বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আপনি কি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন চান, তাহলে আপনার জন্য প্রথম পরামর্শ- হাঁটুন, সুস্থ থাকুন। মানব দেহের সুস্থতার জন্য হাঁটার বিকল্প নেই। যারা নিয়মিত হাঁটেন, অন্যদের তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি স্বাছন্দ্য জীবনযাপন করেন। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস হৃৎরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আথ্র্ইটিস, স্মৃতিশক্তি লোপসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
যারা নিয়মিত হাঁটায় অভ্যস্থ তাদের শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়, উচ্চ রক্তচাপজনিত অন্তত ২৭ ভাগ সমস্যা তাদের কমে যায়। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণায় দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার কথা বলা হয়েছে।
নিয়মিত হাঁটলে হৃৎরোগের ঝুঁকি কমে যায়। হাঁটার কারণে দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা (এলডিআর) কমে যায়, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভাল কোলেস্টেরল (এইচডিআর) এর মাত্রা বেড়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট এসোসিয়েশনের গবেষণায় বলা হয়েছে- নিয়মিত হাঁটাহাটির ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে, মোটা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে না, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৬০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পায় যদি নিয়মিত হাঁটাহাঁটি হয়। ডায়াবেটিসের ব্যাপারে তো একথা সবারই জানা যে, যেখানে শারীরিক পরিশ্রম নেই, সেখানেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো যায়। যাদের ডায়াবেটিস আছে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাঁটার বিকল্প নেই।
বর্তমানে সারা বিশ্বে মহিলাদের জন্য এক মহা আতংকের নাম স্তন ক্যান্সার। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৬০ ভাগ কমে যায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্সারের সাথে ভিটামিন-ডি এর সম্পর্ক নিয়ে একটি ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৪ হাজার ৪৪৩জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলার উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যাদের শরীরের পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি রয়েছে, অন্যদের তুলনায় তারা দ্বিগুণ বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন। তাই দিনের বেলায় সকালের রোদে মহিলারা নিয়মিত হেঁটে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারেন।
মানব দেহে ভিটামিন-ডি অস্থি গঠন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নানাবিধ কাজ করে থাকে। ভিটামিন-ডি আরো একটি কাজ করে থাকে- তা হলো- বিভিন্ন কোষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সক্রিয় করা। শেষের কাজটির মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়তে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
সচরাচর বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, অতীত, বিশেষ করে নিকট অতীতের কথা ভুলে যায়। বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের উপর পরিচালিত যুক্তরাজ্যের গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের বয়স ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি তাদের মধ্যে প্রতি ১৪ জনে ১ জনের স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। ৮০বা আরো বেশি বয়স যাদের, প্রতি ৬ জনে ১ জন এ সমস্যায় ভোগেন। যারা নিয়মিত হাঁটায় অভ্যস্থ, তাদের বৃদ্ধ বয়সে স্মৃতি হ্রাসের ঝুঁকি ৪০ভাগ পর্যন্ত কমে যায়।
বাত ও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে এ সমস্যা তীব্র হয়। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট সুস্থ থাকে এবং বাত ও জয়েন্টের সমস্যা হ্রাস পায়।
হাঁটলে শরীরের পেশীগুলো শক্ত ও মজবুত হয়। পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কোন না কোনভাবে ব্যায়াম হয় হাঁটার মাধ্যমে। এর ফলে বাত, গেঁটে বাত, বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা, কোমর ব্যথা, কাঁধ ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ইত্যাদি কমে যায়। হাত ও পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পুরো শরীর সুস্থ ও সবল থাকে। বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিক নড়াচড়া সহজ হয়।
কীভাবে, কোন গতিতে কতটুকু হাটবেন :
নিম্নের আলোচনা থেকে আপনি নিজেই ঠিক করে নিতে পারেন আপনি কিভাবে, কোন গতিতে কতটুকু হাটবেন? দেহের ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতার অন্যতম কারণ দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হওয়া। প্রতিদিন মানুষ খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করে, তা থেকে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত ক্যালরি ক্ষয় করে ফেলতে হবে। বিভিন্নভাবে ক্যালরি ক্ষয় করা যায়। তবে এর সহজ পথ হল হাঁটা। ৬০ কেজি ওজনের একজন মানুষ যদি ঘণ্টায় দু’মাইল গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটে, তার ক্ষয় হবে ৭৫ ক্যালরি। দু’ঘণ্টায় তিন মাইল গতিতে ৩০মিনিট হাঁটলে ক্ষয় হবে ৯৯ ক্যালরি। ঘণ্টায় চার মাইল গতিতে ৩০মিনিট হাঁটলে ক্ষয় হবে ১৫০ ক্যালরি। আপনার শরীরে প্রতিদিন অতিরিক্ত কী পরিমাণ ক্যালরি জমা হচ্ছে, আপনার বয়স, উচ্চতা ও ওজন চার্ট মিলিয়ে এখন আপনি নিজেই ঠিক করে নিতে পারেন, আপনাকে কোন গতিতে, কতক্ষণ, কত দূর হাঁটতে হবে। একেবারে খালি পেটে হাঁটবেন না। হাঁটা শুরুর আগে ২/১ গ্লাস পানি পান করে নেয়া ভাল। আবার পেট ভরে খেয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটা ক্ষতিকর।
কোন সময়ে হাটবেন :
যে কোন সময়ে হাঁটা যায়। যখনই আপনি হাঁটেন,হাঁটা আপনার জন্য উপকারি। তবে এক্ষেত্রে গবেষকরা একটি পরামর্শ দিয়েছেন। মানুষের শরীরে ভিটামিন-ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দৈনন্দিন পানাহার থেকে ভিটামিন-ডি খুব বেশি পাওয়া যায় না। ভিটামিন-ডি এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। সকালের রোদে প্রচুর ভিটামিন-ডি থাকে। হাটার জন্য এ সময়টা বেছে নেয়া যেতে পারে। এতে দুটো কাজ এক সাথেই হয়ে যায়। এছাড়া সকালের মুক্ত আবহাওয়া শরীরের জন্য আরামদায়ক ও উপকারি।
নইম কাদের
চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮, ০১৯৯১ ৯৪ ৮৫ ৯১
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮, ০১৯৯১ ৯৪ ৮৫ ৯১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন