ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

৯ ফেব্রুয়ারি: মাওলানা একেএম ইউসূফ এর মৃত্যুবার্ষিকী

বাংলাদেশ বার্তাঃ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর, বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদীসহ হাজারো আলেমের উস্তাদ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ (৮৮) কারান্তরীণ অবস্থায় ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইন্তিকাল করেন।
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে বন্দী প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল সোয়া এগারটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কাশিমপুর কারাগার-১ এ বন্দী ছিলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর, বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ মাওলানা একেএম ইউসুফকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার মা আয়েশা বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
সেদিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বর্ষিয়ান এই রাজনীতিকের কফিন শরণখোলার রাজৈরে পৌঁছাবার আগেই আশপাশের উপজেলা থেকে তার হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লি ও লিল্লাহ বোডিংয়ের ইয়াতিমরা উপস্থিত হয়। সেখানে মানুষের কান্না আর আর্তচিৎকারে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
অশীতিপর এই আলেমে দ্বীন জালিমের কারাগারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। কিন্তু তাকে চিকিৎসা দিতে নির্দয়ভাবে বিলম্ব করে অবহেলা প্রদর্শন করে কারা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাওলানা একেএম ইসুফের ছেলে একেএম মাহবুবুর রহমান জানিয়েছিলেন- রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পিতার অসুস্থতার কথা জানায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা জানানো হয় এবং তারা হাসপাতালে অপেক্ষা করেন। তবে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তিনি অচেতন ছিলেন এবং তারা কেউ কোন কথা বলতে পারেননি। হাসপাতালের ডাক্তাররা তাদের জানিয়েছেন তার পিতা স্ট্রোক করেছিলেন।
মাহবুবুর রহমান জানান, তাকে প্রথমে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে সেখান থেকে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) এ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু আইসিইউতে কোন রুম খালি না থাকায় তাকে বারডেম অথবা ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বন্দী থাকায় এ বিষয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে তাকে তাৎক্ষনিকভাবে বারডেম বা ঢাকা মেড্যিকালে পাঠানো সম্ভব ছিলনা। সবশেষে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে রেখেই চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জীবনী : মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ১৯২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আজিমুদ্দীন হাওলাদার। তিনি তার পিতার তৃতীয় সন্তান। তিনি ১৯৪৯ সালের জুন মাসে ফাজিল প্রথম বর্ষে পড়ার সময় মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফুলহাতা গ্রামের অয়েজদ্দীন মোল্লার কন্যা রাবেয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তানায়ক সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদীর (র.) কয়েকটি বই পড়ে লেখক ও তাঁর ইসলামী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫২ সালে আলিয়া মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় প্রধান শিক হিসেবে যোগদান করেন। খুলনা আলিয়া মাদরাসায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৫২ সালের জুন মাসে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াতের শপথ নেন। তিনি বাংলাদেশীদের মধ্যে দ্বিতীয় রুকন ছিলেন। প্রথম রুকন ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুর রহীম। ১৯৫৩ সালের প্রথম দিকে তিনি খুলনা আলিয়া মাদরাসা থেকে বিদায় নিয়ে কিছু দিনের জন্য ঢাকায় যান। ওই সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশিত উর্দু বইয়ের বাংলা অনুবাদ করতেন। ‘শান্তিপথ’ ও ‘ইসলামের জীবন পদ্ধতি’ নামের দু’টি পুস্তিকা বাংলায় অনুবাদ করেন। পরে তিনি ঢাকা থেকে বরিশাল জেলার মঠবাড়ীয়া থানার উপকণ্ঠে অবস্থিত টিকিকাটা সিনিয়র মাদরাসায় প্রধান শিকের পদে যোগদান করেন। এখানে তিনি ৩ বছরের মতো কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি জামায়াতে ইসলামীর খুলনা বিভাগের (বৃহত্তর খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী নিয়ে গঠিত) আমীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে খুলনা শহরে আসেন। ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারির আগ পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদরাসার কর্তৃপরে অনুরোধে অধ্য হিসাবে আবার যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি মাদরাসার অধ্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে খুলনা ও বরিশাল আসন থেকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি প্রাদেশিক সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাত্তোর তৎকালীন সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং ২ বছর কারাভোগের পর ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান।
মাওলানা ইউসুফ ১৯৫০ সালে ঢাকার সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে ফাজিল পাস করেন। পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত পরীায় সারাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এ জন্য সরকারি বৃত্তিও পেয়েছিলেন। ১৯৫২ সালে তিনি রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে কামিল পাস করেন। বিবাহিত জীবনে তার ১১টি সন্তান হয়। এর মধ্যে ৩ কন্যা সন্তান একেবারেই অপরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে তার ৮ সন্তানের মধ্যে ৫ কন্যা ও তিন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী, মেজ মেয়ে হাছীনা খাতুন সৌদী প্রবাসী, মেজ ছেলে মাসউদুর রহমান আমেরিকা প্রবাসী, তৃতীয় কন্যা শামীমা নাসরিন দুবাই প্রবাসী, তৃতীয় ছেলে মাসফুকুর রহমান আমেরিকা প্রবাসী, চতুর্থ কন্যা সাঈদা তানিয়া নাজনীন দুবাই প্রবাসী, ৫ম সনিয়া শারমিন আমেরিকা প্রবাসী।
জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালন : ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাওলানা একেএম ইউসুফ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা বিভাগের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমীর হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ণ ৩ টার্মে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদীর (র.) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য ছিলেন। পরে তিনি স্বাধীনতাত্তোর ৩ টার্ম সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি নায়েবে আমীর এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনিয়র নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে ১৪ জুন কৃষকদের সেবারব্রত নিয়ে সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চাষীকল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। মাওলানা একেএম ইউসুফ এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে দারুল আরাবীয়া হতে আরবী ভাষায় একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এটা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র আরবি পত্রিকা। তিনি ‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন কি ও কেন?’, ‘হাদীসের আলোকে মানব জীবন (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড)’, ‘আমার আমেরিকা, কানাডা ও ইংল্যান্ড সফর’, আমার আফগানিস্তান সফর’, ‘দর্পণ (নির্বাচিত প্রবন্ধ সমূহের সঙ্কলন)’, ‘দেশ হতে দেশান্তরে (১৩টি দেশ এর ভ্রমণ কাহিনী)’, ‘কুরআন-হাদীসের আলোকে জিহাদ’, ‘মাওলানা মওদূদী ও জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার অন্তরালে’ নামের বই প্রকাশ করেন।
মাওলানা একেএম ইউসুফ জীবদ্দশায় দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে ৪টি মহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, আরব আমিরাত, ওমান, জর্দান, মিসর, সুদান, থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, গ্রেট বৃটেন, আমেরিকা ও কানাডা ভ্রমণ করেছেন। মোমতাজুল মুহাদ্দেসিন মাওলানা একেএম ইউসুফ এর সাথে কাতার ও কুয়েত সরকারের ছিল সুগভীর সম্পর্ক। তাঁর আমন্ত্রণে এ দুই দেশের একাধিক মন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। কাতার ও কুয়েত সরকার তার কর্মকাণ্ডের ওপর ছিল খুবই আস্থাশীল। যার কারণে ঢাকা, খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ফরিদপুরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষীকল্যাণ সমিতির উদ্যোগে এই দুই দেশের সরকারের অর্থায়নে মাওলানা একেএম ইউসুফ এর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ৪ শতাধিক মসজিদ, মাদরাসা ও এয়াতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন