সালাত বা নামাজঃ পর্ব-১
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আমি সালাত নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ, এবং চেষ্টা করব সবার পরামর্শগুলোকে এ আলোচনায় নিয়ে আসতে, আল্লাহ্ যেন তাওফিক দেন, আর যা আলোচনা করব তা যেন সর্বপ্রথম আমাকে এবং আপনাদেরকে আমল করার তাওফিক দেন আমিন...
আমি যে বিষয়গুলো বলতে চেষ্টা করব...
* সালাত কি ও কেন?
* কেন সালাত আদায় করবো?
* আদায় না করলে কি শাস্তি।
* সালাত আদায়ে আমাদের পাওনা।
* সালাত কি ও কেন?
* কেন সালাত আদায় করবো?
* আদায় না করলে কি শাস্তি।
* সালাত আদায়ে আমাদের পাওনা।
আজ শুধু একটি আয়াত এবং সামান্য ব্যাখ্যা দিয়ে শুরু করছি, ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে পয়েন্ট ভিত্তিক লিখব....
পবিত্র কুরআনে এ আয়াতটিতে খুব সহজ এবং সোজা কথাটাই আল্লাহ্ বলে দিয়েছেন, এতে কোন ব্যাখ্যারো প্রয়োজন হয়না, আল্লাহ্ বলেনঃ
"নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর"
সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৫।
সামান্য কিছু কথা এখানে বলছি যাতে আপনাদের জন্য আরো একটু সহজ হয়।
সালাতকে অন্যান্য ফরয কর্ম থেকে পৃথক করার এই রহস্যও বর্ণিত হয়েছে যে, সালাত স্বকীয়ভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দ্বীনের স্তম্ভ। এর উপকারিতা এই যে, যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করে, সালাত তাকে অশ্লীল ও গৰ্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। [ইবন কাসীর] আয়াতে ব্যবহৃত “ফাহ্শা’ শব্দের অর্থ এমন সুস্পষ্ট মন্দ কাজ, যাকে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই মন্দ এমন কথা ও কাজকে বলা হয়, যার হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরীআত বিশারদগণ একমত ৷ ‘ফাহ্শা’ ও ‘মুনকার’ শব্দদ্বয়ের মধ্যে যাবতীয় অপরাধ এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ দাখিল হয়ে গেছে। যেগুলো স্বয়ং নিঃসন্দেহরূপে মন্দ এবং সৎকর্মের পথে সর্ববৃহৎ বাধা। সালাতের মাধ্যমে এ সকল বাধা দূরীভূত হয়। আল্লাহ্ এ একটি কাজের মাধ্যমেই আমাকে আপনাকে পরিশুদ্ধ করে দেবেন।
সালাত বা নামাজঃ পর্ব-২
সালাত বা নামাজ কি ও কেনঃ
আজ আমরা আলোচনা করব সালাত বা নামাজ কি এবং কেন এই নামাজ, সাধারণ ভাবে বলতে গেলে আমরা কম বেশি সবাই জানি নামাজ কাকে বলে বা কোনটা নামাজ, হ্যা তবে কিভাবে এ নামাজটা সহীহ ভাবে আদায় করতে হয় তা হয়ত সবাই জানি না, তবে শুকরিয়ার বিষয় এই যে, বর্তমান যুব সমাজ সহীহ নামাজ নিয়ে খুবই সচেতন। আসলে সালাত শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, যেমন-
* আল্লাহ্'র সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হয় "অনুগ্রহ, দয়া"।* বান্দার সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হয় "প্রার্থনা, দোয়া"।
* ফেরেশতাদের সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হয় "ক্ষমা প্রার্থনা"।
* নবীদের সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হয় "দরুদ পড়া"।
* পশু-পাখিদের সাথে সম্পর্কিত হলে এর অর্থ হয় "তাসবীহ পাঠ করা"।
বিভিন্ন ভাবে সালাতের অর্থ হয়, সালাত আদায় করতে হবে এটা একটি বিশেষ ইবাদত।
সালাত হলো কতিপয় নির্দিষ্ট আরকান ও আহকামের সমষ্টি একটি নির্দিষ্ট ইবাদত। ইসলামী শরীয়তে এর নির্দিষ্ট সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। আমরাতো মোটামুটি সবাই সালাতে ওয়াক্ত সম্পর্কে অবগত আছি, এছাড়া ওয়াক্ত মত আযানতো শুনতে পাচ্ছিই। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর সালাত আদায় করা ফরয। অন্য কথায় ঈমান আনার পরবর্তী কাজটাই হলো সালাত আদায় করা। সালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত এবং ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ।
আশাকরি, একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন সালাত কি, কেন এর উত্তরও একটু করে পেয়েছেন তবুও বলি, আসলে যদি একটি ধিক থেকে চিন্তা করি তাহলে ব্যাপারটা এ রকম যেহেতু আল্লাহ্ নিজেই তার বান্দাকে নামাজ পড়তে বলেছেন সুতরাং এটার কি লাভ আছে নাকি লস আছে সেটা দেখা যাবে না, নামাজ পড়তেই হবে কারণ আপনার মালিক এটাই চাই। উনি আমাদের জন্য নিশ্চয় ভাল কিছু রাখবেন। কেন সালাত আদায় করবেন সে বিষয়ে কিছু আয়াত হাদিস যেমন-
আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামিন বলেনঃ
"তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর"।
"তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর এবং সালাত কায়েম কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর"।
সূরা আনকাবুত, ৪৫।
"হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন"।
সূরা বাক্বারা, ১৫৩।
সূরা বাক্বারা, ১৫৩।
"আর তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে কোন রিয্ক চাই না। আমিই তোমাকে রিয্ক দেই আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য"।
সূরা ত্ব-হা, ১৩২।এছাড়াও অনেক আয়াত আছে, কিছু হাদিসও নিয়ে আসছি অসংখ্যা হাদিসের মধ্যে যেমন-
‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি এভাবে (উত্তমরূপে) উযূ করে, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ফলে তার সলাত ও মাসজিদে যাওয়া অতিরিক্ত ‘আমল বলে গণ্য হয়"।
সহীহ মুসলিম, ৫৬৬।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন : আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের কথা জানাবো না, যা করলে আল্লাহ্ (বান্দার) গুনাহ্ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল আপনি বলুন। তিনি (সাঃ) বললেন : কষ্টকর অবস্থায় থেকেও পূর্ণাঙ্গরূপে উযূ করা, সলাতের জন্য বারবার মাসজিদে যাওয়া এবং এক সলাতের পর আরেক সলাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)"।
সহীহ মুসলিম, ৬১০।
‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি : কোন মুসলিম উত্তমরূপে উযূ করে সলাত আদায় করলে পরবর্তী ওয়াক্তের সলাত পর্যন্ত তার সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
সহীহ মুসলিম, ৫৬২।
সুতরাং এক কথায় বলা যায়, সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম, দুনিয়া এবং পরকালীন মুক্তি। বিস্তারিত পরবর্তী পোষ্টে ইনশাআল্লাহ।
সালাত বা নামাজঃ পর্ব-৩
কেন সালাত আদায় করবো?
আজ আমাদের পয়েন্ট হল, কেন সালাত আদায় করবঃ
আপনি যদি নিজেকে খুব হতাশ, নিঃস্ব, একা, মনের অস্থিরতা, শারীরিক অসুস্থতা, দুশ্চিন্তা, পারিবারিক অস্থিরতা, মানসিক অবসাদ, দরিদ্র আর যত অশান্তি আছে সবই যদি আপনাকে গ্রাস করে, তাহলে কোন বাবার কাছে কিংবা কোন মুসকিল আসান সেন্টারে যেতে হবে না, এসে দেখুন একবার মসজিদে, সালাতে দাঁড়িয়ে যান, সিজদায় গিয়ে দোয়া করুন, আর দেখুন আপনার মন হালকা হয় কিনা, মনে ধীরেধীরে শান্তি ফিরে আসছে কিনা, যদি মনে করেন আসছে না, তাহলে একটু ধৈর্য্য ধরুন, অপেক্ষা করুন, কারণ
আল্লাহ্ বলেছেনঃ
"হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন"।
সূরা বাক্বারা, ১৫৩।
"হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন"।
সূরা বাক্বারা, ১৫৩।
এর সামান্য ব্যাখ্যা আপনাদের বলি-
*পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে আল্লাহ নেককারদের সাথে আছেন, ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন ইত্যাদি বলা হয়েছে। তিনি আরশের উপর থেকেও বান্দাকে সাহায্য সহযোগিতা করার মাধ্যমে তার সাথে রয়েছেন বলে বুঝে নিতে হবে।
হে ঈমানদারগণ ! তোমরা সাহায্য চাও সবর (১) ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবরকারীদের সাথে আছেন (২)।
(১) সবর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম অবলম্বন ও নফস্ এর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় সবর’-এর তিনটি শাখা রয়েছে।
(এক) নফসকে হারাম এবং না-জায়েয বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা(দুই) ইবাদাত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং
(তিন) যেকোন বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয়, সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। [ইবনে কাসীর]।
সবর’-এর উপরোক্ত তিনটি শাখাই প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। সাধারণ মানুষের ধারণা সাধারণতঃ তৃতীয় শাখাকেই সবর হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথম দুটি শাখা এ ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে মোটেও লক্ষ্য করা হয় না। এমনকি এ দুটি বিষয়ও যে সবর’-এর অন্তর্ভুক্ত এ ধারণাও যেন অনেকের নেই। কুরআন হাদীসের পরিভাষায় ধৈর্যধারণকারী বা সাবের সে সমস্ত লোককেই বলা হয়, যারা উপরোক্ত তিন প্রকারেই সবর’ অবলম্বন করে।
(২) সালাত এবং সবর’-এর মাধ্যমে যাবতীয় সংকটের প্রতিকার হওয়ার কারণ এই যে, এ দু’পন্তায়ই আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত সান্নিধ্য লাভ হয়। আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন বাক্যের দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সালাত আদায়কারী এবং সবরকারীগণের আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ হয়। মহান আল্লাহ আরশের উপর থেকেও তাঁর বান্দাদের সাথে থাকার অর্থ দুটি। প্রথম, সাধারন অর্থে সাথে থাকা। যা সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর তা হচ্ছে, সবাই মহান আল্লাহর জ্ঞানের ভিতরে থাকা। মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি সবার যাবতীয় অবস্থা তাঁর গোচরিভূত। তিনি ভাল করেই জানেন কে কোথায় কোন অবস্থায় কোন কাজে লিপ্ত। দ্বিতীয় প্রকার সাথে থাকা বিশেষ অর্থে। যা কেবলমাত্র তাঁর নেককার, সবরকারী, ইহসানকারী, মুত্তাকীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ছোট করে দিলাম যাতে আপনাদের মুল্যবান সময় নষ্ট না হয়, তবে প্লিজ এ পয়েন্টটা একটু ভাল করে পড়বেন, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব বলতে ইনশাআল্লাহ...
ম.আলম
চলবে.....
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন