বাংলাদেশ বার্তাঃ রাজনীতিতে নাকি ফুল স্টপ দেয়া যায়না।
শেষ কথা হিসেবে এখানে কোন কিছু বলা অসম্ভব!
আসলেই কী তাই?
জাতীয় ঐক্য হবে, হচ্ছে করতে করতে শেষ পর্যন্ত গতকাল ‘জাতীয়ঐক্য ফ্রন্ট’ যে শেইপে দাঁড়িয়েছে- এখানেই কী শেষ?
এ ঐক্য কী আরও সম্প্রসারিত হবে, নাকি ভাঙ্গা-গড়ায় আবার সংকুচিত হবে? এর উত্তর আমাদের কারও জানা নেই। এর উত্তর দেবে ‘সময়’।
গতকাল ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় জোটের ঘোষনা সংক্রান্ত সংবাদে মানুষের মাঝে যে পরিমাণ প্রতিক্রিয়া তাতে বোঝা যাচ্ছে এই জোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং সমর্থন ব্যাপক। আপাতত: স্বস্তি দেখা যাচ্ছে বিএনপি বলয়ে। যে জামায়াত এই জোটের সাতেও নাই পাঁচেও নাই তাদের অনেককেই দেখলাম উৎফুল্ল!
বি চৌধুরী এবং তাঁর পূত্র মাহি বি চৌধুরী মান অভিমান করে জাতীয় জোট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার যে ঘোষনা দিয়েছেন তা কী সাময়িক না পার্মানাণ্ট, সেটা বুঝতে আরও একটু সময় লাগবে।
রাজনীতির এখন বড় অস্থির সময়। কে যে কী কারণে, কোন পজিশন নিচ্ছে এবং তাঁর আল্টিমেট পজিশন কোনটা? সেটা বোঝা বড়ই মুশকিল।
কিছুদিন আগে হেফাজত আমীর মাওলানা শফী’র বক্তব্য নিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। যে কওমী মাদ্রাসা গুলোতে চলমান দূ:শাসন থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছুকাল আগেও ‘কুনুতে নাযেলা’ পড়া হতো।এখন তার জন্য যদি ‘সম্মিলিত দোয়া’র আয়োজন হয় তাহলে প্রশ্নতো উঠবেই।
বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে থাকা বি চৌধুরী একসময় জামায়াতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। তাঁর নিজের দলের সেক্রেটারীকে নিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার দালিলিক প্রমান। এরপরও তিনি যখন হঠাৎ জামায়াতের সাথে সম্পর্ককেই জোট করার প্রধান অন্তরায় হিসেবে হাজির করেন তখন মানুষ সেই ‘সেলিব্রেটি’ লোক সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষন তো করবেই।
সম্প্রতি আরও দেখা গেছে এলডিপি সভাপতি কর্ণেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম জামায়াত কে জোট থেকে বাদ রাখার প্রস্তাবের তীব্র সমলোচনা করেছেন। তাঁর দলের সেক্রেটারী রেদোয়ান আহমেদ জামায়াত কে ছাড়া কোন জোটে তারা যাবেনই না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ কথিত আছে যে এই অলি আহমদ বিএনপি ছেড়েছেন জামায়াতের কারণে। এলডিপি’র হঠাৎ জামায়াত সম্পর্কে এই দরদী অবস্থান দেখে মানুষ তো ভ্রূ কুচকাবেই।
অতএব রাজনীতির এসব ‘প্রশ্ন’ ‘ধারণা’ আর ‘ভ্রূ কুঁচকানো’ নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। রাজনীতির পথটাই অমসৃণ এবং আন প্রেডিকটেবল। যারা এসব নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বিচলিত হন আর খুব দ্রুত শত্রূ-মিত্র নির্ধারণ করে ফেলেন তাঁদের প্রতি আমার নিবেদন, সহনশীলতা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন। ভারসাম্যমূলক পজিশন নিন এবং দৃষ্টিটাকে অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যতে ঘুরিয়ে তারপর ভূমিকা রাখুন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে একটি সর্বাত্মক ঐক্য হবে বলে আমি এখনও আশাবাদী। সে ঐক্যে দল, মত, ধর্ম, নীতি, বিশ্বাস প্রাধান্য পাবেনা বরং প্রাধান্য পাবে জালেম আর মজলুমের প্রভেদ। বর্তমান রেজিমে যারা নিজেকে মজলুম এবং বঞ্চিত মনেকরেন জাতীয় ঐক্যের নেতাদের উচিত তাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার ডাক দেয়া। দল সমূহের ঐক্য কখনও স্বৈরশাসন হঠাতে পারেনা। স্বৈরাচার হটাতে হলে জনগণ কে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আশাকরি এখন সেদিকে মনোনিবেশ করবেন।
কিছুদিন আগে স্কুল ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবীতে যে আন্দোলন করেছিল তাতে কেউ কী তাঁর দলের অবস্থান বা সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেছিল? নিশ্চয়ই করেনি। বরং সবাই যার যার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে দ্বিধাহীন চিত্তে সে আন্দোলন কে সমর্থন জানিয়েছিল। দল কেন ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি সেজন্য কাউকে কাউকে দেখা গেছে তার নিজ দলের সমলোচনায় মূখর হতে। জনতার ঐক্যের এরকম সাম্প্রতিক নজীর স্মৃতিতে তাজা থাকাবস্থায় জাতীয় নেতারা যদি পথ এবং পন্থা খুঁজে না পান তাহলে তা হবে বড়ই দূর্ভাগ্যের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন