ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

জননেতা মকবুল আহমাদ প্রসঙ্গ: মতিউর রহমান আকন্দ: [এক]

যে কোন আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্পর্কে জানার জন্য জনমনে কৌতূহল থাকা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একাধারে একটি ইসলামী আন্দোলন ও রাজনৈতিক দল। বর্তমান বিশ্বে এ দলটি বহুল আলোচিত। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ দলটি আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের অব্যাহত জুলুম-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতনসহ হেন নিপীড়ন নেই যা জামায়াতের ওপর চালানো হচ্ছে না। সরকারের সকল নিপীড়ন মোকাবিলা করে জামায়াত তার আদর্শের ঝান্ডা ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলেছে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রমনা নাগরিকগণ নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্বস্তির জন্য জামায়াতকেই তাদের প্রিয় ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও ভালবাসা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
 
জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীকে সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসি কার্যকরের নামে হত্যা করে তাদের উপর চরম জুলুম ও অন্যায় করেছে। সরকারের এ জুলুমের ফলে জনগণের অন্তরে জামায়াতের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে।
 
আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে শহীদ করার পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন শহীদ আমীরে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী জনাব মকবুল আহমাদ। যিনি দীর্ঘ ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমীরে জামায়াত হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। মিথ্যা, বানোয়াট কল্পকাহিনী রচনা করে আমীরে জামায়াতের সম্মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
 
আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর একটি বিশেষ মহল কর্তৃক তাকে ১৯৭১ সালের ঘটনায় জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য হলো আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে তার উপর জুলুম করা। অপপ্রচারকারীদের এ তৎপরতায় জনগণের মাঝে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, যিনি জামায়াতের আমীর হবেন তাকেই তারা অপপ্রচারের টার্গেটে পরিণত করবে। অপপ্রচারকারীদের এসব বক্তব্যের সাথে জনাব মকবুল আহমদের কোন সম্পর্ক নেই। তার জীবন আলোচনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
 
॥দুই॥
জন্ম : জনাব মকবুল আহমাদ ১০ই জৈষ্ঠ্য ১৩৪৫ সালে ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া থানার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। বাদ ফজর পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হবার মুহূর্তে দুনিয়ায় আগমন করেন জনাব মকবুল আহমাদ। তারা ৫ ভাই ও ৩ বোন। তিনি ভাইবোনদের মধ্যে পঞ্চম।
 
তার পিতা আলহাজ্জ নাদেরুজ্জামান একজন গণ্যমান্য ন্যায় বিচারক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। মাতা আনজিরের নেসা একজন গৃহিণী ছিলেন। তার মা গরীব ও অভাবী মানুষদেরকে বেশ সাহায্য করতেন ও তাদের সুখ-দুঃখের কথা দরদ দিয়ে শুনতেন। এ জন্য গরীব, অভাবী ও অসহায় মানুষগুলো তাকে খুবই আপন মনে করতো। গরীব মহিলারা প্রায়ই গৃহস্থালীর জিনিস ও বিভিন্ন সহযোগিতা নিতে তার কাছে আসত।
 
জনাব মকবুল আহমাদের পিতা ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন। এলাকার মানুষ তার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আসত। তিনি সকলের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এলাকার ছোটখাট বিচার সালিশে ন্যায় ইনসাফের কারণে তিনি খুবই সুনাম অর্জন করেছিলেন। প্রতি রমজানে এলাকার গরীব লোকদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করতেন। ইফতার শেষে ভাত-ডাল-গোশ্ত দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করতেন তিনি। তার এ সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে তিনি সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন। কুরবানীর ঈদের পর দিন এলাকার লোকদেরকে মেহমানদারী করতেন তিনি। গোস্ত রুটি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেন। এটা ছিল আনন্দ ও খুশির সমাবেশ। এ খুশির অনুষ্ঠানে পাড়া প্রতিবেশী সকলেই শামিল হতো। পিতা-মাতার সাদাসিধে অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন এবং সামাজিক কার্যক্রমের প্রভাব সন্তান হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদের ওপরে পরে। সেই বাল্যকাল থেকে শুরু করে আজও তিনি বাবা-মার সেই সামাজিকতা ও পরোপকারিতা নিজের মধ্যে ধারণ করে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করার চেষ্টা করেন।
 
বাল্য শিক্ষা : জনাব মকবুল আহমাদ বাল্যকালে নিজ গ্রামের মসজিদে (মক্তবে) সূরা, ক্বিরাত, কুরআন পাঠে এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে দল বেধে অংশগ্রহণ করতেন। উৎসবের মত ছিল সে দিনগুলো। নিজ গ্রামেই তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তখন গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্তই লেখাপড়া হত। নিজ গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে তিনি দাগন ভূঁইয়া আতাতুর্ক হাইস্কুলে ভর্তি হন। তিনি স্কুলে ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলেন। ভাল ছাত্র হিসেবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। এ জন্য সকলেই তাকে খুব সমীহ করতো। আতাতুর্ক হাইস্কুলে ৪ বছর পড়াশুনার পর অষ্টম শ্রেণিতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম জালাল আহমদ বি.এ.বি.টি সাহেব ফেনী চলে যাওয়ায় জনাব মকবুল আহমাদকেও ফেনীতে ট্রান্সফার করা হয়। ঐ সময় তিনি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন। বাড়ির লজিং মাস্টার ও পরিবারের সদস্যরা তাকে খুবই আদর ও স্নেহ করতেন।  আজও জনাব মকবুল আহমাদ তাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন।
 
স্কুল জীবনে সাপ্তাহিক ছুটিতে এক/দেড় দিনের জন্য বাড়িতে যেতেন। কোন কোন সময় বিশেষ করে স্কুলের বার্ষিক ছুটির সময় একাধারে ১৫/২০ দিন নিজ এলাকায় থাকতেন। ছুটির সময় সমবয়সী আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে খেলাধুলা করতেন ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতেন।
 
কলেজ জীবন : ফেনী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬২ সালে স্কুল/কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র নিয়ে তিনি ‘ওমরাবাদ পল্লী মঙ্গল সমিতি’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পুকুরের কচুরি পানা পরিষ্কার, রাস্তাঘাট মেরামতসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার এ সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগায়। কলেজ জীবনে কলেজের বার্ষিক মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ মজুমদার যিনি এক সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন তার উদ্যোগে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম আযমকে সীরাতুন্নবী আলোচনার জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়। তিনি ‘নবী (সাঃ) জীবনের আদর্শ’ এ বিষয়ে খুবই হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পেশ করেন। এ আলোচনা তার মনে বেশ দাগ কাটে। তখন থেকেই জনাব মকবুল আহমাদ নবীর জীবনী পড়া ও কোরআন বুঝার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলামী বই পুস্তক পড়তে আরও বেশী আগ্রহী হন।
 
সীরাতের এ আলোচনা জনাব মকবুল আহমাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আলোচনা শুনে তিনি বুঝতে সক্ষম হন সমাজের মূল সমস্যা সৎ, যোগ্য লোক তৈরী না হওয়া। এ জন্য সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে চরিত্রবান নেতৃত্ব সৃষ্টি করে জনগণের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাজ।
 
অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য থেকে তিনি নবীর (সাঃ) জীবন ও নবীর পথ সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হন। জনাব মকবুল আহমাদ আরো হৃদয়াঙ্গম করেন যে, জনগণের দুঃখদুর্দশা লাঘব করার জন্য মানুষের মধ্যে প্রথমেই সত্য ও সততার বীজ বপন করেছিলেন নবী করিম (সাঃ)। মানুষের যিনি স্রষ্টা তাকে চেনা, তার হুকুম জানা, সে অনুযায়ী নিজকে ও সমাজকে গঠনের চেষ্টা করা। রাসূল (সাঃ) জনগণের কল্যাণের জন্য ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। তার কাজ ছিল ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়া, জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য গরীব দুঃখীদের সাহায্য সহযোগিতা করা। অত্যাচারীদের জুলুম থেকে মানুষকে রক্ষা করা। কিন্তু হিলফুল ফুজুল থেকে সমাজ উপকৃত হলেও সমাজের অন্যায় অত্যাচার সমূলে উৎপটিত হচ্ছে না। রাসূল (সাঃ) পেরেশানীতে দিন কাটাচ্ছেন। হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার দিন যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানের নির্দেশে আসলো। ঘোষণা করা হলোঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।” আল্লাহকে চেনা, তার নবীকে মানা ছাড়া সমাজ পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে বাস্তবে একটা কল্যাণকামী সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে না। রাসূল (সাঃ) সমাজের লোকদের কাছে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরলেন। একদিন তিনি ছাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং জনগণকে ডেকে বললেন, “পাহাড়ের অপর দিকে কি আছে তোমরা কেউ দেখেছ? আমি যদি বলি দুশমন লুকিয়ে আছে, তোমরা তা বিশ্বাস করবে?” তারা বলল, হ্যাঁ বিশ্বাস করব, কারণ আপনি পাহাড়ের উপরে আছেন তাই দেখছেন। তদুপরি আপনি আল-আমিন! বিশ্বাসী!! আপনার কথা অসত্য হতে পারে না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর নবী, আমি বলছি এ দুনিয়ার একজন সৃষ্টি কর্তা আছেন, এক, একক, লা-শরীক, সকল শক্তির মালিক। আসমান ও জমিনে তারই রাজত্ব, তাকে মেনে তার কথা (আল-কুরআন) অনুযায়ী চললে তোমরা এ দুনিয়াতে শান্তিতে বসবাস করবে, আর মৃত্যুর পর অনন্তকালের জন্য কল্যাণের বাসস্থান (বেহেস্ত) পাবে।
 
পরের ইতিহাস অত্যন্ত পরিষ্কার। যে লোকগুলো দীর্ঘদিন তাকে আল-আমীন, আস-সাদিক (বিশ্বস্ত) বলে আসছেন, তারাই নিজ স্বার্থে, পূর্ব পুরুষের দোহাই দিয়ে আল্লাহর বানী এবং কালেমার দাওয়াতের আলোকে চলতে অস্বীকার করলেন। কিন্তু নবীর (সাঃ) বিরোধীতা সত্ত্বেও পরম ধৈর্য সহকারে সত্যের দাওয়াত তিনি দিয়ে যেতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে কোরাইশ নেতারা সুযোগ সুবিধা, সুন্দরী রমনী ও ক্ষমতার লোভ দেখাতে লাগলেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, জনগণকে মহা সত্যের ডাক দিয়ে যেতে লাগলেন। আর প্রতিউত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের ধারণা আমি সুযোগ সুবিধা, নেতৃত্ব লাভ ও ক্ষমতায় আরোহনের চেষ্টা করছি- এটা মোটেই ঠিক নয়। তোমরা যদি আমার এক হাতে সূর্য আর এক হাতে চন্দ্রও এনে দাও আমি এ মহা সত্যের দাওয়াত থেকে পিছপা হবো না। তার উপরে অত্যাচার-জুলুম চলতে লাগলো। প্রাণে মেরে ফেলার যড়যন্ত্র হলো। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি তার মিশন চালিয়ে যেতে লাগলেন। অতঃপর তাদের অত্যাচারে নিজ জন্মভূমি থেকে হিজরত (আদর্শের জন্য দুনিয়ার সহায় সম্পদ সব ত্যাগ) করে মদীনায় গিয়ে উপস্থিত হলেন।
 
আপাতঃ দৃষ্টিতে ঝামেলা গেল। কাফের, কুরাইশ, নবীর দুশমনরা খুশি হলো। কিন্তু এ খুশি বেশী দিন রইলো না। তারা ষড়যন্ত্র করল, মহানবী (সাঃ) এখান থেকে চলে গেলেন মদীনায়। মদীনায় গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের উপর আঘাত হানবে। তারা এ ধারণায় মদীনায় আক্রমণের পরিকল্পনা নিল।
 
নবী (সাঃ) আল্লাহর ইশারায় একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে প্রতিপক্ষ কুরাইশদের মোকাবিলায় অগ্রসর হলেন। দুশমনরা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে গেল। ঐতিহাসিক বদর ময়দানে মুখোমুখী হলো। এ অসমযুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম বাহিনী শৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে বিজয় লাভ করে। ইতিহাসে এ যুদ্ধের অনেক পর্যালোচনা হয়েছে। কিন্তু ইংরেজ, খৃষ্টান, ইহুদী, অমুসলিম ইতিহাসবিদরা আজও স্থির করতে পারলেন না এ অসমযুদ্ধে কিভাবে মুসলিমরা জয়ী হলো। যারা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী তারা দেখলো মুজাহিদদের ঈমানী শক্তি, ন্যায় সততার শক্তি ও আল্লাহর সাহায্যে এ বিজয় সম্ভব হয়েছে।
 
অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সুদীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তব্যে নবী (সাঃ) জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বললেন, কোন আদর্শবাদী দল যদি আল্লাহর উপরে নির্ভর করে নিজদেরকে তৈরী করে তবে আল্লাহর সাহায্যে তারা সফলকাম হতে পারবে।
অধ্যাপক সাহেব দ্বিতীয় যে কথাটি বললেন তা হলো ইসলামের জয়-পরাজয়ের ধারণা (ঈড়হপবঢ়ঃরড়হ) আলাদা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যদি জয়ী হন আপনি কামিয়াব (বিজয়ী), যদি জয়ী না হন তবুও সফল। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সকল বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই সফলতা। দুনিয়ায় প্রচলিত জয় পরাজয় ও ইসলামী আন্দোলনের জয় পরাজয় এক রকম নয়।
 
জনাব মকবুল আহমাদ ছাত্রজীবনে ফেনী কলেজে শুনা অধ্যাপক গোলাম আযমের সে বক্তৃতা আজও ভুলতে পারেন না। জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সে কথা এখনও তার মনে পড়ে। ঈদে মিলাদুন্নবীতে গিয়ে সুর করে দুরূদ পড়া শেষে মিষ্টি, ফিরনী, বিরানী খাওয়া কম আনন্দদায়ক নয়। কিন্তু সীরাতুন্নবী (সা.) এর আলোচনায় জীবনের চলার পথের যে আলো পাওয়া যায় সেটাই নবী জীবনের শিক্ষা এটা অধ্যাপক গোলাম আযমের আলোচনায় শ্রোতাদের নিকট পরিষ্কার হয়। সেদিন থেকে জনাব মকবুল আহমাদ ইসলামী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা তার জীবনের গতিকে পাল্টে দেয়।
 
খেলাধুলা : জনাব মকবুল আহমদ একজন ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি। তিনি ফেনী কলেজে থাকা অবস্থায় স্পোর্টস এ অংশগ্রহণ করেন। তিনি কলেজে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১ম পুরস্কার পান। তিনি মাঝে মাঝে গ্রামে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতেন। ঐ সময় গোল্লাছুট, হাডুডু খেলার প্রচলন ছিল। তিনি এসবগুলোতে মাঝে মাঝে অংশগ্রহণ করতেন।
 
কর্মজীবন : জনাব মকবুল আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় সরকারী চাকুরীতে যোগদানের মাধ্যমে। প্রথমে একটি ব্যাংকে তার চাকুরী হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যাংকে চাকুরী করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ব্যাপারে পরিবারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিকেশন্স বিভাগে যোগদান করেন। প্রথম থেকে সরকারী চাকুরী না করার একটা প্রবনতা ছিল। স্বাধীনভাবে জীবন পরিচালনার জন্য সরকারী চাকুরী ছেড়ে এক বছর পর তিনি শিক্ষকতার পেশায় চলে যান। শিক্ষকতায় নিজের জ্ঞান অর্জন ও অর্জিত জ্ঞান কল্যাণকর কাজে বিতরণ করে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলা যায়। তার মধ্যে এরকম একটা অনুভূতি সুপ্তভাবে হলেও ছিল। জনাব মকবুল আহমদের মাঝে বি.এ পাস করে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার আগ্রহ ছিল। তিনি সরিষাদী হাইস্কুলে ৪ বছর ও ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে ৩ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি সাধারণত ইংরেজী, বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস এ বিষয়গুলোই পড়াতেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকল মহলে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেন। সরিষাদী হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে তিনি ৪ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
 
স্কুলে বাংলা সাহিত্য পড়ানোর সময় মহৎ লোকদের জীবনী এবং তাদের জীবনের সুন্দর দিকগুলো আকর্ষণীয় ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ছেলেদেরকে চরিত্রবান নাগরিক রূপে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতেন। ক্লাসে লেখাপড়া শেষে ৮ম-৯ম শ্রেণীর ছাত্রদের আচার-আচরণ, নৈতিক দিক, পিতামাতাকে সম্মান ও প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। ছাত্রদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য হলে তিনি তা মিটিয়ে দিতেন।  [চলবে]  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন