বাংলাদেশ বার্তাঃ ও আমার ছাত্র ছিলো ভাবতেই ভালো লাগে। ওকে আমি কায়েদ সাহেব বলে ডাকতাম। কারণ ও ছিলো আমার মানার জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শায়খ আজিজুর রহমান নেসারাবাদী বা "কায়েদ সাহেব হুজুরের" নাতি। কায়েদ মানে নেতা, ওর কাজে কামে নেতা নেতা ভাব ছিলো।
আমি যখন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাং এ ওর শিক্ষক, তখন আমার মাঝে তারুণ্য ছিলো। আমার ক্লাশে একটা হৃদ কম্পের আবহ তৈরি করতাম। বলতাম, আমার কাছে যারা "এ প্লাস" পাবে তারা সারা দুনিয়াতেই এই রেজাল্ট করবে। আমি চেষ্টা করতাম এসেসমেন্টে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে। এই ভয়ের প্রকোপে অনেকেই ঝরে পড়ত, পালাতো। যে কয়জন ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র বাকি থাকতো সেখানে এই ছেলেটা একটু মাথা উঁচু করেই থাকতো। বলতো, উস্তায চ্যালেঞ্জ নিলাম, আপনি পথ দেখায়েন। আমার মনে হয় সব সাব্জেক্টেই সে "এ+" পেয়েছে আমার কাছে।
একবার ও এলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িকের জন্য একটা লেখা তৈরি করে। তাতে সে তার আরবী শেখার গল্প লিখেছে। ডঃ আবুল কালাম আজাদ স্যার নাকি ওকে বলেছেন, আমীন তুমি ঘুমের মাঝে স্বপ্নে যখন আরবী ভাষায় কথা বলবে, বুঝবে আরবী ভাষা তোমার আয়ত্বে চলে আসতেছে। ঐ গল্পে সে লিখেছিলো, স্বপ্নে নাকি সে আরবী ভাষা ব্যবহার করেছে। আমি হেসেছিলাম। স্বপ্নের কথা শুনে না, ডঃ কালাম আজাদের ভাষা শেখায় "অবচেতন" দর্শন নিয়েও না, হেসেছিলাম এই ছেলের ডিটারমিনেশান দেখে। এই ধরণের আত্মপ্রত্যয় সম্পন্ন ছেলেরা জীবনে অনেক দূর যায়।
একদিন হঠাৎ টেলিফোন পাই তদকালীন ডীন স্যারের কাছ থেকে। আমার অগ্রজ ও বন্ধু তিনি। জিজ্ঞেস করলেনঃ সালাম ভাই, আমীনুল হক ডিপার্টমেন্টে টিচার হওয়ার জন্য দরখাস্ত করেছেন। শিক্ষক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কি তার ব্যাপারে। আমি বললামঃ ভাইজান, অসম্ভব কর্মঠ একটা ছেলে সে। আমি ভিসি হলে এবং পরীক্ষায় ভালো করলে তাকে নিতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে, নাম কিনেছে, ভালো লেখে এবং মিডিয়া জগতে তাকে চিনতে সময় লাগেনা।
আগে একটা ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েও তার তৃপ্তি মিটেনি, জেদ্দার কিং আব্দুল আযীয ইউনিভার্সিটি থেকেও খুব সুন্দর ভাবে আরেকটা ডক্টরেট নিলো। আলহামদুলিল্লাহ।
তার জন্য দুয়া করি ও দুয়া চাই, উম্মাতের গর্ব হয়ে সে ফুটে উঠুক।
আমার চোখের শীতলতা তার জীবন পথের পাথেয় হোক। আমীন।=====
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন