বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বিজয়ের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিহিংসা ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে আমরা সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। আজ প্রমাণ হয়েছে নৈতিকতার সমন্বয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন দেশ প্রেমিক নেতৃত্ব ছাড়া জাতির কাঙ্খিত কল্যাণ সম্ভব নয়। আমাদের লক্ষ্যও তাই। রক্তে অর্জিত বিজয়কে অর্থবহ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি আজ রাজধানীর এক মিলনায়তনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক শাহ মাহফুজুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো: মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় দাওয়া সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক গাজী সালাউদ্দিন আইয়ুবী, প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদ, পাঠাগার সম্পাদক হাসনাইন আহমেদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
শিবির সভাপতি বলেন, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনা থাকার পরও এদেশ এগিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু সমসাময়িক কালে যেসব দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তার বেশির ভাগই আজ সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের। এখানে উল্টো চিত্র দেখতে হচ্ছে জাতিকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের বিশাল অংশ আজ অবহেলিত। তাদের উত্তরসূরিদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় শক্তি চেতনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে অনেকেই মরিয়া। মহান বিজয়ের চেতনা হওয়ার কথা ছিল এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। কিন্তু দু:খজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে স্বার্থ হাসিলের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণতি করা হয়েছে। যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সেই মুক্তিযুদ্ধকেই ব্যবহার করেই জাতিকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। যারা আজ মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র দাবীদার তাদের দ্বারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে বার বার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে দেশ-বিদেশের চলমান ষড়যন্ত্রে নিত্য নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। দেশে জঙ্গি হামলা, জঙ্গি সমস্যা নিয়ে সরকার ও পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম, সরকার দলীয় নেতাদের মদদে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর নির্বিচারে হামলা এবং বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। যে জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছে তা আজো অর্জিত হয়নি। জনগণের মৌলিক অধিকার আজ কয়েমী স্বার্থবাদীদের ইচ্ছার কাছে জিম্মি।
শিবির সভাপতি বলেন, আদর্শহীন রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে স্বাধীনতার এত বছর পরও সত্যিকারের বিজয় অর্জিত হয়নি। এই রাজনৈতিক শুন্যতাকে ইসলামী মূল্যবোধের আদর্শ দিয়ে পূরণ করতে হবে। নৈতিকতা ভিত্তিক আদর্শীক নেতৃত্ব তৈরীর প্রচেষ্টা আরও তীব্র করতে হবে। দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে সকলকে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ ও বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের অর্জনকে অর্থবহ করতে সকলকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
উল্লেখ্য, ৪৬ তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহন করেছে ছাত্রশিবির। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত, কোরআনখানি ও দোআ মাহফিল, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা, জাতীয় পতাকা বিতরণ, যুদ্ধাহত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও স্বেচ্ছায় রক্তদান, অনাথ ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ, রচনা, কুইজ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ প্রভৃতি কর্মসূচি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন