বাংলাদেশ বার্তাঃ দই একটি দুগ্ধজাত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য। দুধের ব্যাকটেরিয়া গাঁজন হতে দই প্রস্তুত করা হয়। সব বয়সের মানুষ দই খেতে পারেন। দই সবার প্রিয় খাবার হলেও আমরা অনেকে জানি না, দই এ আছে রোগপ্রতিরোধে আশ্চর্য ক্ষমতা।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী– মানুষ প্রায় চার হাজার পাঁচশত বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং খেয়ে আসছে। আবার কারো কারো মতে ইসা (আ.) এর জন্মের ৬ হাজার বছর আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে দই এর প্রচলন ছিল। নিওলিথিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকায় দই ছিল। প্রাচীন রোম,
গ্রিস মিশরেও দই এর প্রচলন ছিল। উপমহাদেশে ঠিক কখন থেকে দই এর প্রচলন ঘটেছে, সঠিক তথ্য জানা না গেলেও বাংলাদেশে দই একটি জনপ্রিয় খাদ্য এবং অতিথি আপ্যায়নে এর গুরুত্বই আলাদা।
পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে দই সারা পৃথিবীতেই পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়দই রাখা হয়। তবে, মিষ্টি দই এর তুলনায় টক দই অধিক উপকারী।
টক দই আমিষ, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার। সব চেয়ে মজার কথা হলো এতে আছে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অসংখ্য ব্যাক্টেরিয়া।
অনেকে মনে করেন, স্বাস্থ্যের জন্য দুধ সর্বাপেক্ষা উপকারি। তবে আশ্চর্যজনক সত্য হচ্ছে টক দই এ ভিটামিন–বি, পটাশ ও ক্যালসিয়াম দুধের চেয়ে বেশি।
রোগ প্রতিরোধে টক দই এর ভূমিকা :
শক্ত মজবুত হাঁড় ও দাঁত : মানবদেহে হাঁড় এবং দাঁতের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বুঝার দরকার নেই। শক্ত–মজবুত হাঁড় ও দাঁতের জন্য দরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন– ডি, যা টক দই এ পাওয়া যায়।
মানবদেহে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। কিছু ব্যাক্টেরিয়া দেহের উপকারী বন্ধু, কিছু দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। টক দই এমন এক খাবার যাতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। নিয়মিত টক দই খাওয়ার সুবিধা হচ্ছে এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের অভ্যন্তরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে, জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। রক্তের শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশে নানাবিধ কারণে পু্রুষের তুলনায় মহিলারা ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত কারণে নানা সসম্যায় ভোগেন বেশি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রায়ই মহিলারা কোমরে, হাতে–পায়ে,
বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ও জটিলতায় ভোগেন। বিশেষ করে হাঁড়ের সমস্যায়। এটা ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত কারণে। তাঁরা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় টক দই রাখতে পারেন।
অনেকে কোল্ড অ্যালার্জিতে ভোগেন। টক দই কোল্ড এলার্জি প্রতিরোধে সহায়ক। সর্দি ও জ্বর প্রতিরোধ করে,
জ্বরের প্রকোপ কমায় ।
কোষ্ঠকাঠিন্য : যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, নিয়মিত পায়খানা হয় না, খাদ্য তালিকায় দই রাখবেন। টক দই এ থাকা প্রচুর পরিমাণ ল্যাকটিক এসিড কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। একইভাবে টক দই ঘন ঘন ডায়রিয়া হবার প্রবণতাও রোধ করে।
ত্বক : ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে এটি বেশ কার্যকর। কারণ এতে আছে প্রচুর ল্যাকটিক এসিড। অনেকের দেহের বিভিন্নস্থানে ছত্রাক জমে। দই ছত্রাক প্রতিরোধ করে।
কোলন ক্যান্সার রোগীদের জন্য নিয়মিত খাদ্য হিসেবে টক দই বেশ উপকারি ।
দুধের বিকল্প: দুধ অবশ্যই সুষম খাদ্য। তবে অনেকের দুধ হজম হয় না। যাদের দুধ হজম হয় না, তারা টক দই খেতে পারেন। দুধের তুলনায় টক দই এর আমিষ সহজপাচ্য। কারণ অ্যামাইনো এসিড এর কারণে দুধের তুলনায় সহজে প্রোটিন হজম হয়। একইভাবে টক দই খাবার হজমেও সহায়তা করে। খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে দই হজম হয় শতকরা ৯০ ভাগ, পক্ষান্তরে দুধ হজম হয় শতকরা ৩২ ভাগ।
ওজন কমায় : টক দই ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজনের সাথে খাবারের সম্পর্ক নিবিঢ়। টক দই এ থাকা প্রচুর পরিমাণ আমিষ শরীরে বাড়তি শক্তি যোগায়, পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের আগ্রহ থাকে না। অতিরিক্ত খাবার কমে গেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। দই চর্বি কমায়। আহারের পর টক দই খেলে দেহে বাড়তি ফ্যাট জমতে দেয় না।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে :
গবেষণায় দেখা গেছে টক দই খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতি দিন এক কাপ টক দই খেলে উচ্চরক্তচাপ এক তৃতীয়াংশ কমে যায়।
ভিটামিন : দই একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি–৫, আয়োডিন, রিবোফ্লাবিন জিংক, পটাসিয়াম ও ফসফরাস। শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে দই।
টক দই দেহে টক্সিন জমতে দেয় না। ফলে খাদ্যনালী পরিষ্কার থাকে। গ্যাস্টিক কমায়, আলসার কমায়, মাংস খাওয়ার পর দই খেলে দ্রুত হজম হয়।
জন্ডিস ও হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করে, অকাল বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে। নিয়মিত চুলে দই লাগালে খুশকি দূর হয়, অকালে চুলপাকা রোধ হয়।
মিষ্টি দই ও টক দই : টক দই প্রাকৃতিক, মিষ্টি দই প্রাকৃতিক নয়। মিষ্টি দই বানানোর সময় চিনি মেশানো হয়। এখানে প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে ক্যামিক্যাল মিশ্রিত উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে। ফলে দই এর গুণাগুণ কিছুটা ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণও কিছুটা বেড়ে যায়। ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া চিনির অপরাপর ক্ষতিকর দিকও দেখতে হবে, যেমন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য এটা ক্ষতিকর। সুতরাং মিষ্টি দই এর তুলনায় টক দই অধিক স্বাস্থ্য সম্মত।
রাতে নয়, দিনে দই খাওয়া উত্তম। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের জন্য দিনে এক কাপ দই যথেষ্ট, এর বেশি নয়। অতিরিক্ত হলে দই এ থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরে বেড়ে যেতে পারে। দুধ গরম করে খাওয়া হয়, কিন্তু দই কখনো গরম করে খাওয়া উচিৎ নয়। আবার ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলে টনসিলপ্রদাহ, গলা বসে যাওয়া ইত্যাদি ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবার জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রায় উত্তম। যাদের হার্টের রোগ আছে, যারা ডায়াবেটিসে ভোগেন, তারাও টক দই খেতে পারবেন। বরং নিয়মিত টক দই তাদের জন্য উপকারি। আমাদের দেশে সাধারণভাবে অনেকে আহারের পর পান চাবান। এর চাইতে বরং নিয়মিত টক রাখা ভাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন