বাংলাদেশ বার্তাঃ ১৭ অক্টোবর ২০১৮, বুধবার সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ক্ষমতাসীন সরকার ভয় পেতে শুরু করেছে মন্তব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেছেন, ‘ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করা হয়েছে। অনেক রকমের গণ্ডগোলের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হচ্ছে। এই ঐক্যফ্রন্ট দেখে আসলে সরকার ভয় পেতে শুরু করেছে। সরকার জানে এবার কাজটা এতো সহজ হবে না। কিন্তু তারা যাবার আগে একটা মরণ কামড় দেবে।’
বুধবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠার সামাজিক আন্দোলন ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ নামের একটি সংগঠন এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মইনুল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি হবে আদর্শের ভিত্তিতে। গুজব নয়, গুজবের রাজনীতি করব না আমরা। গুজবের রাজনীতি করে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় কথা বলে, মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় এসে, তারপরে ভুলে যাওয়া এই রাজনীতি নয়। আদর্শের রাজনীতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে মারামারি কাটাকাটি নয়, সুস্থ্য রাজনীতি করেন। নির্বাচনের মাধ্যমে যেই ক্ষমতায় আসবে সেই আসুক। ভোট প্রক্রিয়া কিন্তু দলীয় রাজনীতির প্রক্রিয়া নয়, এটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের নয়। এটা জাতীয় প্রক্রিয়া, এখানে আওয়ামী লীগ আসতে পারে, বিএনপি আসতে পারে। জনগণের মাঝে এখনও সচেতনতা এসেছে, যে ভোটের মাধ্যমে আমাদের সরকার গঠন করতে না পারি। তো আমাদের সরকার গঠন করে কি বিদেশিরা? সহজ প্রশ্ন আমরা কি চাই?’
মইনুল হোসেন বলেন, ‘জনগণের ভোটে হবে না তো কার ভোটে ক্ষমতায় থাকবেন। বর্তমান সরকার কার ভোটে ক্ষমতায় আছে? আমি মনে করি আমাদের সিভিল সার্ভিস, আমাদের পুলিশ, সকলকে সচেতন হতে যে, তাদের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে।’
মইনুল বলেন, ‘স্বাধীন দেশে আজকে কেন আমাদের পুলিশ পিটাবে। পাকিস্তানী পুলিশ আমাদের পিটাইছে, মানছি। সে সময় আমার বাবাকে ২২টা বেত্রাঘাত, ২২ বছর জেল দিয়েছিল। আজকে বাংলাদেশে কেন আমাকে ভয় দেখাবে? কথা বলতে পারবো না। আমার পুলিশ কেন আমাকে ভয় দেখাবে? সে কি স্বাধীন দেশের পুলিশ নয়? আমি যেমন স্বাধীন দেশের নাগরিক, পুলিশও স্বাধীন দেশের নাগরিক। সকলেই স্বাধীন দেশের নাগরিক।’
প্রবীণ এই অাইনজীবী বলেন, ‘এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় আমাদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। আমি মনে করি এটা জাতীয় ঐক্য। মামলা দিয়ে রাজনীতি করা, সেটা পাকিস্তানে ছিল না। পাকিস্তানের আমলে রাজনীতিবিদদের সম্মান করা হতো। কিন্তু এখন অল আর ক্রিমিনালস। আমি বলছি না, যে ক্ষমতায় যায়, অপজিশনকে ক্রিমিনাল কেস দেয়। এ রকম কখনও দেখিও নাই। আইনে তো থাকলেই হলো। প্রয়োগ করার দরকার নাই এবং এই আইনটা ভাঙার জন্য আমাদের চিফ জাস্টিসকে অপমান করে, ভয় দেখিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। এটা কোন কথা হলো। পাকিস্তান আমলেও তো চিফ জাস্টিসকে দেশত্যাগ করান নাই স্বৈরশাসকরা।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রীর প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কড়া সমালোচনা করেন মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু জাফরুল্লাহ সাহেব একটা ভুল করেছে, ক্ষমাও চেয়েছে। আমি তাকে বলেছি এই আর্মি নিয়ে কথা বলেছে কেন? রাজনীতি করো, রাজনীতি নিয়েই থাকো। সে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সে বলে আমার আর্মি, কেন বলতে পারব না? আমি বললাম- ঠিক আছে বলো। যাই হোক এক ভুল হয়েছে, সে দুঃখ প্রকাশ করছে। এরপরে যা হলো, আমি নিশ্চই বিশ্বাস করি না এটা আর্মি চিফের চিন্তা-ভাবনা। এটা একটা স্বাধীন দেশ। একটা ভুলভ্রান্তি তো হইতেই পারে। সেই জন্য দেশদ্রোহী মামলা দিতে হবে, এটা কি ঠিক?’
‘এটা কেমন কথা, কেমন কথা হলো, সেটাই কষ্ট লাগে। আজকে মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেল? একটু সমালোচনা করেছে। এটা যেহেতু আমাদেরই সামরিক বাহিনী, একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হতেই পারে।’
দেশে আইনের শাসন নেই উল্লেখ করে মইনুল হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি করে তারা এখন আইনের শাসন বোঝে না। তারা শুধু জানে টাকা পয়সা-লুটপাট করতে। এটা হয়েছে গণতন্ত্রে নেতৃত্বের সংকটের কারণে। সব রাজনীতির নির্বাস হলো জাস্টিজ ফর দ্যা পিপল। বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে জাস্টিজ হয় না। আজকে দেশে যা হচ্ছে তা ভয়াবহ।’
মইনুল হোসেন বলেন, ‘দলীয় রাজনীতির বাইরে ভোট হওয়া উচিত। নির্বাচন নিয়ে জাতীয় আন্দোলন হচ্ছে, এতে শেখ হাসিনারও এই আন্দোলনে শরিক হওয়া উচিত। কারণ ভোট না দিতে পারলে আমরা স্বাধীন নই। এখন চলছে অন্ধ লুটপাটের রাজনীতি। চোর-ডাকাতদের হাতে রাজনীতি চলে গেছে।’
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক নীরুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আ ব ম মোস্তফা আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন