শিরোনাম দেখে আঁৎকে উঠার প্রয়োজন নেই। আমি কাউকে তাকফির করছি না। যেহেতু আহলে হাদিসের নামধারী ব্যক্তিদের শায়খরা কোরআন হাদিস দিয়েই প্রমাণ করে ফেলেছেন যে, হরতাল আহ্ববানকারীরা কাফের, সেহেতু কোরআন হাদিস দিয়েই প্রমাণ করে দেবো, আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবরাও দলে দলে কাফের। তার আগে চলূন একটি মজার ঘটনা জেনে নেই। একদম তরতাজা ঘটনা। গত সপ্তাহে ঘটলো মজার ঘটনাটি।
.
কুমরাডুঙ্গিতে গাড়ি ব্যবসায়ী এক ভাইর সাথে পরিচয় ছিলো। প্রায় সময় তিনি বলতেন, আমরা তাওহীদের দাওয়াত দেবো, তাতেই মানুষ নাজাত পেয়ে যাবে। এর পরে যদি সব লোক ঈমান আনে আমলে পুর্নাঙ্গ হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ পাক পুরস্কার হিসেবে খেলাফত দিবেন। হাদিসে আসছে (এখানে সহিহ শব্দ লাগাতে ভুলে গেছে) রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য দন্ধ সংগ্রাম করা এবং এর জন্য লোভিত হওয়াও অপরাধ, মারাত্নক গুনাহ।। অথচ আজকাল ইসলামী দল নাম দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কত চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইসলামের কি উপকার হয় এতে ?
.
আমি বহুবার তাকে বুঝয়েছি যে, ঈমানের হেফাজতের জন্য আল্লাহ পাক যে লৌহ মুসলিমদের দান করেছন সেটা হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনুপস্থিতি বহু শিরক আর কবিরা গুনাহের দ্বার উন্মোাচিত করে দেয়। মানুষকে আল্লাহর হুকুম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য করে অথচ সেই ক্ষেত্রে তাকে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যসব শক্তির হুকুমকে অমান্য করার হুকুম দেওয়া ছিলো। এখানে তাওহীদকে পদদলিত করতে বাধ্য করা শক্তির নাম হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এই ক্ষেত্রে ইসলাম চুপ থাকতে পারে বলে মনে হয় কি ? তাছাড়া এমন অনেক হুকুম আছে যেটা আম পাবলিকের জন্য ততক্ষন পর্যন্ত পালণযোগ্য হয়না যতক্ষন না তাকে ইসলামী খেলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্রের শিকলে বেধে ফেলা হয় এবং সেটাকে কার্যকর করা হয়।
.
তিনি আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলতেন, এগুলো ফাও কথা। বহু নবী এমন ছিলেন যারা ইসলামী রাষ্ট্র ক্বায়েম করেননি, তাহলে কি তাদের ঈমান ছিলো না, তাদের দ্বীন পুর্ণাঙ্গ ছিলো না। আমি বললাম, বহু নবী ও রাসুল আল্লাহর কাছে প্রিয় ছিলেন, তাদের শরিয়াত হিসেবে বহু কিতাব নাযিল করা হলো কিন্তু তখন কোরআন কেনো দেওয়া হলো না ? তাদের ওপর কোরআনের অনুরুপ একটি কিতাব দিলে কি সমস্যা ছিলো ? যে কারণে আল্লাহ পাক কোরআন তাদের যুগে নাযিল করেননি, সেই কারনেই ঐসব নবীদের (আ) কর্মপন্থা বা শরীয়াত আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমরা দেখবো আল্লাহর কোরআন এবং তার রাসুলের (স) সুন্নাহ। সাথে সাথে এও দেখবো যে, সুন্নাহকে কাছ দেখা ব্যক্তিরা সে বিষয়ে কি বলেন।
.
যেসব নবীরা দ্বীনকে পুর্ণাঙ্গ ভাবে সব ক্ষেত্রে ক্বায়েম করতে পারেননি সেটা তাদের ব্যর্থতা নয়। তাদের দায়িত্ব্য ছিলো চেষ্টা করা, তারা সেটা করেছেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। এটা প্রশ্ন করা হবে না যে, তুমি দ্বীন বিজয়ী করলে না কেন ? যেসব নবীদের যুগে গোত্র প্রথা ছিলো, সেখানে দাওয়াত ও তাবলীগের ক্ষেত্রে যে ভাষা নবীরা (আ) ব্যবহার করতো এবং যেসব শ্রেনীর লোকেরা প্রথমে তার বিরোধীতায় নেমে যেতো, তার বিবরণ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নবীদের দাওয়াত এতটাই বিপ্লবী এবং সমাজ ও দেশ সংস্কারযোগ্য ছিলো যে, ততাকলিন নেতাকর্তা, গোত্র প্রধান এবং কোন কোন ক্ষেত্রে শাষকরাও পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে সেই দাওয়াতের বিরোধীতায় লেগে যেতো।
.
নবীরা যদি বর্তমান জামানার তাবলীগ বা আহলে হাদিসের মতো তাওহীদ বুঝতো এবং লোক সকলকে এই মর্মে আশ্বস্ত করতো, ভাইসব এসব ফেতনার পিছনে আমরা না ছুটি। আমরা তাওহীদের ওপর দন্ডায়মান হই, আমল উন্নত করি। তাহলেই নাজাতের জন্য যথেস্ট। আমাদের জন্য জরুরী নয় রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করা। বিশ্বাস করুন, তাহলে ইব্রাহিম আ এর জন্য নমরুদের পক্ষ থেকে মুরগির রেজালা পাঠানো হতো যেভাবে আজকাল মসজিদে মসজিদে মুরগী পাঠানো হয়।
.
মুসা আ এর দাওয়াতের কার্যালয় উদ্ভোধন করার জন্য স্বয়ং ফেরাউন হাজির হতো যেমনটা আজাকাল দ্বীনের দুশমনরা সহিহ তরিকার ভাইদের কার্যালয় উদ্ভোধন করে তাওহীদের প্রচার প্রসারে (?) ধ্যানজ্ঞান বিলিয়ে দিয়েছেন। যদি এমন তাওহীদের দাওয়াত আমার প্রিয় রাসুল (স) দিতেন, তাহলে বিশ্বাস করুন, ওতবা শায়বারা রাসুলের (স) হুজুরা জেয়ারত করেই সফরে বের হতো যেমনটি আজকাল বিভিন্ন খানকা মাজার জেয়ারত করে যুগের তাগুতরা তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
.
তিনি আমার কথা শুনতেন বলে মনে হতো না। এক প্রকার তুচ্ছ তাচ্ছিলো করতে পছন্দ করতেন। সেদিন তার এলাকায় গিয়ে শুনলাম তার স্ত্রী আরে পুরুষের সাথে এক ঘরে ধরা পড়েছে। লোকজন হাতে নাতে ধরার পরে সেই রাতেই বেচারার স্ত্রী প্রেমীক পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়। এদিকে সেই ঘটনার জন্য মেয়ের বাবা মা তার বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করে এবং অভিযোগ করে সে তার স্ত্রীকে মেরে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে।
.
কিছু দিন পালিয়ে থাকার পরে মেয়েটি তার বাড়িতে ফিরে আসে। এরপরে ইউনিয়ন পরিষদে এই নিয়ে বিচার শালিস বসে তাকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে দেয়। পাশাপাশি কোর্টের মামলা উঠানো বাবদ বিশ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। ঘটনা শুনার পরে আমি তাকে বললাম, কি ব্যাপার ভাই ? আপনার শায়েখের এত লেকচার আপনি আপলোড করে রেখেছেন। সেখানে কি জ্বীন, তালাক, খোলা আইন বিষয়ে কোন লেকচার নেই ?
.
আপনার স্ত্রী জ্বিনা করলো অথচ আপনি কোরআনের আয়াত এবং সহিহ হাদিসের বর্ণনা শুনিয়ে তাদের বলে দিতেন এই জায়গায় আমার আল্লাহর হুকুম কি ছিলো ? একজন তাওহীদবাদীর জন্য এটা শোভনীয় নয় যে সে তার জীবনের এত বড় গুরুত্ব্যপুর্ণ ফয়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে তাগুতের হুকুম অনুযায়ী রায় গ্রহণ করবে। ভাই এখানে কেন সহিহ হাদিস আর কোরআনের আয়াত শুনিয়ে দিয়ে বলে দিলেন না যে, আমি তাওহীদবাদী মানুষ, এক আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানি না। কুফরি বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করা কুফরি, ঈমান ভঙ্গের কারণ। কেন বললেন না যে, আপনার স্ত্রীকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা বিচারকদের ওপর ফরজ করা হয়েছে ?
.
তিনি বললেন, ভাই এখানে আমার কি করার আছে ? দেশে যে আইন আছে সেটা মানতে তো আমি বাধ্য। বললাম, ভাই আপনি বাধ্য নাকি স্বেচ্ছায় মেনে নিচ্ছেন সেটা তো আপনাদের শায়েখদের লেকচার শুনেই বুঝতে পারি। তবে আমরা মনে করি, আপনার মতো লক্ষ কুটি বনী আদমকে মানুষের আইনের গোলাম বানিয়ে নেওয়া হয়েছে যা তারা মানতে চায় না। এসব লোকদেরকে মানুষের গোলামীর জোয়াল থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা আওয়াজ তুলেছি এই বলে যে, দ্বীন ক্বায়েম করো, মানুষের প্রভুত্ব খমত করে তাওহীদের পতাকা উড্ডয়ন করো। এটাই আপনার শায়েখরা পছন্দ করছেন না। বলুন, আপনাকে কুফরি তন্ত্রের দিকে ঠেলে দেওয়ার পেছনে আপনার শায়েখদের মৌন সমর্থন আছে কিনা ?
.
যদি বলি, তালাকের মতো গুরুত্ব্যপুর্ণ বিষয়ে যেখানে কোরআনের মুহকামাত আয়াত আছে, সেখানে অন্য কোন বিধাণ দিয়ে ফয়সালা করা এবং মেনে নেওয়া নেওয়া দুটিই কুফরি। আপনি কুফরি করছেন ইউসুফরে ব্যাটা রাজ্জাক আর মতিউর রহমান মাদানী সহ অন্যান্য শায়েখদের ফতোয়ার কারণে। তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি আইন দিয়ে কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে ফয়সালা দিয়ে তাকে কুফরির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য তারা সমান দায়ী। তো মাননীয় স্পিকার আমি কি এখন গোটা দশেক আয়াত পেশ করে রাজ্জাক সাহেব আর মতিউর রহমান মাদানীকে কাফের বলতে পারি ?
.
বিশ্বাস করুন, যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী না করা যাবে, ততক্ষন ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, বহু বনী আদম আল্লাহ পাকের হুকুমকে পদদলিত করে মানুষের হকুমে আমল করতে বাধ্য হবেন। এখন ভাবুন, এই অনিচ্ছা শব্দটি কি তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা বলেন, রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম বলতে কিছু নেই ? কি জবাব দেবেন তারা ? _Apu Ahmed
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন