বাংলাদেশ বার্তাঃ আমি আগেও বহুবার বলেছি, আবারও বলছি- প্রত্যেকটি কথার এপিঠ-ওপিঠ থাকে। ব্যখ্যা বিশ্লেষণের থাকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী। একটি ঘটনা বা পরিস্থিতিকে নানাভাবে দেখা যায়।
মাওলানা শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যের ভিডিও দেখলাম এবং শুনলাম। “আওয়ামীলীগ হয়ে গেলেও অসুবিধা নাই” বাক্যটির আগে পরে আরও কিছু কথা আছে। সেসব কথা ছেঁটে শুধু এই বাক্যটিকে হাইলাইট করাও একটা দৃষ্টিভঙ্গীগত ব্যপার।
যাই হোক শাহ আহমদ শফী’র সহজ সরল বক্তব্য কে আমি সিরিয়াস রাজনৈতিক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করতে চাইনা। তিনি একজন শিক্ষক। বুখারী শরীফ এর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ। রাজনীতিবিদ বা তথাকথিত সুশীল বুদ্ধিজীবি নন। তিনি যখন বয়ান করেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অতি সাধারণ সহজবোধ্য ভাবেই কথা বলেন। ইতিপুর্বে কোন এক ওয়াজ মাহফিলে নারীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তেঁতুলের উদাহরণ টেনেছিলেন বলে তাঁকে হেয় করে নানা কথা বলা হয়েছে যা আমরা সবাই জানি।
একই রকম ভাবে তিনি যখন কওমী সনদ প্রাপ্তি নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিনা ভোটের সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কৃতজ্ঞতা জানান। তাদের জন্য দোয়া করেন। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক সাহায্য পান বা পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তখন তাঁর সেই সত্য স্বীকৃতি ও সরল কথামালা নিয়ে আবার বিতর্ক ওঠে। এবার আর সরকারী লোক বা মন্ত্রী টন্ত্রীরা নয় এবার তাঁর কথা নিয়ে ট্রল করছে অন্যপক্ষ। অনেকে এটাকে ৫মে’র শাপলা চত্বরের শহীদদের সাথে বেঈমানী হিসেবে দেখছে।
অত্যান্ত বিনয়ের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে বলছি মাওলানা আহমদ শফী মহোদয়ের বক্তব্য কে আমি খুব ইতিবাচক হিসেবে দেখি।
যারা এতদিন বহু ঘাম, শ্রম আর মেধা ব্যায় করে বার বার বলে বলে একথা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে এসেছেন যে, “মাদ্রাসায় জঙ্গী তৈরী হয়” আর “এই জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত বিএনপি-জামায়াত”। আহমদ শফী সাহেব সেই “প্রপাকান্ডা” কে গত পরশু ফু মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন দেশের ইসলাম বিরোধী সেকুলার সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন মাদ্রাসায় জঙ্গী নয় বরং জাতীয় শিক্ষাস্রোতের অনুরুপ সনদ প্রাপ্ত শিক্ষিত-জ্ঞানী মানুষ তৈরী হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও তিনি পরিস্কার করে দিয়েছেন তাদের ‘মোহাব্বত’ ও ‘অর্থায়ন’ করেন আওয়ামীলীগ এবং সেটা “মোটা অংকে”।
বাংলাদেশের আলেম সমাজের একটা বড় অংশ রাজনীতি বিমুখ। একই সঙ্গে এটা তাদের বড় ‘স্ট্রেংথ’ এবং ‘উইকনেস’। ফলে সবাই তাদের দেয়া ও আনুকূল্য চায়। হুজুর আমার পক্ষে কথা বললে ‘মোটা অংক’ আর না বললে ‘তেতুল’! অনুরূপ ভাবে পক্ষে থাকলে ‘দেশ প্রেমিক’ না হয় বেঈমান, গাদ্দার, লোভী ইত্যাদি তাদের শুনতে হয়।
আমার খুব আগ্রহ ঐসকল বুদ্ধিজীবি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিকদের মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া জানার যারা এতদিন ‘হেফাজতে ইসলাম’ কে নানা গালিগালাজ করে এসেছেন। হেফাজতের পক্ষে কথা বলার অভিযোগে যারা মাহমুদুর রহমান, ফরহাদ মজহার, অধিকারের এডভোকেট আদিলুর রহমান খান, ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য প্রমূখদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেছেন তারা কী এখন তাদের কৃতকর্মের জন্য Apology চাইবেন? নাকি হেফাজতের স্বীকৃত মহব্বতকারী ও মোটা অংকের অর্থ সরবরাহকারীদের ব্যপারে কিছু বলবেন? আমার একজন সম্মানিত শিক্ষক বর্তমান ভি.সি কে তো দেখলাম মাথা নুইয়ে শফি হুজুরের ‘দোয়া’ নিচ্ছেন। মনের অজান্তেই আমার কন্ঠে ধ্বনিত হলো বাহ্ বাহ্ বাহ্....
আমার আরেকটি সবিনয় জিজ্ঞাসা, দেশে বিনা ভোটের একটি সরকার বিদ্যমান। বিচার ব্যবস্থা সেই সরকারের আজ্ঞাধীন বলে আমরা প্রতিদিন কঠোর সমলোচনা করছি। তবুও সেই আদালতেই আমরা বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছি প্রতিনিয়ত। এই সেদিনও বিএনপির সিনিয়র নেতারা একটি বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করছেন না। প্রহসনের নির্বাচনে বার বার অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান বাস্তবতায় এগুলো কে আপোষ বা নতিস্বীকার হিসেবে না দেখে আমরা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছি। তাহলে শফি হুজুরের বিষয়টাকে কেন আমরা কেবল আপোস বা নতিস্বীকার হিসেবে মূল্যায়ন করছি?
তাহলে আমরা কী চাই সবাই আমার মত হোক?
আমার মত করেই কথা বলুক?আমার ভাষাতেই তাকে রিঅ্যাক্ট করতে হবে?
যদি এটা চাই, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই সঠিক চাওয়া নয়।
দেশে একটা বড় রাজনৈতিক মীমাংসার সন্দিক্ষণ উপস্থিত। পক্ষ-বিপক্ষ নানা চাল-কূটচাল নিয়ে ব্যস্ত। বিদেশী মিশনগুলো খুব তৎপর। এমনতর পরিস্থিতিতে আরও অনেককিছু আমাদের দেখার বাকী আছে। হুট হাট মূল্যায়ন আর মন্তব্য করার আগে আসুন কয়েকবার ভাবি। বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নেয়াই উত্তম কর্মপন্থা। রাজনৈতিক কৃত্রিম মহব্বত আর উদ্দেশ্য প্রণোদিত মোটা অংক সবসময় উত্তম কর্মপন্থা নাও
হতে পা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন