বাংলাদেশ বার্তাঃ আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম ১৯৫৭ সালের পহেলা মার্চ চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বারদোনা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম মোহাম্মদ আলী মিঞা এবং মাতার নাম মরহুমা হাফেজা আমেনা খাতুন। পিতা পেশায় একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর মমতাময়ী মা মরহুমা আমেনা খাতুন ছিলেন পবিত্র আল-কুর’আনের একজন হাফেজা। জনাব শামশুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই ইসলামী আদর্শভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রনেতার রয়েছে বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। ১৯৭৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মনোনিত হন। ১৯৮১ সালের অক্টোবর হতে ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির দািয়ত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী জেনারেল মনোনীত হন। ০২ বছর সেক্রেটারী জেনারেলের দািয়ত্ব পালনের পর ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে তিনি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৮৮৬-৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর সহ-সভাপতি (ভি.পি.) পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষ করে তিনি ১৯৮৯ সালে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯০ সালের এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদকের দািয়ত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারী মনোনীত হন। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চট্টগ্রামের অন্যতম এই শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম ২০০০ সালে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামে এক নামে পরিচিত সকলের প্রিয় শামসু ভাই একই বছরে চট্টগ্রাম মহানগর চার দলীয় জোটের যুগ্ম আহবায়ক নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট আমলে চট্টগ্রাম উন্ন্য়ন কর্তৃপক্ষ (সি.ডি.এ.)-র সদস্য মনোনীত হন এবং চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীরের দায়ীত্ব শেষ করার পর ২০১৭ সালের ০১ জানুয়ারী আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর নিয়ুক্ত হন।
চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বজন পরিচিত ও নন্দিত রাজনীতিবিদ আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) সংসদীয় আসনে নির্বাচন করেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সাথে এলাকায় দল-মত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেন। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এক দুঃসহ, বৈরী ও প্রতিকুল পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে সংসদের ভিতরে-বাহিরে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম। মহান জাতীয় সংসদে তাঁর যুগান্তকারী ও জালাময়ী বক্তব্য এবং আপোষহীন ভুমিকার জন্য তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে পরিচিতি লাভের পাশাপাশি ইসলামী তৌহিদী জনতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁর নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে জুলুমবাজ আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে পরপর তিনবার কারারুদ্ধ করেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের দুই মেয়াদকালে আ.ন.ম. শামশুল ইসলামকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট প্রায় আড়াই বছরের অধিক সময়কাল কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
আ.ন.ম. শামশুল ইসলাম চট্টগ্রামের বৃহত্তম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-এর ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান।
ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুসৃত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অঙ্গীকারাবদ্ধ জনাব শামশুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন