বাংলাদেশ বার্তাঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতি নিকটে।নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতীও প্রায় সম্পন্ন।সুষ্ঠু,অবাধ,নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জোর দাবী জানিয়ে আসছে।নির্বাচন কমিশন পুন:গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।কিন্তু সে দাবী পূর্ন হওয়ার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা ।নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে বায়বীয় মামলা গ্রেফতার ও নানাভাবে হয়রানী ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।সরকারীদলের মন্ত্রী-এমপিগণ বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের ঘোষনা দিয়ে যাচ্ছেন অব্যাহতভাবে।সরকারের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তারা আরেকটি সাজানো নির্বাচন করতে চায়।কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ন ভিন্ন।২০১৪ সালে জনগন নির্বাচন বয়কট করেছিল।শেখ হাসিনা ঐ নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।তিনি আরও বলেছিলেন শিঘ্রই আরেকটি নির্বাচন হবে।কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে তিনি তার প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে সরে যান।সারা দুনিয়া ঐ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে।সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়।
বর্তমান রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক অংগনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।পৃথিবীর কোন একটি দেশে ক্ষমতা জবরদখল অন্য দেশকেও প্রভাবিত করে।তাই গনতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশ সমূহ অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল বা ক্ষমতায় থাকাকে পছন্দ করছেনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের একটি ভূমিকা আছে।ভারতের বেসরকারী থিংকট্যাংক,সাংবাদিক,কলামিষ্টসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মত দিচ্ছেন।ভারতের পর্যবেক্ষকরা বলেছেন শেখ হাসিনার শাসনামলে বিগত ১০ বছরে ভারতের সংগে সম্পর্ক উচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে।ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন হয়েছে।কানেকটিভিটি,ব্যবসা বানিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ভারত সহযোগীতা পেয়েছে।হাসিনার সরকারই দিল্লির কাছে স্বস্তিদায়ক।ভারতের বিশ্লেষকগণ মনে করেন ভারতের পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও স্হিতিশীলতা বাংলাদেশের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল।তাই বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিন এশিয়ায় চীনের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।নেপাল ও ভূটানে চীনপন্থী সরকার ক্ষমতায় বসেছে।শ্রীলংকা,পাকিস্তানে সমুদ্র বন্দর ও সিল্করোড করিডোর নির্মানে চীন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। চীন পাকিস্তান করিডোর প্রকল্পে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলারেরএক প্রকল্প যা পাকিস্তানের কেন্দ্র বিন্দু থেকে করাচীর গোয়াদরের গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে চীনের উইঘুর (জিনজিয়াং) প্রদেশের কাঁশগুলো পর্যন্ত হাইওয়ে তৈরী হচ্ছে। বিশ্বায়নের এ যুগে অর্থনৈতিক দিক থেকে পরাশক্তির পালাবদলে আমেরিকার জায়গায় চীনের আগমন কাল এটা। বাংলাদেশেও চীনের সম্পৃক্ততা ও প্রভাব বেড়েছে।হাসিনা সরকার ভারতের প্রবল বিরোধিতা সত্বেও চীনের কাছ থেকে খুব স্বল্প মূল্যে দুটি সাবমেরিন কিনেছে।বাংলাদেশে চীনের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে।এসব কারনে ভারতের নিকট বাংলাদেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।ভারতের বিশ্লেষকগন মনে করেন ভারত বাংলাদেশের ভিতর অনুগত সরকার বহাল রাখা ব্যতীত অন্যকোনভাবে স্বার্থ হাসিল করতে পারবেনা।ভারত বাংলাদেশ দখল করতে চাইলে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকতে চাবেনা।১৯৭১ সালের পরিস্হিতি আর আজকের পরিস্হিতি এক নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বহু মানুষ ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়েছিল।বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় আধিপত্যবাদ হিসেবে নয় ।
জাতিসংঘ,আমেরিকা,ইউরোপিয়ন ইউনিয়নসহ গণতান্ত্রিক দেশসমূহ বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ,গ্রহনযোগ্যও অংশগ্গ্রহনমূলক নির্বাচনের বিষয়ে তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের কর্মকান্ড জনগনের মধ্যে বিদ্রোহাত্মক পরিবেশ তৈরী করেছে। বাংলাদেশের এমন কোন পরিবার নেই যারা কোন না কোন ভাবে আওয়ামীলীগ কর্তৃক নির্যাতিত হয়নি।এসব পরিবারের সদস্য,আত্মীয়,নিকটাত্মীয়,প্রতিবেশী সকলেই আওয়ানীলীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার।জনগন আন্দোলনের সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হয়েছে।আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর ভোটের অধিকার আদায়সহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ।দুর্গাপুজার পর ধারাবাহিক কর্মসূচীর পূর্বাভাস দিয়েছেন নেতৃবন্দ ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘ খুনীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন কামাল-রব-মান্না।’ তিনি আরও বলেছেন ‘ষড়যন্ত্রকারীদের উপযুক্ত জবাব দেব।’ এটা সরকারের পক্ষ থেকে একটি হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়।এর মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সরকারের অবস্হানকে হুমকির মাঝে ফেলেছে ।শেখ হাসিনা কোন অবস্থাতেই ক্ষমতা ছাড়তে রাজীনন। তিনি জানেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার দল ৩০/৩৫ টিক র বেশী আসন পাবেনা। তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর দেশে ফিরে এসে বলেছিলেন :“আত্মতুষ্টিতে ভুগলে পতন অনিবার্য।”তার এ কথা পরাজয়ের ইংগিত ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তফসিল ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের সবই চূড়ান্ত।তবে নির্বাচন কমিশনের নিজেদের মধ্যেও নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। এমনকি সেখানে সভা বর্জনের ঘটনাও ঘটছে।নানা বিতর্কিত ভূমিকায় কমিশনারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে অন্যদের দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।নির্বাচন কমিশন যে কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন করছে তা অনুযায়ী নভেম্বরে মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই ; ডিসেম্বরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার,চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, ডিসেম্বর বা জানুয়ারীতে ভোট গ্রহনের কথা বলা হয়েছে।নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতীমূলক সকল কাজ ১০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্নের কথা ভাবছেন। অর্থাৎ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতী প্রায় সম্পন্ন।তফসিল ঘোষনা ও ভোট গ্রহনের দিনক্ষন ঠিক করার দায়িত্ব ইসির উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এমতাবস্হায় তফসীল ঘোষনার পূর্বে ঐক্য ফ্রন্টের ৭দফা দাবী ও ১১ দফা লক্ষ এবং তা আদালতের জন্য আন্দোলনের ঘোষনা সরকারকে বেসামাল করে তুলেছে। জনগনের মধ্যে সংশয় থাকলেও আশার সন্চার করেছে।জনগন মনে করে ৭ দফা দাবী ১১ দফা লক্ষ্য অর্জন করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুধু ঘোষনা দিলেই বাস্তবায়ন হবেনা।এর জন্য ব্যাপক গনআন্দোলন প্রয়োজন ।
জনগন সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ।রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে জনগনের উপর যে জুলুম আওয়ামীলীগ চালিয়েছে তার জবাব দেয়ার জন্য জনগন প্রস্তুত।শুধু ভোট দেয়ার সুযোগ পেলেই জনগন দেখিয়ে দেবে তারা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কতটুকু সোচ্চার। জনগনকে আন্দোলনমুখী করে তুলতে হলে দরকার গনমুখী সাহসী নেতৃত্ব ।ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ এ অভাব পূরন করতে পারলে জনগন ময়দানে ঝাপিয়ে পড়বে । তখন ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথও খুঁজে পাবেনা।বিনা আন্দোলনে কোন দাবী কখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত ইতিহাস হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই দাবী আদায় করতে হয়। এ জন্য সাহসী,ত্যাগী, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন।১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন,’৬৯ এর গনআন্দোলন ‘৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছিল জনগনের অংশগ্রহনের কারনে।১৯৯০এর স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছিল ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে।প্রতিটি আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে আন্দোলন কারীদের উপর হামলা চালিয়েছে।জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলে আন্দোলনকারীদের দমন করা হয়েছে। সকল স্বৈরশাসকের ভাষা ও চরিত্র একই। জুলুম নীপিডন চালিয়েও স্বৈরশাসকদের শেষ রক্ষা হয়নি ।অবশেষে জনগনের বিজয় হয়েছে ।এবারও সেটাই হবে যদি সঠিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা যায়।
লেখক- সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।জাতীয়
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।জাতীয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন