ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। গত ৭ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার হিসেবে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন মামলা পরিচালনা করে আসছেন। সুপ্রিম কোর্টের পরিচিত মুখ শাকিলা ফারজানাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’কে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। র্যাবের দাবি, ব্যারিস্টার শাকিলা ও তার দুই সহযোগী আইনজীবি চট্টগ্রামের জঙ্গী সংগঠন হামজা ব্রিগেডের ব্লু গ্রুপের নেতাকে এক কোটি ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম র্যাব ৭-এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ জানান, ব্যারিস্টার শাকিলা হামজা ব্রিগেডের ব্লু-গ্রুপের নেতা মনিরুজ্জামান ডনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতরা অর্থ সহায়তা করতেন। শাকিলা ফারজানা ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করতেন। র্যাব অধিনায়ক আরো জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি টাকা ব্যাংকে জমা দিলে ফরম পূরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সেই সব ফরম পূরণ করেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতেন।
অন্যদিকে শাকিলার আইনজীবি চট্টগ্রামের সাবেক জেলা পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে ব্যারিস্টার শাকিলাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শাকিলা নিজ যোগ্যতায়ই সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত হয়েছেন। তিনি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করছেন। এসব মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে মক্কেলের সঙ্গে তার বিভিন্ন দফায় আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এসব আর্থিক লেনদেনকে জঙ্গি অর্থায়ন হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যারিস্টার শাকিলাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কয়েকটি বড় মামলা পরিচালনা এবং জেলে থাকা আসামিদের জামিনের জন্য একজন তদবিরকারী ব্যারিস্টার শাকিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ জন্য ফি বাবদ শাকিলাকে বড় অংকের টাকাও প্রদান করেন ওই ব্যক্তি। পরবর্তীতে শাকিলা ওই মামলা পরিচলনায় অপারগতা প্রকাশ করে তদবিরকারীকে ওই টাকা তার হিসাব নম্বরে ফিরিয়ে দেন। সম্প্রতি র্যাবের অনুসন্ধানে তদবিরকারী ওই ব্যক্তি শহীদ হামজা ব্রিগেডের নেতা ও সংগঠক হিসেবে শনাক্ত করে এরই ধারাবাহিকতায় ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা কর্তৃক ওই ব্যক্তির হিসাবে ফিরিয়ে দেওয়া টাকাকে জঙ্গি অর্থায়ন হিসেবে চিহ্নিত করে শাকিলা ফারজানাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ ব্যারিস্টার শাকিলার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় শাকিলা ফারজানাকে ফাঁসানো হয়েছে। ব্যারিস্টার শাকিলা যদি প্রকৃতই জঙ্গি অর্থায়নে সংশ্লিষ্ট হতেন, তাহলে তিনি কখনই নিজের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতেন না। শাকিলা একজন আইনজীবী হিসেবে ক্লায়েন্টের সঙ্গে পেশাগত আর্থিক লেনদেন করেছেন। এই স্বাভাবিক লেনদেনকে জঙ্গি অর্থায়ন বলছে র্যাব।’
আইনজীবী পরিচয়ের বাইরে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর জনপ্রিয় নেতা বিএনপির নির্বাচিত প্রাক্তন সাংসদ ও হুইপ সৈয়দ অহিদুল আলমের কন্যা। ব্যক্তি জীবনে বিবাহিতা ব্যারিস্টার শাকিলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামেরও একজন নেত্রী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন