ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ও কারা জীবনের সেই দিনগুলো --------- ----- ডা: মো:ফখরুদ্দিন মানিক

২০১৩ সালের ৪ডিসেম্বর। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ২বার রিমান্ডের জন্য ঢাকা কারাগার থেকে এসে অনেকটা স্থায়ী বসবাসের মত কাশিমপুর ২নং কারাগারে আছি। বিগত সাড়ে ৫ মাসে এখানে অনেক পুরাতন এবং পরিচিত। আমাদের ভাইদের মধ্যে জুন মাসে একেবারে কমতে কমতে ৪/৫ জন থেকে গত কিছুদিনের আন্দোলনের কারনে এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় ৫০/৫৫ জনের মত। মুরব্বীদের মধ্যে মীর কশেম ভাই, কামারুজ্জামান ভাই, এ টি এম আজহার ভাই, আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই। একসময় ছাত্রদের অনেক দায়ীত্ত্বশীল থাকলেও এখন কেবল মাত্র ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দ্বিতীয়বারের মত গ্রেপ্তার হয়ে এখানে আছে।
মীর কাশেম ভাই, আজাহার ভাই ডিভিশনে, উনাদের সাথে আছেন দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, তারেক জিয়ার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই ট্রাইবুনালের যাবজ্জীবন সাজার পর ডিভিশন থেকে ৬০ সেল পূর্ব এ আছেন। কামরুজ্জামান ভাই ট্রাইবুনাল থেকে মৃত্যুদন্ডের সাজার পর ৪০সেল এ [ফাঁসির] আছেন। আমি, কিবরিয়া মেডিকেলে আর আমাদের বাকি ভাইয়েরা ৪,৫,৬ নং বিল্ডিং এ ভাগ করে আছেন।অসুসস্থতা এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারনে মেডিকেলে থাকা, যদিও প্রথম আমাদের ভাইদের সাথে ৬নং বিল্ডিং এ উঠার পর পরের দিন সকালেই জেলার শুভাষ শাস্তি হিসেবে ৪০ সেল পূর্বতে আমাকে স্থানান্তর করে।
প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে যখন জানলাম ঐখানে মোল্লা ভাই এবং শামীম সাঈদি ভাই আছেন তখন খুশি হলাম। কিন্তু তখনও জানা ছিলনা এখানে কষ্টের ধরন কেমন। ঐ সেলটা মুলত পানিশমেন্ট সেল। জে এম বি এবং হিজবুত তাহরীর লোকদের রাখা হয়। সারাদিনে মাত্র ৩ ঘন্টার জন্য সেলের দরজা খুলে দেয়া হয় বারান্দায় হাটার জন্য। সকালে ১ ঘন্টা ১১টায়, বিকালে ২ ঘন্টা ৩টায়। প্রতি সেলে ৩ জন। কাদের মোল্লা ভাই ,শামীম সাঈদী ভাই এবং হলমার্ক কেলেংকারীর আসামী সোনালী ব্যাংকের ডি জি এম আজিজ ভাই আলাদা আলাদা এক রুমে থাকতেন।
পরবর্তীতে সংগঠনের সিদ্ধান্তে আমি মেডিকেলে চলে আসি যেখান থেকে সব দিকের খোজ খবর রাখা সহজ হতো। কারন মেডিকেল ছিল বিশাল কারাগারের মাঝখানের দিকে।
মুলকথায় আসি-
৬০ সেল পশ্চিমে থাকা কয়েকজন পরিচিত ভাই দুপরে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। কারাগারের অনেক জায়গাতে দায়ীত্বরত কারারক্ষীদের অনুমতি সাপেক্ষে যাওয়া যায়। কিছু জায়গাতে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য এমনিতে যাওয়া যায়। তবে ফাঁসির সেল এবং ৬০ সেল পূর্ব, পশ্চিমে যেতে হলে সুবেদারের অনুমতি নিতে হয়। যদি ও সবসময় সুবেদার এ অনুমতি দেন না। ডেপুটি জেলার, জেলারের অনুমতি লাগে। যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমি ৬০ সেল পশ্চিমে এসে দুপুরে খাবারের পর গল্প করছি। প্রায় ২ টার দিকে নিচ থেকে ডাঃ মানিক ভাই বলে বেশ কয়েকজনের একসাথে ডাকার শব্দ পেলাম।ডাঃ মানিক ভাই এবং শিবিরের মানিক ভাই নামে ততদিনে কারাগারের সবার কাছে পরিচিত হয়ে গিয়েছি। আমি ছিলাম ৩ তালার একটি রুমে। নিচে চিৎকারে সব রুম থেকে লোক বারান্দায় বের হয়ে আসলো। আমিও শব্দ শুনে বারান্দায় বের হয়ে এসে দেখি গেইটের সামনে সুবেদার, সি আই ডি জমাদার, লোকাল জমাদার, ২/৩ জন কারারক্ষী সহ বিশাল বাহিনী। প্রথমে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম এজন্য যে জেলার, সুপারের কাছে কেউ রিপোর্ট করলো কিনা? কারাগার এমন জায়গা যেখানে বছরে পর বছর সব সুবিদা দিয়ে থাকলেও মুহূর্তেই পল্টি। তখন কেউ ফিরেও দেখেনা। সব প্যকেট করে চালান। শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ভি আই পি আসামীদের ক্ষেত্রে প্রায় এরকম ঘটে। আমিও প্রথম একটু আতংকিত হলাম, না জানি কোন ভুল হল কিনা? একেবারে কিছু না বললেও এভাবে বের করে নেয়াটা আমাদের জন্য অসম্মানের। ততদিনে পুরো কারাগারে আমাদের সম্পর্কে ভাল একটা পরিচিতি এবং সুনাম তৈরী হয়েছে। যদিও আত্মবিশ্বাস ছিল সেরকম কোন ভুল করিনি কিন্তু কারাগার বলে কথা!উনাদের সাথে আরো দাঁড়ানো গিয়াস উদ্দিন মামুন ভাই এবং আহাসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা মামলার আসামী পাপ্পু ভাই।
আমাকে বের হতে দেখে মামুন ভাই জোরে ডাক দিয়ে বলল, "মানিক ভাই দ্রুত নেমে আসেন” প্রাথমিক ভাবে বুজতে পারলাম কোন রিপোর্ট হয়নি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় হবে। তখনো বুজতে পারিনি এর চাইতে বিষ্ময়কর এবং কষ্টকর সংবাদ অপেক্ষা করছে। একটু কাছাকছি আসতে সুবেদার বলল, মানিক ভাই মোল্লা স্যারের চালান আসছে, উনাকে ঢাকা পাঠাতে হবে দ্রুত উনাকে রেডি করে দেন।“ কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার কাছে মনে হল বজ্রপাত হয়েছে, পা চলতে চাচ্ছিল না। সাথে সাথে ইন্নালিল্লাহ পড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। মামুন ভাই এবং পাপ্পু ভাই আমাকে ধরে বলল, "মানিক ভাই দেরী করা যাবেনা আপনি যান উনার সব গুছিয়ে দেন আমরা একটু পরে আসছি”
আপীল বিভাগে উনার মৃত্যুদন্ডের রায় হয়েছে অনেক আগে। এখন আলোচনা চলছে উনার রিভিউ হবে কি হবেনা তা নিয়ে। এদিকে ১৮ দলের কর্মসূচীও পালন হচ্ছে জোরালোভাবে। সে থেকে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়ে ছিল সরকার পতনের। মনে হয়েছিল সরকার হয়তো বিরোধীদলের আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকবে এসবে মনযোগ দিবেনা। কিন্তু হঠাৎ আজকে মোল্লা ভাইয়ের চালানের কথা শুনে হতচকিত হয়ে গেলাম। মনে হল সরকার আন্দোলন কে মোকাবেলা করতে না পেরে আমাদের কে দুর্বল করে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক জিগাংসা বাস্তবায়নের চুড়ান্ত সীদ্ধান্ত নিবে। এসব চিন্তা করতে করতে কারারক্ষীদের ছাড়িয়ে দ্রুত ৬০ সেল পূর্বে এসে পৌছলাম। আমার কানে এখন কোন কথা যাচ্ছেনা।
২য় তালায় মোল্লা ভাইয়ের রুমে সামনে এসে উনাকে সালাম দিতেই উনি বললেন ‘মানিক আসছ, আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবে” কথা বলছেন আর নিজের জিনিস গুলো ঘুচাচ্ছেন। সাথে অন্য রুমের কয়েকজন ভাই, আমি কোন কথা না বলে উনার ব্যাগ গুছানোতে হাত লাগালাম। অনেক জিনিস পত্র, সব কিছুই বাসার মত করে সাজানো। উনার একজন সেবক থাকলেও অধিকাংশ কাজ নিজেই করতেন। উনার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। দুনিয়ার তাবৎ বিষয়ে মোল্লা ভাইয়ের আগ্রহ আছে জানা শোনাও আছে। উনার সেবক দুলালসহ জিনিসগুলো উনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ভ্যানে রাখছি। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যে আমি উনার সেবক এবং ঐখানে থাকা কিছু ভাইয়ের সহযোগিতায় সব কিছু গুছিয়ে দিলাম। সর্বশেষ উনি অজু করে কয়েদি কাপড় পড়ে রেডি হলেন। আমরা মন খারাপ করে থাকলেও উনি স্বাভাবিক ভাবে রেডি হচ্ছেন, কথা বলছেন। অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সেখানে থাকা ভাইদের এবং সেবকের মাধ্যমে অন্যকে দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। সাথে থাকা খেজুর ও অন্যন্য খাবার সবাইকে দিচ্ছেন।
কারাগারে উনি নিয়মিত সোমবার এবং বৃহস্প্রতিবার রোজা রাখতেন আজকেও রোজা রেখেছেন। একটা বক্সে আলাদা করে কিছু খেজুর, পানি, সামান্য খাবার আলাদা করে রেখে দিলাম। ভ্যান করে উনার মালামাল গুলো গেইটে পাঠিয়ে দেয়া হল।
উনার বিদায় নেয়ার পালা। এখানে থাকা জে এম বি এবং হিজবুত তাহরির ছেলেরা উনাকে মোল্লা আংকেল বলে ডাকত। মোল্লা ভাইও তাদের কে ভালবাসতেন। সবাই যখন কোলাকুলি করে বিদায় দিচ্ছে সেই পরিবেশটি ক্রমান্নয়ে ভারী হয়ে উঠল। সবার চোখে পানি ,গলা ধরা, কিন্ত মোল্লা ভাই স্বাভাবিক। সবাইকে সান্তনা দিচ্ছেন আর বলছেন ‘দোয়া কর আল্লাহ যেন আমার শাহাদাৎ নসিব করে এবং শাহাদাত কবুল করে’। এখানে দায়ীত্ত্বে থাকা কারারক্ষীরাও হাত ধরে দোয়া চাইলেন কোন অপরাধ করলে মাফ করে দিতে বললেন। মোল্লা ভাই হাসি মুখে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। অনেক্ষন আগেই মামুন ভাই,পাপ্পু ভাই আরো কয়েকজন ভাই এসেছেন। এখান থেকে বের হয়ে আমরা ডিভিশনের দিকে গেলাম। গেইটের সামনে পৌছতে মীর কাশেম ভাই নেমে আসলেন। হরতালের কারনে আজহার ভাই এবং মাহমুদুর রহমান সাহেবকে আগেই ঢাকা কারাগারে নিয়ে গিয়েছে। মীর কাশেম ভাই হেঁটে আসছেন উনার পরিচিত ভংগিতে। মুখে দোয়া পড়ছেন,এক হাত দিয়ে মোল্লা ভাইয়ের হাত ধরলেন আরেক হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উপরের দিকে তুলে বললেন,” আল্লাহু আকবর, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন, আল্লাহ মজলুমদের পক্ষে আছেন। আমাদের দোয়া থাকলো সত্যের বিজয় হবে”। এক শাহাদাত পথযাত্রী আরেক পথযাত্রীকে যখন জড়িয়ে ধরলো পরিবেশ আবারো ভারী হয়ে উঠলো। ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা না থাকলেও প্রশাসনের তাগদা দেয়ার কারনে ছেড়ে দিলেন। হাত ধরা অবস্থায় মোল্লা ভাই মীর কাশেম ভাইকে বললেন, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম মোবারক রাত অর্থাৎ জুমার রাতে যেন আমার শাহাদাত হয়, আজকে বৃহস্পতিবার, আজকে রাত জুমার রাতই হবে”। মীর কাশেম ভাই সাথে সাথে একটু ধমকের স্বরে বললেন,”খবরদার এরকম কথা বলবেন না। আল্লাহর ফয়সালা আমাদের জন্য যথেস্ট”। মোল্লা ভাই খুব সুন্দর করে হাসলেন। অনেক নির্মল এবং পবিত্র হাসি। মোল্লা ভাইয়ের চেহারা মনে করলে ঠিক এ চেহারাটি সব সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। মির কাশেম ভাই থেকে বিদায় নিয়ে গেইটের উদ্দেশ্যে বের হলাম। ততক্ষনে রাস্তায় অনেক লোক। আমাদের ভাইয়েরা এবং পরিচিত অনেকে। পথে যারা সু্যোগ পেয়েছে হাত মিলিয়েছে, অনেকের চোখ টলমল, আমি তখনো স্বাভাবিক থাকার চেস্টা করে যাচ্ছি। কারাগারের সবচাইতে খারাপ অফিসারটিও এসে মোল্লা ভাইয়ের হাত ধরে বললেন,” স্যার আমাদের জন্য দোয়া করবেন, কোন বেয়াদবী করলে মাফ করে দিয়েন” মোল্লা ভাই বললেন তোমাদের সবার জন্য আমার দোয়া আছে, কারো ব্যাপারে আমার কোন অভিযোগ নাই, তোমরা আমাকে অনেক সম্মান করেছ।
হাটতে হাটতে আমরা গেইট পর্যন্ত চলে আসলাম। এবার বিদায় দেয়ার পালা। এখানে থাকা সবার সাথে হ্যান্ডশেক কোলাকুলি করলেন। সবার শেষে আমি ,আমাকে ধরে কপালে চুমু খেলেন ,আমি উনার হাতে এবং কপালে চুমু খেলাম। নিজেকে আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি, কান্না জড়িত কন্ঠে দোয়া চাইলাম, এত বড় মানুষকে আমি কি বলব। মোল্লা ভাই বললেন, “দোয়া কর, আর দেখা নাও হতে পারে”। খুব জোর করে উনাকে চেপে ধরলাম, আমার পিঠে হাত দিয়ে সান্তনা দিলেন। একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছেড়ে দিলাম। সবাইকে হাত নেড়ে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলেন। অজানা আশংকা নিয়ে যখন আস্তে আস্তে ওয়ার্ডের দিকে ফিরছি তখন সবার চোখে পানি, মামুন ভাই, পাপ্পু ভাই, কেপ্টেন রেজা ভাই, আইয়্যুব ভাই, কিবরিয়া,সানজিবসহ আরো অনেকে।
মামুন ভাই বলছেন, আমার দেখা রাজনিতীবিদদের মধ্যে একজন সাধারন মানুষ জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন