মহামান্য রাষ্ট্রপতি
আমার সালাম নিবেন, আসসালামু আলাইকুম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে আপনার দেয়া বক্তব্যের কিয়দংশের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে বিনীত আপত্তি জানিয়ে আমি কিছু কথা বলতে চাই। জানি না আমার এই বক্তব্য আপনার দৃষ্টিগোচর হবে কি না, তবুও সোস্যাল মিডিয়াতে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। গত ৬ অক্টোবর'১৮ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে আপনার দেয়া বক্তব্য ও ঢাবি সমাবর্তন ছাড়াও ইতঃপূর্বে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আপনার রসাত্মক বক্তব্যের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার কল্যাণে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব বক্তব্যের কিয়দংশ শুধুমাত্র নৈতিকতাবিবর্জিতই নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কুরুচিপূর্ণও বটে। আপনি দেশের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন একজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আপনার সুনাম ও সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। আপনি ইতঃপূর্বে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আপনি সাত-সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন। আমাদের সকলেরই জানা, আপনি যখন স্পিকার ছিলেন তখন সংসদকে প্রাণবন্ত রাখতেন। কিন্তু স্পিকার থাকাকালীন সময়ে সংসদকে প্রাণবন্ত রাখতে কখনো কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা কিংবা অর্ধসত্য কোনো কথা বলেছেন বলে আমার জানা নাই কিংবা শুনিনি। তাহলে রাষ্ট্রপতির মত দেশের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন হয়ে কেন আপনাকে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করতে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের আশ্রয় নিতে হবে? জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর জন্মশতবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন, 'আমিতো রাষ্ট্রপতি, সুতরাং ভগ্নিপতির মত কথা বলা যাবে না'! অথচ সে অনুষ্ঠানেই আপনি সিগারেট চুরির গল্প বলেছিলেন! আপনি নিশ্চয়ই জানেন একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কারা উপস্থিত থাকে। সমাবর্তন কোনো কালচারাল অনুষ্ঠান না। আপনাকে মিস্টার বিন কিংবা দিলদারের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সমাবর্তনে প্রধান অতিথি করা হয়না। আপনার কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে দেশ ও জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা বেরিয়ে পড়বে সেবার মানসিকতা নিয়ে-এমনটিই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিগারেট চুরি করে খাওয়া কিংবা নিজের বউকে রেখে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার দিকে নজর দেয়ার গল্প শুনে এই গ্র্যাজুয়েটরা দেশ-জাতি ও নিজের পরিবারকে কী উপহার দেবে?
মহামান্য রাষ্ট্রপতি!
দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনার দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকা নিয়ে দেশের জনগোষ্ঠীর বিরাট কিংবা একটি অংশের প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ আপনি যে সরকারের রাষ্ট্রপতি সেটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আপনাকে যারা মনোনীত বা নির্বাচিত করেছে তাদের ১৫৪ জনই জনগণের ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য বনে গেছে! কিন্তু আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি এ ব্যাপারে কারো কোনো প্রশ্ন ছিল না। আমার জানতে ইচ্ছে করে আপনাকে যারা গাইড করে কিংবা সহযোগিতা করে তাদের কেউ কি আপনার বক্তব্যের কিয়দংশের বিষয়ে কখনো পরামর্শ দেয়নি। আপনি কি কখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের চিফ গেস্ট বা গেস্ট অব অনারদের বক্তব্য দেখেননি। ২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সের (ইউআইটিএস) দ্বিতীয় সমাবর্তনে আপনার উপস্থিতিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার ডা: মাহাথির মোহাম্মদ বক্তব্য দিয়ে গেছেন। বেশী দুরে যাবো না, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্যসেন, ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. এপিজে আবদুল কালামের সমাবর্তন বক্তৃতা কখনো কি আপনার নজরে আসেনি? আমি বিনীতভাবে আপনাকে অনুরোধ করবো প্লিজ আপনার বক্তব্য থেকে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, অর্ধসত্য নৈতিকতাবিবর্জিত বক্তব্যগুলো বাদ দিন। গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনে সত্যাসত্য বাস্তবসম্মত যুক্তিভিত্তিক উদাহরণ টেনে বক্তব্য দিন। আমার বিশ্বাস সত্যাসত্য গল্প দিয়েও আপনি অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত করতে পারবেন। আমাদের সমাজে যে গল্প পিতা তার সন্তানের সামনে করতে পারে না, সেই গল্প আপনি কিভাবে সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের সামনে করতে পারেন। আপনার বক্তব্য রুচিশীল ও শালীন হওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন নয় কি?
মহামান্য রাষ্ট্রপতি!
সমাবর্তনে আপনার বক্তব্য এমন হওয়া প্রয়োজন, যাতে গ্র্যাজুয়েটরা আদর্শ জীবন ও সমৃদ্ধ দেশগঠনের সঠিক দিকনির্দেশনা পায়। যাতে পরবর্তীতে আপনার বক্তব্যকে কোড করে তারাই ইনস্পিরেশনমূলক মোটিভেশন পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে পারে। আমাদের তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের সামনে এমন কিছু বক্তব্য আপনি রেখে যান তারা যেন, স্টিভ জবস, ডেল কার্নেগি, মাহাথির মোহাম্মদ, এপিজে আবদুল কালামের মতো আপনার নামটিকেও স্মরণে রাখতে পারে। আমার কোনো কথা যদি দৃষ্টিকটু হয়ে থাকে তাহলে আগেই দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি। আশা করি খোলা চিঠির সকল পাঠকই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। দেশের প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটই হোক সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক, যারা এদেশের আগামীর নেতৃত্বে সমাসীন হবেন- এ কামনায় এখানেই শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন