বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদের সভা আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, সেক্রেটারি ড. মুহা. রেজাউল করিম, সহকারি সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম ও মাহফুজুর রহমান প্রমূখ। সভায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ডিএনসিসি নির্বাচন স্থগিত বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও উদাসীনতাকে দায়ি করা হয়। সভায় অভিমত ব্যক্ত করো হয় যে, সরকার ডিএনসিসি নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই নিজেরাই আইনের ফাঁক-ফোঁকর রেখে নির্বাচনী উদ্যোগ ও লোক দেখানো তফসিল ঘোষণা করেছিল। ফলে মহামান্য আদালত আইনী ত্রুটির কারণেই নির্বাচন স্থগিত গোষণা করেছেন। সভায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় যে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যুগপৎভাবেই ডিএনসিসির নির্বাচনের সকল আইনী প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নগর প্রশাসন গড়তে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার ডিএনসিসি নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই আইনী ত্রুটির রেখেই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে জনগণের ভোটে তাদের পক্ষে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা একেবারেই নেই। তাই ক্ষমতাসীনরা পেশী শক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের জেতার অপসংস্কৃতি চালু করেছে। তিনি ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে সরকারের হীনমন্যতার সমালোচনা করেন এবং অবিলম্বে আইনী জটিলতা নিরসন করে ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিল না এবং এখনও নেই। গণবিরোধী রাজনীতির কারণেই দলটির গণভিত্তি গড়ে ওঠেনি। গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিরোধী অবস্থান ও গণবিরোধীতার কারণেই তাদেরকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়েছে। তারা ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছে। আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একইভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। কিন্তু জনমতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি আর অন্যদেরও হবে না। তিনি সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, উর্দ্ধতন সংগঠন কর্তৃক মনোনীত ও আদিষ্ট হয়েই তিনি ডিএনসিসি নির্বাচনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। ডিএনসিসিকে আধুনিক নগরীতে পরিণত করার জন্য তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দাবি করেন যে, তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা, গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা ও সামাজিক-সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসিকে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন। সকল স্তরের নগরবাসী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, চিকিৎসক, আইনজীবী, মালিক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, ধর্মীয় সংগঠন, আলেম-উলামা, শিক্ষাবিদ, শিল্পি ও সংস্কৃতিকর্মী সহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ তার পরিকল্পনাগুলোকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। প্রবাসেও তার পরিকল্পনা ও প্রার্থীতাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মূলত তিনি ডিএনসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে ভালবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। তাই তার প্রার্থীতার যারা তাকে সমর্থন, অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দিয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকলের কাছেই কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ বলে জানান। তিনি আগামী দিনেও সকল ভাল ও গঠনমূলক কাজে একইভাবে সকলের কাছে সমর্থনও কামনা করেন।
মহানগরী আমীর আরও দাবি করেন, মূলত ডিএনসিসিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নগরীতে পরিণত করতে এবং জনকল্যাণের সুদুরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী তাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। আসলে ঢাকা অনেক প্রাচীন নগরী হলেও নাগরিক সেবার মান এখনও কাঙ্খিত মানে পৌঁছায় নি। নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ডিএনসিসিতে বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতা সমস্যাগুলোর অন্যতম। মাঝারী মানের বৃষ্টিপাতেই ডিএনসিসির বিভন্ন এলাকা পানির নীচে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে মিরপুর অঞ্চলের জলাবদ্ধতা বিষয়টি খুবই প্রকট। নাগরিক পরিসেবার আওতায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন সেক্টর বেশ সমস্যা গ্রস্থ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে এসব নাগরিক পরিসেবার মান ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী। বর্তমানে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা ও বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতা এসব নাগরিক পরিসেবার নিম্নমানের সাক্ষ্য দেয়। মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও রাজউকের নকসা বহির্ভূত ইমারত নির্মাণ ও অপ্রতুল ডেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণেই নগরীর জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অপরিকল্পিত ও নকসা বহির্ভূত ইমারত নির্মাণ বন্ধ, নগরায়ণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি ও তার সংগঠন নগরবাসীর দুর্দশা লাঘবে সব সময় জনগণের পাশে থাকবেন বলেও অঙ্গীকার করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন