বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রত্যেক সংসদ এবং বর্তমান সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে এ দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন বিষয়ের মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে। এমতাবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ন্যায় প্রস্তাবনা পেশ করা জামায়াতের গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়া হচ্ছে এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি সর্বজন স্বীকৃত রীতি। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এর মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটে এবং সরকার পরিবর্তন হয়। নিকট অতীতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানেব্যর্থতা এবং সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেবাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট নিরসনকল্পে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। এ প্রেক্ষাপটে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিবেচনার জন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করছেঃ-
১. নির্বাচনকালীন সরকারঃ দেশ এবং জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ সরকার/নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।
২. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ ওনিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণঃ
ক. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট, স্থানীয় সরকার, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, অর্থ ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের চাহিদানুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য রাখা। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের বদলি এবং পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত রাখা।
খ. ১৯৭২ এর নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিচারিক বা ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা প্রদান করা। এ ক্ষমতা কমিশন কর্মকর্তাদের প্রাপ্য।
গ. বর্তমানে কর্মরত নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মী এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধি বিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ঘ. নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রহণ করা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা কোন নির্বাচন কমিশনারের একক সিদ্ধান্তে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা।
৩. প্রশাসন বিষয়কঃ
ক. জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার সময় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা-প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার পূর্বক তাদের স্থলে নূতন কর্মকর্তা পদায়ন করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত পাঁচ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ঐ জেলায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশসুপার পদে পদায়ন না করা। একইভাবে উপজেলা ও থানা পর্যায়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার পূর্বক নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা করা। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে ইতোপূর্বে কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ঐ উপজেলা বা থানায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় পদায়ন না করা। পদায়ন বা নিয়োগের পর অভিযোগ থাকলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
খ. নির্বাচন কমিশন অফিসে এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করা। ইতোপূর্বে যারা নির্বাচনের বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে তাদেরকে দূরে রাখা।
গ. নির্বাচনকালীন সময়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করা এবং গৃহীত কার্যক্রম জনসম্মুখে প্রকাশ করা।
ঘ. সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান এবং দূতাবাসসমূহে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করা।
ঙ. নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর সকল রাজনৈতিক দলের ও প্রার্থীর সভা-সমাবেশ, পথসভা করার ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিটানিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের কাছে ন্যস্ত করা।
চ. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে প্রতিটি জেলায় রিটানিং অফিসার, সহকারী রিটানিং অফিসার, জেলা নির্বাচন অফিসার এবং প্রতিটি উপজেলা/থানায় নির্বাচন অফিসারের অফিসে একটি করে অভিযোগ বাক্স স্থাপন/চালু করা। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘন্টার মধ্যে অভিযোগের বিষয় নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা।
ছ. নির্বাচনের দিন প্রতিটি সংসদীয় আসনের প্রতি উপজেলা/থানার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর একজন করে নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ প্রদান করা।
৪. সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ঃ
ক. সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে নির্বাচনের তারিখের কমপক্ষে ৯০ দিন পূর্বে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
খ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ সকল রাজনৈতিক দলের বন্ধ অফিস খুলে দেয়া, সভা-সমাবেশসহ সকল স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করা এবং কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেয়া।
গ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা। একই সময়েউন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত না রেখে স্থানীয় সরকারের অধীনে ন্যস্ত করা।
৫. নির্বাচনে সেনবাহিনী মোতায়েনঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ০৭ দিন আগে থেকে সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা।
৬. নির্বাচনী এলাকার সীমানা পূর্নবিন্যাসঃ জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক উত্থাপিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস করবে।
৭. ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাঃ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ করা। কারাবন্দীদের ভোটার করা। মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা হতে কর্তন করা। প্রবাসীদের ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।
৮. মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রচারণার সময়সীমাঃ
ক. মনোনয়ন পত্র দাখিলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের নিকট দালিলের বিধান ছাড়াও এর সাথে নির্বাচন কমিশনে এবং অন-লাইনে দাখিলের বিধান করা।মনোনয়ন পত্র ফরম-১ সংশোধন করা। “রাজনৈতিক দলের প্রার্থী” শব্দগুচ্ছ রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী শব্দগুচ্ছ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা।
ক. মনোনয়ন পত্র দাখিলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়মে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসারের নিকট দালিলের বিধান ছাড়াও এর সাথে নির্বাচন কমিশনে এবং অন-লাইনে দাখিলের বিধান করা।মনোনয়ন পত্র ফরম-১ সংশোধন করা। “রাজনৈতিক দলের প্রার্থী” শব্দগুচ্ছ রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী শব্দগুচ্ছ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা।
খ. মনোনয়ন পত্রের সাথে জামানত হিসাবে নগদ অর্থ জমাদানের বিধান বাতিল করে জামানতের অর্থ কেবলমাত্র ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে প্রার্থীর স্ব-শরীরে উপস্থিত হওয়া এবং প্রার্থী কারাগারে থাকলে তার মনোনীত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে লিখিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা।
গ. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিলের ক্ষেত্রে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে কমপক্ষে ১০ দিন এবং কাগজপত্র প্রত্যাহারের পর নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার জন্য কমপক্ষে ২১ দিন সময় দেয়া।
৯. ভোট কেন্দ্র ও ভোট গ্রহণঃ
ক. ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা। খসড়া ভোটার তালিকার উপর আপত্তি গ্রহণ করা। আপত্তি নিষ্পত্তির মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করা। কেন্দ্রভিত্তিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটি গঠন করা। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসার সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের অফিসে সংস্থাপিত সিসি টিভি মনিটর প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা।
খ. ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট ছবিসহ যে ভোটার তালিকা থাকে ছবিসহ অভিন্ন ভোটার তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অথবা তার এজেন্টকে প্রার্থীতা বাছাইয়ের দিনে সরবরাহ করা। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ভোটারগণ যাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা।
গ. কোন রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতীকের স্পষ্টতা বিনষ্ট না করে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যালট পেপারে দৃশ্যমান জলছাপ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
১০. ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশঃ
ক. নির্বাচনী ফলাফল বিতরণের সময় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স-এর নম্বর সম্বলিত চালান পত্রের ফটোকপি প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে প্রদান করা। যাতে করে পোলিং এজেন্ট এই কপির সাথে কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্সের নম্বর মিলিয়ে যাচাই করে নিতে পারে। ভোট গ্রহণের আগে বিভিন্ন বুথে খালি বাক্স সরবরাহের পর অবশিষ্ট শূন্য ব্যালট বাক্সসমূহ, যদি থাকে, এমন নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে তা প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশ্যমান থাকে। ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ব্যালট ভর্তি বাক্স বা বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখতে হবে, যাতে তা সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের নিকট দৃশ্যমান থাকে।
খ. ভোট গণনার সময় পুলিং এজেন্টকে অবশ্যই উপস্থিত রাখার ব্যবস্থা করা। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া এবং ভোটগণনা শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে কোন বিরতি না দেয়া। ভোট শেষে ব্যালট গণনার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহণে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সসমূহ খোলা এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফলাফল শীট ভোট কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে কেউ যেন ভোটকেন্দ্র ত্যাগ না করে তা নিশ্চিত করা।
গ. রিটার্নিং অফিসারের ভোট গ্রহণের দিনই যত দ্রুত সম্ভব কেন্দ্রভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের ভোটের ফলাফল একত্রীকরণ করে প্রার্থীদের কিংবা তার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বেসরকারী ফলাফল গোষণা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ নিশ্চিত করা।
১১. নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়োগঃ
ক. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি আসনের রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি, র্যাব এর প্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি অফিসার এবং ক্ষেত্রমত কোষ্ট গার্ড ও বিজিবি এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় ও মেট্রোপলিটিন এলাকায় একটি করে কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলকা ও ভোট কেন্দ্রে নিরপেক্ষভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করবেন।
খ. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে দৃশ্যমানভাবে নাম ও র্যাংক ব্যাজসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করার ব্যবস্থা করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্যকে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়া।
গ. ভোট কেন্দ্রে কোন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েনের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব ওয়ার্ড বা তিনি নিজে যে ভোট কেন্দ্রের ভোটার সেখানে মোতায়েন না করা। কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত না করা। নিরাপত্তাকর্মী লিখিত পোষাক পরিধান করে কোন ব্যক্তিকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়া।
১২. দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক নিয়োগঃ
ক. নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার কমপক্ষে এক বছর আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষন সংস্থাকে নিবন্ধন করা। নির্বাচন পর্যবেক্ষনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার ন্যূনপক্ষে এক মাস আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেয়া। তাছাড়া প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেয়া।
খ. জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে সাত দিন আগে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় এবং তাঁদের মনোনিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা, একই সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করা। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য বিমানবন্দরে হেল্প ডেস্ক এর ব্যবস্থা করা। তাদের ভিসা সহজীকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত প্রতিনিধির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা।
১৩. গণমাধ্যম ও মোবাইল নেটওয়ার্কঃ
ক. গণমাধ্যমে সকল দল ও প্রার্থীর নির্বাচনকালীন প্রচারণায় সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। বন্ধ করা সকল প্রিন্টিং, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া চালু করা।আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করা।
খ. নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সার্ভিস চালু রাখা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ না করা।
১৪. ভোট গ্রহণে যন্ত্র ব্যবহারঃ ভোট গ্রহণে যে সকল দেশে ভোট গ্রহণ যন্ত্র (ইভিএম পদ্ধতি) ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমান রয়েছে বিধায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবস্থার না করা।
১৫. কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার রোধঃ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৬. জাতীয় সংলাপঃ বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সংলাপ যথেষ্ট নয়। তাইস্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করা।
আমরা আশাকরি সরকার ও নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীরউপরোক্ত ১৬টি প্রস্তাবসহ ইতোমধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রদত্ত পরামর্শ এবং সুপারিশমালা বিবেচনায় আনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিয়ে দেশ এবং জাতিকে বর্তমান সংকট থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসবেন। এ ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিক, দক্ষ ও নির্ভীক পদক্ষেপ সমগ্র জাতি কামনা করে।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-জিন্দাবাদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন