বাংলাদেশ বার্তাঃ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে। তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতেই এ দণ্ড দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রায় প্রকাশের পর বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০ দলের প্রধান শরিক দলের পক্ষ থেকে তিনি একথা বলেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালতকে ব্যবহার করার যে অপকৌশল গ্রহণ করেছে; এ রায় তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। এ রায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশের জনগণকে সরকার মারাত্মকভাবে ভয় পায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটতে না পারে সে জন্য সরকার বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জাতীয় নির্বাচনের বাইরে রাখার অপকৌশল গ্রহণ করেছে। তাদের ষড়যন্ত্রের প্রথম শিকার জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দকে একে একে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। দেশবাসী ভুলে যায়নি বিচার চলাকালে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা রায়ের দিন, তারিখ ও সময় নির্ধারণ করে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। একই কায়দায় ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার ইঙ্গিত প্রদান করে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা বক্তব্য রেখে আসছিলেন। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ঘোষণার বাস্তবায়ন হলো মাত্র।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনাকালে তার নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবীরা আদালতে সাজানো মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার চুলচেঁরা বিশ্লেষণ করে যে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন তাতে দেশবাসী আশা করেছিল বেগম জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন ও সাজানো মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাবেন। কিন্তু তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ে জনগণ হতাশ হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বিচার বিভাগকে নগ্নভাবে ব্যবহারের যে নিকৃষ্ট ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আদালতের প্রতি জনগণের আর কোনো আস্থা থাকবে না। বিচার বিভাগের উপর থেকে জনগণের আস্থা উঠে গেলে দেশ ভয়াবহ সংকটের দিকে ধাবিত হবে। সরকার এ ধরনের সংকট সৃষ্টি করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। কিন্তু সরকারের এ পরিকল্পনা দেশের জনগণ কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
অধ্যাপক মুজিব বলেন, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সরকার সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার নামে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকার মূলত রাজধানী ঢাকা থেকে সারা দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সরকার সারা দেশে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে তাদের উপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে গোটা দেশকে জিম্মি করে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দন্ডীত করার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলংকিত অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, সরকার সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে যেভাবে জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে তাতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এ সরকার গণতন্ত্র, সংবিধান ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে না। এ ধরনের স্বৈরাচারী মানসিকতা সরকারকে পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত পতনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমিরে জামায়াত মকবুল আহমাদসহ ২০ দলীয় জোটের আটককৃত সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান এবং নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে বর্তমান শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন