বাংলাদেশ বার্তাঃ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا، وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا، وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا»
“তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেতনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, [যখন] ব্যক্তি ভোর করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়; অথবা সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য বিনিময়ে।
আমরা বর্তমান ফেতনার সে অন্ধকারে বাস করছি, আমাদের চারপাশে ঘোর অন্ধকার: মূর্খতার অন্ধকার, কুসংস্কারের অন্ধকার, বিদআতের অন্ধকার, শিরকের অন্ধকার, সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে। আমরা তাতে গভীরভাবে মগ্ন হয়ে পড়েছি। নিজেদের দীন ও আদর্শের পরিবর্তে তাদের কালচার ও আবিষ্কৃত উপলক্ষে মেতে আছি। উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার আশঙ্কা করেছেন এবং যার থেকে তিনি উম্মতকে বারবার সতর্ক করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا فِي جُحْرِ ضَبٍّ لَاتَّبَعْتُمُوهُمْ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، آلْيَهُودَ، وَالنَّصَارَى، قَالَ: فَمَنْ».
“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের রাস্তা অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে; তারা যদি গুঁইসাপের গর্তে ঢুকে তোমরা অবশ্যই তাদের অনুসরণ করবে; আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, ইহুদি ও খৃস্টান? তিনি বললেন: তবে কে”?
ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে ও গুঁইসাপের গর্তের উদাহরণ পেশ করার অর্থ কঠিনভাবে তাদের অনুসরণ করা। এ অনুসরণ অর্থ কুফরি নয়, বরং পাপাচার ও ইসলামের বিরোধিতায় তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট মুজিজা, তিনি যার সংবাদ দিয়েছেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখছি”।
ইব্ন কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আমাদের পূর্ববর্তী কিতাবিদের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ শরিয়তে নিষিদ্ধ কর্ম সম্পর্কে সংঘটিত হওয়ার পূর্বে সংবাদ দেয়ার অর্থ আমাদেরকে তাদের কথা ও কর্মের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে নিষেধ করা। কোন মুমিনের উদ্দেশ্য এতে ভালো হলেও বাহ্যিকভাবে তাদের মিল প্রকৃত অর্থে তাদের কর্ম হিসেবে গণ্য হবে”।
মুনাবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মুজিজা। আজ তার উম্মতের বড় এক গোষ্ঠী কৃষ্টি-কালচার, যানবাহন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও যুদ্ধ ইত্যাদির নীতিতে পারস্যের অনুসরণ করছে। আবার ইহুদি-খৃস্টানদের আনুগত্য করছে মসজিদ সজ্জিত করা, কবরকে অধিক সম্মান করা, যার ফলে মূর্খরা তার ইবাদতে মগ্ন হয়েছে, ঘুষ গ্রহণ করা, দুর্বলদের শাস্তি দেয়া ও সবলদের ক্ষমা করা, জুমার দিন কর্ম ত্যাগ করে ছুটি কাটানো ইত্যাদি বিষয়ে”।
এ যুগে তাদের অন্ধানুকরণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে পার্থিব শৌর্য-বীর্য ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির ফলে তারা রীতিমত অনেক মুসলিমের জন্য ফেতনায় পরিণত হয়েছে। ইলেকট্রিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঘরে ঘরে নিমিষে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের আচার-অনুষ্ঠান। তারা যাই করে মুসলিমের একাংশ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তাদের উৎসব, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে, তাতে যোগ দেয় ও আনন্দ করে। কি নববর্ষ, কি মৃত্যু বার্ষিকী, কি জন্ম বার্ষিকী, কি বিবাহ বার্ষিকী, কি বাবা দিবস, কি মা দিবস, কোন কিছুতেই কুণ্ঠাবোধ নেই। তারা করছে তাই আমরা করছি। ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ ও কুফর-শিরক ভেবে দেখার ফুরসত নেই। তারা দীন থেকে দূরে সরে গেছে, ভুলে গেছে ইসলামী আদর্শ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত”।
এতো কঠোর হুশিয়ারি সত্বেও মুসলিম তাদের অনুসরণে ঘটা করে প্রতিবছর “থার্টিফাস্ট” উদযাপন করে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«غَيِّرُوا الشَّيْبَ، وَلَا تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ»“তোমরা বার্ধক্যকে পরিবর্তন কর, কিন্তু ইহুদিদের সাথে মিল রেখ না”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন