বাংলাদেশ বার্তাঃ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বুধবার, ১০:০৩ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে জেলযাত্রাসহ সবধরনের পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত খালেদা জিয়া। শনিবার অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী কমিটির সভায় তৃণমূল নেতাদের প্রতি সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। সেদিন বলেছেন, ‘আমার বেশি হলে জেল হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী-ভক্তকেও জেলে যেতে হয়েছে। যেখানে থাকি না কেন আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আপনাদের সঙ্গে থাকব। বহু সন্ত্রাস হবে, ষড়যন্ত্র হবে, নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করা হবে; কিন্তু আমরা ভয়ে ভীত নই।’ বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জিয়া ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকেও কিছুদিনের জন্য পারিবারিক জীবন থেকে দূরে থাকার মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রায়ের পর কারাগারে যেতে হলে গৃহকর্মী ফাতেমাকে সঙ্গে নেয়ার আবেদন জানাবেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে সরকারের কোনো ফাঁদে পা দিতে চায় না বিএনপি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন ও টানা নয় বছর ধরে আন্দোলন করে আসা বিএনপি যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে মাঠে থাকতে চায়। ফলে রাজপথের নৈরাজ্যময় আন্দোলনের পথে হেঁটে দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে পড়তে চায় না তারা। সে লক্ষ্যেই সম্প্রতি প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে। ফলে মামলার রায় মোকাবিলায় দলটি আইনি প্রক্রিয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের ওপর জনমতের চাপ সৃষ্টি, সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়েও চলছে নানা তৎপরতা। তারই অংশ হিসেবে হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশে সিলেট সফর করেছেন খালেদা জিয়া। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যাত্রাপথে কোনো পথসভায় বক্তব্য বা মতবিনিময়ে অংশ নেননি তিনি। তবে তার এ সফরের মধ্যেও সরকারের ওপর জনমতের চাপ সৃষ্টি এবং নির্বাচনমুখী বার্তা দেখতে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্বাচনী প্রচারণায় সিলেট সফরের এক সপ্তাহের মধ্যেই ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি ঘুরে এসেছেন খালেদা জিয়া। সবসময় প্রকাশ্য ভোট চাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তার এ সফরের বার্তা পৌঁছে গেছে সিলেট বিভাগের চার জেলার ঘরে ঘরে। তার সিলেট সফরকে কেন্দ্র করে পুরো পথে কঠোর নিরাপত্তা নিয়েছে পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি রাস্তায়। পুরো পথের দুইপাশের সমস্ত দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ রাখা, ব্যাপক ধরপাকড়ের কারণে ঢাকা থেকে সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন প্রতিটি জেলায় প্রচলিত প্রচারণার চেয়ে বেশি প্রচারণা পেয়েছে বিএনপি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, হযরত শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারতে সিলেট সফরে গিয়ে নীরবতার ভাষায় নিজের মনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন চেয়ারপারসন। সিলেটের জনগণ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মূল কথা হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসন যেখানে যান লাখো জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসেন, যা দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রীর ক্ষেত্রে হয় না। চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রায়কে কেন্দ্র করে আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দিতে পারেন খালেদা জিয়া। সেখানে গণতন্ত্র ও সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সর্বদলীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন খালেদা জিয়া। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও গণতন্ত্রের পক্ষে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে শরিক হওয়ার আহ্বানও জানাবেন তিনি। সরকারকেও কিছু রাজনৈতিক বার্তা দেবেন। পরে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দল পরিচালনা ও সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেবেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। রায়ের আগে দলের সিনিয়র নেতা ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তুতিও নিতে বলেছেন খালেদা জিয়া। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, রায় বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিকূলে গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আইনি মোকাবিলার চূড়ান্ত ধাপ পার করার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেয়া হবে বিকল্প উদ্যোগ।
ওদিকে খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে আইনি উদ্যোগ, রাজপথে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদসহ নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। শনিবার অনুষ্ঠিত দলের নির্বাহী কমিটির সভায় তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সম্ভাব্য রায়। নেতারা পরিষ্কার বলেছেন, সরকারের প্রভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যায় কোনো রায় দেয়া হলে রাজপথে প্রতিবাদের কোনো বিকল্প নেই। কেন্দ্রের কাছে আন্দোলনের নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি তারা এ ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন, নেতিবাচক রায় হলে প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য তারা কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। এক্ষেত্রে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর প্রতি পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সবুজ সংকেত রয়েছে কেন্দ্রের। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানের সর্বাত্মক চেষ্টা করবে মহানগর বিএনপি। রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা কৌশলী অবস্থান নেবেন। তবে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিবাদের মাত্রা থাকবে কিছুটা তীব্র। রায় প্রতিকূলে গেলে উচ্চ আদালতের ধাপগুলো সম্পন্ন হওয়ার আগে রাজধানীতে প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়াতে চায় না বিএনপি। সেজন্য নেতাদের প্রতি রয়েছে আপাতত গ্রেপ্তার এড়িয়ে কৌশলে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা। সে অনুযায়ীই প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন