বাংলাদেশ বার্তাঃ আসন্ন্ ডিএনসিসি নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহম্মদ সেলিম উদ্দিন তার সিরিজ মতবিনিময় সভা অব্যাহত রেখেছেন। সে ধারাবাহিকতায় তিনি আজ পেশাজীবী ও যুব সমাজের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তিনি ডিএনসিসির বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশা এবং যুবসমাজের সমস্যা ও সমাধান বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন এবং নির্বাচকরা তাকে নির্বাচিত করলে তিনি ডিএনসিসির সমস্যাগুলোর সমাধান ও সম্ভবনাগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগাবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় পেশাজীবী ও যুবসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট মাঈন উদ্দীন, ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক, কৃষিবিদ শেখ মাসুদ ও ডা. এম এ জলিল প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, প্রায় ৪ শ বছর আগে মুঘল শাসনামলে ঢাকা নগরীর গোড়াপত্তন ও অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল। কালের বিবর্তনে ও সময়ের প্রয়োজনে এই ঐতিহাসিক নগরীর বর্দ্ধন, সম্প্রসারণ ও পরিমার্জন হয়েছে এবং সে ধারা এখনও অব্যাহত আছে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হলেও ঢাকা মহানগরীকে এখনও পুরোপুরি বসবাসযোগ্য ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে ডিএনসিসির সার্বিক পরিস্থিতি খুবই হাতাশাব্যঞ্জক। মূলত ১৯১৭ সালে স্যার প্যাট্রিক গ্যাডেস প্রথম ঢাকা শহরের জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ পরিকল্পনা অনুযায়ি তিনি শহরের মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে নগরীর পরিসর সম্প্রসারণের একটি যুতসই দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ঢাকা নগরীকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। তিনি পুরনো ঢাকায় ঔপনিবেশিক অফিস ও শহরের কিছুটা বাইরের দিকে রমনা এলাকায় ঔপনিবেশিক শাসকদের আবাসনের প্রস্তাব করেন। এ পরিকল্পনা কখনই আলোর মুখ দেখেনি। ফলে পরিকল্পিত নগরায়ণের আশাটি সেখনেই মুখ থুবরে পড়ে। খুব সঙ্গত কারণেই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঢাকা মহানগরী বিশেষ করে ডিএনসিসিকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। ফলে নগর জীবন অনেকটা সেকেলেই রয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নগরীতে তীব্র জানজটও অন্যতম সমস্যা। যা প্রতিনিয়ত নগরিক জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। অসহনীয় জানজটের কারণে নগরজীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, শুধুমাত্র যানজটের কারণেই ঢাকা মহানগরীতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। যা শুধু নগরজীবনের জন্য নয় বরং জাতীয় অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। মূলত নগরীতে তীব্র যানজটের কারণে সাধারণ নগরবাসী সহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখী হন। বিশেষ করে কর্মজীবী ও অফিস-আদালতগামী মানুষরা নগরীতে তীব্র যানজটের কারণে নানাবিধ প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ বিরোধী ইমারত নির্মাণ, পর্যাপ্ত ও মানসম্মপন্ন রাস্তাঘাটের অভাব, মানহীন, অনুমোদনহীন ও অব্যবহারযোগ্য যানবাহন, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান, নগরবিধি লঙ্ঘন করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা, পরিবহণ সেক্টরে অনাকাঙ্খিত চাঁদাবাজী, পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের আইন ও বিধির প্রতি অশ্রদ্ধা, ট্রাফিক সিগনাল লঙ্ঘন, ফুট ওভার ব্রিজের অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ত ফ্লাইওভার, ড্রাইভার সহ পরিবহণ শ্রমিকদের অদক্ষতা ও মালিক পক্ষের অতিমুনাফা লাভের আকাঙ্খা থেকেই নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দেখা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসিকে যানজট মুক্ত করে একটি বসবাসযোগ্য ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এসব সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ বের করতে হবে। আর এই দায়িত্ব শুধু ডিএনসিসির একার নয় বরং সরকার, রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, এলজিইডি, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের। সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডিএনসিসিকে যানজটমুক্ত মেগাসিটিতে পরিণত করা খুবই সম্ভব। নির্বাচিত হলে তিনি সকল বিভাগ ও সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে ডিএনসিসিকে যানজট মুক্ত নগরীতে পরিণত করতে পারবেন বলে উচ্চাশা পোষণ করেন এবং ডিএনসিসিকে চাপমুক্ত রাখতে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিরোধী স্থাপনা ও নগর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন স্থাপনা নগরীর বাইরে কোন গ্রহণযোগ্য স্থানে স্থানান্তর প্রয়োজন বলে মনে করেন জামায়াত মনোনীত তরুণ এই মেয়র প্রার্থী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন