বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মাগরিবের কিছু আগে কারা কর্তৃপক্ষ ফোন করে মিঠু ভাইকে (আমার শহীদ পিতার ব্যক্তিগত সহকারী) জানালেন সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে পরিবারের সদস্যরা যেন সাক্ষাতের জন্য জেলগেটে চলে আসে। এটা শেষ সাক্ষাৎ কিনা কারা কর্তৃপক্ষ তা স্পষ্ট করে বলতে অস্বীকার করে। অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই আমরা বাসা থেকে তিনটি গাড়িতে করে কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই।
সাংবাদিকদের ভিড় ও নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে আমরা ২৬ জন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করি। সেখানে কারা প্রশাসনের ইস্যু করা চিঠি রিসিভ করে বুঝতে পারলাম এটাই আমাদের আব্বুর সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো কনডেম সেলে আব্বুর কক্ষে। সেলটির নাম রজনীগন্ধা। সেলের সর্বশেষ কক্ষ ৮ নম্বর প্রকোষ্ঠে আব্বু ছিলেন। রুমটি জানালা বিহীন, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে আনুমানিক ৮/৮ ফিট, একদিকে লোহার গরাদ দিয়ে ঘেরা আর তার সামনে ছোট একটি আধো অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রাঙ্গণ।
রুমের ভেতরে সবুজ একটি জায়নামাযে বসে আব্বু আমাদের উল্টাদিকে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করছিলেন। শান্ত ও স্পষ্ট উচ্চারণে আরবিতে দোয়া করছিলেন, খুব উচ্চৈঃস্বরেও না আবার খুব নিচুস্বরেও না। প্রতিটি বাক্যের মাঝে স্বভাব সুলভ একটু বিরতি। ঠিক যেমনটা আমরা আমদের ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি। পাশে হালকা বাদামি রঙের একটি বাচ্চা বিড়াল বসা। যেন উনার সাথে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছে। মুয়াজ (উনার তিন বছর বয়সী নাতী) সিঁড়ি বেয়ে উঠে লোহার গরাদ ধরে বলল, “দাদু দরজা খোলো আমরা আসছি”। আব্বু শান্তভাবে মোনাজাত শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। আমাদের দেখে লোহার গরাদের কাছে এসে বললেন, “তোমরা আসছো? এটাই তাহলে শেষ দেখা?”
আমার বোন একটু আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন, “আল্লাহ চাইলে এটা শেষ দেখা না-ও হতে পারে।” এর পরে একটু আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হলে উনি সবাইকে শান্ত থাকতে বললেন, সবর করতে বললেন। উনি শিকের ওপার থেকেই সবার সাথে হাত মেলালেন। উনার পরনে ছিল সাদা সুতি পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে আর জানালাবিহীন রুমের কারণে উনার পাঞ্জাবিটি ঘামে ভেজা, কিন্তু মুখটা প্রশান্ত; কষ্ট বা উদ্বেগের লেশমাত্র নেই। দেখে কে বলবে একটু পরে উনার ফাঁসি দেবে এই জালিম সরকার।
শিকের ভেতর থেকে সবাই উনাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, উনিও সবাইকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। উপস্থিত কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করায় উনারা গেট খুলতে রাজি হলেন। আব্বু আঙ্গিনায় এসে আমাদের মাঝখানে একটি সাদা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলেন। প্রথমেই তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সবার খোঁজ খবর নিলেন। এরপরই তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, “আমাকে জেল সুপার রিভিউ খারিজ সংক্রান্ত রায় পড়ে শুনানোর পর জানতে চান আমি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ও প্রাণ ভিক্ষা চাইবো কিনা। আমি তাদেরকে বলেছি আমি কোন অন্যায় করিনি, ক্ষমা চাওয়ার অর্থই হল দোষ স্বীকার করে নেয়া, সুতরাং ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর জীবন-মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তাই মানুষের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ঈমান হারা হতে চাই না।”
আজ বিকেলে (১০ মে, ২০১৫) ডিআইজি প্রিজন এসে আমি যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাই না তা লিখিতভাবে দিতে বলেন। আমি স্পষ্ট ভাষায় লিখে দেই যে আমি ক্ষমাও চাইবো না, প্রাণভিক্ষাও চাইবো না।”
এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আব্বু সবাইকে সবর করার ও শক্ত থাকার নসিহত করছিলেন। উনার চোখে আমি কোন পানি দেখিনি। আবার উনাকে আবেগহীন রুক্ষও মনে হয়নি। মনে হচ্ছিল যেন এক প্রশান্ত আত্মা অপেক্ষা করছেন তার মহান রবের সাথে সাক্ষাতের জন্য। এরপর আম্মু ছাড়া আমরা সবাই আঙ্গিনা থেকে বের হয়ে আসি যাতে আব্বু আম্মুর সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে পারেন।
আম্মু আব্বুকে সাহস যোগাচ্ছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শক্ত থাকার ব্যাপারে আর আল্লাহর কাছে শাহাদাতের উচ্চ মর্যাদার কথা বলছিলেন। আম্মু আরও বলেন আমরা আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দেব তুমি সৎ ও নেককার বান্দাহ ছিলে। তুমি কোন অন্যায় করোনি।
অন্যদিকে আব্বু আম্মুকে বলেন আজ থেকে তুমি ওদের বাবা ও মা দুটোই। তোমার মাঝে যেন ওরা আমাকে দেখতে পায়। আর তুমিও আমাদের সন্তানদের মাঝে আমাকে খুঁজে পাবে।
এরপর আমরা ভাইবোনেরা আবার ভেতরে যাই। আব্বু আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ভাইবোনেরা মিলেমিশে থাকবে, আল্লাহ ও রাসূলের (সা:) পথে চলবে, মায়ের খেদমত করবে। তোমরা তোমাদের মায়ের মাঝেই আমাকে খুঁজে পাবে। আর তোমাদের আম্মা যেন তোমাদের মাঝে আমাকে খুঁজে পায়। তোমরা তোমাদের আব্বুকে যেভাবে দেখেছো সেটাই মানুষকে বলবে, আমার ব্যাপারে বাড়তি কথা বলা থেকে বিরত থাকবে। আমরা বয়স এখন ৭৫ বছর, আমার সহকর্মীদের অনেকেই আমার মত লম্বা হায়াত লাভ করে নাই, তোমরা তোমাদের বাবাকে দীর্ঘদিন পেয়েছ, হায়াত মাউত আল্লাহর হাতে, আমার মৃত্যু যদি আল্লাহ আজকে রাতেই লিখে রেখে থাকেন তাহলে বাসায় থাকলেও মৃত্যু হত। সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবে আর শুকরিয়া আদায় করবে”।
এরপর আমরা আমাদের সন্তানদেরকে আব্বুর কাছে নিয়ে বলি আব্বু দেখেন আপনার তিন নাতীর নাম আপনার নামের সাথে মিল রেখে রাখা। দোয়া করবেন যেন তারা আপনার মত হতে পারে। আব্বু বলেন, “দোয়া করি ওরা যেন আমার চেয়েও অনেক বড় হয়, নবীর সাহাবাদের মত হয়।”
তখন তিনি একটা ঘটনা বললেন। একজন বড় আলেম তার সন্তানকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি কি হতে চাও? সে বলল, আমি তোমার মত বড় আলেম হতে চাই। তখন আলেমটি কাঁদতে শুরু করল। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে আলেম বলেন, আমিতো হযরত আলী (রা:) এর মত হতে চেয়েছিলাম আর এখন দেখ হযরত আলী (রা:) আর আমার মধ্যে কত ব্যবধান। এখন তুমি যদি আমার মত হতে চাও তবে তুমি কতদূর যেতে পারবে ভেবে দেখ।”
“মোমেন (মেঝো ছেলে) তো আমার থেকেও বড় আলেম, আমি অনেক বিষয়ে তার কাছ থেকে রেফারেন্স নেই।”
আমরা বলি “আমরা তো আপনার জন্য কিছুই করতে করতে পারি নাই”। উনি বললেন, “ফয়সালার মালিক আল্লাহ, তোমরা তো শুধু চেষ্টাই করতে পার। আমার চেয়ে বয়সে ছোট অনেক সাথীই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তো আমাকে অনেক আগেই দুনিয়া থেকে নিয়ে যেতে পারতেন। কোন যুদ্ধ না করেও যদি আল্লাহ শহীদী মর্যাদা দিতে চান সেটাতো পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
এরপর আব্বু ভিন্ন প্রসংগে যান। বিশেষ করে যারা তার জন্য, অন্যান্য নেতৃবৃন্দের জন্য সর্বোপরি ইসলামী আন্দোলনের জন্য কষ্ট করছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও সালাম জানাতে বলেন। সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন যেন আল্লাহ তায়ালা তার শাহাদাত কবুল করেন।
তখন আম্মু বলেন, আল্লাহ তোমাকে দুনিয়াতেও সম্মানিত করেছেন, আখেরাতেও সম্মানিত করবেন ইনশাআল্লাাহ। আব্বু তখন বলেন, আমি সামান্য অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে। আল্লাহর রহমতে আমার জন্য গোটা দুনিয়া ও বড় বড় আলেমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, দোয়া করেছেন। আমার মুক্তির ব্যাপারে ওআইসিতে আলোচনা হবে দেখে শেখ হাসিনা ওআইসি সম্মেলনে যায়নি, এগুলোতো পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।
আমরা আব্বুকে বলি, আমাদের জন্য কাল কেয়ামতের দিনে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন, যেন আমরা জান্নাতে যেতে পারি। আব্বু বলেন, “তোমরা জান্নাতে যাওয়ার মত আমল কর, তাহলে ইনশাআল্লাহ জান্নাতে যেতে পারবে।”
এরপর আব্বু আমাদের অনুরোধে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করেন। প্রায় ঘন্টাখানেক এই মোনাজাত পর্ব স্থায়ী হয়। আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করার পর প্রথমে প্রায় ২০ মিনিট, রাসূল (সা:) এর শিখিয়ে দেয়া মাসনুন দুআ গুলি, যেগুলি আব্বুকে সারা জীবন করতে দেখেছি সেগুলি পাঠ করেন।
অতঃপর তিনি বলেন, “হে আল্লাহ আমি তোমার এক নগণ্য গুনাহগার বান্দাহ, তুমি আমাকে যতটুকু তোমার দ্বীনের খেদমত করার তাওফিক দিয়েছো তা মেহেরবানি করে কবুল করে নাও। আমাকে ইসলাম ও ঈমানের উপর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টিকে থাকার তাওফিক দাও আর শাহাদাতের মৃত্যু দান কর। হে আল্লাহ তুমি আমাকে আর আমার বংশধরদেরকে নামায কায়েমকারী বানাও আর আমাকে আমার পিতামাতাকে আর সকল মুমিনদেরকে কাল কিয়ামতের দিনে ক্ষমা কর।
হে আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমান দান কর, তোমার উপর সত্যিকারের ভরসা করার তাওফিক দান কর। আমাদের জিহবাকে তোমার সার্বক্ষণিক জিকিরকারী বানাও। আমরা তোমার কাছে, তোমার ভয়ে ভীত অন্তর, উপকারী জ্ঞান, হালাল প্রশস্ত রিজিক, সুস্থ বুদ্ধি ও দ্বীনের সঠিক বুঝ ভিক্ষা চাচ্ছি। হে আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যুর পূর্বে তওবা করার তাওফিক দাও, মৃত্যুর সময় আরাম দান কর, মৃত্যুর পরে তোমার ক্ষমা লাভ করার তাওফিক দাও ও দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর।
হে আল্লাহ তোমার হালালকৃত জিনিসের মাধ্যমে হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দাও, তোমার আনুগত্যের মাধ্যমে তোমার নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দাও আর আমাদেরকে তুমি ছাড়া কারও মুখাপেক্ষী করো না। আল্লাহ তোমার নূর দিয়ে আমাদেরকে হেদায়াত দান কর। আমাদের সকল গুনাহ খাতা তোমার সামনে পরিষ্কার, তোমার কাছেই ক্ষমা চাচ্ছি ও তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করছি। ইয়া হান্নান ইয়া মান্নান।”
তিনি আরও দোয়া করেন, “হে আল্লাহ তুমি এই দেশকে তোমার দ্বীনের জন্য কবুল করে নাও, এই দেশের জন্য শান্তির ফয়সালা করে দাও। এ দেশকে গুম, খুন, রাহাজানি ও আধিপত্যবাদীদের হাত থেকে রক্ষা কর”। তিনি দেশ ও দেশবাসীর সুখ সমৃদ্ধির জন্যও দোয়া করেন। এই আবেগঘন মোনাজাতের সময় আমার মেয়ে কয়েকজন জেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চোখে পানি দেখেছেন বলে পরে আমাকে জানায়।
মোনাজাত শেষে আব্বু মোমেনকে জিজ্ঞাস করেন, তিনি ফাঁসির মঞ্চে লুঙ্গি পরে না পাঞ্জাবি-পাজামা পরে যাবেন? মোমেন বলে, পাঞ্জাবি-পাজামা পরে যাবেন।
ব্যক্তিজীবনে একজন চিকিৎসক হওয়ায় আমাকে এর আগে বহু মৃত্যু দেখতে হয়েছে। বহু লোককে দেখেছি রোগে শোকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে। আমি দেখেছি তাদের চেহারায় মৃত্যুর ছায়া, কিংবা একটি মুহূর্ত বেশি বেঁচে থাকার আকুতি। কিন্তু আব্বুকে শেষ সাক্ষাতে দেখতে গিয়ে আমি জীবনে প্রথম দেখলাম নির্ভীক একজন জান্নাতী মেহমানকে, তাঁর মহান রবের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে। আব্বুর কাছে সুযোগ ছিল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে কালক্ষেপণ করার। মৃত্যুর সময় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তা আমরা সবাই জানি। আজ দেখলাম অন্তরে সেই বিশ্বাসকে ধারণ করে কিভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়।
আব্বুর সাথে যারাই মিশেছেন তারাই সাক্ষী দিবেন আব্বু খুবই নরম মনের মানুষ ছিলেন। উনার কাছের ও দূরের সব মানুষের খুঁটিনাটি বিষয়েও খোঁজ খবর রাখতেন। কারও কিছু হলে পেরেশান হয়ে বারবার খবর নিতেন। যেটা সবার প্রতি তার মমতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আমাদের পারিবারিক সাক্ষাৎগুলোতে তিনি প্রায়ই নিজের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলতেন, আমার মন বেশি নরম, আমি কি শেষ পর্যন্ত শক্ত থাকতে পারব? এরকম একজন মানুষের নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে সমস্ত জাগতিক মায়া মমতা ও আবেগের ঊর্ধে উঠে শান্ত ও ধীরস্থিরভাবে কথা বলা সত্যিই বিস্ময়কর।
সাক্ষাতের শেষ পর্যায়ে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন সাঁথিয়ায় দাফন করতে কে কে যাবে? আমি বললাম আমি আর মোমেন যাব। তিনি তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে সাবধানে যেতে বললেন আর মিঠু ভাইকে সাথে রাখতে বললেন। আম্মাকে রাতে সাঁথিয়া যেতে মানা করলেন। মোমেনকে জানাযার নামাযের ইমামতি করতে বললেন। মোমেন প্যান্ট শার্ট পরে ছিল, তিনি বললেন পাঞ্জাবি পরে জানাযা পড়াতে।
আব্বুর শেষ নসিহত-
তিনি সবাইকে কুরআন-হাদীস মেনে চলার ও আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা:) পথে চলার উপদেশ দেন। যে কোন পরিস্থিতিতে সবর করার ও আল্লাহর উপর রাজি খুশি থাকতে বলেন। আমার পরিষ্কার খেয়াল নেই উনি এই সাক্ষাতে নামাযের ব্যাপারে আলাদাভাবে বলেছেন কিনা তবে আগের প্রায় প্রতিটি সাক্ষাতে তিনি নামাযের ব্যাপারে বিশেষ তাগাদা দিতেন।
এরপর উনি বলেন আমার অসিয়তগুলো তোমরা আমার লেখা বইগুলোতে পাবে। বিশেষ করে জেলে বসে লেখা দুটি বই- কুরআন হাদীসের আলোকে রাসূল মুহাম্মদ (সা:) ও আদাবে জিন্দেগী এবং আগে লেখা বই কুরআনের আলোকে মুমিনের জীবন’ প্রভৃতি বইগুলো পড়তে বলেন।
সবশেষে আমার সবচেয়ে বড়বোন মহসিনা আপাকে বললেন, “আম্মু আমি তোমাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত, তুমি আমার মা, আমার সবচেয়ে বড় সন্তান, তোমার মুখেই প্রথম আমি আব্বু ডাক শুনেছি। তুমি শান্ত থেক।” আম্মুকে বললেন, “আমার সোনার টুকরা ৬ ছেলে-মেয়েকে রেখে গেলাম তুমি এদের মাঝেই আমাকে খুঁজে পাবে। তোমরা যাও, আমি তোমাদের যাওয়া দেখি।”
আমরা একে একে হাত মিলিয়ে আমাদের জান্নাতী বাবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ছোট্ট বিড়ালটিও আমাদের পিছু নিল। শেষ সময়ের দেখা আব্বুর উজ্জ্বল চেহারাটি সারাটি পথ চোখে ভাসছিল। কোথায় যেন শুনেছিলাম some birds are not meant to be caged, their feathers are just too bright.
জেল থেকে বের হয়ে রওয়ানা হলাম সাঁথিয়ার উদ্দেশ্যে, জীবিত বাবাকে রেখে চললাম তার দাফনের প্রস্তুতি নিতে। রাসূল (সা:) এর সেই হাদীসটি তখন বারবার মনে পড়ছিল, যখন তোমরা কোন বিপদ মুসিবতে পড়বে তখন স্মরণ কর সবচেয়ে বড় মুসিবতের কথা। সেটা হবে আমাকে হারানোর মুসিবত। (ইবনে মাজাহ)। এই উম্মত রাসূল (সা:) কে হারানোর কষ্ট সহ্য করেছে। এই উম্মত সবই সহ্য করতে পারবে। রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া সাব্বিত আকদামানা ওয়ানসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।
(# লেখক: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মেঝো ছেলে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন