ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

মাহাথির মোহাম্মাদের হাতে আনওয়ার ইবরাহীমের বিজয় এবং ইসলাম পন্থী “পাসের” স্থীতিশীল অবস্থা

বাংলাদেশ বার্তাঃ মাহাথির মোহাম্মাদের দাদা ইস্কান্দার ছিলেন ভারতের কেরালার মানুষ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি মালয়েশিয়া আসেন, এবং কেদাহ রাজপ্রাসাদে শিক্ষকতায় ব্যপৃত হন। এই সময়ে ১৮৮১ সনে ইস্কান্দার সাহেব জোহর প্রদেশের সিতি হাওয়াকে পেনাং এ বিয়ে করেন। সুন্দর সাজানো সংসারে মাহাথীরের বাবা মোহাম্মাদ ইস্কানদার বড় হয়ে ওঠেন এক দিকে ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে, অন্য দিকে রাজনীতি সচেতন হয়ে। তিনি হলেন পেনাং “আলোর সেতার” এর ইংরেজী স্কুল “মাক্তাব সুলতান আব্দুল হামিদ” এর প্রথম মালে হেড টিচার। তার জ্ঞান ও দক্ষতার জন্য কেদাহ রাজপরিবারের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ওয়ান তেম্পাওয়ান বিন্ত ওয়ান হানাফি তাকে বিয়ে করতে রাজি হন। এদের ই ঘরে ১৯২৫ সালের ১০ই জুলাই মাহাথির মোহাম্মাদের জন্ম হয়।
খেলাধুলাতে কিছু দূর্বলতা তার সেই ছোট বেলা থেকে থাকলেও তিনি প্রথম থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন, ও বেশ পরিশ্রমী ছিলেন। “সেবেরাং পেরাক মালে বয়েস” স্কুলে তার প্রাইমারী শিক্ষা শুরু হয়, এবং ইংরেজী খুব ভাল হওয়ার দরুন তিনি একটা ইংরেজি মিডীয়াম স্কুলে স্কলারশিপ সহ পড়ার সুযোগ পান। এই সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান মালয়েশিয়া দখল করে নিলে মাহাথিরের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, এবং যুদ্ধ চলা কালীন তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ঐ তারুন্যে তাকে কফি বিক্রী ও ফ্রাইড কলা “পিসাং গরেং” বিক্রী করে জীবন চালাতে হয়। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন, এবং ১৯৪৬ সনে সিনিয়র ক্যামব্রীজ এক্সামে অংশ গ্রহন করে মাধ্যমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হন। এর পরে মালয়েশিয়ার তদকালীন রাজ্য সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড সেভেন কলেজ অব মেডিসিনে ভর্তি হন, এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সেখান থেকে তিনি ডাক্তারী সনদ নিয়ে মালয়েশিয়ার তার এলাকায় ফিরে আসেন।
প্রথমে তিনি ডাক্তার হিসেবে সরকারী চাকুরিতে যোগদেন। পরে ছাত্র জীবন থেকে পরিচিত ডঃ সিতি হাসমাহ মোহাম্মাদ আলী কে ১৯৫৬ তে বিয়ে করে প্রাইভেট ক্লিনিক শুরু করেন এবং এর পর থেকে এলাকার ধনীদের কাতারে চলে আসেন।

তার রাজনীতি সব সময়ে জাতীয়তাবাদে ঋদ্ধ। মালেদের উন্নয়ন, মালয়েশিয়ার উন্নয়ন, মালয়েশিয়াকে জগতের উন্নতদের তালিকায় স্থাপন ইত্যাদিই ছিলো তার লেখা লেখি, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সফলতার দর্শন। তার রাজনৈতিক দর্শন শুরু হয় জাপানীদের থেকে দেশোদ্ধারের সময় নন মালেদের মালয়েশিয়ার সিটিজেনশিপ দেয়ার বিরোধিতার মাধ্যমে। তার পারিবারিক নাম ছিল ‘চে দেত’, এই ছদ্ম নামেই তিনি “দ্যা স্ট্রেইট টাইমে” অগ্নি উদগীরনী প্রবন্ধ লিখতেন। মালে ভাষাকে রাস্ট্র ভাষা ঘোষণা ও মালে ছাত্রদের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ দানে কোটা পদ্ধতির দাবী ছিলো তার জনপ্রিয়তার আরকেটা কারণ। এইভাবে তিনি ১৯৫৯ সালে ইউনাইটেড মালেস ন্যাশনাল অরগাইনাইজেশানে (যাকে সংক্ষেপে ‘আমনো’ বলে) যুক্ত হন, এবং সম্মানিত আসন পান। মালে জাতির প্রতি তার জাতীয়তাবোধের ব্যাপারে সে সময়ের মালয়েশিয়ার স্থপতি ও আমনোর প্রেসিডেন্ট টুঙ্ক আব্দুর রহমানের সাথে মতপার্থক্য হলে ১৯৫৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি রাগ করে অংশগ্রহন করেন নি।
১৯৬৪ সনে উভয়ের মতপার্থক্য সত্বেও তিনি “কোতা সেতার সেলাতান” সংসদীয় আসন থেকে মালয়েশিয়ান ইসলামি আন্দোলন ‘পাস’ এর প্রার্থী মোহাম্মাদ সারী আব্দুস শাকুরকে পরাজিত করে প্রথম এম পি হন। জুনিয়র এমপি হয়েও তিনি ছিলেন পার্লামেন্টে খুবই নামকরা সাংসদ। তার যুক্তির কাছে হার মেনে সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া থেকে আলাদা করার ব্যাপারে জনমত তৈরি হয়। ১৯৬৯ এর নির্বাচনে তিনি তার আসনে “পাস” এর প্রার্থী ইউসুফ রাওয়ার কাছে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে মাহাথির চাইনিজদেরকে দায়ী করেন। এইভাবে চাইনিজদের সাথে মালেদের মারাত্মক দূরত্ব তৈরি হয়, ফলে ১৯৬৯ এর ১৩ই মে তে মালে-চাইনিজ রায়টে অনেক মানুষ হতাহত হয়। এই ধোঁয়াশার মাঝে তিনি টুঙ্ক আব্দুল রহমানের কাছে মালে স্বার্থ সংরক্ষণের গুরুত্ব দিয়ে একটা চিঠি লিখেন, যেটা পরবর্তিতে “খোলা চিঠি” রূপে জনগণের হাতে যায়। এখানে তিন আব্দুল রহমানকে পদত্যাগ করতে হুমকি দেন। ফলে তাকে আমনোর পদ হারাতে হয়, ও কারাগারে যেতে হয়। এই সময়ে তিনি “দ্যা মালে ডাইলেমা” বই লেখেন। যেখানে মালেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকারের জন্য সরকারী পলিসি নির্ধারণের উপর জোর দেন। স্বাভাবিক ভাবেই বইটা বাতিল করা হয়। তবে তার প্রভাব ছিলো এত সুদূর প্রসারী যে এর আঘাতে টুঙ্ক আব্দুল রহমান ১৯৭০ সনে পদত্যাগ করে ক্ষমতা আব্দুল রাযাক হুসায়ন এর হাতে দিয়ে তিনি সরে পড়েন।
আব্দুল রাযাক মাহাথিরকে দলে ফিরিয়ে আনেন, এবং তাকে ১৯৭৩ সালে সিনেটর করে ১৯৭৪ সনে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্ব দেন। তার মালে পলিসি এখানে দারুন জন সমর্থন পায়। তিনি ক্যাম্পাস রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সেখানে সুন্দর পড়াশুনার ক্ষেত্রে তৈরি করেন। তদুপরি মালয়েশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস ও কারিক্যুলাম বিশ্বমানে আনার প্রচেষ্টা তাকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তোলে। আমনোর কেন্দ্রীয় লীডারশিপে তার স্থান ভালো হলেও তাকে আব্দুল রাযাক খুব ভয় পেতেন। ফলে মাহাথিরের বিপরীতে তিনি হুসাইন অন, গাফার বাবা, ও রাজ পরিবারের টুঙ্ক রিজালেই হামযাকে ডেপুটি লীডার করে প্যানেল করেন। মাহাথিরকে এইসব ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে সামনে এগুতে হয় এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বুদ্ধি ব্যবহার করে ও আল্লাহর কুদরাতে তিনি ডিপুটি প্রধান মন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা পান। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে সুনাম অর্জনের পর তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রী মন্ত্রানলয়ে। এখানে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য পলিসি নির্ধারণের সবচেয়ে ভালো যায়গা পেয়ে যান। ১৯৭৮-১৯৮১ এ তিনি মালয়েশিয়ায় এই সেক্টরের দিকে বিশ্বের নযর আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
১৯৮১ এর ১৬ জুলাই এ ৫৬ বছর বয়সে তিনি প্রধান মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর পর থেকেই তিনি মালয়েশিয়াকে বিশ্ব সভায় এক জ্বলজ্বলে সদস্য হিসেবে স্থাপন করেছেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার বিপরীতে যে সব থ্রেট ছিলো সেগুলো কখনও আইন প্রনয়ন করে, কখনো রাজনৈতিক মেধা দিয়ে সরাতে সক্ষম হন। মালয়েশিয়া রাজা শাসিত দেশ। রাজাদেরকে তিনি একটা আইনের মাধ্যমে সুন্দর বৃত্তের আওতায় নিয়ে আসেন। অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক ধারা ও ধনতান্ত্রিক ধারার মাঝে সমতা রেখে তার নিউ ইকনোমিক্স পলিসিতে ‘ভূমিপুত্র’ দর্শন ও পরবর্তিতে ন্যাশনাল ডেভালপমেন্ট পলিসিতে আরো ফ্লেক্সিবল নীতি প্রনয়ন করার ফলে মালয়েশিয়া হয়ে ওঠে এশিয়ার নামকরাদের মধ্যে। তার “ওয়াওয়াসান দুয়াপুলু দুয়াপুলু” বা “২০২০ ভিশন” খুবই খ্যাতনামা হয়। এখানে তার মালয়েশিয়াতে সেরা ব্রিজ, সেরা বিমান বন্দর, সেরা টাওয়ার, সেরা আইল্যান্ড, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির চিন্তা মালয়েশিয়াকে অপরের হিংসার পাত্র করে ফেলে। ফলে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ধ্বস নামানো হয়, বাজার অর্থনীতি শেষ করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র ও বিপদ মুকাবিলা করে তিনি টিকে থাকেন তার শক্তিশালী লীডারশিপ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে, সর্বোপরি আল্লাহর রহমে।
তিনি মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের উত্থানকে ভালো ভাবে নেন নি। বিশেষ করে ইউসুফ রাওয়ার কাছে তার হেরে যাওয়াটা ছিলো ‘পাস’ এর ব্যাপারে সব সময় নেতিবাচক চিন্তার কারণ। পাস এর আন্দোলন ছিলো মিশরের ইখওয়ান ও পাকিস্তানের জামাআতের আদলে। তবে এর ধর্মীয় পন্ডিতরা ছিলো খুবই ক্লাসিক্যাল ভাবধারার। এই সময় আনওয়ার ইবরাহিমের উত্থান হয়।
তিনি যখন ইউনিভার্সিটি মালায়ুর ছাত্র, সেই ২১ বছর বয়সেই তার মধ্যে লীডারশিপ যোগ্যতা দেখা যায়। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মালায়েশিয়ান মুসলিম স্টুডেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম হয় পরে আবিম, বা আংকাতান বেলিয়া ইসলাম মালায়েশিয়া। ১৯৬৮-১৯৭১ সন পর্যন্ত তার নাম ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্থানে ছড়ায়ে পড়ে। নেতৃত্ব দেন ইংলান্ডে ইফসু, সৌদি ভিত্তিক ওয়ামি, আমেরিকা ভিত্তিক ট্রিপল আইটির এবং সারা বিশ্বে ছাত্র আন্দোলনে তিনি ক্যারিশমাটিক নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন। ছাত্রজীবন শেষ হলে তিনি মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশ করেন। ১৯৭৪ সনে তিনি কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন যাতে সারা মালয়েশিয়াতে তার প্রভাব পর্যাবেক্ষন করে সবাই। তাকে আই এস আই বা ইন্টারনাল সিক্যুরিটি এক্টএ আটক করা হয়, এবং ২০ মাস বিনা বিচারে জেল খাটিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
মাহাথির মোহাম্মাদ ১৯৮১ সালে প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পরে যাদের মাধ্যমে দেশোন্নয়নের কথা ভাবছিলেন, তার মধ্যে আনওয়ার ইবরাহীমকেও রেখেছিলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন কট্টোর সেক্যুলার, আর আনওয়ার ইবরাহীম কোন ভাবেই তার কথায় কর্ণপাত করতেছিলেন না, কাজেই মাহাথির সাহায্য নেন ডঃ ইউসুফ আলক্বারাদাওয়ী, তাহা জাবির, আব্দুল হামিদ আবুসুলায়মান প্রমুখ যারা সে সময় আনওয়ার ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের পরামর্শে এই পরম ইসলামি ব্যক্তিত্ব চরম সেক্যুলার মাহাথিরের দলে যোগ দেন। ক্রমে ক্রমে ১৯৮৩ সালেই তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রী, ১৯৮৪ এগ্রিকালচার মন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালে তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। মালায়েশিয়ার ইতিহাসে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পাওয়া মানে প্রধান মন্ত্রী হওয়ার দিকে পা রাখা, এ বিষয়টা সবারই জানা ছিলো। ফলে এখান থেকেই আনওয়ার ইবরাহীম শত্রুতার কোপানলে পড়েন। 
মাহাথির তাকে নিজ ছেলের মত আদর করতেন, আনওয়ার ইবরাহীম সব সময় তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেন। ফলে এই মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর কাজে ব্যাপৃত হয় মাহাথির মোহাম্মাদের কিছু কাছের মানুষ। আনওয়ারকে যত গুলো মন্ত্রনালয় দেয়া হয়, প্রতিটাতেই সফলতার হার ছিলো অনেক উঁচুতে। ১৯৯১ সালে তাকে যখন অর্থ মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তার পদক্ষেপগুলো ছিলো মালয়েশিয়ার জন্য একটা জোয়ার বয়ে নিয়ে আসা ঢেও।

আনওয়ার তিন ভাবে মালয়েশিয়া অর্থনীতিকে সাজায়ে তোলেনঃ
১- ইসলামি অর্থনীতির নানান প্রকল্প তিনি শুরু করেন তার দেশে। এটা করে তিনি সারা বিশ্বের ভালো ভালো বিশেষজ্ঞদের তার দেশে নেয়া শুরু করেন, ইসলামি ব্যাঙ্কিং শুরু করেন এবং প্রতিটি ব্যাঙ্কের সাথে মালে মুসলিমদের দাবীর প্রতি সন্মান জানিয়ে ইসলামি ব্যাংকিং এর উইং খুলে দেন। এইভাবে সারা দেশে ইসলামি অর্থনীতির অগ্রযাত্রা শুরু হয়, ফলে লক্ষ লক্ষ্ মুসলিম ও আরব ইনভেস্টরদেরকে মালয়েশিয়া মুখী করেন।

২- চায়না, জাপান, কোরিয়া সহ উন্নত বিশ্বের ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে মালয়েশিয়ায় ব্রাঞ্চ খোলার জন্য পথ উন্মুক্ত করেন। এবং মুসলিম বিশ্বের সস্তা জনশক্তিকে তার দেশে কাজ করার অনুমতি দেন। ফলে সস্তায় বিশ্ববাজারের চাহিদা সাপ্লাইএর জন্য মালয়েশিয়া হয়ে ওঠে খুবই আকর্ষণীয়।
৩- "ভূমিপুত্র" কন্সেপশানের সাথে মাহাথিরের ২০২০ ভিশন মালয়েশিয়ার আভ্যন্তরীন জনশক্তিগুলোকে কর্মমুখী করে তোলে। এটাকে আরো কাজে লাগায় আনওয়ার ইবরাহীমের শিক্ষাবৃত্তি। সারা দেশে নানান সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেন তিনি। ফলে মালয়েশিয়ার জনশক্তির যেমন উন্নয়ন সাধন হয়, তেমন ভাবে তাদের কাজে লাগানোয় দেশ দ্রুত প্রভাবশালীর তালিকায় আসে। 
মাহাথির ভালোভাবে বুঝে ছিলেন "পাস" এর ইসলামি খেলাফত থেকে ফেরাতে গেলে আনওয়ারের মত বিকল্প ইসলামিস্ট তার দলে থাকা দরকার। তিনি বুঝে ছিলেন "আল আরকাম" সহ অন্যন্য ইসলামি গ্রুপ গুলো শেষ করতে আনওয়ার ইবরাহীমের মত ইসলাম জানা লোক তার ডান পাশে রাখা উচিত। তিনি এটাও বুঝেছিলেন, তার সমস্ত মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে আনওয়ার ইব্রাহীমের মত ক্যারিশমা কারো নেইঃ বুদ্ধিতে তার ধারে কাছে কেও নেই, এবং মালয়েশিয়াকে সামনে নিতে তার মত নিঃশংক ও আন্তরিক কেও নয়। কাজেই তিনি আনওয়ারকে তার উত্তরসূরী করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার অর্থ ধ্বসের সময় আমি ওখানে ছিলাম। খুব গভীর ভাবে তখনকার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছি। ঐ সময়েই আমি দেখছি এই দুই নেতার দূরত্ব তৈরির ফ্যাক্টর গুলো। ১৯৯৮ এর ২০শে সেপ্টেম্বর তার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অবস্থার শেষ সমাবেশ “মারদেকা স্কয়ারে” আমি আমার বন্ধুদের সাথে উপস্থিত ছিলাম। তাকে যখন মানুষ ঘাড়ে করে সামনে নিচ্ছিলো তখন তার হাতে হাত রেখে প্রচুর কেঁদেছিলাম, তার এরেস্ট করার পর তার বাসায় যেয়ে ম্যডামকে সান্তনা দেয়ায় ও শরিক হয়ে ছিলাম। সত্যি বলতে কি, এই ঘটনার পর মালয়েশিয়াতে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করেনি। 
যাই হোক, আমি কাছ থেকে এই দুই নেতার বিভক্তির যে কারণ গুলো জেনেছি ও দেখেছি তা হলোঃ

১- মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক ধ্বসের কারণ হিসেবে মাহাথির জর্জ সরোস সহ বড় বড় ইনভেস্টরদের দায়ি করতেন, এবং তারা অর্থ পাচারের পরে দেশটাকে সাবলম্বী করতে যেয়ে ইন্টারনাল রিসোর্সের দিকেই ছিলো মাহাথির মোহাম্মাদের ইচ্ছা ও নির্দেশনা। আনওয়ার ইবরাহীম মনে করতেন শুধু আন্তর্জাতিক দুষ্ট চক্রই এই ধ্বসের জন্য দায়ী নয়, দায়ী দেশের ভেতর থাকা করাপ্টেড টাউট রাজনৈতিক সংস্থা ও নেতৃবর্গ। কাজেই তিনি বাইরের ইনভেস্টরদেরকে আরো যায়গা করে দিতে চাইলেন ও আই এম এফ এর সার্বিক সাহায্য চাইলেন। আই এম এফের যে মারাত্মক শর্তাবলী ছিলো তা তো আমরা সবাই জানি। তারা মাহাথিরের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, ও দেশের দুষ্ট চক্রের উপর দৃষ্টিদিতে বলে, যা প্রকারন্তরে মাহাথিরের মাথাটাকেই গুলির আওয়তায় আনার মত। তাছাড়া আই এম এফ এর নিগড়ে একবার পড়লে কোন দেশ ঋণ ভেদ করে উঠতে পারেনা তা মাহাথির বুঝতেন। কাজেই আনওয়ারের আই এম এফের ফাঁদকে তিনি খুব খারাপ অর্থে নেন।
২- আনওয়ারের প্রতি ভালোবাসায় হোক, অথবা মাহাথিরের দীর্ঘদৃষ্টির দিব্যতায় আনওয়ার ইবরাহীমের উত্থান রোধের পরিকল্পনায় হোক, মাহাথির আনওয়ারকে তার পরবর্তি প্রধান মন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়ে ইউকেতে আসেন গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে। এই সময় তিনি আনওয়ারের কাজ খুব খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন। আনওয়ার তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান মন্ত্রী। মাহাথির প্রধান মন্ত্রী থাকতেই তিনি রাঘব বোয়ালদের ব্যাপারে কিছু করে নিতে চাইলেন। তিনি চাইলেন রাস্ট্রের যেসব চুরি করা অর্থ নানান নেতাদের হাতে জমে গেছে তা এন্টি করাপশান এজেন্সির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে।
এইটা করতে যেয়ে তিনি চতুর্মুখী শত্রুতার সম্মুখীন হন। ব্যাংক গুলো সরকারি সাহায্য পাবেনা বলে আনওয়ারের সিদ্ধান্ত ধনিক শ্রেনীকে ক্ষেপিয়ে তোলে। করাপ্টেড নেতাদের প্রত্যেকের নামে তদন্ত সেল প্রস্তুত হওয়ায় সবাই ঘাবড়ে যায়। রাজনৈতিক ভাবে তার ক্ষমতার দাপট মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে ভয় ধরিয়ে দেয়। খোদ মাহাথির ও চাপের মধ্যে থাকেন। কারণ মালেয়েশিয়ার সব সেরা অর্থকরী সংস্থায় তার পরিবারের কিছুনা কিছু শেয়ার ছিলো।
একদিকে আনওয়ার ইবরাহীমের কাছ থেকে মাহাথির দূর হচ্ছিলেন। আবার মাহাথিরের লোকেরা আনওয়ার মুক্ত মালয়েশিয়া রেখে না গেলে মাহাথিরের পরিবারকেও ধরা হবে হুমকি দিলেন। ফলে মাহাথির মোহাম্মাদ ছুটি থেকে ফিরে এসে তার সিদ্ধান্ত থেকে ৯০ ডিগ্রী ঘুরে দাঁড়ালেন। আনওয়ারকে স্যাক করলেন, তাকে মার দিলেন, ব্যাক বোন ভেঙে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। অন্ততঃ ৫ জনের সাথে আনওয়ার ইবরাহীমের সমকামী সম্পর্ক ছিলো প্রমান করতে স্পার্ম নিয়ে খেলা শুরু করলেন, ম্যাট্রেস প্রদর্শনী করেলেন। নূর হাফিলদাদের জাগালেন, আজিজান আবু বকরদের হাতে পাখা, ও পকেটে টাকা দিলেন, ডঃ মুনাওওয়ায়র দের আঘাতে আঘাতে শেষ করলেন এবং অনেক অনেক গল্প তৈরি হলো।
আনওয়ার ইবরাহীম ছিলেন আরেক মাহাথির। মূলত তাদের দুইয়ের ফসল হলো আধুনিক ও মুসলিম মালয়েশিয়া। মাহাথির আধুনিক উন্নত মালায়েশিয়ার রূপকার, আর আনওয়ার হলেন আধুনিক ইসলামি মালয়েশিয়ার কর্মকার। আনওয়ারকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার মাহাথিরীয় বুদ্ধি মাহাথিরকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করে। ক্ষমতা তাকেও হারাতে হয়, কারণ খ্যাতি চলে যায় যিরোর কোঠায়। ফলে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতার মেইন ঘুটি হিসেবে থাকেন তিনি। প্রথমে আব্দুল্লাহ বাদাওয়ীকে তিনিই আনেন। তাকে দিয়ে কাজ হচ্ছিলনা বলে তাকে তিনিই তাড়ালেন। নাজিব রাযাককেও তিনি আনেন। বারবার আনওয়ারের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু তাকে দিয়েও মালয়েশিয়ায় তেমন উপকার দেখতে পাচ্ছেন না। এখন থেকে বছর দুই আগ থেকে তিনি আনওয়ারের প্রতি সুদৃষ্টি দেন। তাকে এই সব নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে যোগ্য ও কাছের মনে করে তার সাথে করা অন্যায়ের জন্য তিন বার অশ্রুপাতও করেছেন। একবার বাকরূদ্ধও হয়েছেন। পরে আনওয়ারের মেরুদন্ডের ব্যাথা ও কিছুটা ভালো হবার পরে দুই বন্ধু ও বাবা ছেলে এক হয় পাকাতান হারাপান করেছেন। এবং সেই মাহাথির আবার তাকে ক্ষমতার শীর্ষে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আমরা যারা কুমিরের পেটে ছেলে হারানো লোক, তারা ঢেকি দেখলেও ভয়ে কাঁপি। ৯২ বছরের মাহাথিরকে আনওয়ার কি বলবেন জানিনা, আগে দাঁত হারা বাঘ বলতেন। আমরা মনে করি মাহাথির মোহাম্মাদ যদি কথা রাখেন, তা হলে মালায়েশিয়া একটা ভালো যুগে ঢুকতে পারবে।
আমি সব সময় পাস এর দিকে তাকাই। খাঁটি ইসলামি আন্দোলন ও ইসলামি চরিত্র এদের কর্মিদের মাঝেই পাওয়া যায়। এদের মাঝে শায়খ নিক আব্দুল আযীয (র) থাকতেই দু’টো গ্রুপ আমরা লক্ষ্য করেছি। আলিম উলামারা “পাস”কে পুরো খেলাফতের কান্ডারী করতে চান। আনওয়ার ইব্রাহীম ২০০৮ সালে পাকাতান রা’ইয়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এই জোটে তিনি আগুন ও পানি এক যায়গায় করতে যেয়েই মূলতঃ “পাস” কে দুই ভাগ করে ফেলেন। ড্যাপ হলো অমুসলিমদের সংগঠন। আর “পাস” হলো ইসলামি আন্দোলন। আর তিনি হলেন মোডারেট। এই ফার রাইট, বা ফার লেফটের সাথে তিনি মাঝামাঝি বসতে যেয়ে “পাস” এর সংবিধান পরিবর্তন করেন। সেই সংবিধান থেকে শারীয়া আইনের বাস্তবায়ন ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় গুলো বাদ দিতে বাধ্য করেন। কারণ ড্যাপের নেতারা ছিলো এ ব্যাপারে সাংঘাতিক বাতিক গ্রস্ত। ঐটা বাদ দেয়ার সময় আলিম গণ সেই সময় খুব খারাপ ভাবে “পাস” এর নেতৃত্বের বিরোধিতা করে। এমন কি গত নির্বাচনের আগে মাহাথিরের মাধ্যমে “পাকাতান হারাপান” জোট গঠনের সময় তারা এই জোটে আসতে অনীহা প্রকাশ করে। যদিও আমানাহ নামে আরেকটা দল করে এদের অপেক্ষা কৃত আধুনিকরা “পাস” থেকে বের হয়। এই বড় বিপদেও “পাস” তাদের কেলান্তন এবং তিরিঙ্গানু ধরে রেখেছে। কেদাহ হয়তো আসতো তাদের ঐক্য থাকলে।
আমার বয়স এখন অর্ধ শতাব্দী ছুঁই ছুঁই করছে। ইসলামী আন্দোলন গুলোর গভীরে থাকার চেষ্টা করেছি। নেতা নেতৃবৃন্দের সাহচর্য্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। পি এইচডির গবেষণা করতে যেয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামি পন্ডিত ও নেতাদের পাশে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বর্তমান লীডারশিপ আমাদের যা বুঝাতে চায়, তা যেন আমরা মালয়েশিয়ার এই নির্বাচনে দেখতে পেয়েছি। তা হলোঃ
১। ইসলামি সংস্কার ও রাজনৈতিক আন্দোলন যারা করে, ইসলামি বিশ্বে কাজের ধরণ তাদের চেইঞ্জ করতে হবে। মুসলিম দেশে আমরা যে খেলাফতে রাশেদার আদলে একটা খিলাফত তৈরির কাজ করতে চাই, সাধারণ জনগন তাতে ভোট দেয়না। ভোটের রাজনীতি আলাদা। সেখানে তারা আউটকাম ও স্বপ্ন দেখতে চায়। আর সেই আউটকাম তৈরিতে ভূমিকা রাখে দেশের প্রভাবশালী মুসলিম নেতারা। পাকিস্তান জামাআত একা নির্বাচন করলে ভোট কম পায়, কিন্তু জোট করলে ভালো করে। ইখওয়ান জোটে ভালো করে। তুরাবীর জোট ও ভালো করেছে। আরবাকানের দল বারবার বাতিল হবার পরে ইরদোয়ানদের পদক্ষেপ ও জোট ভালো কাজ করেছে। রাজনীতিতে ইনসাফের পক্ষে অবস্থান, করাপশানের বিপরীতে পদক্ষেপ, বেকারত্ব নিধনের বাস্তব রূপরেখা ইত্যাদি থাকতে হবে বেশি।

ভোটের ভাষা যদি হয়, “আমারে ভোট দাও জান্নাত পাবা, না দিলে জাহান্নামে যাবা” তা হলে বুঝতে হবে জনগণকে দেয়ার মত তেমন কিছু আমাদের নেই।
২। আনওয়ার ইব্রাহীমকে ক্রাশ করতে হেন কাজ নেই যা আগের সরকার গুলো করেনি। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, বিশ্ব সমকামীদের ওয়েব পেইজে গেলে আনওয়ার ইবরাহীমের নামটাও দেখতে পাবেন। অথচ তিনি এর ধারে কাছেও ছিলেন না। সবটাই করেছে আগের সরকার গুলো। আনওয়ার সেই মাহাথিরকে যখন ক্ষমা করেন, মাহাথির যখন সেই কথা স্মরণ করে কাঁদেন, তখন আমাদের বুঝতে হবে রাজনীতি কি জিনিষ। মুসলিম নেতাদের ব্যাপারে আমাদের আচরণের একটা দারুন যায়গায় আনওয়ার ইব্রাহীম আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন। যা অনেক তিক্ত হলেও ইসলামিক।
৩। আনওয়ার ইব্রাহীম কে ক্রাশ করতে চেষ্টা হয়েছে। তার সম্পদ শেষ, স্বাস্থ্য শেষ, সম্মানে আঘাৎ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এক দিনের জন্যও তার আন্দোলন থেকে থেমে থাকেন নি। আজ আমাদের ঐ বোধ কাজে লাগাতে হবে। যদি উদ্দেশ্য মহৎ হয় মানুষ পছন্দ করেন। আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর যখন নিজকে মরণের হাতে সঁপে দিচ্ছিলেন, তখন আম্মা আসমা বিনতে আবূ বকরের (রা) কাছে বিদায় নিতে যান। যে বলেন, আম্মা আমার আপন ভাই মুসআব ও আজ আমার বিপরীতে উমাইয়্যাহ শিবিরে চলে গেছে। আমি কি করবো। আম্মা বললেনঃ তুমি যদি সত্যের উপর থেকে এতদিন যুদ্ধ করে থাকো, এগিয়ে যাও। পালায়ো না। আমার কেন জানি মনে হয়েছে, মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজকারীদের কোন অবস্থাতেই বসে থাকা উচিৎ না।
৪। ইসলাম পন্থীরা যদি সঠিক নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে আসে, তাদের পরাজয় হবেনা ইনশাআল্লাহ।
অনেক অনেক আশা, অনেক অনেক দুয়া মালায়েশিয়ার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন