বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনর্বিচারের রায়ে অভিযুক্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা। আবারো রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু বললেন, ‘এটা বিচার নয়, ভারতীয় সরকারের তামাশা।’
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বিএসএফের বিশেষ আদালতের সোনারী ছাউনীতে বিএসএফের আধিকারী সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেল ওই রায় দেন।
অপ্রত্যাশিত ওই রায়ে ফেলানীর বাবা-মাসহ এলাকাবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায় ঘোষণার পর ফেলানীর বাড়িতে আসা লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা বলেন, ‘এই রায়ের ফলে কাঁটাতারবাসীর জীবন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠল। বিএসএফ সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।’
ফেলানীর বাবা নুর হোসেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ রায় আমি মানি না। স্বঘোষিত খুনিকে যে আদালত বেকসুর খালাস দিতে পারে, সেখানে ন্যায় বিচার হতে পারে না। ভারত সরকার বিচার নিয়ে তামাশা করেছে। তারা চায়নি ফেলানী ন্যায় বিচার পাক। তারা চেয়েছে তাদের খুনি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের মুক্তি। আমি ন্যায় বিচারের জন্য আবারো আবেদন করবো।’
ফেলানী হত্যা মামলার আইন সহায়তাকারী ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন রায়ের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘এ রায় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বিএসএফ।’
এর আগে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালত। পরে বিজিবি-বিএসএফের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিচার কাজ ফের শুরু করে বিএসএফ। চার মাস মুলতবি থাকার পর গত ২৫ মার্চ পুনর্বিচার কাজ শুরু হলেও বিএসএফের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অসুস্থ থাকায় ৩০ জুন পর্যন্ত বিচারিক কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয় বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন। এ হত্যাকাণ্ডে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মনবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন