বাংলাদেশ বার্তাঃ লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জের সালমা হোটেলে বসে নাস্তা খাচ্ছিলাম। আমার সাথে টেবিলে বসা ছিলো রামগঞ্জ কলেজ ছাত্রলীগের এক কালের তুখোর নেতা, এখন অবশ্য নিষ্ক্রিয়। জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি, দলের এমন রমরমা টাইমে স্রোতের বাইরে থেকে কি লাভ হলো? যখন মার খাওয়ার তখন তো খেলে, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে চুপ হয়ে গেলে কেন?
সে আমাকে বলে, ভাই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না, আদর্শের জন্য করি। যে কারণে সম্মান থাকতে বিদায় নিছি। বললাম, এত সম্মান আর আদর্শের চিন্তা করলে তোমার তো ইসলামী ছাত্রশিবির করা দরকার ছিলো। এসব বুর্জুয়া দলে কেন গেলে? সে বললো, কি বলেন ভাই, আর দল পেলেন না। শিবিরের নাম শুনলে আমার বমি আসে। এরা তো মানুষই না…।
বললাম, বাদ দাও শিবির প্রসঙ্গ। এবার বলো কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে কেন টিকলে না। বললো, ভাই বইলেন না, আমাকে অফার করছিলো তিন লাখে কিন্তু বর্তমান সভাপতি চার লাখে কিনে নিছে। বললাম, বুঝলাম না, তিন চার লাখ মানে কি ? আরে ভাই জেলার ছাত্র নেতারা কমিটি ঘোষণা করতে টাকা চেয়েছেন, দিতে পারিনি। তাই পদ পেলাম না। আমার তিন সালের জুনিয়র এখন আমার নেতা। এই দুঃখে চুপ হয়ে গেছি।
আমি বললাম, ঘটনা তো তাহলে ভয়ংকর বটে। তাহলে শুনো তোমাকে একটি ঘটনা শুনাই। সারা দেশে তখন শৈত্য প্রবাহ চলছিলো। প্রচন্ড ঠান্ডায় মানুষ দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলো। সে সময় একদিন রাতে প্রায় তিনটার দিকে আমার বাড়িতে এক ভাই আসলেন। আমার ছোট্ট পড়ার ঘরের দরজায় তিনি নক করলেন।
দরজা খুলতেই তিনি আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, কাপড় পড়ে নিন। আমাদেরকে বের হতে হবে। জরুরী বিষয়। কোন প্রশ্ন না করে শীতের কাপর গায়ে দিয়ে তার সাইকেলের পেছনে বসলাম। তিনি ডাবলীং করতে পারছিলেন না,তবুও আমাকে নিয়ে গেলেন দারুস সালাম মসজিদে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দেখলাম, সব ওয়ার্ড, জোনের সভাপতি সেক্রেটারীগণ সহ ছাত্রশিবিরের সকল সাথীরা উপস্থিত হয়ে গেছে।
হামদ সানা পাঠ করার পরে জেলা সভাপতি ঘোষণা করলেন, বিশেষ প্রয়োজনে শহর সভাপতিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যে কারণে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা জরুরী হয়ে গেছে। আমরা চাচ্ছি না একটি দিন যেন শহরের সাথীরা দায়িত্বশীল ছাড়া কাটায়। সবাইকে স্লিপ দেওয়া হয়েছে, বরাবরের মতো নিজের নাম ছাড়া যে কোন ব্যক্তিকে শহর সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করার অধিকার আপনাদের আছে।
নির্বাচন করার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন। নিজের পছন্দের জন্য নয়, একটি ইসলামী সংগঠনের জিম্মাদারী গ্রহণ করতে পারে এরকম যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করুন। ত্বাকওয়া, জ্ঞান এবং সাংগঠিক দক্ষতা যার আছে তাকেই নির্বাচিত করুন। কোন প্রকার ঝোক প্রবনতার ভিতর দিয়ে বা আবেগের বসে কাউকে নির্বাচিত করার মতো অপরাধ থেকে দুরে থাকুন।
অবশেষে নির্বাচন হয়ে গেলো। সর্ব সম্মতিক্রমে এক ভাই নির্বাচিত হয়ে গেলেন। তার নাম ঘোষণার সাথে সাথে মারহাবা, আল্লাহুআকবার, আল্লাহ কবুল করুন শব্দের পুুরো মসজিদ মুখরিত হয়ে গেলো। কিন্তু আমাদের সেই ভাই যেন দাঁড়াতেই পারছেন না। চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে গেছে। কোন রকমে তাকে দাঁড় করিয়ে শপথ করানো হয়।
সেদিনে সেই জান্নাতি পরিবেশ আমার চোখে এখনো আটকে আছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবেও যদি সেই দিনের সেই আলোকিত প্রোগ্রামে তুমি উপস্থিত থাকতে পারতে,তাহলে সেটাকেই নিজের জীবনের সব থেকে মধুর মুহুর্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে। তখন হয়তো আল্লাহর রহমতে তোমার অন্তরের অবস্থা এমন হতো যে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম শুনলে বমি আসতোই না বরং নিজের নাকে জান্নাতী সুঘ্রান পেতে ভাই।
তুমি টাকা দিয়ে পদ কিনতে পারছো বলেই সেটাকে মুজিব আদর্শ বলছো। অথচ সারা শহর থেকে কয়েক লক্ষ টাকার মাসিক এয়ানত (নিজেরা নিজেরা দেওয়া টাকার নাম) পাওয়া শিবিরের সংগঠনের দায়িত্বশীল ভাই ও বোনেরা পদ পদবি দেখলে এভাবে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে যেভাবে কোরবানীর গরু ছুরি দেখলে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করে। এবার তুমি আমাকে বলো, আদর্শের জয়গান গাওয়ার হকদার কি ছাত্রলীগ নাকি ছাত্রশিবির ?
ছেলেটি আমাকে ওয়াদা করেছে, ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ করবে না, তবে পরিবেশ শান্ত হলে সুযোগ মতো শিবিরের কোন প্রোগ্রামে হাজির হবে। আমি দোয়া করি, আল্লাহ তাকে কবুল করুন। সেক্যুলার নাস্তিকদের ক্ষপ্পর থেকে এরকম লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের উদ্ধারে আমাদের ভূমিকা নিতে হবে। এটা হবে আদর্শিক মশালে, চারিত্রিক দৃঢ়তায়। আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন