রথম বৈঠকের সভাপতি ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ সৈনিক হিসেবে অস্ত্রহাতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই ব্যক্তিটি বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছিলেন ‘র্যামন ম্যাগসেসে’ পুরস্কার। আজকে বাংলাদেশের ঔষধ ১১৭ টা দেশে রপ্তানি হয় যার মূল কারিগর এই ব্যক্তি।
লিখলে এই লোকের আরো অনেক কৃতিত্ব আর অবদান লেখা যাবে। কয়েকমাস পূর্বে কোন এক দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ অধ্যাপক মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানালেন, ‘আজ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গুণীজন আড্ডা হবে’। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেও ভিজে ভিজে বিকাল ৪ টায় সেখানে উপস্থিত হলাম। সেখানেই প্রথম মুখোমুখি দেখা হল লোকটির সাথে। জীবনের প্রথম সাক্ষাৎ, গল্পে আড্ডায় কখন যে রাত ১০ টা বেজে গেল টেরই পেলাম না। এত বড় ব্যক্তি, কিন্তু কত সাধারনভাবে তিনি অসাধারন। লোকটি বাংলাদেশের জীবন্ত ইতিহাস।
অথচ আজ এ লোকটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে। কি মামলা? ফল চুরির মামলা, কলা চুরির মামলা, পুকুরের মাছ চুরির মামলা, জমি দখলের মামলা। তার হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ফার্মাসিউটিকালস কারখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকদিন যাবত হামলা-হচ্ছে, ভাংচুর হচ্ছে।
হ্যাঁ, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা বলছি। শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মতের কারণে তার অবদান, কৃতিত্ব, তার প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠান, তার সুনাম সবকিছু ক্ষুন্ন করার মিশন চলতে পারে না। ব্যক্তি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোন কথা বা কাজ আইনের দৃষ্টিতে অনায্য প্রমানিত হলে আদালত ব্যবস্থা নিক। কিন্তু কোন বিশেষ দলের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এ ধরনের হামলার নিন্দা জানাই।"
*
লেখা এবং ছবি, দুটোই ফেইসবুক থেকে নেয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন