বাংলাদেশ বার্তাঃ এ দেশের শতকরা পঁচানব্বই জন নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দেশের জন সমষ্টির এত বিরাট অংশ যদি অসৎ চরিত্রের হয়ে পড়ে তা হলে জাতির সমষ্টিগত স্বভাব চরিত্র কেমন করে ঠিক থাকতে পারে? এই জন্যই তো হিন্দু-মুসলমান ও শিখ জাতির কাছে সত্যবাদিতা, সুবিচার ও সততার কোন দামই এখন নেই। সত্যপন্থী, সৎ এবং ভদ্রস্বভাব বিশিষ্ট লোকেরা তাদের ভিতর কোনঠাসা ও দুর্বল হয়ে রয়েছে। মন্দ কাজে বাধা দান এবং ভাল কাজ করার জন্য উপদেশ দেয়া তাদের সমাজে অসহনীয় অপরাধে পরিণত হয়েছে, সত্য ও ন্যায় কথা শুনতে তারা প্রস্তুত নয়।
তাদের মধ্যে একটি জাতিই এমন লোকদেরকে পছন্দ করে যারা তার সীমাহীন লোভ লালসা ও স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করে এবং অন্যের বিরুদ্ধে তাকে উত্তেজিত করে তার ন্যায় ও অন্যায় সবরকম স্বার্থোদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করতে প্রস্তুত হয়। এজন্যই এরা নিজেদের ভিতর থেকে বেছে বেছে সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে নিজেদের নেতা নির্বাচন করেছে। তারা নিজেদের জঘন্যতম অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করে তাদেরকে নিজেদের নেতৃত্ব পদে বরণ করে নিয়েছে। তাদের সমাজে সবচেয়ে দুশ্চরিত্র, দূর্নীতিবাজ, বিবেকহীন লোকেরা তাদের মুখপাত্র সেজে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অত্যাধিক বরণীয় হয়েছে। অতঃপর এসব লোকেরা নিজ নিজ পথভ্রষ্ট জাতিকে নিয়ে ধ্বংসের পথে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারা জাতির পরস্পর বিরোধী আশা-আকাংখাকে কোন ইনসাফের কেন্দ্রবিন্দুতে একত্রিত না করে তাকে এতখানি বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তা অবশেষে সংঘর্ষের সীমান্তে পৌঁছেছে। তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘর্ষে ক্রোধ, ঘৃণা, শত্রুতার বিষ মিশিয়ে একে নিত্য অগ্রবর্তী করেছে। বহু বছর ধরে নিজেদের প্রভাবাধীন জাতিগুলোকে উত্তেজনামূলক বক্তৃতা ও রচনার ইনজেকশন দিয়ে এতখানি উত্তেজিত করে তুলেছে যে, এখন উত্তেৎনাবশতঃ কুকুর ও হিংস্র পশুর মত লড়াই করবার জন্য খড়গ উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসাধারণ ও শিক্ষিত সমাজের মনকে পৈশাচিক আবেগ ও উচ্ছাসে দূর্গন্ধময় এবং অন্ধ শত্রুতার চুল্লীবানিয়ে ফেলেছে। আপনাদের সামনে এখন যে তুফান প্রবাহিত হচ্ছে তা মোটেই সাময়িক ও আকস্মিক নয়। বহুদিন থেকে বিকৃতির যেসব বেশুমার কার্যকারণ আমাদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে এ হলো তারই স্বাভাবিক পরণতি। এটা একবার দেখা দিয়েই ক্ষান্ত হবে না; বরং যতদিন পর্যন্ত এসব কার্যকারণ সক্রিয় থাকবে, ততদিন এ বিকৃতি ক্রমশ বাড়তে থাকবে। এটা একটা শস্যপূর্ণ ক্ষেতের মত। বহু বছরের বীজ বপন ও জল সেচের পর এ ফসল খাবার উপযুক্ত হয়েছে। এখন আপনাকে এবং আপনার বংশধরদেরকে কতদিন পর্যন্ত এ ফসল কাটতে হবে তা বলা যায় না।ভাংগা ও গডা বইটিতে মহান লিখকের নিচের কথা গুলো আরা গুরুত্বপুরণ।
সংশোধনের জন্য সৎলোকদের সংগঠনের সাথে সাথে ভাংগা ও গড়া সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। ভাংগা কি তা আমাদের ভাল করে বুঝে নিতে হবে। তাহলেই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা যাবে। এমনিভাবে গড়া কি তাও জানতে হবে। তা হলেই তার বাস্তবায়নের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ এখানে নেই। সংক্ষেপে এ দুটোর আলোচনা পেশ করব। মানব জীবনে যে সব কারণে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় সেগুলোকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথম হচ্ছে, আল্লাহকে ভয় না করা। এটা দুনিয়ার সব রকমের অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও যাবতীয় দুর্নীতির মুল।
দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর বিধান মেনে না চলা। এটিই মানুষের জন্য কোন ব্যাপারেই অনুসরণ যোগ্য স্থায়ী নৈতিক বিধান অবশিষ্ট রাখেনি। এরি বদৌলতে ব্যক্তি, দল ও জাতির কর্মধারা স্বার্থপুজা ভোগ বিলাস ও কামনা লালসার দাসত্বের অধীন হয়ে গিয়েছে। এরি ফলে তারা নিজেদের উদ্দ্যেশ্যের মধ্যে বৈধ ও অবৈধ পার্থক্য করে না এবং উদ্দেশ্য হাসিল করবার জন্য যে কোন রকমের অসদুপায় ও দুর্নীতি অবলম্বন করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না।
তৃতীয় হচ্ছে , স্বার্থপরতা। এরি কারনে মানুষ পরস্পরের অধিকার হরণ করে। এমনকি ব্যাপক ভাবে খান্দানী ও জাতীয় আভিজাত্য এবং শ্রেণী বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। এবং এথেকে নানান ফেতনা ও বিপর্যয়ের উদ্ভব হয়।
চতুর্থ হচ্ছে, জড়তা ও বিপথগামীতা, এর দরুন আল্লাহ প্রদত্ব শক্তি ও ক্ষমতা হয়তো কোন কাজে ব্যবহারই করে না কিংবা তাঁর অপব্যবহার করে অথবা আল্লাহ প্রদত্ত উপায় উপকরণকে কাজে লাগায়না কিংবা অকাজে লাগায়।
অপরদিকে মানুষের জীবন যে সব উপায়ে সুন্দরভাবে গড়ে উঠে তাকে ও চার ভাগ করা যায়।
প্রথম হচ্ছে, আল্লাহ ভীতি
দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
তৃতীয় হচ্ছে, মানবতার ব্যবস্থা, এতে ব্যক্তিগত, জাতীয়, বংশীয় সাম্প্রদায়িক স্বার্থপরতার পরিবর্তে সমস্ত মানুষের সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার থাকবে। এর ভেতর অযথা বৈষম্য, উচু-নীচু, অপবিত্র ধারনা, কৃত্রিম গোড়ামী ও পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। এতে কতক লোকের জন্য কৃত্রিম বিধি নিষেধ ও বাঁধা বিপত্তি থাকবেনা। এতে সবারই উন্নতি ও প্রগতির সুযোগ সবিধা থাকবে। দুনিয়ার সব মানুষ সমানভাবে মিলে মিশে থাকতে পারবে, এমন ব্যাপক হতে হবে এ ব্যবস্থা।
চতুর্থ হচ্ছে, সৎকাজ। এর মানে হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও উপায় উপাদানকে পূর্ণরূপে ও সঠিকভাবে কাজে লাগানো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন