বাংলাদেশ বার্তাঃ পৃথিবীতে কৃতিত্বপূর্ন অবদান, থিউরী বা চিন্তার প্রবক্তাগন মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকেন । অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমনিই একজন বীরপুরুষ। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সদা-সর্বদা আলোচিত ,কাংঙ্খিত ও সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত কেয়ারটেকার সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের স্থপতি। যার দাবীতে এখনো সরব দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও মানুষ।অধ্যাপক গোলাম আযম বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা সৈনিক মজলুম মানবতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। আজ তিনি নিজেই একটি ইতিহাস, একটি আন্দোলন, একটি চেতনা আর বিশ্বাসের স্মৃতির মিনার হয়ে আমাদের মাঝে দন্ডায়মান। অধ্যাপক গোলাম আযম একটি জাগরণ, একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম। একটি চেতনা ও বিশ্বাসের গগনজোয়ারী কণ্ঠস্বর। মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ের একটি সম্ভাবনাময় দেশগড়ার চেতনার অগ্রপথিক। অধ্যাপক গোলাম আযম একজন সৎ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, খ্যাতিমান অহিংস রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যিনি আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয় পন্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন মুসলিম উম্মাহর একজন অভিভাবক। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে ৯০ বছর বয়স্ক এ প্রবীণ রাজনীতিবিদকে আমৃত্যু সাজা প্রদান করে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশে-বিদেশে।
বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম এই সিপাহসালার ২০১৪ সালের ২৩শে অক্টোবর রাত ১০ টা ১০ মিনিটে কারারুদ্ধ অবস্থায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাাহর সান্নিধ্যে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া- এএফপি, এপি ও রয়টার্সের মতো বার্তা সংস্থা, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও আলজাজিরা, দি গার্ডিয়ানে অধ্যাপক গোলাম আযমের ইন্তেকালের খবর বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। এসব খবরে তাঁকে জামায়াতে ইসলামীর আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘তার বিচার ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’ আরব নিউজে বলা হয়েছে, ‘১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর তিনি ‘কিংমেকারের ভূমিকা’ পালন করে বিএনপিকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। তবুও তাঁর ইন্তেকালে বিএনপি একটি শোক বাণীও দেয়নি।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সেও খবরে বলা হয়, ‘সমালোচকেরা বলে থাকেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামায়াতকে লক্ষ্য করে এবং বিরোধী দলকে দুর্বল করতে ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদন্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে”।
অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাযায় লক্ষ-লক্ষ মানুষের উপস্থিতি, দেশে-বিদেশে অসংখ্য গায়েবানা জানাযা তাঁর ভক্ত-অনুরক্তদের আলল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ সব মিলে এক শক্তিশালী গোলাম আযম আবির্ভূত হয়েছে। মনে হচ্ছে এটি তাঁর বিদায় নয়, পূণর্জন্মা এক নতুন গোলাম আযম!! ব্যাক্তি গোলাম আযম বিদায় নিয়েছে কিন্তু এই গোলাম আযম বেঁচে থাকবে মানুষের হৃদয়ে অনন্তকাল।
পৃথিবী যতদিন থাকবে আল্লাহর দ্বীনের সৈনিকেরা তাঁর জন্য দোয়া করতে থাকবে। তাহাজ্জুতে জায়নামাজ ভাসিয়ে আর বায়তুল্লাহর গেলাপ ধরে অনেকেই কাঁদছে তাঁর জন্য। রাষ্ট্রীয় যাতাকলে পিষ্ঠ, দীর্ঘ কারাবরণ এর মধ্য দিয়ে দেশে-বিদেশে তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করেও ভাষার মাসে তিনি থেকেছেন বন্দী। এটি আমাদের ব্যর্থতা, জাতির জন্য লজ্জাজনক। এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। জীবন সায়াহ্নে বৃদ্ধবয়সে একাকী নিভৃতে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ ছিলেন তিনি অনেক বছর। জীবনের শেষ সময়গুলো এ জাতি তাঁর শেষ উপদেশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে তাঁর পরিবার, তরুণ সমাজ এবং তাঁর ভক্তরা।
হাজারো ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় তাঁর বয়োবৃদ্ধ সফল সহধর্মীনি এবং গোটা পরিবারের ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর হৃদয় নিংড়ানো চৌকস উপস্থাপনা, এবং আবেগধর্মী বিবৃতি, লেখনি, সাক্ষাতকারের মাধ্যমে, অধ্যাপক গোলাম আযমের আদর্শ পরিবার গঠনের দিকটিও চলে এসেছে জাতির সামনে। জানাযার পূর্বে তাঁর প্রিয় সন্তান (অবসরপ্রাপ্ত ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমীর হৃদয়স্পর্শী আবেগপূর্ণ বক্তব্য, দাফন পরবর্তী মোনাজাত অধ্যাপক গোলাম আযমের অনুসারীদেরকে এই ব্যথাতুর সময়েও আশান্বিত করেছে। মনে হচ্ছে যোগ্য পিতার যোগ্য উত্তরসূরী ছায়া গোলাম আযম আলোর প্রদীপ ছড়াচ্ছে। আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ, তিনি যেন সন্তানদেরকে তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে কবুল করেন।
সে কারণেই হয়ত এই মেধাবী অফিসার চাকুরী থেকে বহিস্কার করে তাদের জিঘাংসা মিটিয়েছে। তাই খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান-আল আযমী সরকারের রোষানলের শিকার। কয়েক বছর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাঁকে বাসা থেকে নিয়ে গেলেও এখনো কোন হদিস মিলছেনা। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা তাদের উদ্বেগ অব্যাহত রেখেছে। জনগণের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রই যেন এখন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে! সন্তানকে হারিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর বৃদ্ধ মা। অথচ পরিবার ও স্বজনরা থানায় গেলে তাদের মামলা গ্রহণ না করা নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন নয় কি? কি সেলুকাস এ পৃথিবী! কি অদ্ভুত আর বিষ্ময়কর আমাদের রাজনীতি! কত নিষ্ঠুর, নোংরা, কুলষিত, ক্ষমতার মোহে দিকভ্রান্ত আওয়ামীলীগের এই নেতিবাচক শিষ্টাচার বহির্ভূত অপরাজনীতি! ধিক্ আওয়ামীলীগের এই অমানবিক, ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে।
এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একজন মানুষ। নিজ যোগ্যতা বলে তার ঐতিহাসিক স¦াক্ষর তিনি নিজেই। তিনিই তার উপমা। সময়ের সাড়া জাগানো ছাত্রনেতা গোলাম আযম। বিশ্বের অসংখ্য দেশে তাঁর কেয়ারটেকার ফর্মূলা সমাদৃত। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি একজন যোগ্য সংগঠক। তিনি নিজে অনেক উত্থান পতনের স্বাক্ষী। এই মেধাবী চৌকস ও অভাবনীয় নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন, ক্ষণজন্মা মানুষ ১৯২২ সালে ঢাকার লক্ষীবাজারে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা থেকে পাশ করেন তিনি। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন।
অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাযা ছিল “টক অব দ্যা ক্যান্ট্রি” জাতীয় নেতাদের মধ্যে কার জানাজায় এযাবতকালে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছে!! “অধ্যাপক গোলাম আযমের চতুর্থ ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী পিতার জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজার আগে উপস্থিত লাখো মানুষের উদ্দেশ্যে আমান আযমী বলেন, পৃথিবীর ক্ষণজন্মা মানুষদের একজন অধ্যাপক গোলাম আযম। আমার পিতাকে মিথ্যা মামলায় এক হাজার ১৬ দিন তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর প্রতিটি দিন আমার পিতা ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যদের জন্য ছিল বেদনার। আমার পিতা সারা জীবন আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দিন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আপনারা অধ্যাপক গোলাম আযমকে ভালোবাসেন না। আপনারা ভালোবাসেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত একজন কর্মী গোলাম আযমকে। তাঁর বিদায় মানে ইসলামী আন্দোলনের বিদায় নয়। এদেশে আরও লাখো লাখো গোলাম আযম তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ, যারা একদিন এদেশের মাটিতে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়াবে, ইসলামকে বিজয়ী করবে।”
প্রফেসর গোলাম আযম এক জীবন্ত কিংবদন্তি। অধ্যাপক গোলাম আযম বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত একটি আওয়াজ। এই সাহসী বীরপুরুষ প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালিত হয়। হরতাল সফল করতে অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসু’র জিএস হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত করেন। জীবনের শেষ সময়গুলোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ভাষা সৈনিকের উপর চালানো হয়েছে অমানষিক নির্যাতন। এটি ছিল অমানবিক!! মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার অন্যায়ভাবে তার জন্মগত নাগরিকত্ব অধিকার হরণ করলেও পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রায়ে নাগরিক অধিকার ফিরে পান এবং তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ত্রিশ বছর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে থেকে সর্বশেষ স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারী পদের ও ক্ষমতার প্রতি নির্লোভ একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক গোলাম আযম জীবনের শেষ সময়েও এ সংগ্রামী নেতা ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। বাতিলরা মিথ্যার কালো পর্দার আড়ালে তার স্বর্ণোজ্জ্বল অনেক অবদানকে ঢেকে রাখার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে নিরন্তনভাবে।
১১ জানুয়ারি ২০১২ কারাগারে যাওয়ার আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন- “১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল। তখন তো কোন দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি। ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সহযোগিতা প্রার্থনা করে আমার নিকট ধরনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু সাহেব জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ সাহেবের মাধ্যমে আমাকে মন্ত্রী বানাবার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
তখনও তো আওয়ামী লীগের মনে হয়নি যে, জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী! পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের আবদার নিয়ে যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখনও তো তাদের দৃষ্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিল না। আমি জীবনে চারবার জেলে গিয়েছি। জেল বা মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই না। শহীদ হওয়ার জযবা নিয়েই ইসলামী আন্দোলনে শরিক হয়েছি। মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিলে শহীদ হওয়ার মর্যাদা পাবো ইনশাআল্লাহ।” বিশ্বনন্দিত মজলুম নেতার এই সাহসী ও দৃঢ় উচ্চারণ এখন বিশ্ব মুুসলিম উম্মাহর পথের দিশা। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা নসীব করুন।
অধ্যাপক গোলাম আযম কখনও এমপি, মন্ত্রী কিছুই হননি সুযোগ থাকার পরও। ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি, চাওয়া- পাওয়া বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর ত্যাগ এমন বহু বাস্তবতা এখন দৃশ্যের অন্তরালে। যিনি ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতাসীন সকলের অপবাদের দায়ভার কাঁধে পড়েছে। যিনি দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে সব সময় ভূমিকা রেখেছেন কিন্তু তার বিনিময়ে সব সরকার থেকে উপহার পেয়েছেন কারাবরণ। তাঁর আত্মনির্মাণ এবং বিকাশের ক্ষেত্রে বেশকিছু চিন্তা হিসেব নিকেশ ছিল সুদূর প্রসারী। বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসন ও অধিপত্যবাদের ক্ষেত্রে অধ্যপক গোলাম আযমের ৪৭ বছর পূর্বের ভাবনা আজকের সবচেয়ে সত্য ও বাস্তবতা। ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বইয়ে তাঁর ফর্মূলা অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং রাজনৈতিক চেতনায় সংকীর্ণ শেখ হাসিনার পক্ষে এমন গোলাম আযমকে মানা খুবই অসম্ভব। তাঁর উদ্ভাবন, চিন্তা, আবিস্কার তাঁকে টিকিয়ে রাখবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী।
ব্যক্তি গোলাম আযম নিজেকে এমনভাবে গঠন করেছেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, কথাবার্তা, চলন, বলন প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন প্রিয় নবী রাসূলে করীম (সা.)-এর একনিষ্ট অনুসারী। বাহিরে এবং ভিতরে মিলিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একটি প্রতিষ্ঠানরূপে। অধ্যয়ন, অধ্যবসায়, সময়জ্ঞান সবকিছুই মিলিয়ে তিনি ছিলেন সত্যিই ব্যতিক্রম।
অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন মানুষ তৈরির কারিগর। তিনি ছিলেন মাওলানা মওদূদীর সাহচার্যে গড়ে উঠা ইসলামী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল প্রদীপ। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, মহিলা জামায়াত, ছাত্রীসংস্থার নেতৃত্ব তৈরির জন্য পরিচালনা করতেন স্ট্যাডি সার্কেল। সে সার্কেলের একজন সদস্য হয়ে আজ নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করি। একান্ত নিভৃতে তাঁর সান্নিধ্যে সাহচার্য এবং ¯েœহ-ভালোবাসা আজ আমাদেরকে কাঁদায়। স্ট্যাডি সার্কেলের সেই ছোট কামরায় তাঁর ইন্তেকালের পর প্রায় ৩২ ঘন্টা আমি কাটিয়েছি। চেয়ারগুলো আগের মতোই পড়ে আছে, লাইব্রেরীটি আগের মতই সাজানো। কিন্তু সবকিছুই আছে আগের মতই। কিন্তু সকলের প্রিয় মানুষ অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই!!
অধ্যাপক গোলাম আযম যার প্রজ্ঞা, লেখনি, চিন্তা, রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি, ক্ষমা; মহানুভবতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য এবং সহনশীলতার মতো যাবতীয় মহৎ গুণাবলির বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে তিনি নির্যাতিত-নিপীড়িত, নিষ্পেষিত জনতার অধিকার এবং মর্যাদাবোধ সম্পর্কে এক আবহ তৈরি করতে যার উদাহরণ নিকট অতীতে বিরল। একবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ইসলাম, জাতিগত অধিকার এবং সচেতনতা, পারস্পরিক মর্যাদাবোধ নিয়ে বিশ্ব যখন চরম সঙ্কটের মোকাবিলা করছে, ঠিক তেমনি একটি মুহূর্তে নিজের কর্ম মহানুভবতার মাধ্যমে তিনি স্বমহিমায় এখন এক প্রতীকে রুপে-রূপায়িত ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।
বাংলার বুকে লক্ষ-কোটি মানুষ এখন ইসলামের পতাকাতলে সমবেত। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল তার পদচারণায় মুখরিত হয়ে দ্বীন কায়েমের চেতনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যারা জীবন দিতে জানে কিন্ত মাথা নত করেনা এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে। তারা চিরদিন গোলাম আযমকে মনে রাখবে, চিরদিন ভালবাসবে, সম্মান করতে থাকবে নিজের গরজে। তার সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা, লেখনী, বক্তব্য মানুষকে ইসলামের পথে উজ্জীবিত করবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। ইসলামী আন্দোলনে তাঁর সহযোদ্ধারা এখন অনেকেই ইতোমধ্যে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করে আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে একসাথে জান্নাতে থাকার তাওফিক দিন।
অধ্যাপক গোলাম আযমের রেখে যাওয়া আদর্শ অনাগত যুবকদের জন্য হবে নতুন পথের দিশা এবং এ জমিনে ঘটবে ইসলামী আন্দোলনের নব উত্থান। হে আরশের মালিক! তুমি তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা দান কর। তোমার প্রিয় বান্দাহকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব কর। আমীন।।
লেখকঃ কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।