মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানী নিয়ে একের পর এক মিথ্যা আশ্বাস ও ভূয়া প্রতিশ্রুতি দেয়ার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো এক ধাপ এগিয়েছেন তার এবারের সৌদি আরব সফরে। লুকোচুরি, ছলচাতুরি ও মিথ্যাচারের চরম পরাকাষ্ঠা তিনি দেখালেন খোদ পবিত্রভূমিতে বসেই। বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র ‘স্কিল্ড এন্ড কোয়ালিফাইয়িড’ তথা দক্ষ জনশক্তি নেয়ার ব্যাপারে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফাকিহ আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাঁর বক্তব্য ও প্রশাসনিক অবস্থানকে খন্দকার মোশাররফ শুধু ‘মিসকোট’ করেননি, বক্তব্য বিকৃত করে শ্রমবাজার খুলে দেয়ার কথা ছড়িয়ে প্রকারান্তরে ব্ল্যাকমেইলও করেছেন সৌদি প্রশাসনকে।
সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফাকিহ বাংলাদেশের মন্ত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যেসব কঠোর শর্তসাপেক্ষে শুধুমাত্র ‘দক্ষ’ জনশক্তির প্রতি আগ্রহ দেখান, তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয় জেদ্দা ভিত্তিক জনপ্রিয় ‘আরব নিউজ’ পত্রিকায়। বহুল প্রচারিত এই পত্রিকায় ২১ জানুয়ারি সৌদি মন্ত্রীর উদৃতি দিয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়, দক্ষ জনশক্তির অংশ হিসেবে নিজ দেশে ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পর যারা সৌদিতে আসবে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতার ওপর সৌদি আরবের মাটিতে ‘স্কিল টেস্টস’-এরও মুখোমুখি হতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ আরব নিউজ সহ ঢাকার বিভিন্ন মিডিয়াতে সযত্নে এড়িয়ে গেছেন কঠিন সব শর্তাবলীর এ-টু-জেড।
বিদেশ গমনেচ্ছু নিবন্ধনকৃত ২২ লাখ জনশক্তির নাকি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ রয়েছে যে কোন ভোকেশনাল ও স্কিল টেস্টসের জন্য – সৌদি শ্রমমন্ত্রীকে এমন ‘ডাহা মিথ্যা’ তথ্য দিতেও পিছপা হননি খন্দকার মোশাররফ। সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়ের কাছে অবশ্য আগেভাগেই ঢাকা থেকে সঠিক তথ্য থাকায় বাংলাদেশের মন্ত্রীর অপ্রত্যাশিত এই মিথ্যাচারকে উদ্বেগের সাথে কাউন্ট করেছে সৌদি প্রশাসন। ঘুষ-দুর্নীতির বাংলাদেশে ‘দায়সারা’ গোছের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা বাংলাদেশীদের শতকরা নব্বই ভাগেরও বেশি সৌদি আরবের মাটিকে স্কিল টেস্টসে উত্তীর্ণ হবে না – এমনটা খুব ভালো করেই জানে সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়। অথচ বাস্তবতাকে আড়াল করে মন্ত্রী খন্দকার শোশাররফ নিবন্ধিত ২২ লাখ জনগোষ্ঠীকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বেহুদাই ‘দিবাস্বপ্ন’ দেখালেন, শুনিয়েছেন ২০ হাজার টাকার রমরমা গল্প।
এদিকে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর স্বাভাবিক মৃত্যু এবং নতুন বাদশাহ হিসেবে তাঁর ভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সিংহাসনে আরোহন বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কারণে ততোটা সুখকর হবে না – শুক্রবার এমন আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে রাজধানী রিয়াদ থেকে। সৌদি রাজ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, নতুন বাদশাহ সালমানের একান্ত নিজস্ব মালিকানাধীন একটি কোম্পানির গোডাউনে ২০০৭ সালে সশস্ত্র ডাকাতি এবং মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ২০১১ সালে ৮ জন বাংলাদেশীকে শিরোচ্ছেদ করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় এবং তখন থেকেই বাংলাদেশীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ দেখিয়ে এসেছেন তৎকালীণ ‘ক্রাউন প্রিন্স’ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ।
নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশীদের নৃশংসতা স্মরণে রেখেই আজ বাদশাহ সালমান দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ডাকাতী ও খুনের দায়ে ঐ ৮ বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদ ঠেকাতে তখন প্রয়োজনে ‘ব্লাড মানি’ প্রদান সহ বিভিন্ন পর্যায়ে বহু দেন-দরবার করা হলেও ন্যূনতম ছাড় না দিয়ে কঠোর অবস্থানে অনড় থাকেন রক্তাক্ত ঐ কোম্পানির মালিক তথা আজকের বাদশাহ সালমান। এমনিতেই গোটা সৌদি জুড়ে বাংলাদেশীদের ব্যাপক অপরাধ প্রবণতার কারণে ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ রাখে সৌদি আরব, তার ওপর এখন সেই ‘ক্রাউন প্রিন্স’ সালমানের ‘বাদশাহ’ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনে পাল্টে যাচ্ছে অনেক হিসেব নিকেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন