ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬

জননেতা মকবুল আহমাদ প্রসঙ্গ: মতিউর রহমান আকন্দ: [দুই]

১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ দৈনিক সংগ্রামের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। কক্সবাজারের চিংড়ির উপরে তার প্রতিবেদন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি লিখেছিলেন বাংলাদেশের Black Gold, সৌদী Liquid Gold-কে ছাড়িয়ে যাবে। চিংড়ি পৃথিবীর বাজারে সুনাম অর্জন করেছিল।
 
যেভাবে সংগঠনে এলেন : ফেনীতে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ফেনীর সুপরিচিত আলেম জনাব আব্দুস সাত্তার সাহেব জনাব মকবুল আহমদকে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত দেন। প্রথম প্রথম তিনি এ দাওয়াতের গুরুত্ব দেননি। বরং মন্তব্য করতেন ‘আমরা রাজনীতি করি না’। কিন্তু এক পর্যায়ে জনাব মকবুল আহমদ দাওয়াতে সাড়া দেন। সে দাওয়াত পেয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনে শরীক হন। জীবনের অনেক ধাপ অতিক্রম করে তিনি আজ বাংলাদেশের সর্ববহৎ ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীর। ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কারণে তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে জনাব আব্দুস সাত্তারের জন্য দোয়া করেন। মাঝে মাঝে তার জন্য বইসহ বিভিন্ন উপহার পাঠান।
 
আল্লাহর সন্তুষ্টি জীবনের লক্ষ্য : জনাব মকবুল আহমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ লক্ষ্যে তিনি তার জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আলোচনা সভায় তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন কেন্দ্রীভূত করার বিষয়কে সামনে রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। তিনি স্কুল জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেনঃ
 
“স্কুল জীবনে আমার আর একটা সুন্দর ঘটনা মনে পড়ে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম প্রায়ই একটা রচনা আসত ‘তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি (Your aim in life)।’ কেউ কেউ লিখত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী ইত্যাদি হবো। আমরাও লিখেছি, নাম্বার পেয়েছি, আবার শিক্ষকতার জীবনে ছাত্ররা লিখেছে আমরা নাম্বারও দিয়েছি। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর, ‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’। এ আয়াতের তরজমা মর্মার্থ জানার পর জীবনের ধারণা, উদ্দেশ্য সব বদলে গেল। অনেক জায়গায় আলোচনায় এটা বলার চেষ্টা করি আমার জীবনের উদ্দেশ্য কখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী প্রভাবশালী নেতা হওয়া উল্লেখ করার মত বিষয় হতে পারে না। বড় জোর জীবনে কি প্রফেশন Choice করবো তার জন্য এটা বলা যায়।
 
সত্যিকার মানুষের জীবনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত যা আমাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক মহান আল্লাহ তার কোরআনে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য কি হওয়া উচিত তা বলে দিয়েছেন।
‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা আন’আম-১৬২) অর্থাৎ- আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য।
 
যখনই যেখানে কথা বলেছি, তখনই এ Reference এনেছি সবাই অনুভব করেছে এটাইতো আসলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আমি জীবনে যত কাজ করব সবই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করবো। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্ব দান করেছেন, আমাকে প্রতিপালন করেছেন, সুখ শান্তি জীবনোপকরণ দিয়েছেন- তাকেই সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রেখে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই আমাদের সকল কল্যাণ নিহিত।
 
বর্তমানে আমরা যা দেখছি, যত জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় অবিচার, মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট, মানুষ নিজ প্রতিপালককে না জানা, না মানা, তার নির্দেশিত পথে না চলার কারণেই হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এ কারণেই এ অধপতন হচ্ছে তাও জানে না। লেখাপড়ায় টেকনোলজি জানা, জীবনের সুখ-সুবিধা বেশী পাওয়ার পদ্ধতিই প্রধান। কিন্তু তার স্রষ্টাকে জানার কোন চেষ্টা নেই।”
সাংগঠনিক জীবন : সরিষাদী স্কুলে শিক্ষকতাকালে তিনি ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় হন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটা পছন্দ করতেন না। এ সময় সাংগঠনিক প্রয়োজনে মহকুমা শহর ফেনীতে তিনি চলে যান। ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে তিনি শহরে স্থানান্তরীত হন। এভাবে তার নতুন জীবন শুরু হয়।
 
তিনি তার সাংগঠনিক জীবনে ছোট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের ইউনিট, থানা, মহকুমা ও শহর ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা, বিভাগ, কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক জীবনে মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে অধ্যাপক গোলাম আযম, মরহুম আব্বাস আলী খান, মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা আব্দুর রহীম, প্রফেসর ওসমান রমজ, জনাব আবদুল খালেক (আখাউড়া) মাওলানা আবদুল জাব্বার (কিশোরগঞ্জ), সাবেক এমপি জনাব মাস্টার সফিকুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ আলীর মত প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী লোকদের সাহচার্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
 
ফেনী মহকুমায় দায়িত্ব পালনের সময় কোন কোন দিন সকালে পান্তা ভাত খেয়ে দাওয়াতী বই ব্যাগে নিয়ে ফেনী থেকে সোনাগাজী ১৪/১৫ মাইল কর্দমাক্ত রাস্তা পায়ে হেটে সফর করেন। দীর্ঘ পথ হেটে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় রেস্ট নিয়ে পরদিন সাংগঠনিক কাজ শুরু করতেন। সফরে ২/১ দিন কাটিয়ে আবার ফেনী শহরে ফিরে আসতেন। তখন ফেনী সোনাগাজী রোড আকাবাকা ছিল এবং পাকা না হওয়ায় রাস্তায় খুব কাদা হতো। চলাচল খুবই কষ্টকর ছিল। সকল কষ্ট হজম করে আল্লাহর দ্বীনের কাজ করতেন তিনি এবং এখনও করে যাচ্ছেন।
 
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও জনাব মকবুল আহমদ : ১৯৭০-এ নির্বাচনে জানব মকবুল আহমদকে প্রাদেশিক পরিষদের এম.পি.এ (Member of the Provincial Assembly) প্রার্থী করা হয়। তিনি স্কুলে শিক্ষকতা ইস্তেফা দিয়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত হন।
 
সে সময় প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফাজিলপুরের একজন Advocate। জাতীয় পরিষদের জামায়াত প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি একেএম বাকের সাহেব। (Justice A.K.M Baqer) আওয়ামী লীগের ছিলেন জনাব খাজা আহমদ। নির্বাচন খুব জমজমাট হয়। ঐ সময় জামায়াতের মিছিল হতো ২/৩ মাইল পর্যন্ত লম্বা। ২/১ বার জামায়াতের মিছিল বিরোধীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াতের Agent-কে কেন্দ্রে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও প্রশাসন কোন প্রতিকার করেনি। 
বাংলাদেশ আমলে সংসদ নির্বাচনের সময় একটি ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য। একবার জনাব মকবুল আহমাদের সাথে নির্বাচনে জয়নাল হাজারীর সাথে Contest হয়। নমিনেশন Submit এর দিন D.C. অফিসে হাজারীর সঙ্গে তার দেখা হয়। জনাব হাজারী হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে বললেন, মকবুল সাহেব আপনি একজন নীতিবান, ভাল লোক, আপনার সাথে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হবে সত্যি আমি খুব খুশী। উত্তরে জনাব মকবুল আহমাদ বললেন, ‘দোয়া করবেন’।
 
নির্বাচনে হাজারী বাহিনী প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জালিয়াতি করে ভোট ছিনতাই করেছে। এ অবস্থা দেখে জামায়াতের কয়েকজন কর্মী বলে ‘হাজারী তো সব কেন্দ্র দখল করে নিয়ে যাচ্ছে’। অলাতলী বাজার  (ফেনী থানার রাজাপুর ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্র) জামায়াতের প্রভাব একটু বেশী। জামায়াতের লোকেরা সকাল সকাল ভোট দিয়ে দিয়েছে তখন কেন্দ্র একেবারে খালি। কর্মীরা বলল আমরা চিন্তা করেছি দরজা বন্ধ করে সীল মারব। জনাব মকবুল আহমাদ এটা শোনার পর বলেন, ‘এটা করা যাবে না। যদি তোমরা আমাকে এ ধরনের জাল ভোট দিয়ে এম.পি বানাও তবে আমি তো আসল এম.পি হবো না, হবো নকল এম.পি। তদুপরি তোমরা আমার কাছে ন্যায় অন্যায় অনেক দাবী নিয়ে আসবে। তখন আমি বলব এটা তো অন্যায় এটা তোমাদের চাহিদানুযায়ী দেয়া যাবে না।
 
তখন তোমরা আমার মুখের উপর বলবে, সেদিন দরজা বন্ধ করে সিল মেরে এম.পি বানালাম সেটা কোন ধরনের ন্যায় ছিল? আজ আমাদের কাজের সময় আপনি ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন উঠাচ্ছেন। তখন জবাব দেয়ার কিছু থাকবে না। এ কথা শুনে কর্মীরা চুপ হয়ে গেল।
 
আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। জনগণের সত্যিকার সমর্থন নিয়েই আমাদেরকে আসতে হবে। একজন কর্মী বলে উঠল (সে অবশ্য আমার ছাত্রও) স্যার আপনি যে সব কথা বলেন তাতে একশ বছরেও এম.পি হতে পারবেন না।’ জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, ‘এম.পি হলাম না তাতে কি হলো, আমরা যদি নির্বাচিত হই অনেক কাজ দায়-দায়িত্ব। নির্বাচিত না হলে আবার জনগণকে এ অন্যায় জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে বলতে পারব। আমরা মানুষকে ন্যায়ের পথে কার্যকর শক্তি হিসেবে সংগ্রামী রূপে তৈরি করতে পারব। এ পন্থায় যদি ৫০/১০০ বছর লাগে তবুও ভাল। আমরা মানুষের মনে ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার অনুভূতি সৃষ্টি করতে চাই। এটাই আমাদের সফলতা। এম.পি হওয়া না হওয়াই সফলতা, ব্যর্থতা নয়।’
 
জনাব মকবুল আহমাদ মনে করেন, সমাজ পরিবর্তনের জন্য একদল সৎ ও যোগ্য লোকের প্রয়োজন। ধৈর্যের সাথে সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত রাজনৈতিক স্রোতে গা ভাসিয়ে ধৈর্যচ্যুত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের মূল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।
 
১৯৭১ সালের পরিস্থিতি : ১৯৭০ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল থেকে প্রমাণিত হলো যে, কোন একটি রাজনৈতিক দলই সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের সমর্থন লাভ করবে না। আওয়ামী লীগ শুধু পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়, পশ্চিম পাকিস্তানে রাওয়ালপিন্ডি ছাড়া আর কোথাও আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দাঁড় করাতে সক্ষম হয়নি। গোটা পাকিস্তানের ৩০০ আসন বিশিষ্ট গণপরিষদের দেশের এ অংশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন আওয়ামী লীগ দখল করে। একটি আসনে জনাব নূরুল আমীন ও আরেকটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজা ত্রিদিব রায় জয় লাভ করেন।
 
ইয়াহইয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। এ সময় ভুট্টোর ভূমিকা দেশে এক সংকট সৃষ্টি করে। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে থাকেন এবং শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার দাবি জানাতে থাকেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ঐ বিবৃতিসমূহ তদানীন্তন সময়ের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ দাবি মেনে নিয়ে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটতো। কিন্তু তা না করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা হয়।
 
ইয়াহইয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। ভুট্টোর বিরোধিতার কারণে ৩ মার্চের অধিবেশন মূলতবির ঘোষণা দেন ইয়াহিয়া।
 
১ মার্চ রেডিওতে প্রচারের সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা মাঠে নেমে যায়। ফলে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ কার্যত তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা শেখ মজিবের হাতে চলে যায়। সাংবিধানিক পথে সমস্যা সমাধানের মাঝপথে থামিয়ে দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপারেশন শুরু হয়। সারাদেশে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন চলতে থাকে।
 
১৯৭১ সালের এ সংকটময় মুহূর্তে জনাব মকবুল আহমাদ ফেনীতে, বৃহত্তর নোয়াখালীতে সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালের ২৬  মার্চের পরই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করে। ঐ সময় তিনি নিজ বাড়িতে ছিলেন। তিনি এলাকার লোকজনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। একদিন আওয়ামী লীগের লোকেরা স্থানীয় পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুজু মিয়ার (আসল নাম সামছুল হক, মুসলিম লীগের লোক ছিলেন) বাড়িতে হামলা চালায়। অভিযোগ তার বাড়িতে গোপন রেডিও আছে, যা পাকিস্তানী খবর দেয়। হামলার পরে দেখা গেল সে বাড়িতে এরকম কিছুই নেই। তুজু মিয়ার কোন ছেলে ছিল না। ২/৩টি মেয়ে ছিল। তারা ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়। মিথ্যার উপর ভিত্তি করে এ ধরনের বহু হামলা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে।
 
অনেক আলেম, ওলামা ও মুসলিম লীগ নেতাকে বেশ অপমান ও অপদস্থ করা হয়েছে। সে সময় মার্চ মাসে এরকম অনেক হামলা ও লুটপাট হয়েছে।
 
ফেনীতে সুযোগ সন্ধানী সমাজ বিরোধীরা বিভিন্ন নামে লুটপাট, চুরি, ডাকাতি করেছে।  জামায়াতের তখন বেশি লোকজন ছিল না।  সংগঠনও ছিল খুব দুর্বল। সারাদেশে মাত্র একজন মাত্র এম.পি.এ ছিলেন। বগুড়ার মাওলানা আব্দুর রহমান ফকির। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও ছিলেন ২/১ জন।
 
১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ নিজ এলাকার বিপদগ্রস্ত লোকজনকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। কোন ধরনের অনৈতিক, বেআইনী ও মানুষের জন্য অকল্যাণকর কাজে তিনি জড়িত হননি। তার এলাকার কোন লোক এ কথা বলতে পারবে না যে, জনাব মকবুল আহমাদ কাউকে একটি কটু কথা বলেছেন। তার এলাকায় সর্বস্তরের সচেতন ও বিবেকবান জনগণ এ বিষয়ে সাক্ষী।
 
দক্ষ সংগঠক হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদ : জনাব মকবুল আহমাদ সংগঠনের ভিতরে ও বাইরে অর্থাৎ সর্বমহলে একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিত। সারা জীবন তিনি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াতী তৎপরতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের পাশাপাশি বই বিতরণে অভ্যস্ত। জনশক্তির মান উন্নয়ন, নেতৃত্ব তৈরি ও সাংগঠনিক অভ্যন্তরীণ কর্মকা- মজবুতের জন্য তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে সদা তৎপর ছিলেন।
 
রাজনৈতিক আন্দোলন : জনাব মকবুল আহমাদ বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।  ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের জন্য জনশক্তিকে মাঠে ময়দানে সুসংগঠিত করেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।  ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে যোগদান করেন।  তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের মহাসমাবেশে বেশ গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন।
 
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।  ২০০৯ সালে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে।  এ সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করার জন্য তিনি বিশ দলীয় জোটের বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দেন।  [চলবে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন