বাংলাদেশ বার্তাঃ আমাদের দেশে সব শ্রেণির মানুষের প্রিয় একটি ফল হচ্ছে জাম্বুরা। দেশের প্রায় সর্বত্রই জাম্বুরার চাষ হয়। জাম্বুরা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি খেতেও বেশ সুস্বাদু। প্রচুর ভিটামিন– সি ও পটাসিময়াম সমৃদ্ধ জাম্বুরায় রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। জাম্বুরায় ভিটামিন– সি এর পরিমাণ ১০৫ মি. গ্রাম। পক্ষান্তরে আমড়ায় ৯২ মি.গ্রাম, লেবুতে ৬৩ মি.গ্রাম, কমলায় ৬৪ মি. গ্রাম ও কামরাঙ্গায় ৬১ মি. গ্রাম।
জাম্বুরা এক প্রকার টক–মিষ্টি ফল। এর ইংরেজি নাম মেবণফম বৈজ্ঞানিক নাম মেবণফম জাম্বুরার আদি উৎস দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। বর্তমানে ভাতর, চীন, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আমেরিকাসহ এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাম্বুরার চাষ হয়। তবে আকার, রঙ ও স্বাদে বিভিন্ন দেশের জাম্বুরায় ভিন্নতা আছে। বিভিন্ন ভাষায় এর বিভিন্ন নামও আছে। যেমন পমেলো, জাবং, শ্যাডক ইত্যাদি। আমাদেরে দেশেও এলাকা ভেদে জাম্বুরার বিভিন্ন নাম লক্ষ্য করা যায়। যেমন– বাতাবি লেবু, বাদামি লেবু, বড় লেবু, তরুঞ্জা, ছোলম ইত্যাদি।
কাঁচা জাম্বুরা বাইরের অংশ সবুজ আর যখন পাকে তখন হাল্কা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। জাম্বুরার ভেতরের অংশ যা খাওয়া হয়, নরম খোসা দ্বারা অবৃত। ভেতরের অংশ কোয়া আকারের এবং কোয়াগুলি সাদা, গোলাপী, লাল, হলুদ বিভিন্ন রঙের হয়। জাম্বুরা বিভিন্ন সাইজের হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি জাম্বুরার ওজন এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশে বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্ডি ও চকোলেট তৈরিতে জাম্বুরা ব্যবহার করে থাকে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ : জাম্বুরায় ক্যালরি কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটি খুব উপকারী। জাম্বুরায় থাকা উপাদান অগ্নাশয়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ : জাম্বুরা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ জাম্বুরায় থাকা পেকটিন রক্তের কোলেস্টরল কমায়। জাম্বুরা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, জাম্বুরায় এমন কিছু এনজাইম রয়েছে যা অপ্রয়োজনীয় চর্বি পুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম সেন্টারের গবেষণায় প্রমান পাওয়া গেছে যে, যারা অধিক স্থুলকায়– প্রতিদিন আহারের আধা ঘণ্টা আগে এক গহ্মাস জাম্বুরার জুস খেয়ে ১২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের ওজন দুই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
পাকস্থলি : জাম্বুরা অ্যাসিটিডি বা গ্যাস প্রতিরোধ করে। জাম্বুরায় থাকা অ্যাসিড খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে, পাকস্থলি সুস্থ রাখে । ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের জটিলতা দূর হয়।
হৃদরোগ : জাম্বুরায় থাকা পেকটিন শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টরল বের করে দেয়। রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অপর দিকে পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে হৃৎপিন্ড সুরক্ষা পায়, হৃৎরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
রক্ত : জাম্বুরারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন– সি থাকায় রক্তনালীর সংকোচন–সম্প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্ত পরিষ্কার করে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে তা ধ্বংস করে। রক্তের লোহিতকণিকাকে টক্সিন ও অন্যান্য দূষিত পাদার্থ থেকে রক্ষা করে। রক্তে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পরিবহণে সাহায়তা করে, রক্তনালী প্রদাহ কমায়।
ভিটামিন সি– জাম্বুরায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ত্বক, চুল ও দাঁতের সৌন্দর্য বাড়ায়। মুখগহ্বরের ঘা প্রতিরোধ করে। ভিটামিন– সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে একই সাথে মানব দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস থেকে রক্ষা করে।
মাড়ির রোগ : মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, মাড়ি প্রদাহ ও ক্ষতসহ মাড়ির যাবতীয় জটিলতায় জাম্বুরা বেশ উপকারী। ব্রিটিশ ডেন্টাল জার্নাালে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাড়ির অধিকাংশ জটিলতা ভিটামিন–সি এর অভাবজনিত কারণে। নিয়মিত জাম্বুরা খাওয়ার ফলে সেই অভাব দূর হয়ে যায়।
ত্বক : জাম্বুরায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকের সুরক্ষা দেয়, ত্বক মসৃণ রাখে, ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
বাত ও গেঁটেবাত প্রতিরোধ : গবেষণায় দেখা গেছে, জাম্বুরায় স্যালিসাইলিক এসিড নামক এমন এক উপাদান আছে যা অজৈব ক্যালসিয়াম ভাঙতে সাহায্য করে। এর ফলে এসব অজৈব ক্যালসিয়াম কার্টিলেজ ও জয়েন্টে জমাট বাঁধতে পারে না। যার ফলে বাত গেঁটেবাত, অথ্রাইটিসের প্রবণতা কমে যায়।
মূত্রপাথরি ও পিত্তপাথরি : জাম্বুরার জুস কিডনিতে পাথর জমা বা সিস্ট গঠন প্রতিরোধ করে এবং গলব্লাডারের পাথর গলিয়ে বের করে দেয়। শুধু তাই নয়, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটারি প্রভাব কিডনির নানাবিধ জটিলতা প্রতিরোধ করে। ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশনে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়।
প্রোস্টেট ক্যান্সার : এশিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিনে জাম্বুরার উপর প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা প্রতিদিন লাইকোপেনসমৃদ্ধ ফল খান ও গ্রিন টি পান করেন তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় শতকরা ৮২ থেকে ৮৬ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। জাম্বুরা লাইকোপেন সমৃদ্ধ ফল। এছাড়া জাম্বুরায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন–সি লাইকোপেনের কার্যকারিতা আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন এক গ্লাস জাম্বুরার জুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
সালাদ : ধনেপাদা, পুদিনা, পেঁয়াজ, লবণ, কাঁচামরিচ কুচি করে সরিষার তেল মেখে খাবার টেবিলে সালাদ হিসেবে জাম্বুরা বেশ মাজাদার।
জাম্বুরা শরীরের ক্লান্তি দূর করে, শরীরকে চাঙ্গা রাখে। সর্দি–ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় জাম্বুরা খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
জ্বরে ভোগার পর যখন যখন জিহ্বার স্বাদ চলে যায়, খাবারের প্রতি রুচি থাকে না, শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। জাম্বুরা এ সময় ভাল কাজ করে।
সতর্কতা : যারা বিভিন্ন রোগে ভোগেন, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা, অনিদ্রা, অ্যালার্জি ইত্যাদি রোগে নিয়মিত যাদের ওষুধ সেবন করতে হয়, জাম্বুরার জুস গ্রহণে কিছুটা সতর্কতা অবলম্ব করতে হবে। কারণ জাম্বুরায় থাকা রাসায়নিক উপাদান নারিনজেনিন বিভিন্ন ওষুধের সাথে মিশিে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যারা নিয়মিত ওষুধ সেবি তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা দরকার।
আমাদের দেশে পথে ঘাটে, রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে মসলা, বিট লবণ, মরিচ, সরিষার তেল মিশিয়ে জাম্বুরা কেটে প্লেটে বা কাগজে করে বিক্রি করে। এভাবে খোলা জাম্বুরা খুবই ক্ষতিকর। উত্তম হচ্ছে জাম্বুরা কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়া।
অধ্যাপক নইম কাদের
চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম,
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮
E-mail : nayeemquaderctg@gmail.com
চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম,
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮
E-mail : nayeemquaderctg@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন