বাংলাদেশ বার্তাঃ মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবনের বড় বড় ঘটনাগুলো আমাকে তেমন আলোড়িত করে না। মহামানবদের জীবন ঘটনাবহুলই হয়। কিন্তু আমাকে যে ব্যাপারগুলো সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য করে, তা হল তাঁর ছোটখাটো জীবনাচারসমূহ। তাঁর পরম পরিচ্ছন্নতাবোধ, স্নানের রীতি, নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা, চুল-নখ কাটা, খাদ্যগ্রহণ বা শৌচকার্যের আদবকেতা এবং পরিমিতিবোধ তাঁর সময়ের তুলনায় তো বটেই, এই যুগেও অত্যন্ত উঁচু স্ট্যান্ডার্ডের। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, এই জীবনাচারগুলোর বিবরণ খুব স্পষ্ট এবং অবিসংবাদিত অবস্থায় পাওয়া যায়, এসবে কোন মিথোলোজিক্যাল রঙ চড়েনি। জানলে বা শুনলে মনে হয় তিনি আমাদের মতই কোন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন, আর তাঁর অভ্যাসগুলো চাইলে যে কেউ রপ্ত করে নিতে পারে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, তিনি পনেরশত বছর আগে ফল খাবার আগে ধুয়ে খেতে বলেছেন, যে ছুরি/বটি দিয়ে ফল কাটতে হবে, তাও ধুয়ে পরিষ্কার করতে বলেছেন। তিনি পাঁচবার দাঁত মিসাওয়াক করতেন, প্রতিবার খেয়ে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করতেন। মুখের দুর্গন্ধ তাঁর ভীষণ অপ্রিয় ছিল এবং তা থেকে সদাই মুক্ত থাকতেন। আমি এই যুগেও খুব কম মানুষের মুখ দুর্গন্ধমুক্ত পাই। শৌচকার্যের পর খুব ভাল করে পরিষ্কার হতেন এবং এই ব্যাপারে তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে কড়া নির্দেশ দিতেন। ইসলামের সবচেয়ে কঠোর বিধিবিধানগুলোর কয়েকটা হল এই শৌচকার্যের পর পরিচ্ছন্নতা অর্জন সংক্রান্ত। তিনি চুল দাড়ি গোঁফ সবসময় পরিমিত/পরিষ্কার রাখতেন এবং শরীরের অন্যান্য স্থানের লোমগুলোও নির্দিষ্ট সময় পরপর ছেঁটে ফেলতেন। তিনি খুব স্বল্পাহারী ছিলেন। তাঁর খাবার সময় বসার নিয়মটি আমাকে হতবাক করে। ভঙ্গিটি খুবই ইউনিক এবং অকাট্য যৌক্তিকতায় ভরা। এমনভাবে বসতে হবে যেন বাঁ পা পাকস্থলীর ওপর একটা চাপ দিয়ে রাখে। চাপে পাকস্থলীর আকার ছোট হয়ে যাবে এবং কম খাবারেই উদর পূর্ণ বলে মনে হবে। তিনি পেট ভরার আগেই খাবার খাওয়া বন্ধ করতে বলেছেন। শরীরে সুগন্ধ ব্যবহারে তাঁর উন্নত রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি সদাই কাপড় পরিষ্কার রাখতেন এবং তা করতেন নিজ হাতেই। তিনি সবসময় মৃদু স্বরে কথা বলতেন, সবাইকে সবার আগে সালাম জানাতেন, হ্যান্ডশেক করতেন। তিনি তাঁর নিজ গৃহে প্রবেশের আগেও অনুমতি নিতেন। সব মানুষ তো বটেই, স্ত্রী এবং মেয়েদের সাথে তাঁর আচরণের কথা পড়লে হতবাক হতে হয়। তিনি হাঁটতেন মেরুদণ্ড সোজা করে অথচ দৃষ্টি থাকত আনত। তিনি শরীর সুস্থ রাখতে শরীরচর্চা সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। তিনি কোন উদাস জিনিয়াস ছিলেন না, বরং ছিলেন সমাজ-সংসারের ব্যাপারে নিখুঁতভাবে দায়িত্বপরায়ণ। সবরকমের অপচয়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদাই সরব।
আমি আশ্চর্য হই যে তাঁর এই সুন্দর অভ্যাসগুলোকে এখন চরম সুসভ্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে পালনীয় ধরা হচ্ছে। ঘুমুবার সময়েও তাঁর অনেক নির্দেশনা আছে, যেমন কখন কোন দিকে কাত হয়ে শুতে হবে, কতক্ষণ শুতে হবে বা দুপুরবেলার বিশ্রামরীতি। সবকিছু এসেছে একটা মানুষের কাছ থেকেই। বিস্ময়কর এই যে, তাঁর এসব চর্চার বিবরণগুলো অত্যন্ত প্রাচীন কিন্তু কোন অতিমানবিকতার ছাপ নেই, বরং একেবারেই সাদামাটা। আমার কাছে তাঁর এই সাধারণত্বটাই সবচেয়ে অসাধারণ মনে হয়। আপাতঃদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হতে পারে কিন্তু একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে সার্বিক বিবেচনায় তিনি এসব সাধারণ অভ্যাসের মধ্য দিয়েই একজন ‘স্বাভাবিক’ অতিমানবের রূপ ধারণ করেছেন।
মুহাম্মদ আসলে অসাধারণ হয়েছেন সাধারণত্বের ভেতর দিয়ে। অন্যান্য কীর্তিমানের সাথে এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য তাঁর। এমন নিখুঁত সুসভ্য সুশৃঙ্খল জীবনাচার তৎকালে একেবারেই ছিল না, এখনও বিরল। সত্যই তাঁর দৈনন্দিন জীবনাচার বর্তমান যুগেও সামগ্রিকভাবে মানুষের সভ্য আচরণকে সংজ্ঞায়িত করে। নবী মুহাম্মদের চেয়ে মানুষ মুহাম্মদই আমার কাছে অধিক বিস্ময়কর, অনুকরণীয় আদর্শে পরিপূর্ণ এক কালোত্তীর্ণ সত্ত্বা। মুহাম্মাদ (সঃ) আমার চোখে পৃথিবীর প্রথম পরিপূর্ণ সভ্য মানুষ। আফসোস এই যে, সুসভ্যতার মানদণ্ড মানুষ মুহাম্মাদ আজ মুসলমানদের মাঝেই সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত।
Status Courtesy:
MD Shamim Hossain Acma, Muhammad Talut
MD Shamim Hossain Acma, Muhammad Talut
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন