বাংলাদেশ বার্তাঃ জনাব তেমেল কারামোল্লাওলু তুরস্কের প্রাচীন নগরী সিবাস শহরে ১৯৪১ সালে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার কারণে বার বার বদলী হওয়ার ফলে তিনিও তার সাথে তুরস্কের বিভিন্ন শহরে পড়াশুনা করেন। ১৯৬০ সালে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানচেস্টার বিদ্যালয়ে টেক্সটাইল টেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি যথাক্রমে ১৯৬৪ সালে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।
পড়াশুনা শেষ করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সুমেরব্যাংকে প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি পরিকল্পনা অধিদপ্তরে প্রধান ইঞ্জনিয়ার হিসাবে যোগদান করেন। State Planning Organization এ সেক্টর প্রজেক্ট অফিসার হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। এই সময়েই তিনি তুরস্কের উন্নয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন তার একটি রূপরেখা তুলে ধরেন। এবং এই সময়ে প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে তুরস্কে ইসলামী আন্দোলন মিল্লি গরুশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবে দায়িত্ত্ব পান। প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ত্ব পালন কালে তিনি এরবাকান (রঃ) এর নির্দেশনায় তুরস্কে ২৭০ টির বেশী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠা করেন। বিমান বানানোর ফ্যাক্টরি থেকে শুরু করে তৎকালীন সময়ে সকল আধুনিক কারখানা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি মিল্লি সালামেত পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই সাথে তিনি তুরস্কের পক্ষ থেকে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সময় ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে ইরানের বিপ্লবের পক্ষে তিনি জোরালো ভুমিকা পালন করেন এবং ইরানে অবরোধ আরোপের বিপক্ষে তিনি তার ও তুরস্কের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি তার দল মিল্লি সালামেত পার্টির নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এক সামরিক ৯৮০ সালের সামিরক অভ্যুত্থানের পর সামরিক সরকার তার উস্তাজ ও তুরস্কে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে তাকেও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে। এর পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত সামরিক জান্তা তাকে নির্বাসিত করে রাখে। ১৯৮৯ সালে এক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এরবাকানের (রঃ) সাথে তিনিও রাজিনীতি করার অধিকার ফিরে পান এবং সেই বছরেই সিবাস শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। সিবাস শহরে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ১৯৯৪ সালে তিনি পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। তার সময়ে সিবাস শহরে তিনি অভূতপূর্ব উন্নয়ন কারযক্রম পরিচালনা করেন।
১৯৯৫ সালে দলের প্রয়োজনে তিনি মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি তুরস্কের পক্ষ থেকে ন্যাটো পার্লামেন্টারীয়ান বডির নেতৃত্ব দেন। একই সময়ে তিনি রেফাহ পার্টির প্রধান হুইপ হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। রেফাহ পার্টি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ত্ব পালন করেন।
সাংবিধানিক আদালত করতিক রেফাহ পার্টি নিষিদ্ধ হলে নব গঠিত ফাজিলেত পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে ফাজিলেত পার্টি থেকে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। এই সময়েও তিনি ন্যাটোর পার্লামেন্টে সদস্য হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে ফাজিলেত পার্টিকেও নিষিদ্ধ করে দিলে ২০০০ সালেই প্রতিষ্ঠিত সাদেত পার্টি তে যোগদান করেন এবং নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন। তিনি বিগত ১৬ বছর যাবৎ সাদেত পার্টির নেয়েবে আমীর এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশই ভ্রমন করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে ইসলামী দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। একাধারে তিনি একজন বিজ্ঞানী, পরিকল্পনাবিদ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদ।
তিনি আরবী এবং ইংরেজী ভাষা জানেন ও পাঁচ সন্তানের জনক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন