ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

সুজাতা থেকে সুষমা: কারো অাশা, কারো হতাশা


বাংলাদেশ বার্তাঃ ভারত বাংলাদেশকে তার বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র দাবি করলেও ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিন যেসব সমস্যা অমীমাংসিত পর্যায়ে রয়েছে, তা সুপ্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্বের পরিচায়ক নয়। বাংলাদেশ ভারতের স্থলসীমানার চতুর্দিকে কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ। এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়ার অস্তিত্ব যুদ্ধে লিপ্ত শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বিদ্যমান। যেমন- ইসরাইল ও ফিলিস্তিন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে এ সব নদীর পানির সমহিস্যার দাবিদার হলেও প্রায় প্রতিটি নদীর উৎসস্থল পরবর্তী যাত্রাপথে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফাভাবে পানি উত্তোলন করে চলেছে। গঙ্গা নদীর পানির ব্যাপারে চুক্তি হলেও চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেয়া হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানি চুক্তিটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরোধের অজুহাতে দীর্ঘকাল কালক্ষেপণের অভিলাসে থমকে আছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে গরু প্রবেশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতিনিয়ত বাঁধার সম্মুখীন হলেও মাদক প্রবেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের বাধা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতি বছর যে সংখ্যক বাংলাদেশীর ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে পৃথিবীর শত্রুভাবাপন্ন দেশের বিরোধপূর্ণ সীমানায় এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায় না।
ভারত সর্বদা তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল যেন দেশটির প্রতি অনুগত থাকে সে বিষয়ে সচেষ্ট। ভারতের এ নীতিটি তার প্রতিবেশী সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পাকিস্তানের সাথে চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে দেশটি যখনই ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের হুমকির সম্মুখীন হয়, তখন দেখা যায় চীন পাকিস্তানের স্বপক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে আসছে। চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেশটির প্রভাব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এ ধারা থেকে উপমহাদেশের দেশ বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপও মুক্ত নয়। কিন্তু এসব দেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসারসহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের বৃদ্ধি ঘটুক ভারত এ বিষয়ে খুবই স্পর্শকাতর। ভারত উপমহাদেশের শক্তিধর অর্থনীতির দেশ হিসেবে তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে যে শর্তে সাহায্য সহযোগিতা করছে চীনের কাছ থেকে এ সব দেশ আরো অনেক শিথিল শর্তে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে আশ্বস্ত হচ্ছে। আর এ কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো চীনের ব্যাপক বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিলেও ভারত এ ক্ষেত্রে তার সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে ভারতে কংগ্রেস দল ক্ষমতাসীন ছিল। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন সুজাতা সিং। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে থেকেই তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতায় আন্দোলন করে আসছিল। বিএনপির আন্দোলন তীব্রতর হলে জাতীয় পার্টিও এ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রয়াস নয়। এ পর্যায়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিশেষ বিমানযোগে ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদের সাথে পৃথকভাবে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ হতে কোনো বক্তব্য দেয়া না হলেও জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদের বক্তব্যে জানা যায় সুজাতা সিং এরশাদের দল জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অন্যথায় দেশে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত মৌলবাদের উত্থান ঘটবে। এত কিছুর পরও জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনীহ ছিলেন। তাকে জোরপূর্বক অসুস্থ বানিয়ে সমন্বিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসারত রেখে তার স্ত্রীর নেতৃত্বে কিভাবে তার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল সে বিষয়ে এ দেশের সচেতন জনমানুষ সম্যক অবহিত।
৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনটি দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করায় সে নির্বাচনটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সে নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের বাংলাদেশে আগমন ঘটেনি; যদিও ভারত ও ভুটান থেকে দু’জন করে চারজন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অর্থায়নে নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সে নির্বাচনে একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৬৫(২) এর আলোকে এ ধরনের নির্বাচনকে বৈধ বলা যায় কি-না সে প্রশ্নে বিতর্ক রয়েছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নেহায়াত সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠান-পরবর্তী আওয়ামী লীগ মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে তার ব্যক্ত অবস্থান থেকে সরে এসে বলতে শুরু করে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে নির্ধারিত সময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯০ সালে পরবর্তী বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট তা হলো একটি সরকারের মেয়াদ অবসান পরবর্তী কোনো ধরনের সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। এ কথাটি অনস্বীকার্য যে একদা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে সে বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কিন্তু সে ব্যবস্থাটির বিলোপসাধনের মধ্য দিয়ে সে বিষয়ে পুনঃ অনৈক্য ও বিভেদের সূত্রপাত ঘটানো হয়।
ইতিহাসের নির্মম পরিহাস সুজাতা সিংয়ের মুখে বাংলাদেশে নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত বিজয়ী হলে এ দেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটবেÑ কথাটি উচ্চারিত হওয়ার এক বছরের মাথায় ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি নামক যে দল ক্ষমতাসীন হয়েছে, তাতে তাদের কূটকৌশলে এ দেশে তথাকথিত মৌলবাদের উত্থান ঠেকানো গেলেও ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদের উত্থান রোধ করা যায়নি।
সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ সালে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদে না থাকলেও দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিপক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করে আসছে। দলটি ইতোপূর্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেও সম্প্রতি সহায়ক সরকারের কথা বলে আসছে। যদিও এ প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার পূর্বাবস্থান দলীয় সরকারের অধীন সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে যখন বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য বিরাজমান, এমন অবস্থায় ভারতের বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ পরামর্শ কমিশনের (জেসিসি) সভায় যোগদানের উদ্দেশে বিশেষ বিমানযোগে একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টি নেত্রী রওশন এরশাদের সাথে পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়ে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নির্বাচনকালে সরকার বিষয়ে এবং কী প্রক্রিয়ায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন এটি নির্ধারণের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণের।
ভারত যে প্রক্রিয়া ও কূটকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে দশম সংসদ নির্বাচনে তার অভিপ্রায় প্রতিফলনে সচেষ্ট ছিল ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রির এ সফরকালে ভারতের পক্ষ হতে অনুরূপ অভিপ্রায়ের প্রকাশ ঘটেনি। ভারত প্রকৃত অর্থেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কূটকৌশল ও অন্তরায় সৃষ্টি থেকে বিরত থাকলে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে জনসমর্থনের দিক থেকে সর্বাগ্রে অবস্থানকারী দলটি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হবে। এ ধরনের বিজয় কারো আশার কারণ আবার কারো হতাশার কারণ। এ ধরনের আশা ও হতাশায় কোনো বিদেশী রাষ্ট্র ক্রীড়নক হয়ে জনমতের উপেক্ষা ও অবজ্ঞায় দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণে ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তা গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে কলুষিত করে। এ আশা ও হতাশার দোলাচলে আমাদের গণতন্ত্র ও আগামী নির্বাচন কলুষিত হোক এটি এ দেশের সাধারণ জনমানুষের চিন্তা ও চেতনার অতীত।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন