বাংলাদেশ বার্তাঃ আটাশে অক্টোবর ছিলো এক অসম নির্মম আক্রমন৷ জামাত- শিবিরের নিরীহ গুটিকয়েক নেতাকর্মীদের উপর সারাদেশ থেকে একত্রিত করা হাজার- হাজার বিপুল অস্রধারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নারকীয় তান্ডব৷ সূত্রমতে ইন্ডিয়া থেকেও সন্ত্রাসী আমদানী করা হয়েছিলো,কারণ ঘটনাটি ছিলো পূর্বপরিকল্পিত৷ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী তাঁর কারাগারের স্মৃতি বইয়ে তুলে ধরেন আটাশে অক্টোবর ছিলো প্রিপ্ল্যান্ড৷ তিনি লিখেন " বেশ কিছুদিন আগে কানাডার আইনজিবী মিঃ স্লোন গোটা বাংলাদেশ ঘুরে কানাডা যাবার পথে নিউইয়র্ক সাংবাদিকদের বলেছিলেন 'মাইনাস টু ফর্মুলা' নাকি অনেক আগের এবং পূর্বপরিকল্পিত৷ আটাশে অক্টোবরের ঘটনাও নাকি চিল ঐ পরিকল্পনার অংশ৷ মওদূদ সাহেবকে এটা 2005 সালে একজন এমপি এবং একজন সম্পাদক বলেছিলেন৷"
পল্টন যেন মদীনা
মক্কার কাফেররা যেভাবে সর্বশক্তি দিয়ে মদীনা আক্রমনের জন্য এসেছিলো আওয়ামীলীগ ঠিক তেমনি সারাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের জড়ো করে পল্টন আগমন করে৷ মদীনাবাসী যেভাবে রাসুলকে, ঈমানদারদেরকে রক্ষায় সর্বাত্তক সহায়তা করেছে, পল্টনবাসীও সেদিন সহযোগীতার হাত প্রসারিত করেছিলো যেমনিভাবে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছিলো হেফাজতের 5 ই মের ঘটনার সময়৷ যখন আমরা টিয়ারসেলের ধুঁয়ায় নিরোপায় তখন পল্টনবাসীকে দেখেছি পানি নিয়ে এগিয়ে আসতে, যখন ক্ষুধার্তবস্থায় গভীর রাতে কাঁতরাচ্ছিল হাজারো মুমিন তখন পল্টনবাসী এগিয়ে এসেছে খাবার নিয়ে৷ আটাশে অক্টোবরে হায়েনারা আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেললেও সাহস করেনি পল্টনের কোন গলিতে ঢোকার৷
পল্টন ট্রাজেডি ছিলো একতরফা হামলা
বদর প্রান্তরে যেমন কাফেরদের প্রস্তুতি আর সৈন্য ছিলো মুসলমানদের কয়েকগুন বেশী, আটাশে অক্টোবরেও ঠিক তেমনি ইসলামী আন্দোলনের সৈনিকদের তুলনায় আবু জেহেলের উত্তরসূরী আওয়ামী বাহিনীর প্রস্তুতি আর সন্ত্রাসী ছিলো কয়েকগুন বেশী৷ জামাতের সমাবেশ ছিলো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ন এক আয়োজন৷ বিনা উস্কানিতে জামাতের শান্তিপূর্ন এ সমাবেশে একতরফা হামলা করে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে থাকে৷ আমার সামনেই গুলির আঘাতে মারাত্নক আহত হন সাবেক সিপি ড রেজাউল করিম ভাই, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় আঘাত পান তৎকালীন ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি কামাল ভাই৷ চোখে আঘাত প্রাপ্ত আমার বন্ধু ( সদস্য) নেসার উদ্দিনকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি হুইল চেয়ারে বসে থাকা কামাল ভাইয়ের মাথায় কাপড় বাধা,সারা শরীর রক্তে ভেজা৷
বদর, ওহুদের মুনাফিক ছিলো পল্টনেও
পল্টন মোড়েই নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিলো আমাদের৷ লগি - বৈঠা নিয়ে সকাল দশটার পর থেকেই মিছিল আসতে থাকে সন্ত্রাসীদের৷ কোন কারণ ছাড়াই শান্তিপূর্ন নিরাপত্তা দায়িত্বশীল সাবেক সিপি মন্জু ভাইকে নির্মমভাবে আহত করে সন্ত্রাসীরা৷ অথচ পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ বাহিনীর নির্লিপ্ত ভূমিকা যেন ওহুদের মুনাফিকের বাস্তব রুপ৷ পরে জানতে পারি মুনাফিক সর্দার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের নির্দেশেই কোন ভূমিকা রাখেনি পুলিশ বাহিনী৷ সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ ভাই পুলিশ বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালনের আহবান জানালে তারা বরং তাদের যায়গা বদল করে সন্ত্রাসীদের আগমনের সুযোগ করে দেয়৷ কারাগারে বাবরের সাথে দেখা করেছি৷ দুনিয়ার লোভে মুনাফেকীর শাস্তি আজ সে হারে হারে টের পাচ্ছে৷
দেখেছি আল্লাহর সাহায্য
বদরে হাজারো কাফেরদের বিরুদ্ধে তিনশত তের জন সাহাবীর বিজয় মূলত ছিল আল্লাহ সাহায্য । পল্টন ট্রাজেডি দিনেও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ আমাদের নেতৃবৃন্দ সন্ত্রাসীদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল মূলত আল্লাহর অপার সাহায্যে । সেদিন সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট ছিল নেতৃবৃন্দ, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম সাহায্যে রক্ষা করেন প্রিয় নেতৃবৃন্দকে। আমার বন্ধু নেছার উদ্দিন কে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় আটকে ধরে সন্ত্রাসীরা। আমি চিন্তিত হয়ে যাই তার চোখের কাছে আঘাত লাগায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন ছিল। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই সিএনজি ড্রাইভার এর তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা দেখে। তিনি সাহসিকতা দিয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন সেই সময়ের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি এক বিভৎস চিত্র। হাজার হাজার আহত ভাই আর চিকিৎসক মাত্র কয়েকজন। সবাই অপর ভাইয়ের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। নিজের গা থেকে রক্ত পরছে,অথচ সে আরেকজনের সেবা করছে । এ দৃশ্য যেন মুতার প্রান্তরে সেই তিন সাহাবীর ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যে মহান আল্লাহ বদর প্রান্তরে এবং আটাশে অকটোবরে তার অপার মহিমায় রক্ষা করেছিলেন নেতৃবৃন্দকে সে আল্লাহতায়ালা আগামী দিনেও রক্ষা করবেন প্রিয় কাফেলাকে ইনশাআল্লাহ
লেখক: সালাহ উদ্দিন আইউবী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন