ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭

ইকামাতে দ্বীনের ব্যাখ্যায় মতিউর রহমান মাদানীর মূর্খতা, ধৃষ্টতা ও বিভ্রান্তির জবাব: শায়খ প্রফেসর ড. বিএম মফিজুর রহমান আল আযহারীর টাইমলাইন থেকে

বাংলাদেশ বার্তাঃ দ্বীন হচ্ছে শুধু তাওহীদ, নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। এর সাথে রাজনীত তথা রাষ্ট্রব্যবস্থার কোন সম্পর্ক নেই। তাই রাজনীতি বা রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে ইকামাতে দ্বীনের কোন সম্পর্ক নেই। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা ইকামাতে দ্বীনের অর্থ বুঝেনি। তারা গোমরাহ। কোন নবী রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো না। এমনি মুসা (আ.) ও না। লোহিত সাগরে ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর তার পরিত্যক্ত শূন্য সিংহাসনের মুসা একদিনের জন্যও বসেন নি।
এই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীনের ব্যাপারে মতিউর রহমান সাহেবের বক্তব্যের মূলকথা। 
কুরআন-হাদীস ও বাস্তবতার আলোকে তাঁর এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে যার নুন্যতম জ্ঞান আছে, এমন কোন ব্যক্তি এ রকম কথা বলতে পারে না। এট স্পষ্টত ধৃষ্টতা ও বিভ্রান্তি ছাড়া কিছুই নয়। 
কারণ:
তার এ বক্তব্য কুরআন-সুন্নাহ ও বাস্তবতা পরিপন্থী। যেমন:

১. আল্লাহর বাণী:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ....(25)
“আমরা আমাদের রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও মিযান (দাঁড়িপাল্লা), যাতে লোকেরা ন্যায় বিচার করতে পারে। আমি লৌহ নাযিল করেছি, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ” (সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৫)। 
এ আয়াতে দাঁড়িপাল্লার মাধ্যমে যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, তা কি রাষ্ট্রব্যবস্থা ব্যতীত সম্ভব? এই প্রসঙ্গের সাথে লৌহের কি সম্পর্ক? তাও বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখানে লৌহ মানে রাষ্ট্রক্ষমতা/লৌহদন্ড। যার সাথে ন্যায়বিচারের সম্পর্ক রয়েছে। 
২. আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা আল-মায়িদার ৪৪, ৪৫, ৪৭ নং আয়াতে, যারা তাঁর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে হুকুম/শাসন করে না, তাদেরকে কাফির, যালিম, ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। 
৩. সূরা আল-মায়িদার ৪৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন:
فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
হে রাসূল, অাপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না”। 
৪. সূরা আল-মায়িদার ৪৯ নাং আয়াতেও বলা হয়েছে:
وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ“
“হে রাসূল, অাপনি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তা দিয়ে বিচার-ফয়সালা/ শাসন করুন। আপনার কাছে যে সত্য এসেছে সে ব্যাপারে ওদের মনগড়া কথাবার্তার অনুসরণ করবেন না। আল্লাহ আপনার উপর নাযিল করেছেন, তার কোন বিষয়ে যেন তারা আপনাকে ফিতনায় ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন”। 
৫. সূরা আননিসার ১০৫ নং আয়াতে আল্লাহ তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেন:
إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَائِنِينَ خَصِيمًا (105)
“নিশ্চয়ই আমি তোমার উপর সত্যতার সাথে কিতাব নাযিল করেছি। যাতে করে তুমি আল্লাহ দেখিয়ে দেয়া বিধান দিয়ে লোকদের মধ্যে বিচার ফয়সালা করতে পার। আর তুমি বিশ্বাস ঘাতকদের পক্ষে ওকালতি করবে না”।
এসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়ে যে, শাসনব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা বা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা একটি ফরয ইবাদাত। দ্বীনের অলঙ্ঘনীয় শিক্ষা। অতএব, তা বাদ দিয়ে ইকামাতে দ্বীন পরিপূর্ণ হতে পারে না। 
উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই একমাত্র ইকামাতে দ্বীন, বিষয়টি এ রকম নয়। এ রকম কথা আমার জানা মতে, কেউ বলে নি। বরং এটা ইকামাতে দ্বীনের একটি অংশ তথা ইকামাতে দ্বীনের চূড়ান্ত রূপ ও পরিপূর্ণ বিকাশ।

৬. আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর খলীফা হিসেবে। যেমন আল্লাহ বলছেন:
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
“নিশ্চয়েই পৃথিবীত আমি আমার খলীফা পাঠাবো” (আল-বাকারাহ:৩০)।
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ ـ الأنعام: 165
“তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছেন”। (অাল-আন‘আম: ১৬৫)।
আর এই খিলাফাতর দাবী হলো, ধর্মভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এজন্যই আল্লাহ দাউদ (আ.) কে বলেছিলেন:
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ 
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা বানিয়েছি। অতএব, তুমি মানুষের মধ্যে সত্যতার সাথে বিচার-ফয়সালা কর। প্রবৃত্তির অনুসরণ করো ন “। (সূরা সদ: ২৬)। 
৭. নবীগণ (স.) দ্বীন ভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ইকামাতে দ্বীন করেছেন। দাউদ (আ.) কথাতো একটু আগেই দেখলাম। রাসূল (স.) ইরশাদ করেন:
كانت بنو إسرائيل تسوسهم الأنبياء كلما هلك نبي خلفه نبي وإنه لا نبي بعدي

“বনী ইসরাইলদেরকে নবীরা শাসন করতেন। একজন নবী যখন মারা যেতেন, তারপরে আরেকজন নবী আসতেন। তবে আমার পরে আর কোন নবী আসবে না”। (বুখারী ও মুসলিম)। 
এই হাদীসে উল্লিখিত تسوس শব্দটি سياسة সিয়াসাহ থেকে উদ্গত। যার অর্থই হলো, রাজনীতি।
মুসা (আ.) এর ব্যাপারে মতিউর সাহেব বলছেন, তিনি মিশরে যান নি; মিশরের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেন নি। এ কথাটাও সর্বজন স্বীকৃত নয়।
বরং কুরআনের একাধিক আয়াত থেকে বুঝা যায়, মুসা আ. তাঁর কওম বনী ইসরাইলকে নিয়ে মিশর গিয়েছিলেন এবং মিশরের শাসনক্ষমতা পরিচালনা করেছিলেন। যেমন: 
সূরা আশ-শু‘আরাতে (আয়াত: ৫৭-৫৯) আল্লাহ বলছেন:
فَأَخْرَجْنَاهُم مِّن جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (57) وَكُنُوزٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ (58) كَذَٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا بَنِي إِسْرَائِيلَ
“তাদেরকে (ফেরাউন ও তার গোষ্ঠীকে) আমি বহিষ্কার করে দিলাম উদ্যানরাজি এবং প্রস্রবণ থেকে। তাদের ধনভান্ডার ও সুরম্য সৌধমালা থেকে। এ রকমই হয়েছিলো এবং বনী ইসরাইলকে এগুলোর উত্তরসূরী/অধিকারী বানিয়েছিলাম”। 
সূরা আদ-দুখানে বলা হয়েছে (আয়াত: ২৫-২৮):
كَمْ تَرَكُوا مِن جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (25) وَزُرُوعٍ وَمَقَامٍ كَرِيمٍ (26) وَنَعْمَةٍ كَانُوا فِيهَا فَاكِهِينَ (27) كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ
“তারা তাদের পশ্চাতে রেখে গেল কত উদ্যান ও প্রস্রবন! কত শষ্য খেত ও সুরম্য প্রাসাদসমূহ। কত বিলাস উপকরণ যা তাদেরকে আনন্দিত করত। এ রকমই হয়েছিল এবং আমি অন্য একটি জাতিকে এগুলোর অধিকারী বানিয়ে দিলাম”। 
যেহেতু, কুরআন কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই এখানে অন্য একটি জাতি বলতে বনী ইসরাইলকে যে বোঝানো হয়েছে, তা সূরা সুআরা থেকেই প্রমাণিত হয়। এ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, বনী ইসরাইল মুসা (আ. ) এর নেতৃত্বে অবার মিশরে গিয়েছিল। এটিই প্রখ্যাত মুফাসসির হাসানের অভিমত। 
তবে কাতাদাহর মত হচ্ছে, বনী ইসরাইল নয়। এটি অন্য একটি জাতি। তবে প্রথম মতটিই যে আয়াতগুলোর কাছাকাছি, তা সহজে বুঝা যায়। 
আল্লামা আলুসী (র.) তার তাফসীর এদুটো মতের সাথে আরো একটি মত উল্লেখ করেছেন। তাহলো: 
“আল্লাহ তাদেরকে ওগুলোর ওয়ারিস/উত্তরাধিকারী/অধিকারী বানিয়েছেন, এর অর্থ হলো, তাদেরকে ওগুলোর উপর ক্ষমতা অর্পন করেছিলেন। সে জন্য যে, তাদেরকে মিশরে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মিশরকে তাদের ক্ষমতাধীন করে দিয়েছিলেন। 
ইমাম কুরতুবী (র.) এর অভিমতে: বনী ইসরাইলগণ মিশরে ফিরে গিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার লোকদের সমস্ত ধনসম্পদের মালিক হয়েছিলেন। (দেুখন, সুরা দুখান ও শুআরার ব্যাখ্যায় তাফসীর কুরতুবী এবং আলুসী)।
প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মাদ হিযাযী আসসাকা বলছেন: ফেরাউন সলীল সমাধিস্থ হওয়ার পর মুসা আর মিশরে গিয়েছিলেন এবং ১৩ বছর শাসন করেছিলেন। একাধিক উপাস্যের ধারনা বিলুপ্ত করেছিলেন, মসজিদ নির্মান করেছিলেন। অতঃপর একজন গভর্ণর নিযুক্ত করে তিনি সিনাই মরুতে চলে যান। সেখান থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করে এর একটি কপি ঐ গভর্ণরকে পাঠিয়ে দিন। তিন সূরা ইউনুসের ৮৭ নং আয়াত দ্বারা এ মর্মে প্রমাণ পেশ করেন: 
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ (87)
“আমি মুসা ও তার ভাইকে এই মর্মে নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা তোমাদের কওমের জন্য মিশরে আবাসস্থান বহাল রাখো। তোমাদের ঘরগুলোকে কিবলাহ তথা নামাযের জায়গা বানাও। আর নামায কায়িম কর। এবং মুমিনেদেরকে সুসংবাদ দাও। 
তাছাড়া, সূরা ‘আরাফের ১৩৭ নং আয়াত দিয়েও অনেকে প্রমাণ দিয়েছেন।
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ (137)
৮. ইমাম আহমাদ ও বাযযার কর্তৃক বর্নিত নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা ইকামাতে দ্বীনেরই অংশ।
عن جابر: أن النبي ـ صلى الله عليه وسلم ـ قال لكعب بن عجزة: "أعاذك الله من إمارة السفهاء يا كعب. قال: وما إمارة السفهاء؟ قال: أمراء يكونون بعدي، لا يهدون بهديي، ولا يستنون بسنتي، فمن صدقهم بكذبهم، وأعانهم على ظلمهم، فأولئك ليسوا مني، ولست منهم، ولا يردون على حوضي، ومن لم يصدقهم بكذبهم، ولم يعنهم على ظلمهم، فأولئك مني، وأنا منهم، وسيردون على حوضي". (أحمد، البزار).
“হযরত যাবির )রা.( থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম স. কা’ব বিন আজুযাহকে বললেন: হে কা’ব আল্লাহ তায়ালা তোমাকে নির্বোধ লোকদের শাসন থেকে হেফাজাত করুন। তিনি আরজ করলেন, নির্বোধদের শাসন কি? রাসূলে কারীম স. বললেন: আমার পরে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা আমার পথনির্দেশনা বা হিদায়াতকে গ্রহণ করবে না। আমার সুন্নাতের অনুকরণ করবে না। অতএব, যারা তাদের মিথ্যাচারকে বিশ্বাস করবে, জুলুম-অত্যাচার চালাতে তাদেরকে সাহায্য করবে, তাদের সাথে আমার, আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমার হাওজের কাছে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের মিথ্যাচারকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং তাদেরকে জুলুমের ব্যাপারে সাহায্য করবে না, তারা আমার, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত। তারা পরকালে আমার হাওজের কাছে স্থান পাবে”- (আহমাদ, বাজ্জার)।

৯. আল্লাহর বাণী:
أن أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ
“তোমরা দ্বীন কায়িম কর। এ ব্যাপারে মতানৈক্য করো না”। (সূরা আশশুরা, আয়াত: ১৩)। 
এখানে দ্বীন বলতে শুধু নামায-রোযা কে বোঝানো হয়নি। পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বোঝানো হয়েছে। এ জন্যই এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আসসাআদী বলছেন: 
قال: أن أقيموا الدين أي: أمركم أن تقيموا جميع شرائع الدين أصوله وفروعه، تقيمونه بأنفسكم، وتجتهدون في إقامته على غيركم،
“অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন তোমরা যেন দ্বীনের উছুল (মৌলিক শিক্ষাগুলো) ও ফুরু (শাখা-প্রশাখা) সবকিছুই প্রতিষ্ঠা কর। দ্বীনি কয়িম করবে নিজেদের জীবনে। সর্ব শক্তি দিয়ে চেষ্ট করবে অন্যদের জীবনে বাস্তবায়নে...।”
দ্বীনের ব্যাপকতা সম্পর্কে ড. আব্দুল কারীম যাইদান বলছেন:
ইসলামের গোটা শিক্ষা তিনভাগে বিভক্ত:
ক. আকীদাহ সংক্রান্ত বিধিবিধান।
খ. আখলাক সংক্রান্ত বিধিবিধান।
গ. ব্যবহারিক বিধান বলা হয়।
এই তৃতীয় প্রকার আবার দুই ভাগে বিভক্ত:
ক. ইবাদাত: যে সব বিধিবিধান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক বিন্যাস করে।
খ. মু‘আমালাহ: যে সকল বিধান সৃষ্টির /মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিন্যাস করে। এ গুলো আবার অনেক প্রকার:
১. পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে আধুনিক আইনের ভাষায় বলা হয়: পারসোনাল স্টেইটাস ল’/ফেমিলি ল’।
২. অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: সিভিল ল’।
৩. বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান। যেগুলোকে বলা হয়: ল’ অব প্রসিজিউর।
৪. মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক বিন্যাসকারী ল’। যাকে বলা হয় প্রাইভেট ইনটারন্যাশনাল ল’।
৫. অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিষয়ক আইন। যাকে বলা হয়: পাবলিক ইনটারন্যাশনাল ল’।
৬. রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাষ্ট্রের ধরন, মূলনীতি, নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্র ও জনগণের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয়: কনস্টিটিউশনাল ল’। 
৭. অপরাধ ও দন্ডবিধি সংক্রান্ত আইন। যাকে বলা হয় পেনাল কোড/ফৌজদারী আইন।
মোট কথা, জীবনের এমন কোন দিক নেই, যেখানে ইসলামের শাসন, অনুশাসন, বিধি-বিধান ও নির্দেশনা নেই। এই সব কিছু নিয়েই ইসলাম, দ্বীন। তাই ইসলাম মানে শুধু কালেমা, নামায , যাকাত। এর সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। এ কথা নাস্তিকদের মুখে শোভা পায়। 
৮. রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামকে অস্বীকার করা শিরক পর্যায়ের অপরাধ। পবিত্র কুরআনে যখন বলা হলো:
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ
“তারা (ইয়াহুদ ও খ্রীস্টানগণ) আল্লাহ কে বাদ দিয়ে তাদের ধর্মযাজক ও পুরোহিতদেরকে রব বানিয়েছে” (সূরা আততাওবাহ: ৩১)।
তখন আদী বিন হাতিম রাসূলকে বলেছিলেন:
إنهم لم يعبدوهم؟ فقال: بلى، إنهم حرموا عليهم الحلال، وأحلوا لهم الحرام، فاتبعوهم، فذلك عبادتهم إياهم. التزمذي 3095
“তারা তো তাদের পুজা করে নি। রাসূল (স.) বললেন: হা। তবে তারা আল্লাহ যা হালাল করিছিলেন, তা হারাম বানিয়েছে। আর আল্লাহ যা হারাম বানিয়েছেন, সেগুলোকে তারা হালাল বানিয়েছে। আর সাধারণ জনগণ তা মেনে নিয়েছে। এটাই হচ্ছে ইয়াহুদ-খ্রীস্টান কর্তৃক পুরোহিত পুজা।”। (তিরমিযয়ী:৩০৯৫)। 
যারা আল্লাহর দ্বীন/শরীয়তের বিপরীত আইন করে এবং যারা তা মেনে নেয় তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন:
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ
“তারা কি আল্লাহর সাথে এমন কিছু শরীক বানিয়ে নিয়েছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন প্রবর্তন করলো, যে ব্যাপারে আল্লাহর কোন অনুমদোন নেই। (সূরা শুরা, আয়াত: ২১)। 
অতএব,, মতিউর রহমানদের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিলে, যারা সুদ কে হালাল করেছে, যিনার অনুমিত /লাইসেন্স দিয়েছে, তাদেরকে মেনে নিতে হয়। যার পরিণাম হলো, শিরক। 
৯. মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (স.) হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। আমরা তার উম্মাত। তাঁর জীবনধারাই হলো বাস্তব ইসলাম। রাসূলের সুন্নাত তথা জীবনধারা অস্বীকারকারীদের দ্বারা ইকামাতে দ্বীনে হবে না। কারণ সেখানেতো দ্বীনই থাকবে না। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ রাসূল (স. ) দশ বছর একটি রাষ্ট্রের রাষ্প্রপ্রধান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কুরআন দিয়ে তা পরিচালনা করেছিলেন। তাহলে কি তিনি ইকামাতে দ্বীন করেন নি? 
১০. শরীয়তের নীতি হলো: ما لا يتم الواجب إلا به فهو واجب “ওয়াজিব পালন করতে যা অপরিহার্য, তাও ওয়াজিব। আর আমরা জানি, কুরআনের মধ্য এমন অনেক বিধান রয়েছে, যা একমাত্র রাষ্ট্রই বাস্তবায়ন করতে পারে। যেমন, হুদুদ, কিসাস, বেনামাযির শাস্তি, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। তাছাড়া, যাকাত ব্যবস্থাপনাও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ইসলামী আদর্শে অবিশ্বাসীরা অবশ্যেই ‍যিনার হদ্দ, কতলের কিসাস বাস্তবায়ন করবে না। 
১১. সিংহাসন, রাষ্ট্রক্ষমতা, মসনদ বসার জন্য নয়; বরং আল-কুরআনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যই ইকামাতে দ্বীন। এর অর্থ: শুধুমাত্র রাজনীতিই ইকামাতে দ্বীন, তা নয়। বরং ব্যক্তি পর্যায়, পারিবারিক পর্যায়, সমাজ পর্যায়, রাষ্ট্র পর্যায় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ইকামাতে দ্বীন। এভাবেই ইসলামকে চূড়ান্ত বিজয়ী করাই হলো ইকামাতে দ্বীন। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: 
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (33)
“ তিনিই তাঁর রাসূল কে পাঠিয়েছেন হিদায়াত ও সত্যদ্বীন সহ, যাতে করে তিনি সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন। যদিও তা মুশরিকদের পছন্দ নয়”। (সূরা তাওবাহ: ৩৩)।
পরিশেষে, আমরা শায়খ মতিউর রহমান ও অনুসারীদেরকে বলবো, আপনারা তাওবাহ করুন। সঠিক পথে ফিরে আসুন। যে ব্যাপারে আল্লাহ মতানৈক্য নিষেধ করেছেন, সে ব্যাপারে মতােনৈক্য বর্জন করুন। আল্লাহ মুসা ও হারুন (আ.) কে ফেরাউনের কাছে যেতে বলেছেন কেন? এতটুুকু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে রাষ্টযন্ত্রের ইসলামায়ন ছাড়া কোন ইকামাতে দ্বীন হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: প্রফেসর_ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন