ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

প্রায় ৮০ বছরের একজন বয়োবৃদ্ধ জাতীয় নেতাকে পুলিশের রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক:অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদকে মতিঝিল থানার এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে তিনদিনের জন্য পুলিশের রিমান্ডে নেয়ার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ৩০ অক্টোবর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন;
“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদকে মিথ্যা মামলায় তিনদিনের জন্য পুলিশের রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার উদ্দেশ্যেই তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
তিনি ৯ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়ার পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। দেশবাসী অবগত আছেন তার বয়স প্রায় ৮০ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছেন। গ্রেফতারের পর তাকে আদালতে হাজির করা হলে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার জন্য আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তিনি রিমান্ডে মানসিক চাপের মুখে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। আজ তাকে আবারো ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তার উপর সরকার চরম জুলুম করেছে। দেশের একজন জাতীয় নেতার সাথে এ ধরনের আচরণ অত্যন্ত দু:খজনক।
আমরা সরকারকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলতে চাই, আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদের স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হলে সরকারকেই তার দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। রিমান্ড বাতিল করে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

সুজাতা থেকে সুষমা: কারো অাশা, কারো হতাশা


বাংলাদেশ বার্তাঃ ভারত বাংলাদেশকে তার বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র দাবি করলেও ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিন যেসব সমস্যা অমীমাংসিত পর্যায়ে রয়েছে, তা সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বের পরিচায়ক নয়। বাংলাদেশ ভারতের স্থলসীমানার চতুর্দিকে কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ। এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়ার অস্তিত্ব যুদ্ধে লিপ্ত শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিদ্যমান। যেমন- ইসরাইল ও ফিলিস্তিন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে এ সব নদীর পানির সমহিস্যার দাবিদার হলেও প্রায় প্রতিটি নদীর উৎসস্থল পরবর্তী যাত্রাপথে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফাভাবে পানি উত্তোলন করে চলেছে। গঙ্গা নদীর পানির ব্যাপারে চুক্তি হলেও চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেয়া হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানি চুক্তিটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরোধের অজুহাতে দীর্ঘকাল কালক্ষেপণের অভিলাসে থমকে আছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু প্রবেশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতিনিয়ত বাঁধার সম্মুখীন হলেও মাদক প্রবেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের বাধা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতি বছর যে সংখ্যক বাংলাদেশীর ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পৃথিবীর শত্রুভাবাপন্ন দেশের বিরোধপূর্ণ সীমানায় এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায় না।
ভারত সর্বদা তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল যেন দেশটির প্রতি অনুগত থাকে সে বিষয়ে সচেষ্ট। ভারতের এ নীতিটি তার প্রতিবেশী সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পাকিস্তানের সাথে চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে দেশটি যখনই ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন দেখা যায় চীন পাকিস্তানের স্বপক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে আসছে। চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেশটির প্রভাব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এ ধারা থেকে উপমহাদেশের দেশ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপও মুক্ত নয়। কিন্তু এসব দেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসারসহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের বৃদ্ধি ঘটুক ভারত এ বিষয়ে খুবই স্পর্শকাতর। ভারত উপমহাদেশের শক্তিধর অর্থনীতির দেশ হিসেবে তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে যে শর্তে সাহায্য সহযোগিতা করছে চীনের কাছ থেকে এ সব দেশ আরো অনেক শিথিল শর্তে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আশ্বস্ত হচ্ছে। আর এ কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের ব্যাপক বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিলেও ভারত এ ক্ষেত্রে তার সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে ভারতে কংগ্রেস দল ক্ষমতাসীন ছিল। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন সুজাতা সিং। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে থেকেই তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতায় আন্দোলন করে আসছিল। বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে জাতীয় পার্টিও এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রয়াস নয়। এ পর্যায়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিশেষ বিমানযোগে ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদের সাথে পৃথকভাবে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ হতে কোনো বক্তব্য দেয়া না হলেও জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদের বক্তব্যে জানা যায় সুজাতা সিং এরশাদের দল জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অন্যথায় দেশে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত মৌলবাদের উত্থান ঘটবে। এত কিছুর পরও জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনীহ ছিলেন। তাকে জোরপূর্বক অসুস্থ বানিয়ে সমন্বিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত রেখে তার স্ত্রীর নেতৃত্বে কিভাবে তার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল সে বিষয়ে এ দেশের সচেতন জনমানুষ সম্যক অবহিত।
৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনটি দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করায় সে নির্বাচনটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সে নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের বাংলাদেশে আগমন ঘটেনি; যদিও ভারত ও ভুটান থেকে দু’জন করে চারজন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অর্থায়নে নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সে নির্বাচনে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৬৫(২) এর আলোকে এ ধরনের নির্বাচনকে বৈধ বলা যায় কি-না সে প্রশ্নে বিতর্ক রয়েছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নেহায়াত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠান-পরবর্তী আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে তার ব্যক্ত অবস্থান থেকে সরে এসে বলতে শুরু করে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নির্ধারিত সময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯০ সালে পরবর্তী বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট তা হলো একটি সরকারের মেয়াদ অবসান পরবর্তী কোনো ধরনের সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। এ কথাটি অনস্বীকার্য যে একদা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে সে বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কিন্তু সে ব্যবস্থাটির বিলোপসাধনের মধ্য দিয়ে সে বিষয়ে পুনঃ অনৈক্য ও বিভেদের সূত্রপাত ঘটানো হয়।
ইতিহাসের নির্মম পরিহাস সুজাতা সিংয়ের মুখে বাংলাদেশে নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হলে এ দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটবেÑ কথাটি উচ্চারিত হওয়ার এক বছরের মাথায় ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি নামক যে দল ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাতে তাদের কূটকৌশলে এ দেশে তথাকথিত মৌলবাদের উত্থান ঠেকানো গেলেও ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদের উত্থান রোধ করা যায়নি।
সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ সালে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদে না থাকলেও দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিপক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে আসছে। দলটি ইতোপূর্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেও সম্প্রতি সহায়ক সরকারের কথা বলে আসছে। যদিও এ প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার পূর্বাবস্থান দলীয় সরকারের অধীন সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে যখন বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য বিরাজমান, এমন অবস্থায় ভারতের বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ পরামর্শ কমিশনের (জেসিসি) সভায় যোগদানের উদ্দেশে বিশেষ বিমানযোগে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদের সাথে পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়ে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নির্বাচনকালে সরকার বিষয়ে এবং কী প্রক্রিয়ায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন এটি নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণের।
ভারত যে প্রক্রিয়া ও কূটকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে দশম সংসদ নির্বাচনে তার অভিপ্রায় প্রতিফলনে সচেষ্ট ছিল ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রির এ সফরকালে ভারতের পক্ষ হতে অনুরূপ অভিপ্রায়ের প্রকাশ ঘটেনি। ভারত প্রকৃত অর্থেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কূটকৌশল ও অন্তরায় সৃষ্টি থেকে বিরত থাকলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে জনসমর্থনের দিক থেকে সর্বাগ্রে অবস্থানকারী দলটি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হবে। এ ধরনের বিজয় কারো আশার কারণ আবার কারো হতাশার কারণ। এ ধরনের আশা ও হতাশায় কোনো বিদেশী রাষ্ট্র ক্রীড়নক হয়ে জনমতের উপেক্ষা ও অবজ্ঞায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণে ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তা গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে কলুষিত করে। এ আশা ও হতাশার দোলাচলে আমাদের গণতন্ত্র ও আগামী নির্বাচন কলুষিত হোক এটি এ দেশের সাধারণ জনমানুষের চিন্তা ও চেতনার অতীত।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৭

ছাত্রলীগ আর ছাত্র শিবিরের আদর্শিক পার্থক্য – ---মুহতারাম অপু আহমেদ

বাংলাদেশ বার্তাঃ লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জের সালমা হোটেলে বসে নাস্তা খাচ্ছিলাম। আমার সাথে টেবিলে বসা ছিলো রামগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের এক কালের তুখোর নেতা, এখন অবশ্য নিষ্ক্রিয়। জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি, দলের এমন রমরমা টাইমে স্রোতের বাইরে থেকে কি লাভ হলো? যখন মার খাওয়ার তখন তো খেলে, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে চুপ হয়ে গেলে কেন?
সে আমাকে বলে, ভাই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না, আদর্শের জন্য করি। যে কারণে সম্মান থাকতে বিদায় নিছি। বললাম, এত সম্মান আর আদর্শের চিন্তা করলে তোমার তো ইসলামী ছাত্রশিবির করা দরকার ছিলো। এসব বুর্জুয়া দলে কেন গেলে? সে বললো, কি বলেন ভাই, আর দল পেলেন না। শিবিরের নাম শুনলে আমার বমি আসে। এরা তো মানুষই না…।
বললাম, বাদ দাও শিবির প্রসঙ্গ। এবার বলো কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে কেন টিকলে না। বললো, ভাই বইলেন না, আমাকে অফার করছিলো তিন লাখে কিন্তু বর্তমান সভাপতি চার লাখে কিনে নিছে। বললাম, বুঝলাম না, তিন চার লাখ মানে কি ? আরে ভাই জেলার ছাত্র নেতারা কমিটি ঘোষণা করতে টাকা চেয়েছেন, দিতে পারিনি। তাই পদ পেলাম না। আমার তিন সালের জুনিয়র এখন আমার নেতা। এই দুঃখে চুপ হয়ে গেছি।
আমি বললাম, ঘটনা তো তাহলে ভয়ংকর বটে। তাহলে শুনো তোমাকে একটি ঘটনা শুনাই। সারা দেশে তখন শৈত্য প্রবাহ চলছিলো। প্রচন্ড ঠান্ডায় মানুষ দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলো। সে সময় একদিন রাতে প্রায় তিনটার দিকে আমার বাড়িতে এক ভাই আসলেন। আমার ছোট্ট পড়ার ঘরের দরজায় তিনি নক করলেন।
দরজা খুলতেই তিনি আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, কাপড় পড়ে নিন। আমাদেরকে বের হতে হবে। জরুরী বিষয়। কোন প্রশ্ন না করে শীতের কাপর গায়ে দিয়ে তার সাইকেলের পেছনে বসলাম। তিনি ডাবলীং করতে পারছিলেন না,তবুও আমাকে নিয়ে গেলেন দারুস সালাম মসজিদে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দেখলাম, সব ওয়ার্ড, জোনের সভাপতি সেক্রেটারীগণ সহ ছাত্রশিবিরের সকল সাথীরা উপস্থিত হয়ে গেছে।
হামদ সানা পাঠ করার পরে জেলা সভাপতি ঘোষণা করলেন, বিশেষ প্রয়োজনে শহর সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যে কারণে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা জরুরী হয়ে গেছে। আমরা চাচ্ছি না একটি দিন যেন শহরের সাথীরা দায়িত্বশীল ছাড়া কাটায়। সবাইকে স্লিপ দেওয়া হয়েছে, বরাবরের মতো নিজের নাম ছাড়া যে কোন ব্যক্তিকে শহর সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করার অধিকার আপনাদের আছে।
নির্বাচন করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন। নিজের পছন্দের জন্য নয়, একটি ইসলামী সংগঠনের জিম্মাদারী গ্রহণ করতে পারে এরকম যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করুন। ত্বাকওয়া, জ্ঞান এবং সাংগঠিক দক্ষতা যার আছে তাকেই নির্বাচিত করুন। কোন প্রকার ঝোক প্রবনতার ভিতর দিয়ে বা আবেগের বসে কাউকে নির্বাচিত করার মতো অপরাধ থেকে দুরে থাকুন।
অবশেষে নির্বাচন হয়ে গেলো। সর্ব সম্মতিক্রমে এক ভাই নির্বাচিত হয়ে গেলেন। তার নাম ঘোষণার সাথে সাথে মারহাবা, আল্লাহুআকবার, আল্লাহ কবুল করুন শব্দের পুুরো মসজিদ মুখরিত হয়ে গেলো। কিন্তু আমাদের সেই ভাই যেন দাঁড়াতেই পারছেন না। চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে গেছে। কোন রকমে তাকে দাঁড় করিয়ে শপথ করানো হয়।
সেদিনে সেই জান্নাতি পরিবেশ আমার চোখে এখনো আটকে আছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবেও যদি সেই দিনের সেই আলোকিত প্রোগ্রামে তুমি উপস্থিত থাকতে পারতে,তাহলে সেটাকেই নিজের জীবনের সব থেকে মধুর মুহুর্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে। তখন হয়তো আল্লাহর রহমতে তোমার অন্তরের অবস্থা এমন হতো যে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম শুনলে বমি আসতোই না বরং নিজের নাকে জান্নাতী সুঘ্রান পেতে ভাই।
তুমি টাকা দিয়ে পদ কিনতে পারছো বলেই সেটাকে মুজিব আদর্শ বলছো। অথচ সারা শহর থেকে কয়েক লক্ষ টাকার মাসিক এয়ানত (নিজেরা নিজেরা দেওয়া টাকার নাম) পাওয়া শিবিরের সংগঠনের দায়িত্বশীল ভাই ও বোনেরা পদ পদবি দেখলে এভাবে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে যেভাবে কোরবানীর গরু ছুরি দেখলে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে। এবার তুমি আমাকে বলো, আদর্শের জয়গান গাওয়ার হকদার কি ছাত্রলীগ নাকি ছাত্রশিবির ?
ছেলেটি আমাকে ওয়াদা করেছে, ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ করবে না, তবে পরিবেশ শান্ত হলে সুযোগ মতো শিবিরের কোন প্রোগ্রামে হাজির হবে। আমি দোয়া করি, আল্লাহ তাকে কবুল করুন। সেক্যুলার নাস্তিকদের ক্ষপ্পর থেকে এরকম লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের উদ্ধারে আমাদের ভূমিকা নিতে হবে। এটা হবে আদর্শিক মশালে, চারিত্রিক দৃঢ়তায়। আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।

শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৭

জীবন্ত কিংবদন্তী রাজনীতিক এম কে আনোয়ার!

বাংলাদেশ বার্তাঃ কুমিল্লাবাসী গর্বিতত এমন মানুষের জন্য! হে কুমিল্লার জনগন তোমরা বুঝনি কাকে হারিয়েছো!
এম কে আনোয়ার সমসাময়িক রাজনীতিকদের চেয়ে ভিন্ন ধারায় রাজনীতি করতেন। ব্যাক্তিত্ব ক্ষুন্ন করে কখনো কারো কাছে আবদার রাখেন নি,,,না হয় বহু আগেই পেতেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যপদ। সর্বশেষ ২০০৯ এ চেয়ারপার্সনের নজরে আসে জনাব এম কে আনোয়ারের বিষয়টি,,, নিয়ে আসেন স্থায়ী কমিটিতে।

জীবনে কোনোদিন পদপদবীর জন্য তদবীর করেন নাই এম কে আনোয়ার।

পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হবার পাশাপাশি ছিলেন সরকারের দুইবারের কেবিনেট মন্ত্রী।
ছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাশাসনিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা,,,,কেবিনেট তথা মন্ত্রীপরিষদ সচিব।
এম কে আনোয়ারের সর্বশেষ জানাজা টি অনুষ্ঠিত হয় কুমিল্লার অজপাড়াগাঁ হোমনা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে,,,,,লক্ষ লক্ষ জনতার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকাগুলো পরিণত হয় জনসমুদ্রে!
এম কে আনোয়ারের জানাজায় অংশ নিতে সেদিন ভোর থেকেই পার্শ্ববর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও কুমিল্লার ১৭ টি উপজেলার জনতার শ্রোত ছিলো প্রিয়নেতা এম কে আনোয়ারের জানাজাস্থল হোমনা উচ্চবিদ্যালয়।
সেদিন হোমনাবাসী দেখেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন খ্যাত এম কে আনোয়ারের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা!
সমমনা জাতীয় সাংবাদিকদের দেখেছি,,, এম কে আনোয়ারের জানাজায় উপস্থিতির বিষয়টি বারবার আলোচনায় নিয়ে আসতে।
আল্লাহ যেনো মহান এই ব্যাক্তিকে জান্নাতে উচু স্থানে জায়গা করে দেন।

বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৭

যথাযোগ্য মর্যাদায় আগামী ২৮ অক্টোবর আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিলের মাধ্যমে পালন করার জন্য জামায়াতের সকল শাখা সংগঠনের প্রতি আহ্বান

বাংলাদেশ বার্তাঃ  ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো দিবস
আগামী ২৮ অক্টোবর আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজনের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ২৫ অক্টোবর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো দিবস। সেইদিন জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের যে সব নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে শাহাদাত বরণ করেছেন আমরা তাদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে। এ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা, লাঠি, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ বোমা নিয়ে হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, ঐ সব হায়েনারা লাশের উপর পৈশাচিকভাবে উল্লাস নৃত্য করে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবীতে জামায়াতের পক্ষ থেকে মামলা করা হলেও বর্তমান জুলুমবাজ সরকার সেই মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। এ ঘটনার দ্বারা আওয়ামী লীগ সরকার খুনীদেরকে রক্ষা করে এবং খুন, হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের লাইসেন্স দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে বর্তমানে খুন, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধ অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।
২৮ অক্টোবরের শহীদদের রক্তের উপর দিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দেশ থেকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা, জনগণের ভোটাধিকার, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে দেশে একদলীয় শাসন চালু করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পরিবর্তে একে একে সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত করছে। সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
২৮ অক্টোবরের শহীদগণ এ দেশে একটি ইনসাফপূর্ণ কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে আগামী ২৮ অক্টোবর আলোচনা সভা ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৮ অক্টোবর পালন করার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।”

বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৭

জামায়াতের ১৬ দফা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রত্যেক সংসদ এবং বর্তমান সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে এ দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন বিষয়ের মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। এমতাবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ন্যায় প্রস্তাবনা পেশ করা জামায়াতের গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়া হচ্ছে এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি সর্বজন স্বীকৃত রীতি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এর মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটে এবং সরকার পরিবর্তন হয়। নিকট অতীতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানেব্যর্থতা এবং সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেবাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট নিরসনকল্পে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। এ প্রেক্ষাপটে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিবেচনার জন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করছেঃ-
১. নির্বাচনকালীন সরকারঃ দেশ এবং জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ সরকার/নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।
২. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ ওনিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণঃ 
ক. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট, স্থানীয় সরকার, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, অর্থ ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের চাহিদানুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য রাখা। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের বদলি এবং পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত রাখা।
খ. ১৯৭২ এর নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিচারিক বা ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা প্রদান করা। এ ক্ষমতা কমিশন কর্মকর্তাদের প্রাপ্য।
গ. বর্তমানে কর্মরত নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মী এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধি বিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ঘ. নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রহণ করা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা কোন নির্বাচন কমিশনারের একক সিদ্ধান্তে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।

৩. প্রশাসন বিষয়কঃ 
ক. জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার সময় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা-প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার পূর্বক তাদের স্থলে নূতন কর্মকর্তা পদায়ন করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত পাঁচ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ঐ জেলায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশসুপার পদে পদায়ন না করা। একইভাবে উপজেলা ও থানা পর্যায়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার পূর্বক নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে ইতোপূর্বে কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ঐ উপজেলা বা থানায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় পদায়ন না করা। পদায়ন বা নিয়োগের পর অভিযোগ থাকলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
খ. নির্বাচন কমিশন অফিসে এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করা। ইতোপূর্বে যারা নির্বাচনের বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে তাদেরকে দূরে রাখা।
গ. নির্বাচনকালীন সময়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করা এবং গৃহীত কার্যক্রম জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
ঘ. সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান এবং দূতাবাসসমূহে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করা।
ঙ. নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর সকল রাজনৈতিক দলের ও প্রার্থীর সভা-সমাবেশ, পথসভা করার ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিটানিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের কাছে ন্যস্ত করা।
চ. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে প্রতিটি জেলায় রিটানিং অফিসার, সহকারী রিটানিং অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসার এবং প্রতিটি উপজেলা/থানায় নির্বাচন অফিসারের অফিসে একটি করে অভিযোগ বাক্স স্থাপন/চালু করা। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘন্টার মধ্যে অভিযোগের বিষয় নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
ছ. নির্বাচনের দিন প্রতিটি সংসদীয় আসনের প্রতি উপজেলা/থানার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর একজন করে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ প্রদান করা।

৪. সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ঃ
ক. সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে নির্বাচনের তারিখের কমপক্ষে ৯০ দিন পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
খ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক দলের বন্ধ অফিস খুলে দেয়া, সভা-সমাবেশসহ সকল স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করা এবং কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া।
গ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা। একই সময়েউন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত না রেখে স্থানীয় সরকারের অধীনে ন্যস্ত করা।

৫. নির্বাচনে সেনবাহিনী মোতায়েনঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ০৭ দিন আগে থেকে সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা।
৬. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পূর্নবিন্যাসঃ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক উত্থাপিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস করবে।
৭. ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাঃ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ করা। কারাবন্দীদের ভোটার করা। মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা হতে কর্তন করা। প্রবাসীদের ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
৮. মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রচারণার সময়সীমাঃ
ক. মনোনয়ন পত্র দাখিলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের নিকট দালিলের বিধান ছাড়াও এর সাথে নির্বাচন কমিশনে এবং অন-লাইনে দাখিলের বিধান করা।মনোনয়ন পত্র ফরম-১ সংশোধন করা। “রাজনৈতিক দলের প্রার্থী” শব্দগুচ্ছ রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী শব্দগুচ্ছ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা।
খ. মনোনয়ন পত্রের সাথে জামানত হিসাবে নগদ অর্থ জমাদানের বিধান বাতিল করে জামানতের অর্থ কেবলমাত্র ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে প্রার্থীর স্ব-শরীরে উপস্থিত হওয়া এবং প্রার্থী কারাগারে থাকলে তার মনোনীত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে লিখিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা।
গ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের ক্ষেত্রে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে কমপক্ষে ১০ দিন এবং কাগজপত্র প্রত্যাহারের পর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার জন্য কমপক্ষে ২১ দিন সময় দেয়া।
৯. ভোট কেন্দ্র ও ভোট গ্রহণঃ
ক. ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা। খসড়া ভোটার তালিকার উপর আপত্তি গ্রহণ করা। আপত্তি নিষ্পত্তির মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা। কেন্দ্রভিত্তিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটি গঠন করা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসার সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের অফিসে সংস্থাপিত সিসি টিভি মনিটর প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা।
খ. ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট ছবিসহ যে ভোটার তালিকা থাকে ছবিসহ অভিন্ন ভোটার তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অথবা তার এজেন্টকে প্রার্থীতা বাছাইয়ের দিনে সরবরাহ করা। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ভোটারগণ যাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা।
গ. কোন রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতীকের স্পষ্টতা বিনষ্ট না করে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যালট পেপারে দৃশ্যমান জলছাপ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
১০. ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশঃ
ক. নির্বাচনী ফলাফল বিতরণের সময় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স-এর নম্বর সম্বলিত চালান পত্রের ফটোকপি প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে প্রদান করা। যাতে করে পোলিং এজেন্ট এই কপির সাথে কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্সের নম্বর মিলিয়ে যাচাই করে নিতে পারে। ভোট গ্রহণের আগে বিভিন্ন বুথে খালি বাক্স সরবরাহের পর অবশিষ্ট শূন্য ব্যালট বাক্সসমূহ, যদি থাকে, এমন নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে তা প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশ্যমান থাকে। ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ব্যালট ভর্তি বাক্স বা বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখতে হবে, যাতে তা সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের নিকট দৃশ্যমান থাকে।
খ. ভোট গণনার সময় পুলিং এজেন্টকে অবশ্যই উপস্থিত রাখার ব্যবস্থা করা। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া এবং ভোটগণনা শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে কোন বিরতি না দেয়া। ভোট শেষে ব্যালট গণনার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহণে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সসমূহ খোলা এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফলাফল শীট ভোট কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে কেউ যেন ভোটকেন্দ্র ত্যাগ না করে তা নিশ্চিত করা।
গ. রিটার্নিং অফিসারের ভোট গ্রহণের দিনই যত দ্রুত সম্ভব কেন্দ্রভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের ভোটের ফলাফল একত্রীকরণ করে প্রার্থীদের কিংবা তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বেসরকারী ফলাফল গোষণা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ নিশ্চিত করা।
১১. নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়োগঃ
ক. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি আসনের রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি, র‌্যাব এর প্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি অফিসার এবং ক্ষেত্রমত কোষ্ট গার্ড ও বিজিবি এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় ও মেট্রোপলিটিন এলাকায় একটি করে কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলকা ও ভোট কেন্দ্রে নিরপেক্ষভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করবেন।
খ. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে দৃশ্যমানভাবে নাম ও র‌্যাংক ব্যাজসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করার ব্যবস্থা করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্যকে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়া।
গ. ভোট কেন্দ্রে কোন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েনের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব ওয়ার্ড বা তিনি নিজে যে ভোট কেন্দ্রের ভোটার সেখানে মোতায়েন না করা। কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত না করা। নিরাপত্তাকর্মী লিখিত পোষাক পরিধান করে কোন ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়া।

১২. দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োগঃ
ক. নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার কমপক্ষে এক বছর আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষন সংস্থাকে নিবন্ধন করা। নির্বাচন পর্যবেক্ষনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার ন্যূনপক্ষে এক মাস আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেয়া। তাছাড়া প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেয়া।
খ. জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে সাত দিন আগে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় এবং তাঁদের মনোনিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা, একই সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করা। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য বিমানবন্দরে হেল্প ডেস্ক এর ব্যবস্থা করা। তাদের ভিসা সহজীকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত প্রতিনিধির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা।

১৩. গণমাধ্যম ও মোবাইল নেটওয়ার্কঃ
ক. গণমাধ্যমে সকল দল ও প্রার্থীর নির্বাচনকালীন প্রচারণায় সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। বন্ধ করা সকল প্রিন্টিং, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া চালু করা।আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা।
খ. নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সার্ভিস চালু রাখা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ না করা।
১৪. ভোট গ্রহণে যন্ত্র ব্যবহারঃ ভোট গ্রহণে যে সকল দেশে ভোট গ্রহণ যন্ত্র (ইভিএম পদ্ধতি) ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমান রয়েছে বিধায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবস্থার না করা।
১৫. কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার রোধঃ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৬. জাতীয় সংলাপঃ বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সংলাপ যথেষ্ট নয়। তাইস্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা।
আমরা আশাকরি সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরউপরোক্ত ১৬টি প্রস্তাবসহ ইতোমধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রদত্ত পরামর্শ এবং সুপারিশমালা বিবেচনায় আনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়ে দেশ এবং জাতিকে বর্তমান সংকট থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসবেন। এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিক, দক্ষ ও নির্ভীক পদক্ষেপ সমগ্র জাতি কামনা করে।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-জিন্দাবাদ

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)-কে ৪টি ঐতিহাসিক প্রশ্ন করেছিলেন এক খ্রিস্টান বাদশাহ!!!


বাংলাদেশ বার্তাঃ ওমর (রা.) কে এক খৃষ্টান বাদশাহ চারটি প্রশ্ন লিখে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং আসমানী কিতাবের আলোকে প্রশ্নের উত্তর চেয়েছিলেন। সেই চিঠির ৪টি প্রশ্ন পরবর্তিতে ঐতিহাসিক প্রশ্ন হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত হয়ে আছে।
.
১ম প্রশ্নঃ একই মায়ের পেট হতে দু’টি বাচ্চা একই দিনে একই সময় জন্ম গ্রহন করেছে এবং একই দিনে ইন্তেকাল করেছে তবে, তাদের একজন অপরজন থেকে ১০০ বছরের বড় ছিলো। তারা দুইজন কে? কিভাবে তা হয়েছে?
.
২য় প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোন্ স্থানে সূর্যের আলো শুধুমাত্র একবার পড়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সূর্যের আলো সেখানে পড়বে না?
.
৩য় প্রশ্নঃ সে কয়েদী কে, যার কয়েদ খানায় শ্বাস নেওয়ার অনুমতি নেই আর সে শ্বাস নেওয়া ছাড়াই জীবিত থাকে?
.

৪র্থ প্রশ্নঃ সেটি কোন কবর, যার বাসিন্দা জীবিত ছিল এবং কবরও জীবিত ছিল, আর সে কবর তার বাসিন্দাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে এবং কবর থেকে তার বাসিন্দাজীবিত বের হয়ে দীর্ঘকাল পৃথিবীতে জীবিত ছিল?
.
হযরত ওমর (রাঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে ডাকলেন এবং উত্তরগুলো লিখে দিতে বললেন।
.

১ম উত্তরঃ দুই ভাই ছিলেন হযরত ওযায়ের (আঃ) এবং ওযায়েয (আঃ) তারা একই দিনে জন্ম এবং একই দিনে ইন্তেকাল করা সত্বেও ওযায়েয (আঃ) ওযায়ের (আঃ) থেকে ১০০ বছরের বড় হওয়ার কারন হল, মানুষকে আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পর আবার কিভাবে জীবিত করবেন? হযরত ওযায়ের (আঃ) তা দেখতে চেয়ে ছিলেন। ফলে, আল্লাহ তাকে ১০০ বছর যাবত মৃত্যু অবস্থায় রাখেন এরপর তাঁকে জীবিত করেন। যার কারনে দুই ভাইয়ের বয়সের মাঝে ১০০ বছর ব্যবধান হয়ে যায়।
.
২য় উত্তরঃ হযর মুসা (আঃ) এর মু’জিযার কারনে বাহরে কুলযুম তথা লোহিত সাগরের উপর রাস্তা হয়ে যায় আর সেখানে সূর্যের আলো পৃথিবীর ইতিহাসে একবার পড়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত আর পড়বে না।
.
৩য় উত্তরঃ যে কয়েদী শ্বাস নেওয়া ছাড়া জীবিত থাকে, সে কয়েদী হল মায়ের পেটের বাচ্চা, যে নিজ মায়ের পেটে কয়েদ (বন্দী) থাকে।
.
৪র্থ উত্তরঃ যে কবরের বাসিন্দা জীবিত এবং কবরও জীবিত ছিলো, সে কবরের বাসিন্দা হলেন, হযরত ইউনুস (আঃ) আর কবর হল, ইউনুস (আঃ) যে মাছের পেটে ছিলেন- সে মাছ। আর মাছটি, ইউনুস (আঃ) কে নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে। মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসার পর, ইউনুস (আঃ) অনেক দিন জীবিত ছিলেন। এরপর ইন্তেকাল করেন।
#কপি_পোস্ট -Md Parvaj > জান্নাত এক্সপ্রেস ।

সাবেক মন্ত্রী জনাব এম.কে. আনোয়ারের ইন্তেকালে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াতের শোকবাণী

বাংলাদেশ বার্তাঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী জনাব এম.কে. আনোয়ারের ইন্তেকালে গভীর শোক ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াতের প্রকাশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী জনাব এম.কে. আনোয়ারের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ২৪ অক্টোবর ২০১৭ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন। শোকবাণীতে তিনি বলেন, মরহুম এম.কে আনোয়ার একজন দেশ প্রেমিক উদার গণতন্ত্রমনা প্রবীণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ৫ বার জাতীয় সংসদ সদস্য ও দুইবার মন্ত্রী হিসেবে জাতির বিরাট খেদমত করে গিয়েছেন। তার অবদানের জন্য দেশবাসী তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তিনি মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, রাজনৈতিক সহকর্মী ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।

দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ফ্যাক্টর হওয়া এবং ভারতীয় এজেন্ডা ও ডিজাইন বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায় হওয়াই জামায়াতের একমাত্র অপরাধ

বাংলাদেশ বার্তাঃ এটা ঐতিহাসিক বাস্তব ঘটনা যে ’ ৭১ সালে পাকিস্তানের অখ-ত্বের পক্ষে শুধু জামায়াতে ইসলামীই অবস্থান নেয়নি। বরং সকল ইসলামী ও মুসলিম সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং সুপরিচিত সব ইসলামী ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানের অখ-নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, সেই কারণেই মুসলিম লীগের সকল গ্রুপসহ পিডিপি, কৃষক শ্রমিক প্রজাপার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও জামায়াতে ইসলামকে একযোগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ঐসব দলের আর কোনটাই সংগঠিত শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় নাই বলেই তাদের নিয়ে বর্তমান সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামী বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হওয়াও একটা বড় কারণ। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী, আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী ভূমিকার ক্ষেত্রে জামায়তই প্রধান প্রতিবাদী শক্তি হওয়ার ফলেই আজ সরকারের কোপানলের শিকার হতে হচ্ছে। ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে জামায়াতের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসতে না পারাটাই জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ক্ষোভের প্রথম ও প্রধান কারণ। না হলে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বর্তমানে যে অভিযোগ এনেছে, সে অভিযোগ কোন দিনই আনেনি। ’৯২ সালে ‘ঘাদানিকের’ মাধ্যমে জামায়াতের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান পরিচালনার মূল কারণ ছিল, জামায়াত কেন সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিল? কিন্তু পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াতকে সাথে পেয়ে বা সাথে নিয়ে তাদের কোন আপত্তি তো ছিলই না, বরং অনেক তোয়াজ করে জামায়াতকে সাথে রাখার চেষ্টা করতে তাদের কোন কুণ্ঠা ছিল না। জামায়াতকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং দিতে তখন কোন সংকোচ বোধ করেননি। তাই আজ একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ফ্যাক্টর হওয়া এবং ভারতীয় এজেন্ডা ও ডিজাইন বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায় হওয়াই জামায়াতের একমাত্র অপরাধ। জামায়াতের এই ভূমিকা আওয়ামী ঘরানা ও বাম ঘরানার কাছে যতই অগ্রহণযোগ্য হোক না কেন দেশবাসী এটাকে ইতিবাচকভাবেই মূল্যায়ন করবে সেদিন বেশি দূরে নয়। অতএব কোন মহলের প্রচারণায় বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের মনে হীনস্মন্যতা বোধের বা চিন্তার বিভ্রান্তির শিকার হবার প্রশ্নই ওঠে না। ইসলামী আন্দোলনের মূল পথিকৃত শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকেও আল্লাহ তায়ালাসহ বিভিন্ন সময়ের, তার পূর্বের নবী রাসূলদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সাথী-সঙ্গীদের ছবর ও ইস্তেকামাতের সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে সামনে অগ্রসর হবার তাকিদ দিয়েছেন। বর্তমানে আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন করে ওহীর মাধ্যমে কোন পথ নির্দেশ আসার সুযোগ নেই। তবে ময়দানের বাস্তবতাকে সামনে রেখে কোরআন ও সিরাতে রাসূল অধ্যয়ন করলে মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে উঠে পূর্ণ আস্থা নিয়ে ময়দানে টিকে থাকার এবং সামনে এগুবার প্রেরণা পাওয়া অবশ্যই সম্ভব।

সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭

দুর্বোধ্য : আবু জাফর সিকদার

বাংলাদেশ বার্তাঃ
কিছুই বোঝা যায় না
শুধু দেখা যায় পাথরের মুর্তিটা অপলক চেয়ে আছে
টোকা দিলে যেন কথা বলে উঠবে অনর্গল।
রাতেদিনে বৃষ্টিঝরা বেঘোর কান্নায় ভিজে জবুথুবু
নষ্ট হয় সোনালী ফসল;
দাঁড়কাক, কাকতাড়ুয়া মাথায় বসে, নামায় অন্ধকার।
শিল্পী জয়নুলের দুর্ভিক্ষের মতো,
পটুয়া রনবীর টোকাই এর মতো:
শিখা অনির্বাণ,রমনার কালীমন্দির উঠোন জুড়ে পথকলি ট্রাস্ট।
সীমানা প্রাচীরঘেরা চোখ ধাঁধানো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে ঝরাপাতা, সাপের খোলস।
শুধু দেখা যায় পাথরের মুর্তিটা অপলক চেয়ে আছে
টোকা দিলে যেন কথা বলে উঠবে অনর্গল।
'এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম'!
'মুক্তি' যুদ্ধে গেছে, সেই থেকে আর ফেরে নি।
.
শুলকবহর।চট্টগ্রাম।।
০৫ কার্তিক, ১৪২৪
২০ অক্টোবর ২০১৭।

প্রসঙ্গঃ গণতন্ত্র ও ইসলাম!!

বাংলাদেশ বার্তাঃ প্রশ্নঃ আপনারা কুফরী মতবাদ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দেন না কেন?
জবাবঃ (মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম (রহ.)-
গণতন্ত্র কুফরীর মতবাদ এমন ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়।গণতন্ত্র মানে সহজভাবে এইটুকু যে-
১. যেই সরকার গঠিত হবে তা জনগণের নির্বাচিত সরকার হবে।কেউ গায়ের জোরে এসে গদিতে বসতে পারবে না।দেশের জনগণের রায় নিয়েই ক্ষমতায় বসতে হবে।

২. সরকার পরিবর্তনও হবে জনগণের রায় অনুযায়ী।
৩. একবার কাউকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর পরে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে আর তার প্রতিবাদ করা যাবে না, বাঁধা দেয়া যাবে না তা নয়।বাঁধা দেয়া যাবে, প্রতিবাদ করা যাবে, তাদের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া যাবে।এসব হচ্ছে গণতন্ত্রের পরিচয়।এর সঙ্গে ইসলামের কোন বিরোধ নেই।ইসলামের সাথে প্রচলিত গণতন্ত্রের বিরোধ যেই পয়েন্টে তা হচ্ছে- 'সার্বভৌমত্ব কার হাতে'? আমরা বলি 'আল্লাহর হাতে', আর তারা বলে 'জনগণের হাতে'। ‘জনগণের হাতে সার্বভৌমত্ব’ এই পয়েন্টেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ, গণতন্ত্রের বাকি তিনটা পয়েন্টের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই।

মুহাম্মদ (সা.) যখন দুনিয়া থেকে বিদায় হলেন, তিনি কি তখন পরবর্তী ক্ষমতায় কে আসবেন নমিনেশন দিয়ে গেছেন কাউকে? বা উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ
কি হয়েছে? কিভাবে হয়েছে?জনগণ যাকে চেয়েছে, তিনিই খলিফা হয়েছেন।জনগণের সেই ভোট কিভাবে নেয়া হবে সেই সিষ্টেম এর পার্থক্য থাকতে পারে।এখন যেমন ব্যালট পেপার হয়, একটা বয়স ঠিক করা হয়, ভোটার লিষ্ট করা হয় ইত্যাদি।এই সিস্টেম তখনো গড়ে উঠেনি।কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দিক
(রা.) কে জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছেন।খলিফাগণ কেউই নিজের গায়ের জোরে, নিজে চেষ্টা করে গদিতে বসে যাননি, জনগণই ক্ষমতায় বসিয়েছেন।

জনগণের রায় নেওয়ার পদ্ধতি ইনডাইরেক্ট ডেমোক্রেসিও আছে, ইনডাইরেক্ট ভোটিংও আছে।সুতরাং ‘গণতন্ত্র কুফরী' এত বড় ফতোয়া দেয়া উচিত নয়।আমি জিজ্ঞাসা করি যে, সরকার গঠন করা, সরকার পরিবর্তন করা, সরকারের সমালোচনা করা এইগুলি ইসলাম অনুযায়ী জায়েজ না নাজায়েজ? সবই জায়েজ।তাহলে কুফরী হলো কিভাবে? শুধু এইটুকু কুফরী যে, ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাতে নয়, জনগণের হাতে’।সার্বভৌমত্ব অর্থ কি? সার্বভৌমত্ব মানে হচ্ছে আইন দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা যার।তাই, সকলে মিলেও পার্লামেন্টে যদি বলে যে, মদ হালাল তবুও এটা হারামই থাকবে।আল্লাহর এ আইন বদলানো যাবে না।এটাই হচ্ছে ‘আল্লাহর সার্বভৌমত্ব’।

আল্লাহর আইনের অধীনে যত খুশি আইন বানানো যাাবে, আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কোন আইন বানানো যাবে না।কারণ, 'আল্লাহ সার্বভৌম'।আর পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের কথা হলো, পাবলিক প্রতিনিধিরা ধর্মের ব্যাপার সহ সব ব্যাপারেই যে রায় দিবে সবাইকে সেটাই গ্রহণ করতে হবে।যেমন- ১৯২০ সালে আমেরিকা তাদের শাসনতন্ত্র সংশোধন করে সংশোধনীর দ্বারা মদকে নাজায়েজ করেছে।মদ অবৈধ, ইলিগ্যাল; এর দ্বারা মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, তাই তারা এ আইন করে শাসনতন্ত্র সংশোধন করলো।১৩ বছর পরে ১৯৩৭ এ আবার তারা বললো, না, ‘মদ জায়েজ, মদ বৈধ’।তারা আগের সংশোধন বাতিল করে নতুন সংশোধন করলো।অর্থাৎ তারা যেটাকে খুশি বৈধ করবে, যেটাকে খুশি অবৈধ করবে।কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যদি মদ অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে যখন বৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই ছিল।আর যখন অবৈধ বলা হয়েছে তখনও অবৈধই।ইসলামে এ রকম ভাবে আল্লাহর আইন বদলাবার কোন এখতিয়ার কারও নাই।এদিক দিয়েই পার্থক্য।
গণতন্ত্র ইসলামের সঙ্গে ওই একটি পয়েন্ট ছাড়া বিরোধী নয়।কিছু লোক প্রচার করছে যে, বিপ্লব করতে হবে।কিন্তু বিপ্লব কি? কেমন করে বিপ্লব করবে? শক্তি প্রয়োগ করা, জোর করে ক্ষমতা দখল করা, এটা কোন নবী করেছেন? তাহলে? নবীগণ জনগণের কাছে দাওয়াত দিয়েছেন।জনগণের সম্মতি যেখানে না হয়েছে, জনগণ যেখানে সাড়া দেয়নি, সেখানে ইসলাম বিজয়ী হয়নি, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হয়নি।মক্কায় ১৩ বছর পর্যন্ত দাওয়াতি কাজ করার পরও জনগণ সাড়া দেয়নি বলে প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হয়নি।মদিনার জনগণ সাড়া দেওয়ায় সেখানে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।তবে, 'গণতন্ত্র' শব্দটির চেয়ে ভাল অর্থবোধক কোন শব্দ/পরিভাষা ব্যবহার করা গেলে হয় তো ভাল হতো।যদি ‘ডেমোক্রেসি’র বদলে আর কোন পরিভাষা আমরা বানাতে পারতাম, তাহলে সুবিধা হতো।সে হিসেবে একটা পরিভাষা হতে পারে 'খেলাফত'।
এটা আমরা চিন্তা করে দেখতে পারি, পরামর্শ করে দেখতে পারি।ডেমোক্রেসির জায়গায় আমরা বলবো ‘খেলাফত’।কোন এক ব্যক্তির রাজতন্ত্র নয়, কোন অধিকারকৃত নয় এবং ‘খেলাফত’ আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব।আল্লাহর আইন চালু করবে জনগণের প্রতিনিধিরা।তারা আল্লাহরও খলিফা, জনগণেরও খলিফা।এ খেলাফত শব্দ দিয়ে ডেমোক্রেসির বিকল্প শব্দ বানানো যায়।মুসলিম জনগণ যদি গ্রহণ করে তাহলে এটা হতে পারে।যেমন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট মুসলমানরা গ্রহণ করেছে, এটা চালু হয়ে গেছে।সকল মুসলমান যখন রেড ক্রস এর জায়গায় রেড ক্রিসেন্ট ব্যবহার করতে রাজি হলো, এটা সম্ভব হলো।আমরা যদি সর্বসম্মতভাবে ‘ডেমোক্রেসি’র জায়গায় ‘খেলাফত’ শব্দটি ব্যবহার করি, এটাও হতে পারে।এটা আমি আপনাদের চিন্তার জন্য পরামর্শ দিলাম!!
সূত্রঃ প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে-

রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

জামায়াত আমীর মকবুল আহমাদ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান আকন্দ

বাংলাদেশ বার্তাঃ
॥এক॥
যে কোন আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সম্পর্কে জানার জন্য জনমনে কৌতূহল থাকা খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একাধারে একটি ইসলামী আন্দোলন ও রাজনৈতিক দল। বর্তমান বিশ্বে এ দলটি বহুল আলোচিত। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ দলটি আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের অব্যাহত জুলুম-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, রিমান্ডের নামে নির্যাতনসহ হেন নিপীড়ন নেই যা জামায়াতের ওপর চালানো হচ্ছে না। সরকারের সকল নিপীড়ন মোকাবেলা করে জামায়াত তার আদর্শের ঝান্ডা ধারণ করে সামনে এগিয়ে চলেছে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রমনা নাগরিকগণ নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা, শান্তি ও স্বস্তির জন্য জামায়াতকেই তাদের প্রিয় ঠিকানা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভূতি ও ভালবাসা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ জনাব আবদুল কাদের মোল্লা, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ জনাব মীর কাসেম আলীকে সরকার ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসি কার্যকরের নামে হত্যা করে তাদের উপর চরম জুলুম ও অন্যায় করেছে। সরকারের এ জুলুমের ফলে জনগণের অন্তরে জামায়াতের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে।
আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে শহীদ করার পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক জামায়াতের আমীর নির্বাচিত হন শহীদ আমীরে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী জনাব মকবুল আহমাদ। যিনি দীর্ঘ ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমীরে জামায়াত হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। মিথ্যা, বানোয়াট কল্পকাহিনী রচনা করে আমীরে জামায়াতের সম্মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
আমীর নির্বাচিত হওয়ার পর একটি বিশেষ মহল কর্তৃক তাকে ১৯৭১ সালের ঘটনায় জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য হলো আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে তার উপর জুলুম করা। অপপ্রচারকারীদের এ তৎপরতায় জনগণের মাঝে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, যিনি জামায়াতের আমীর হবেন তাকেই তারা অপপ্রচারের টার্গেটে পরিণত করবে। অপপ্রচারকারীদের এসব বক্তব্যের সাথে জনাব মকবুল আহমদের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জন্মলগ্ন থেকে এ যাবত পর্যন্ত যেভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত তাতে তার মত একজন ব্যক্তির পক্ষে কোন ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তার জীবন সম্পর্কে জানলেই স্পষ্ট বুঝা যাবে তিনি কেমন ব্যক্তি, কি তার পরিচয়? এ প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

॥দুই॥

জন্ম

জনাব মকবুল আহমাদ ১০ই জৈষ্ঠ্য ১৩৪৫ সালে ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া থানার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। বাদ ফজর পূর্বাকাশে সূর্য উদিত হবার মুহূর্তে দুনিয়ায় আগমন করেন জনাব মকবুল আহমাদ। তারা ৫ ভাই ও ৩ বোন। তিনি ভাইবোনদের মধ্যে পঞ্চম।
তার পিতা আলহাজ্জ নাদেরুজ্জামান একজন গণ্যমান্য ন্যায় বিচারক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। মাতা আনজিরের নেসা একজন গৃহিণী ছিলেন। তার মা গরীব ও অভাবী মানুষদেরকে বেশ সাহায্য করতেন ও তাদের সুখ-দুঃখের কথা দরদ দিয়ে শুনতেন। এ জন্য গরীব, অভাবী ও অসহায় মানুষগুলো তাকে খুবই আপন মনে করতো। গরীব মহিলারা প্রায়ই গৃহস্থালীর জিনিস ও বিভিন্ন সহযোগিতা নিতে তার কাছে আসত।

জনাব মকবুল আহমাদের পিতা ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন। এলাকার মানুষ তার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আসত। তিনি সকলের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করতেন। সামাজিক কর্মকান্ডেও তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এলাকার ছোটখাট বিচার সালিশে ন্যায় ইনসাফের কারণে তিনি খুবই সুনাম অর্জন করেছিলেন। প্রতি রমজানে এলাকার গরীব লোকদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করতেন। ইফতার শেষে ভাত-ডাল-গোশ্ত দিয়ে খাবার ব্যবস্থা করতেন তিনি। তার এ সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে তিনি সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন। কুরবানীর ঈদের পর দিন এলাকার লোকদেরকে মেহমানদারী করতেন তিনি। গোস্ত রুটি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেন। এটা ছিল আনন্দ ও খুশির সমাবেশ। এ খুশির অনুষ্ঠানে পাড়া প্রতিবেশী সকলেই শামিল হতো।
পিতা-মাতার সাদাসিধে অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন-যাপন এবং সামাজিক কার্যক্রমের প্রভাব সন্তান হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদের ওপরে পরে। সেই বাল্যকাল থেকে শুরু করে আজও তিনি বাবা-মার সেই সামাজিকতা ও পরোপকারিতা নিজের মধ্যে ধারণ করে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করার চেষ্টা করেন।
বাল্য শিক্ষা
জনাব মকবুল আহমাদ বাল্যকালে নিজ গ্রামের মসজিদে (মক্তবে) সূরা, ক্বিরাত, কুরআন পাঠে এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে দল বেধে অংশগ্রহণ করতেন। উৎসবের মত ছিল সে দিনগুলো। নিজ গ্রামেই তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তখন গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্তই লেখাপড়া হত। নিজ গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে তিনি দাগন ভূঁইয়া আতাতুর্ক হাইস্কুলে ভর্তি হন। তিনি স্কুলে ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলেন। ভাল ছাত্র হিসেবে তিনি সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন। এ জন্য সকলেই তাকে খুব সমীহ করতো। আতাতুর্ক হাইস্কুলে ৪ বছর পড়াশুনার পর অষ্টম শ্রেণিতে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম জালাল আহমদ বি.এ.বি.টি সাহেব ফেনী চলে যাওয়ায় জনাব মকবুল আহমাদকেও ফেনীতে ট্রান্সফার করা হয়। ঐ সময় তিনি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করতেন। বাড়ির লজিং মাস্টার ও পরিবারের সদস্যরা তাকে খুবই আদর ও স্নেহ করতেন। আজও জনাব মকবুল আহমাদ তাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন।
স্কুল জীবনে সাপ্তাহিক ছুটিতে এক/দেড় দিনের জন্য বাড়িতে যেতেন। কোন কোন সময় বিশেষ করে স্কুলের বার্ষিক ছুটির সময় একাধারে ১৫/২০ দিন নিজ এলাকায় থাকতেন। ছুটির সময় সমবয়সী আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে খেলাধুলায় মত্ত থাকতেন ও বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেতেন।

কলেজ জীবন

ফেনী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬২ সালে স্কুল/কলেজের বেশ কয়েকজন ছাত্র নিয়ে তিনি ‘ওমরাবাদ পল্লী মঙ্গল সমিতি’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পুকুরের কচুরি পানা পরিষ্কার, রাস্তাঘাট মেরামতসহ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার এ সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা- এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগায়। কলেজ জীবনে কলেজের বার্ষিক মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে কলেজের তদানীন্তন অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ মজুমদার যিনি এক সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন তার উদ্যোগে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক গোলাম আযমকে সীরাতুন্নবী আলোচনার জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয়। তিনি ‘নবী (সাঃ) জীবনের আদর্শ’ এ বিষয়ে খুবই হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পেশ করেন। এ আলোচনা তার মনে বেশ দাগ কাটে। তখন থেকেই জনাব মকবুল আহমাদ নবীর জীবনী পড়া ও কোরআন বুঝার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলামী বই পুস্তক পড়তে আরও বেশী আগ্রহী হন।
সীরাতের এ আলোচনা জনাব মকবুল আহমাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। আলোচনা শুনে তিনি বুঝতে সক্ষম হন সমাজের মূল সমস্যা সৎ, যোগ্য লোক তৈরী না হওয়া। এ জন্য সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে চরিত্রবান নেতৃত্ব সৃষ্টি করে জনগণের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাজ।
অধ্যাপক গোলাম আযমের বক্তব্য থেকে তিনি নবীর (সাঃ) জীবন ও নবীর পথ সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হন। জনাব মকবুল আহমাদ আরো হৃদয়াঙ্গম করেন যে, জনগণের দুঃখদুর্দশা লাঘব করার জন্য মানুষের মধ্যে প্রথমেই সত্য ও সততার বীজ বপন করেছিলেন নবী করিম (সাঃ)। মানুষের যিনি স্রষ্টা তাকে চেনা, তার হুকুম জানা, সে অনুযায়ী নিজকে ও সমাজকে গঠনের চেষ্টা করা। রাসূল (সাঃ) জনগণের কল্যাণের জন্য ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন। তার কাজ ছিল ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়া, জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য গরীব দুঃখীদের সাহায্য সহযোগিতা করা। অত্যাচারীদের জুলুম থেকে মানুষকে রক্ষা করা। কিন্তু হিলফুল ফুজুল থেকে সমাজ উপকৃত হলেও সমাজের অন্যায় অত্যাচার সমূলে উৎপটিত হচ্ছে না। রাসূল (সাঃ) পেরেশানীতে দিন কাটাচ্ছেন। হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তার দিন যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বানের নির্দেশে আসলো। ঘোষণা করা হলোঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।” আল্লাহকে চেনা, তার নবীকে মানা ছাড়া সমাজ পরিপূর্ণভাবে পরিবর্তন হয়ে বাস্তবে একটা কল্যাণকামী সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে না। রাসূল (সাঃ) সমাজের লোকদের কাছে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরলেন। একদিন তিনি ছাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং জনগণকে ডেকে বললেন, “পাহাড়ের অপর দিকে কি আছে তোমরা কেউ দেখেছ? আমি যদি বলি দুশমন লুকিয়ে আছে, তোমরা তা বিশ্বাস করবে?” তারা বলল, হ্যাঁ বিশ্বাস করব, কারণ আপনি পাহাড়ের উপরে আছেন তাই দেখছেন। তদুপরি আপনি আল-আমিন! বিশ্বাসী!! আপনার কথা অসত্য হতে পারে না। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বললেন, আমি আল্লাহর নবী, আমি বলছি এ দুনিয়ার একজন সৃষ্টি কর্তা আছেন, এক, একক, লা-শরীক, সকল শক্তির মালিক। আসমান ও জমিনে তারই রাজত্ব, তাকে মেনে তার কথা (আল-কুরআন) অনুযায়ী চললে তোমরা এ দুনিয়াতে শান্তিতে বসবাস করবে, আর মৃত্যুর পর অনন্তকালের জন্য কল্যাণের বাসস্থান (বেহেস্ত) পাবে।
পরের ইতিহাস অত্যন্ত পরিষ্কার। যে লোকগুলো দীর্ঘদিন তাকে আল-আমীন, আস-সাদিক (বিশ্বস্ত) বলে আসছেন, তারাই নিজ স্বার্থে, পূর্ব পুরুষের দোহাই দিয়ে আল্লাহর বানী এবং কালেমার দাওয়াতের আলোকে চলতে অস্বীকার করলেন। কিন্তু নবীর (সাঃ) বিরোধীতা সত্ত্বেও পরম ধৈর্য সহকারে সত্যের দাওয়াত তিনি দিয়ে যেতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে কোরাইশ নেতারা সুযোগ সুবিধা, সুন্দরী রমনী ও ক্ষমতার লোভ দেখাতে লাগলেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, জনগণকে মহা সত্যের ডাক দিয়ে যেতে লাগলেন। আর প্রতিউত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের ধারণা আমি সুযোগ সুবিধা, নেতৃত্ব লাভ ও ক্ষমতায় আরোহনের চেষ্টা করছি- এটা মোটেই ঠিক নয়। তোমরা যদি আমার এক হাতে সূর্য আর এক হাতে চন্দ্রও এনে দাও আমি এ মহা সত্যের দাওয়াত থেকে পিছপা হবো না। তার উপরে অত্যাচার-জুলুম চলতে লাগলো। প্রাণে মেরে ফেলার যড়যন্ত্র হলো। সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি তার মিশন চালিয়ে যেতে লাগলেন। অতঃপর তাদের অত্যাচারে নিজ জন্মভূমি থেকে হিজরত (আদর্শের জন্য দুনিয়ার সহায় সম্পদ সব ত্যাগ) করে মদীনায় গিয়ে উপস্থিত হলেন।
আপাতঃ দৃষ্টিতে ঝামেলা গেল। কাফের, কুরাইশ, নবীর দুশমনরা খুশি হলো। কিন্তু এ খুশি বেশী দিন রইলো না। তারা ষড়যন্ত্র করল, মহানবী (সাঃ) এখান থেকে চলে গেলেন মদীনায়। মদীনায় গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের উপর আঘাত হানবে। তারা এ ধারণায় মদীনায় আক্রমণের পরিকল্পনা নিল।
নবী (সাঃ) আল্লাহর ইশারায় একটি ক্ষুদ্র দল নিয়ে প্রতিপক্ষ কুরাইশদের মোকাবিলায় অগ্রসর হলেন। দুশমনরা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগিয়ে গেল। ঐতিহাসিক বদর ময়দানে মুখোমুখী হলো। এ অসমযুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম বাহিনী শৌর্য বীর্য প্রদর্শন করে বিজয় লাভ করে। ইতিহাসে এ যুদ্ধের অনেক পর্যালোচনা হয়েছে। কিন্তু ইংরেজ, খৃষ্টান, ইহুদী, অমুসলিম ইতিহাসবিদরা আজও স্থির করতে পারলেন না এ অসমযুদ্ধে কিভাবে মুসলিমরা জয়ী হলো। যারা মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাসী তারা দেখলো মুজাহিদদের ঈমানী শক্তি, ন্যায় সততার শক্তি ও আল্লাহর সাহায্যে এ বিজয় সম্ভব হয়েছে।
অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব সুদীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টার বক্তব্যে নবী (সাঃ) জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বললেন, কোন আদর্শবাদী দল যদি আল্লাহর উপরে নির্ভর করে নিজদেরকে তৈরী করে তবে আল্লাহর সাহায্যে তারা সফলকাম হতে পারবে।
অধ্যাপক সাহেব দ্বিতীয় যে কথাটি বললেন তা হলো ইসলামের জয়-পরাজয়ের ধারণা (Conception) আলাদা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যদি জয়ী হন আপনি কামিয়াব (বিজয়ী), যদি জয়ী না হন তবুও সফল। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সকল বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই সফলতা। দুনিয়ায় প্রচলিত জয় পরাজয় ও ইসলামী আন্দোলনের জয় পরাজয় এক রকম নয়।
জনাব মকবুল আহমাদ ছাত্রজীবনে ফেনী কলেজে শুনা অধ্যাপক গোলাম আযমের সে বক্তৃতা আজও ভুলতে পারেন না। জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সে কথা এখনও তার মনে পড়ে। ঈদে মিলাদুন্নবীতে গিয়ে সুর করে দুরূদ পড়া শেষে মিষ্টি, ফিরনী, বিরানী খাওয়া কম আনন্দদায়ক নয়। কিন্তু সীরাতুন্নবী (সা.) এর আলোচনায় জীবনের চলার পথের যে আলো পাওয়া যায় সেটাই নবী জীবনের শিক্ষা এটা অধ্যাপক গোলাম আযমের আলোচনায় শ্রোতাদের নিকট পরিষ্কার হয়। সেদিন থেকে জনাব মকবুল আহমাদ ইসলামী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা তার জীবনের গতিকে পাল্টে দেয়।

খেলাধুলা

জনাব মকবুল আহমদ একজন ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি। তিনি ফেনী কলেজে থাকা অবস্থায় স্পোর্টস এ অংশগ্রহণ করেন। তিনি কলেজে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১ম পুরস্কার পান। তিনি মাঝে মাঝে গ্রামে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতেন। ঐ সময় গোল্লাছুট, হাডুডু খেলার প্রচলন ছিল। তিনি এসবগুলোতে মাঝে মাঝে অংশগ্রহণ করতেন।
কর্মজীবন
জনাব মকবুল আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় সরকারী চাকুরীতে যোগদানের মাধ্যমে। প্রথমে একটি ব্যাংকে তার চাকুরী হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যাংকে চাকুরী করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ব্যাপারে পরিবারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকায় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিকেশন্স বিভাগে যোগদান করেন। প্রথম থেকে সরকারী চাকুরী না করার একটা প্রবনতা ছিল। স্বাধীনভাবে জীবন পরিচালনার জন্য সরকারী চাকুরী ছেড়ে এক বছর পর তিনি শিক্ষকতার পেশায় চলে যান। শিক্ষকতায় নিজের জ্ঞান অর্জন ও অর্জিত জ্ঞান কল্যাণকর কাজে বিতরণ করে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে তোলা যায়। তার মধ্যে এরকম একটা অনুভূতি সুপ্তভাবে হলেও ছিল। জনাব মকবুল আহমদের মাঝে বি.এ পাস করে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রী নেয়ার আগ্রহ ছিল। তিনি সরিষাদী হাইস্কুলে ৪ বছর ও ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে ৩ বছর শিক্ষকতা করেন। তিনি সাধারণত ইংরেজী, বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস এ বিষয়গুলোই পড়াতেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকল মহলে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করেন। সরিষাদী হাইস্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে তিনি ৪ বছর শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।

স্কুলে বাংলা সাহিত্য পড়ানোর সময় মহৎ লোকদের জীবনী এবং তাদের জীবনের সুন্দর দিকগুলো আকর্ষণীয় ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ছেলেদেরকে চরিত্রবান নাগরিক রূপে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতেন। ক্লাসে লেখাপড়া শেষে ৮ম-৯ম শ্রেণীর ছাত্রদের আচার-আচরণ, নৈতিক দিক, পিতামাতাকে সম্মান ও প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। ছাত্রদের মধ্যে কোন মনোমালিন্য হলে তিনি তা মিটিয়ে দিতেন।
https://goo.gl/EAvimv

১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ দৈনিক সংগ্রামের বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন। কক্সবাজারের চিংড়ির উপরে তার প্রতিবেদন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি লিখেছিলেন বাংলাদেশের Black Gold, সৌদী Liquid Gold-কে ছাড়িয়ে যাবে। এ চিংড়ি পৃথিবীর বাজারে সুনাম অর্জন করেছিল।

যেভাবে সংগঠনে এলেন

ফেনীতে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে ফেনীর সুপরিচিত আলেম জনাব আব্দুস সাত্তার সাহেব জনাব মকবুল আহমদকে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত দেন। প্রথম প্রথম তিনি এ দাওয়াতের গুরুত্ব দেননি। বরং মন্তব্য করতেন ‘আমরা রাজনীতি করিনা’।
জনাব আব্দুস সাত্তার সাহেব মকবুল আহমদের পেছনে লেগেই ছিলেন; এক পর্যায়ে জনাব মকবুল আহমদ দাওয়াতে সাড়া দেন। সে দাওয়াত পেয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনে শরীক হন। জীবনের অনেক ধাপ অতিক্রম করে তিনি আজ বাংলাদেশের সর্ববহৎ ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীর। ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কারণে তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে জনাব আব্দুস সাত্তারের জন্য দোয়া করেন। মাঝে মাঝে তার জন্য বইসহ বিভিন্ন উপহার পাঠান।

আল্লাহর সন্তুষ্টি জীবনের লক্ষ্য

জনাব মকবুল আহমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ লক্ষ্যে তিনি তার জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন আলোচনা, শিক্ষা বৈঠক, শিক্ষা শিবির, দায়িত্বশীল বৈঠক ও বিভিন্ন সভায় তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন কেন্দ্রীভূত করার বিষয়কে সামনে রেখে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। তিনি স্কুল জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেনঃ
“স্কুল জীবনে আমার আর একটা সুন্দর ঘটনা মনে পড়ে। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম প্রায়ই একটা রচনা আসত ‘তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি (Your aim in life)।’ কেউ কেউ লিখত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী ইত্যাদি হবো। আমরাও লিখেছি, নাম্বার পেয়েছি, আবার শিক্ষকতার জীবনে ছাত্ররা লিখেছে আমরা নাম্বারও দিয়েছি। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর, ‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’। এ আয়াতের তরজমা মর্মার্থ জানার পর জীবনের ধারণা, উদ্দেশ্য সব বদলিয়ে গেল। অনেক জায়গায় আলোচনায় এটা বলার চেষ্টা করি আমার জীবনের উদ্দেশ্য কখনো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী প্রভাবশালী নেতা হওয়া উল্লেখ করার মত বিষয় হতে পারে না। বড় জোর জীবনে কি প্রফেশন Choice করবো তার জন্য এটা বলা যায়।
সত্যিকার মানুষের জীবনের লক্ষ্য তাই হওয়া উচিত যা আমাদের স্রষ্টা, প্রতিপালক মহান আল্লাহ তার কোরআনে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য লক্ষ্য কি হওয়া উচিত তা বলে দিয়েছেন।
‘ক্বুল ইন্না ছালাতি, ওয়া নুসুকি, ওয়া মাহ-ইয়া ইয়া, ওয়া মামাতি, লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা আন’আম-১৬২)
অর্থাৎ ঃ আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য।

যখনই যেখানে কথা বলেছি, তখনই এ Reference এনেছি সবাই অনুভব করেছে এটাইতো আসলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আমি জীবনে যত কাজ করব সবই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই করবো। যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্ব দান করেছেন, আমাকে প্রতিপালন করেছেন, সুখ শান্তি জীবনোপকরণ দিয়েছেন- তাকেই সবসময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রেখে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই আমাদের সকল কল্যাণ নিহিত।

বর্তমানে আমরা যা দেখছি, যত জুলুম-নির্যাতন, অন্যায় অবিচার, মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট, মানুষ নিজ প্রতিপালককে না জানা, না মানা, তার নির্দেশিত পথে না চলার কারণেই হচ্ছে। দুর্ভাগ্য এ কারণেই এ অধপতন হচ্ছে তাও জানে না। লেখাপড়ায় টেকনোলজি জানা, জীবনের সুখ-সুবিধা বেশী পাওয়ার পদ্ধতিই প্রধান। কিন্তু তার স্রষ্টাকে জানার কোন চেষ্টা নেই।

সাংগঠনিক জীবন

সরিষাদী স্কুলে শিক্ষকতাকালে তিনি ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় হন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটা পছন্দ করতেন না। এ সময় জামায়াত সাংগঠনিক প্রয়োজনে তাকে মহকুমা শহর ফেনীতে যাতে তিনি চলে যান সে বিষয় উদ্বুদ্ধ করে। ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে তিনি শহরে স্থানান্তরীত হন। এভাবে তার নতুন জীবন শুরু হয়।
ফেনীতে ব্যাপক দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে কাজকে তৃণমূলে নেয়ার চেষ্টায় শরীক হন তিনি। ঐ সময় আল্লাহর মেহেরবানীতে কাজ দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে।
তিনি তার সাংগঠনিক জীবনে ছোট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের ইউনিট, থানা, মহকুমা ও শহর ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা, বিভাগ, কেন্দ্রে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। সাংগঠনিক জীবনে মহান আল্লাহর মেহেরবানীতে অধ্যাপক গোলাম আযম, মরহুম আব্বাস আলী খান, মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা আব্দুর রহীম, প্রফেসর ওসমান রমজ, জনাব আবদুল খালেক (আখাউড়া) মাওলানা আবদুল জাব্বার (কিশোরগঞ্জ), সাবেক এমপি জনাব মাস্টার সফিকুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ আলীর মত প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী লোকদের সাহচার্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান। সে সময় ট্রেনে, বাসে বেশ ভীড় হতো তাই বাসের ছাদের উপরে বসেও সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সফর করেন।
ফেনী মহকুমায় দায়িত্ব পালনের সময় কোন কোন দিন সকালে পান্তা ভাত খেয়ে দাওয়াতী বই ব্যাগে নিয়ে ফেনী থেকে সোনাগাজী ১৪/১৫ মাইল কর্দমাক্ত রাস্তা পায়ে হেটে সফর করেন। দীর্ঘ পথ হেটে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় রেস্ট নিয়ে পরদিন সাংগঠনিক কাজ শুরু করতেন। সফরে ২/১ দিন কাটিয়ে আবার ফেনী শহরে ফিরে আসতেন। তখন ফেনী সোনাগাজী রোড আকাবাকা ছিল এবং পাকা না হওয়ায় রাস্তায় খুব কাদা হতো। চলাচল খুবই কষ্টকর ছিল। সকল কষ্ট হজম করে আল্লাহর দ্বীনের কাজ করতেন তিনি এবং এখনও করে যাচ্ছেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও জনাব মকবুল আহমদ
১৯৭০-এ নির্বাচনে জানব মকবুল আহমদকে প্রাদেশিক পরিষদের এম.পি.এ (Member of the Provincial Assembly) প্রার্থী করা হয়। তিনি স্কুলে শিক্ষকতা ইস্তেফা দিয়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত হন।
সে সময় প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ফাজিলপুরের একজন Advocate। জাতীয় পরিষদের জামায়াত প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি একেএম বাকের সাহেব। (Justice A.K.M Baqer) আওয়ামী লীগের ছিলেন জনাব খাজা আহমদ। নির্বাচন খুব জমজমাট হয়। ২/১ বার বিরোধীদের হামলার শিকার হতে হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াতের Agent-কে কেন্দ্রে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও প্রশাসন কোন প্রতিকার করেনি।

বাংলাদেশ আমলে সংসদ নির্বাচনের সময় একটি ঘটনা বেশ উল্লেখযোগ্য। জামায়াতের লোকেরা বিধ্বস্ত, হতাশ, আওয়ামী লীগের জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতনে। একবার জনাব মকবুল আহমাদের সাথে নির্বাচনে জয়নাল হাজারীর সাথে Contest হয়।
নমিনেশন Submit এর দিন D.C. অফিসে হাজারীর সঙ্গে তার দেখা হয়। জনাব হাজারী হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করে বললেন, মকবুল সাহেব আপনি একজন নীতিবান, ভাল লোক, আপনার সাথে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হবে সত্যি আমি খুব খুশী। উত্তরে জনাব মকবুল আহমাদ বললেন, ‘দোয়া করবেন’।

নির্বাচনে হাজারী বাহিনী প্রায় সব কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জালিয়াতি করে ভোট ছিনতাই করেছে। এ অবস্থা দেখে জামায়াতের কয়েকজন কর্মী বলে ‘হাজারী তো সব কেন্দ্র দখল করে নিয়ে যাচ্ছে’। অলাতলী বাজার (ফেনী থানার রাজাপুর ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্র) জামায়াতের প্রভাব একটু বেশী। জামায়াতের লোকেরা সকাল সকাল ভোট দিয়ে দিয়েছে তখন কেন্দ্র একেবারে খালি। কর্মীরা বলল আমরা চিন্তা করেছি দরজা বন্ধ করে সীল মারব। জনাব মকবুল আহমাদ এটা শোনার পর বলেন, ‘এটা করা যাবে না। যদি তোমরা আমাকে এ ধরনের জাল ভোট দিয়ে এম.পি বানাও তবে আমি তো আসল এম.পি হবো না, হবো নকল এম.পি। তদুপরি তোমরা আমার কাছে ন্যায় অন্যায় অনেক দাবী নিয়ে আসবে। তখন আমি বলব এটা তো অন্যায় এটা তোমাদের চাহিদানুযায়ী দেয়া যাবে না। তখন তোমরা আমার মুখের উপর বলবে, সেদিন দরজা বন্ধ করে সীল মেরে এম.পি বানালাম সেটা কোন ধরনের ন্যায় ছিল? আজ আমাদের কাজের সময় আপনি ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন উঠাচ্ছেন। তখন জবাব দেয়ার কিছু থাকবে না। এ কথা শুনে কর্মীরা চুপ হয়ে গেল।
আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। জনগণের সত্যিকার সমর্থন নিয়েই আমাদেরকে আসতে হবে। একজন কর্মী বলে উঠল (সে অবশ্য আমার ছাত্রও) স্যার আপনি যে সব কথা বলেন তাতে একশ বছরেও এম.পি হতে পারবেন না।’
জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, ‘এম.পি হলাম না তাতে কি হলো, আমরা যদি নির্বাচিত হই অনেক কাজ দায়-দায়িত্ব। নির্বাচিত না হলে আবার জনগণকে এ অন্যায় জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে বলতে পারব। আমরা মানুষকে ন্যায়ের পথে কার্যকর শক্তি হিসেবে সংগ্রামী রূপে তৈরী করতে পারব। এ পন্থায় যদি ৫০/১০০ বছর লাগে তবুও ভাল। আমরা মানুষের মনে ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার অনুভূতি সৃষ্টি করতে চাই। এটাই আমাদের সফলতা। এম.পি হওয়া না হওয়াই সফলতা, ব্যর্থতা নয়।’
জনাব মকবুল আহমাদ মনে করেন, সমাজ পরিবর্তনের জন্য একদল সৎ ও যোগ্য লোকের প্রয়োজন। ধৈর্যের সাথে সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত রাজনৈতিক স্রোতে গা ভাসিয়ে ধৈর্যচ্যুত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের মূল পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না।

১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদের অবস্থান

১৯৭০ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল থেকে প্রমাণিত হলো যে, কোন একটি রাজনৈতিক দলই সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের সমর্থন লাভ করবে না। আওয়ামী লীগ শুধু পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয়, পশ্চিম পাকিস্তানে রাওয়াল পিন্ডি ছাড়া আর কোথাও আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দাড় করাতে সক্ষম হয়নি। গোটা পাকিস্তানের ৩০০ আসন বিশিষ্ট গণপরিষদের দেশের এ অংশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬০টি আসনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন আওয়ামী লীগ দখল করে। একটি আসনে জনাব নূরুল আমীন ও আরেকটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজা ত্রিদিব রায় জয় লাভ করেন।
ইয়াহইয়া খান শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। এ সময় ভুট্টোর ভূমিকা দেশে এক সংকট সৃষ্টি করে। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে থাকেন এবং শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবার দাবী জানাতে থাকেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের ঐ বিবৃতিসমূহ তদানীন্তন সময়ের জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ দাবী মেনে নিয়ে শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটতো। কিন্তু তা না করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করা হয়।

ইয়াহইয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেন। ভুট্টোর বিরোধীতার কারণে ৩ মার্চের অধিবেশন মূলতবীর ঘোষণা দেন ইয়াহইয়া।
১ মার্চ রেডিওতে প্রচারের সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ জনতা মাঠে নেমে যায়। ফলে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তান অচল হয়ে পড়ে। এ সংকটের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপারেশন শুরু হয়। সারাদেশে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন চলতে থাকে।

১৯৭১ সালের এ সংকটময় মুহূর্তে জনাব মকবুল আহমাদ ফেনীতে, বৃহত্তর নোয়াখালীতে সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালের ২৬ মার্চের পরই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করে। ঐ সময় তিনি নিজ বাড়িতে ছিলেন। তিনি এলাকার লোকজনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। একদিন আওয়ামী লীগের লোকেরা স্থানীয় পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুজু মিয়ার (আসল নাম সামছুল হক, মুসলিম লীগের লোক ছিলেন) বাড়িতে হামলা চালায়। অভিযোগ তার বাড়িতে গোপন রেডিও আছে, যা পাকিস্তানী খবর দেয়। হামলার পরে দেখা গেল সে বাড়িতে এরকম কিছুই নেই। তুজু মিয়ার কোন ছেলে ছিল না। ২/৩টি মেয়ে ছিল। তারা ভয়ে জড়সড় হয়ে যায়। মিথ্যার উপর ভিত্তি করে এ ধরনের বহু হামলা আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে।
অনেক আলেম, ওলামা ও মুসলিম লীগ নেতাকে বেশ অপমান ও অপদস্থ করা হয়েছে। সে সময় মার্চ মাসে এরকম অনেক হামলা ও লুটপাট হয়েছে।
ফেনীতে দুষ্কৃতিকারীরা বেশ লুটপাট, চুরি, ডাকাতি করেছে। জামায়াতের তখন বেশী লোকজন ছিল না। সংগঠনও ছিল খুব দুর্বল। সারাদেশে মাত্র একজন মাত্র এম.পি.এ ছিলেন। বগুড়ার মাওলানা আব্দুর রহমান ফকির। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও ছিলেন ২/১ জন।
১৯৭১ সালে জনাব মকবুল আহমাদ নিজ এলাকার বিপদগ্রস্ত লোকজনকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। কোন ধরনের অনৈতিক, বেআইনী ও মানুষের জন্য অকল্যাণকর কাজে তিনি জড়িত হননি। তার এলাকার কোন লোক এ কথা বলতে পারবেনা যে, জনাব মকবুল আহমাদ কাউকে একটি কটু কথা বলেছেন। তার এলাকায় সর্বস্তরের সচেতন ও বিবেকবান জনগণ এ বিষয়ে স্বাক্ষী।

দক্ষ সংগঠক হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদ

জনাব মকবুল আহমাদ সংগঠনের ভিতরে ও বাইরে অর্থাৎ সর্বমহলে একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিচিত। সারা জীবন তিনি সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত ছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াতী তৎপরতা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে তিনি ব্যক্তিগত যোগাযোগের পাশাপাশি বই বিতরণে অভ্যস্ত। জনশক্তির মান উন্নয়ন, নেতৃত্ব তৈরী ও সাংগঠনিক আভ্যন্তরীণ কর্মকা- মজবুতের জন্য তিনি ইসলামের সুমহান আদর্শে মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করার লক্ষ্যে সদা তৎপর ছিলেন।

রাজনৈতিক আন্দোলন

জনাব মকবুল আহমাদ বাংলাদেশকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯১-১৯৯৬ পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের জন্য জনশক্তিকে মাঠে ময়দানে সুসংগঠিত করেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্যে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠকে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের মহাসমাবেশে বেশ গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ২০০৯ সালে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। এ সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করার জন্য তিনি বিশ দলীয় জোটের বিভিন্ন সমাবেশে যোগ দেন। https://goo.gl/lTOS16

সামাজিক কার্যক্রম

জনাব মকবুল আহমাদ বেশীর ভাগ সময়ই সাংগঠনিক কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি সংগঠনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। প্রতি বছর শতাধিক গরীব প্রতিভাবান ছাত্রদেরকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করা হয়।

বিদেশ ভ্রমণ ও হজ্জ পালনের অনুভূতি

জনাব মকবুল আহমাদ রাবেতার আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সৌদী আরবের রিয়াদ সফর করেন। রাবেতা আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমাদৃত ব্যক্তিবর্গও এ সকল সম্মেলনে যোগদান করেন।

প্রবাসী সংগঠনের আমন্ত্রণে সাংগঠনিক সফরে তিনি জাপান ও মালয়েশিয়া সফর করেন। জাপান সফর শেষে তিনি সফরের অভিজ্ঞতার আলোকে রচনা করেন- ‘জাপান সফর-দেখার অনেক শিখার অনেক’। তার রচিত এ গ্রন্থটি সুখপাঠ্য বই হিসেবে সমাদৃত। তিনি সৌদী আরব সরকারের রাবেতা আলমে আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে প্রথম হজ্জ্ব পালন করেন। এরপর ২০০৩ সালে আবার হজ্জ্ব পালন করেন। জনাব মকবুল আহমাদ হজ্জ্বের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘খানায়ে কাবা দর্শন সে এক অকল্পনীয় অব্যক্ত অনুভূতি। সারা দুনিয়ার মানুষ, খোদাপ্রেমে সবকিছু ছেড়ে দুনিয়া ত্যাগী ফকিরের বেশে এক কাপড় পড়ে কাবা প্রদক্ষিণ আমার মনে বিরাট প্রভাব পড়েছে। সারা দুনিয়ার মুসলমানদের ঐক্যের জন্য মহান রাব্বুল আলামীন যে ব্যবস্থা করেছেন তার দ্বারা মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বিরাট বন্ধন উপলব্ধি করেছি।
হজ্জের শিক্ষা উপলব্ধি করা ও কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা হিসাবেই ইসলামী আন্দোলন (ইকামাতে দ্বীনের) প্রেরণা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা জীবন অন্য কোন কাজকে আর প্রাধান্য দেইনি বা দিতে পারিনি।

ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন

২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর আমীর শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেফতার হলে জনাব মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সুদীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় জামায়াতের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার অবিচার, বহু কর্মীকে গুম, খুন ও পঙ্গু করার অমানবিক সরকারী প্রচেষ্টা চলে। এ সময় তিনি ধৈর্যহারা হননি। আইনী সীমার মধ্যে চলার এবং সংগঠনকে খোদাভীতি ও নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার সাধ্যমত চেষ্টা করেন।
জামায়াতের সংগঠনের শৃঙ্খলার কারণে হাজার হাজার (রুকন) সদস্য কর্মী ছবরের সাথে কাজ করায় সারা দেশের মানুষের মধ্যে একটি ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার কর্মী কারাবরণ করে কারাভ্যন্তরে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী নিজদেরকে গঠন করতে সক্ষম হয়। জেল থেকে মুক্তি লাভ করে তারা আরো ভালো মজবুত কর্মী ও সমাজ সচেতন হয়েছে।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীবৃন্দ ত্যাগ কুরবানী ও আনুগত্যের মধ্যে যেভাবে কাজ করেছেন তাতে আমীরে জামায়াত হিসেবে তিনি আরো উদ্বুদ্ধ হন।

ভারপ্রাপ্ত আমীর হিসেবে সারা দেশের বড় বড় সমাবেশগুলোতে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। তার বক্তব্যে কারও বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ও উস্কানীমূলক বক্তব্য না দিয়ে তিনি দেশের সমস্যা উপলব্ধি করে সবাইকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আহ্বান জানান। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি রাজনীতির একটা স্বচ্ছ সাবলীল ধারা চালুর চেষ্টা করেন।

আমীরে জামায়াতসহ শীর্ষ ৫ নেতার ফাঁসি সম্পর্কে

জনাব মকবুল আহমাদ সরকারের জুলুম-নিপীড়নের মাঝেও সংগঠনকে যথার্থভাবে পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। আইনগতভাবে মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়ার পর তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানান। জনাব মকবুল আহমাদের নেতৃত্বে দেশে বিদেশে সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও সাজানো বিচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠে। জাতিসংঘ, ঐঁসধহ জরমযঃং ডধঃপয সবাই বিচারের জন্য ব্যবহৃত আইনকে একটি কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি না দিতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন রাষ্ট্র, মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান আহ্বান জানান। সরকার কারো কথায় কর্ণপাত করেনি। ফলে এ সরকারের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনাব মকবুল আহমাদ মনে করেন, আদালতে আখেরাতে আমাদের নেতৃবৃন্দ নিশ্চিতভাবে ন্যায় বিচার পাবেন।
তিনি বলেন, মহামতি সক্রেটিস, ইতিহাস বিখ্যাত নেত্রী জোয়ান অবআর্ক কতজনকেই তো Judicial Killing করেছে। আদালত তখনও ছিল। কিন্তু ১০০ বছর পরে তাদেরকে জাতীয় হিরোর মর্যাদা দিয়ে ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হয়েছে।
জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, যে মানুষগুলো সারা জীবন চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন অথবা অন্য কোন অন্যায় করেনি তারা হঠাৎ ’৭১ এ খুনী হয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করল এটা কি করে সম্ভব? আবার জোট সরকারের আমলে ২ জন মন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত ও যোগ্য হিসেবে Far East Economic Review-এর মত পত্রিকায় স্বীকৃতি লাভ করেন।

আমীরে জামায়াত হিসেবে শপথ

জনাব মকবুল আহমাদ স্বাস্থ্যগত কারণে জামায়াতের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াত নেতৃবৃন্দ তা গ্রহণ করেননি। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা আমীর নির্বাচনের জন্য ৩ সদস্যের একটি প্যানেল নির্বাচিত করেন। সারা দেশের রুকনগণ সেই প্যানেল থেকে জনাব মকবুল আহমাদকে আমীর নির্বাচিত করেন। এ বছর ১৭ অক্টোবর তিনি আমীর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সেদিন তিনি তার দীর্ঘ বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। এর পরপরই শুরু হয় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, এ দায়িত্বে যদি সাধারণ লোককেও বসানো হয় তার বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ আসবে, আসতেই থাকবে। এটা রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতার কারণে চলতেই থাকবে।

মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার সম্পর্কে

আমীরে জামায়াত হিসেবে ১৭ অক্টোবর ২০১৬ শপথ নিয়ে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্য, সংহতি ও অগ্রগতিকে সামনে রেখে যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন তা দেশে-বিদেশে সর্বমহলে ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত হয় এবং দেশী-বিদেশী অনেক গণমাধ্যমে তার এ ঐতিহাসিক বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় জনাব মকবুল আহমাদ আমীর হিসেবে শপথ গ্রহণ করার পর দু’একটি স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন ও জাতীয় পত্রিকায় জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর পরিবেশিত হতে থাকে। জামায়াতের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট, লেখক, রাজনীতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন জনতা এ অপপ্রচারে বিস্মিত হন। আমীর হিসেবে শপথ নেয়ার পর তাকে ’৭১-এর ঘটনায় জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন সকলকে হতভম্ব করে। প্রকৃতপক্ষে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সর্বৈব মিথ্যা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ফেনীতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সাথে জনাব মকবুল আহমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
ফেনী জেলার দাগনভূঞা থানার উত্তর লালপুরে ১০ জন হিন্দু ও একজন মুসলিম হত্যা এবং বাড়িঘর অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে মকবুল আহমাদকে জড়িয়ে যে খবর দু’একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকেরা কেউ মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করেনি। উত্তর লালপুরের হত্যাকা- ও অগ্নিসংযোগের জন্য জনৈক হিন্দু ভদ্রলোক জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের এ হামলার জন্য দায়ী লাতু ও শাহাবুদ্দিন নামক ২ জন লোক। তারা ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। তারা স্পষ্টতই উল্লেখ করেছেন মকবুল আহমাদ সাহেব এ ঘটনার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নন। আমরা তাকে দেখেনি। তার নাম শুনেছি। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ বলে লোকমুখে শুনেছি। আরো শুনেছি তিনি মানুষের উপকার করেন। কারো ক্ষতি করেন না। ১৯৭১ সালে ঐ ভদ্রলোকের বয়স ছিল ১২/১৩ বছর। তিনি বললেন আজও সে ঘটনার কথা আমার মনে পড়ে। অনেকে পীস কমিটির সভাপতি হিসেবে তার নাম উল্লেখ করেন, যা সর্বৈব মিথ্যা। পীস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন খাজা আহমদ এম.পি.এ তার বাড়ি ফেনীর বারাহীপুর গ্রামে। সেক্রেটারি ছিলেন জনৈক মকবুল আহমদ এডভোকেট। তার বাসা ছিল ফেনী জহিরিয়া মসজিদের নিকট, তার বাড়ি ছিল দাগনভূঞা থানার ছিলনীয়া এলাকায়। মকবুল আহমাদকে দায়ী করার এটাও একটা ভিত্তি। এ মকবুল আহমাদ এডভোকেট ছিলেন সেটা চাপিয়ে রেখে মিথ্যার বেসাতী করছেন কিছু লোক। শান্তি কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি হওয়াতো দূরের কথা তিনি শান্তি কমিটির সাধারণ সদস্যও ছিলেন না। শুধু তাই নয়, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি বাহিনীর সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন না।

খুশিপুর গ্রামের আহসান উল্লাহকে হত্যার জন্য জনাব মকবুল আহমাদ নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে যে সব খবর প্রচারিত হয়েছে তার মধ্যে সত্যের লেশমাত্র নেই। আহসান উল্লাহর স্ত্রী সালেহা বেগম এবং তার ভাই মুজিবুল হক মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করে যেসব কথাবার্তা প্রচার করা হয়েছে তার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন যে, আহসানউল্লাহ তার সাত মাস বয়সী ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকে দেখার জন্য বাড়ি এসেছিলেন এবং পরে তিনি বাড়ি থেকে ছিলনীয়া বাজারে যান এবং সেখান থেকে ফেরত আসেননি। তার লাশ কোথাও পাওয়া যায়নি। এর সাথে জনাব মকবুল আহমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা মকবুল আহমাদ সম্পর্কে জানান, তার মত একজন ভালো মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করার প্রশ্নই আসে না। যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা মিথ্যা কথা বলছেন।
১৯ নভেম্বর ২০১৬ শনিবার বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় “জামায়াত আমীর মকবুলের চিঠিতে একাত্তরে হত্যার প্রমাণ” শীর্ষক একটি মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটিতে জামায়াতে ইসলামীর ফেনী মহকুমার প্যাড ব্যবহার করে মহকুমা আমীর হিসেবে জনাব মকবুল আহমাদ কর্তৃক রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামে ভারপ্রাপ্ত ডিউটি অফিসার জনাব ফজলুল হককে স্বহস্তে ইংরেজীতে একটি চিঠি লেখেছেন বলে দেখানো হয়েছে। চিঠিতে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এর নেতা মাওলানা ওয়েজউদ্দিনের চট্টগ্রাম যাবার তথ্য দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার গতিবিধি সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে …….. ইত্যাদি ইত্যাদি।

চিঠিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং পরিকল্পিতভাবে ‘সৃজন’ করা হয়েছে। কতগুলো বিষয় সামনে আনলেই এ চিঠি মিথ্যা হওয়ার বিষয়ে ধারণা পেতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়ঃ
১.১৯৭১ সালে ফেনী মহকুমা জামায়াতের কোন আমীর ছিল না। এ ধরনের কোন পদও ছিল না। মহকুমার দায়িত্বশীলকে বলা হতো ‘নাজেম’। জনাব মকবুল আহমাদ নাজেমও ছিলেন না।
২.চিঠির শুরুতেই সালাম দেয়া হয়নি। জামায়াতের কোন নেতা বা দায়িত্বশীল কাউকে চিঠি লেখলে শুরুতেই ‘আস্সালামু আলাইকুম’ উল্লেখ করে থাকে। অথচ এ চিঠিতে তা উল্লেখ নেই। এটা চিঠি মিথ্যা হওয়ার অন্যতম প্রমাণ।
৩.জামায়াতের নেতার পক্ষ থেকে চিঠি চট্টগ্রামের কোন জামায়াত নেতার কাছে না লিখে লিখা হয়েছে চট্টগ্রামের রেডিও পাকিস্তানের ডিউটি অফিসারকে।
৪.চিঠিতে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে ‘মকবুল আহমাদ বি.এ’ লিখে। স্বাক্ষরের সময় কেউ বি.এ/এম.এ লিখে স্বাক্ষর দেয় তা কত বড় ডাহা মিথ্যা তা সহজেই অনুমান করা যায়।
৫.চিঠির লেখা মকবুল আহমাদের নয়, স্বক্ষরও তার নয়। জামায়াতের পক্ষ থেকে এ চিঠির কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
৬.চিঠিতে নামের যে বানান লেখা হয়েছে ঐ বানানের সাথে মকবুল আহমাদের নামের বানানের মিল নেই।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মকবুল আহমাদ জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামলে আওয়ামী লীগ নেতা হাজারী এ চিঠি তৈরী করে জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালান। ঐ সময় জামায়াতের পক্ষ থেকে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং পত্রিকায় তা ছাপা হয় তখন তারা চুপসে যায়। মাঝখানে এ নিয়ে আর কোন আলোচনা নেই। জনাব মকবুল আহমাদ আমীর হওয়ার পর দীর্ঘ ২৫ বছর পর আবার এ চিঠির আগমন ঘটেছে। মূলত: মকবুল আহমাদকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই এ চিঠির আবির্ভাব। এমনকি তিনি ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পালনকালেও এ ধরনের কোন চিঠির আলামত প্রকাশ হয়নি।
জনাব মাওলানা ওয়েজউদ্দিনের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম চৌধুরী ও কন্যা সৈয়দা ওয়াসিমা পারভীন এনী জীবিত আছেন। ওয়েজউদ্দিনের কন্যার নিকট অপপ্রচারকারীরা গিয়েছিল ওয়েজউদ্দিনের হত্যাকা-ের জন্য মকবুল আহমাদকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়েরের জন্য প্ররোচিত করতে। কন্যা ওয়াসিমা পারভীন তাদের কথায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আপনারা কারা? এতদিন কোথায় ছিলেন? ৪৫ বছরের মধ্যে আপনারা তো কোন খবর নিতে আসলেন না। আমার বাবার জায়গা-জমি বেদখল হয়ে গেল! একদিনও তো তা উদ্ধার করার জন্য আসলেন না। এখন কেন আসলেন?’
সৈয়দা ওয়াসিমা পারভীন মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে রাজি হননি। তারা বলেছেন, আমরা একজন নির্দোষ মানুষকে দোষী বানাতে চাই না। এতে আমার বাবার আত্মা কষ্ট পাবে।
জনাব মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে কিভাবে মানুষের কল্যাণ করেছেন তা শফিকুর রহমান চৌধুরী রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে ফেনী’ পুস্তকের ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। দাগনভূঞার সিন্ধুরপুর বাজার থেকে পাক সেনাবাহিনী ৬ জনকে ধরে ফেনীতে নিয়ে যায়। বাজার থেকে ঐ সময়ের মূল্যমানের ২০/৩০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। জনাব মকবুল আহমাদ তাদের মুক্তির জন্য জোর প্রচেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে ৬ জনের মধ্য থেকে ৫ জন মুক্তি লাভ করে।
জনাব মকবুল আহমাদ মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে সদা তৎপর ছিলেন সেখানে তাকে হত্যা, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়ানো ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না।
সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন, “সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী”(সূরা বনী ইসরাইল-৮১)। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে কখনো সত্যকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। জনাব মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে যতই অপপ্রচার চালানো হউক না কেন ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ সাক্ষী তিনি কোন ধরনের অনৈতিক, ধ্বংসাত্মক, হিংসাত্মক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত নন। অপপ্রচারকারীদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন হবে না। জনতার প্রতিরোধের মুখে মিথ্যা ভেসে যাবে। সত্য বিজয়ী হবে। ইনশাআল্লাহ।